নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’ https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! ! https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব আট)

০৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:১১


পনের অধ্যায়

গ্রাউন্ডফ্লায়ারটি ভূমি থেকে সামান্য উপরে উঠে প্রচণ্ড শব্দ করে ছুটে চলল সামনের দিকে। চালক এনি রোবট মনোযোগ সহকারে সামনের মনিটরে চোখ রাখে, দক্ষ চালকের ন্যায় ক্রমাগত তাপ, চাপ এবং গতির বাটনগুলো চাপতে থাকে। গ্রাউন্ডফ্লায়ারের ভিতরের তাপমাত্রা আসতে আসতে নেমে এসে সহনীয় পর্যায়ে এসে থামল, তবে ইঞ্জিনের অমৃসন ধ্বনি বলে দিচ্ছে বেশ পুরনো হয়ে গেছে ইঞ্জিনটি। লিডান একটু খুত খুতে স্বভাবের, সব কিছুই তার নিখুঁত চাই, চরম বিরক্ত নিয়ে বসে আছে, ইঞ্জিনটি পাল্টানো দরকার ছিল কিন্তু মনে থাকে না দোকানে গেলে।

লিডানের পাশে বসে আছে আনা ওয়াটসন। আনা বিষ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে এনি রোবটের দিকে।

“রোবটটাকে নতুন মনে হচ্ছে। এই ব্যাটাকে আমাদের সাথে আনার দরকার ছিল কি?” বলে আনা। চোখে মুখে বিরক্ত ঝরে পরে।

“না নতুন নয়। হাত-পাগুলো পুরনো হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো পাল্টেছি মাত্র তাই নতুনের মত লাগছে। কেন?” মাথাটা আনার দিকে ঘুড়িয়ে জিজ্ঞেস করে লিডান।

“আপনি কি জানেন সপ্তম প্রজন্মের রোবট নাকি ছাড়া হয়েছে আমাদের-মত বিদ্রোহীদের ধরতে। এই ব্যাটা সেই ধরণের সপ্তম প্রজন্মের রোবট কিনা কে জানে।” বলে আনা।

এনি রোবটের পাশে বসে ছিল নিউক আর প্লেরা। নিউকেও এনি রোবটকে নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। আজ তারা নতুন বায়ো-কম্পিউটারের খোজে যাচ্ছে সেই গোপন আস্তানার উপরের বারটাতে। সেই গোপন আস্তানাটার খবর জেনারেল গ্রাটিয়ার লোকজন পেয়ে গেছে। সেখানে যাওয়া নিরাপদ নয় তার উপর প্লেরা এবং নিউককে দেখলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিনে ফেলবে। সব কিছু মিলিয়ে এক ধরণের অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে নিউক।

এনি রোবট এতক্ষণ সব কথোপকথন শুনছিল। এখানে লিডান ছাড়া বাকি সবাই-যে তাকে দেখতে অপছন্দ করে সেটা তার ইলেকট্রনিক ব্রেন বুঝে ফেলে। একটু বিরক্তি নিয়ে পিছনে ঘুরে আনার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে পুনরায় নিজের কাজে মনোযোগ দেয় এনি রোবটটি।

“ঐ হতভাগা পিছনে তাকাবি না। নয়ত পশ্চাৎদেশে লাথি মেরে ফেলে দিব গ্রাউন্ডফ্লায়ার থেকে।” বলে আনা।

রোবটটি তার চকচকে মাথাটি পুনরায় আনার দিকে ঘুরিয়ে বলে “সাবধানে কথা বলুন।”

হাতের মুঠি শক্ত হয়ে আসে তার, “তোর সাথে সাবধানে কথা বলতে হবে কেন? হারামজাদা কোথাকার।” বলে আনা ওয়াটসন।

এনি রোবট পুনরায় ধাতব গলায় বলে “রোবটকে সম্মান দিতে শিখুন মহামান্য আনা। সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায়।”

“তুই একটা নির্বোধ রোবট, তোর আবার মান সম্মান কিরে?” চোয়াল শক্ত করে বলে আনা।

“মহামান্য আনা লেথরিন স্কেলে আমার বুদ্ধি কিন্তু প্রায় মানুষের সমান। আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি বেশ নিখুঁতভাবে। আমি একজন বুদ্ধিমান রোবট, আর বুদ্ধিমান কাউকে সম্মান দিতে হয় সে রোবট হোক বা মানুষ। অন্তত মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে এটুকু সম্মান আশা করতে পারি।” ধাতব কণ্ঠে জানান দেয় এনি রোবট।

একটু থামে এনি রোবট তারপর বলে “আর আমার নাম রোবট নয়। আমার নাম এনি রোবট। যে কোন বুদ্ধিমান প্রাণী নিজের নাম শূনতে পছন্দ করে। আমাকে এনি রোবট বলে ডাকুন।”

প্লেরা এবং নিউকেরও এনি রোবটকে পছন্দ না হলেও আনার সাথে এনি রোবটের তর্কাতর্কি তারা বেশ ভালভাবেই উপভোগ করছিল।

দাতে দাঁত চেপে ঘর্ষণ করে আনা কিছু বলতে যাচ্ছিল লিডান হাতটি শূন্যে উঠিয়ে তাকি থামিয়ে দিল। মাঝারী মানের একটি খাঁকারি মেরে লিডান বলে “আপনাকে না বলেছি নিশ্চিন্ত থাকতে। টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলোতে আমি বেশ পারদর্শী, সপ্তম মাত্রার রোবটও যদি আমার হাতে পরে তাহলে তার ভিতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে সাধারণ মানের রোবটে পরিবর্তিত করে দিতে পারি। আর এনি রোবটটিকে আমি নিজের হাতে আপডেট দিয়েছি। তাই আমার উপর নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। ওর সাথে ঝাঁঝ দেখিয়ে লাভ নেই।”

একটু থেমে বলল “আনা আপনারতো আমার ওখানে আসার কোন কথা ছিল না। আপনি ঠিকানা পেলেন কিভাবে? আপনাকেতো দাওয়াত দিয়ে আনিনি। যেই কাজের জন্য যাচ্ছি সেটা আমরাই করতে পারতাম। এখানে এসে এনি রোবটের সাথে ঝগড়া শুরু করেছেন।”

এবার আনা বেশ নমনীয় হল। “ঠিকানা পাওয়া কোন কঠিন কাজ নয়। তাছাড়া ছুটির দিন, ভাবলাম আপনাদের সাথে ঘুরে আসি।”

সরু রাস্তা ধরে গ্রাউন্ড ফ্লায়ারটি চলছিল, চারদিকে খা খা মরুভূমি, সুউচ্চ পাহার। মাঝে মাঝে গাছ পালা বন জঙ্গল চিড়ে ছুটে চলছে গ্রাউন্ডফ্লায়ারটি। চারপাশে কোন বসতি নেই, মাঝে মাঝে বিভিন্ন আকৃতির কিছু গ্রাউন্ডফ্লায়ার বিপরীত দিক থেকে এসে প্রচণ্ড বেগে ক্রস করে যাচ্ছে।

“লিডান আপনি এত দূরে থাকেন কেন? শহরের কাছেও-তো থাকতে পারতেন!” জিজ্ঞেস করে নিউক।

“আমার নিভৃতে থাকতেই ভাল লাগে। তাছাড়া গ্রাউন্ডফ্লায়ার দিয়ে শহরে আসতে বেশী সময় লাগে না, বড়জোর দুই ঘণ্টা।” জবাব দেয় লিডান।

“আমার কিন্তু ব্যাপারটা ভালই লাগে, নিরিবিলি পরিবেশে, চমৎকার।” পাশ থেকে বলে প্লেরা।

“তোমাদের দুজনকে কিন্তু বেশ মানিয়েছে।” আচমকা পিছন থেকে বলে উঠে আনা ওয়াটসন।

প্লেরা এবং নিউক বেশ অস্বস্তিতে পরে যায়।

থেমে আবার বলে আনা “বয়সের দিক থেকে তোমাদের দুইজনকে মানিয়েছে তাছাড়া দেখতেও যুতসই। চিন্তা কর মানব ইতিহাসের দু-হাজার বছর পর দুজন মানব-মানবির জুটি দেখবে বিশ্ব।”

প্লেরা মাথা নিচু করে নিউকের দিকে আড় চোখে তাকাল। দুজনের চোখাচোখিতে বেশ লজ্জায় পরে যায়। প্লেরার আনার কথা শুনতে মজা লাগলেও চেহারায় সেটা প্রকাশ না করে খেঁকিয়ে বলে “আপনি চুপ করেন আনা। আমরা একটা কাজে যাচ্ছি, আর আপনি একবার এনি রোবটের পিছু লাগলেন আর এখন আমাদের পিছনে।”

“আরে না না প্লেরা তোমরা আমাকে ভুল বুঝ না। আমার কথা চিন্তা করে দেখতে পার তোমরা দুজন, মানব ইতিহাস তোমরা অমর হয়ে থাকবে কিন্তু। তোমরা হবে নতুন প্রজন্মে আদম এবং ইভ বুঝলে!” উচ্চ স্বরে হেসে বলে আনা।

প্লেরা আনাকে কিছু বলতে গিয়েও দমে গেল, সে লক্ষ করে দেখল নিউককে কেমন জানি বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। এবারো লিডার খ্যাঁকানিতে চুপ করে যায় আনা ওয়াটসন। তারা তখন প্রায় শহরের প্রবেশ পথের কাছে চলে এসেছে, সামনেই দেখতে পারে কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে সমস্ত গ্রাউন্ডফ্লায়ারগুলো চেক করছে। ঘাবড়ে যায় প্লেরা কারণ তাদের তথ্য থাকতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে। জেনারেল গ্রাটিয়া কয়েকদিন ধরে শহরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করেছে, তাছাড়া গতকাল প্লেরা দেখেছে কয়েকজন রোবটকে তার এপার্টমেন্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে। রোবটগুলো কি তাকে চোখে চোখে রাখছিল কিনা সে বলতে পারে না! মাথার ভিতর অনেকক্ষণ ধরে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তার, রোবটগুলো যদি জেনে থাকে প্লেরা সেখানে থাকে তাহলে তাকে না ধরে চোখে চোখে রাখছিল কেন! আর ভাবতে পারে না প্লেরা!

জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে প্লেরা লিডানকে বলে “এখন কি করব আমরা লিডান?”

“হুম, এখান থেকে আমাদের ধরা পরলে চলবে না। তাহলে সব কিছু ভেস্তে যাবে! চিন্তা করতে দাও।” বলে লিডান।

গ্রাউন্ড ফ্লায়ারটি থামায় এনি রোবট। একজন অফিসার এসে দাঁড়ায় সামনে। এনি রোবট গ্রাউন্ডফ্লায়ারের কাচটি উন্মুক্ত করে মাথা বের জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে?”

“তোমাদের গাড়িতে কে কে আছে? উপর থেকে অর্ডার আছে, আমাদের চেক করতে হবে প্রত্যেকটা গাড়ি।” বলে অফিসার।

“আমাদের তাড়া আছে যেতে দিন। তাছাড়া আমাদের গ্রাউন্ডফ্লায়ারে এমন কিছু নেই যে আপনাকে পরীক্ষা করতে হবে।” বলে এনি রোবট।

অফিসার খেঁকিয়ে উঠে বলে “এমন কিছু আছে কিনা নেই সেটা তোমাকে নির্ণয় করতে হবে না নির্বোধ রোবট।”

নির্বোধ বলাতে আত্মসম্মানে বাধে এনি রোবটের, তর্কে ঝরিয়ে যায় অফিসারের সাথে। গলায় যথা সম্ভব ঝাঁঝ মিশিয়ে বলে “আমার নাম এনি রোবট। আমি একজন অতি বুদ্ধিমান রোবট, বুঝলেন?”

“হয়েছে হয়েছে ভিতরে কে কে আছে? আগে বের হতে বল।” বলে অফিসারটি।

লিডান বুঝতে পারে নিউক এবং প্লেরার সমস্ত তথ্য আছে তাদের কাছে, অফিসারের হাতের অদ্ভুত যন্ত্রটি চিনে ফেলবে তাদের।

লিডান গ্রাউন্ডফ্লায়ার থেকে মাথা বের করে বলল “আমরা জরুরী জ্বালানী নিয়ে যাচ্ছি। জ্বালানী গাড়িকে চেক করার নিয়ম নেই অফিসার। তাছাড়া এখানে এমন কেউ নেই যে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে।”

ততক্ষণে অনেকগুলো রোবটও চলে এসেছি। অফিসার ভ্রু কচুকে বলল “আমাদেরে উপর থেকে অর্ডার আছে ম্যাডাম, সব ধরনের গাউন্ডফ্লায়ারকেই পরীক্ষা করতে হবে।”

অবস্থার বেগতিক থেকে আনা গ্রাউন্ডফ্লায়ার থেকে নেমে এসে অফিসারকে রাস্তার পাশে নিয়ে কি যেন বলল। অফিসারটিকে দেখা গেল কিছুটা নমনীয় হতে এবং কিছুক্ষন পর তাদের গ্রাউন্ড ফ্লায়ারটিকে ছেড়ে দিতে রাজি হল অফিসার।

গ্রাউন্ডফ্লায়ারটি ছুটে চলল সামনের দিকে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাচল।

“অফিসারকে কি বলে রাজি করালে?” জিজ্ঞেস করল লীডা।

“কিছু ইউনিট পকেটে গুজে দিয়ে বলেছি গাউন্ড ফ্লায়ারে কিছু কাগজ পত্র বিহিন জ্বালানী আছে তাই সবার সামনে বের করতে চাচ্ছি না।”


ষোল অধ্যায়

গ্রাউন্ডফ্লায়ারটি যখন শহরের ভিতরে চলে এসেছে তখন সন্ধ্যা। চারদিকে কোলাহলপূর্ণ, রোবট এবং মানুষগুলো যে যার মত ছুটে চলছে, রাস্তার দুধারে দোকানগুলোতে কর্মব্যস্ত দোকানীরা। রাস্তার মাঝখান দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রাউন্ড ফ্লায়ারগুলো টহল দিচ্ছে অনবরত। গ্রাউন্ডফ্লায়ারগুলো থেকে জেনারেল গ্রাটিয়ার লোকজন কটমট করে তাকিয়ে চারপাশটা পরখ করে নেয়, মাথার উপরে উড়ছে সাময়িক এবং যাত্রীবাহী স্কাইজায়ানগুলো। এনি রোবট নির্দেশমতো বারের থেকে পাঁচশত মিটার দূরে গ্রাউন্ডফ্লায়ারটি থামায়, তারপর ছোট পায়ে সবাই বারটার ভিতরে প্রবেশ করে।

“আপনারা এখানে এসেছেন কেন?” কেউ একজন পিছন থেকে বলে।

প্রশ্নটি যে করল সে একজন ওয়েটার এই বারের। গায়ে লাল কোর্ট জরানো, লম্বায় মাঝারী সাইজের, চেহারা দেখতে মোটামুটি। সবাই ঘুরে তাকায়।

লিডান সামনে এগিয়ে গিয়ে নিচু গলায় বলে “কেন কি হয়েছে?”

বারের ভিতরটায় তখন বিভিন্ন মানুষ ভর্তি, সবাই ছড়ানো ছিটানো টেবিলগুলোতে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ খাচ্ছে, লুকিয়ে অনেকে বেআইনি জিনিষ বেচাকেনা করছে, দরকষাকষি করছে অনেকে গোল হয়ে, যে যার মত ব্যস্ত। মাথার উপরে ঝুলে বিভিন্ন রঙবেরঙের বাল্ব। সবার কিচির মিচির শব্দে কথা ঠিকমত শুনা যায় না।

ওয়েটার লিডানের কানের কাছে এসে তথ্য সরবরাহ করার গলায় বলে “কয়েকদিন আগে জেনারেল গ্রাটিয়া এসেছিল, গোপন আস্তানার খবর পেয়ে গেছে। আমাদের অনেক লোককে ধরে নিয়ে গেছে, যদিও আমরা বলেছি আন্ডারগ্রাউন্ড ভাড়া দিয়েছিলাম সেটা কি কাজে ব্যাবহার হচ্ছে জানিনা, তবে এটা নিয়ে জল ঘোলা কম হচ্ছে না।”

“ওরা এই বারের খবর পেল কিভাবে?” জিজ্ঞাস করে লিডান।

সেটা জানিনা তবে শুনেছি একটি বিশেষ মাধ্যমে আপনাদের খবরাখবর পেয়ে যায়।

চিন্তায় পরে যায় লিডান। প্রসঙ্গ পাল্টে বলে শুন “একটা বিশেষ দরকারে এসেছি এখানে। তোমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।” আড় চোখে চারদিকে তাকায় লিডান।

ওদিকে প্লেরা এবং নিউক বারটার নিরিবিলি এক কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আনা তাদের নিয়ে দুষ্টামি করার পর থেকে প্লেরার কেন জানি বেশ লজ্জা লাগছে নিউকের চোখের দিকে তাকাতে।

“কি ব্যাপার কোন কথা বলছ না?” কোমল গলায় বলে প্লেরা।

নিউক এতক্ষণ লক্ষ করেনি, প্লেরা চেহারাটা ত্বক বেশ মসৃণ দেখাচ্ছে আজ, চুলগুলো অন্য সময়ের মত ততটা অগোছালো নয়, বেশ পরিপাটি। দেখতে অনেকটা গ্রিক দেবীদের মত লাগছে। নিউকের বুকের মাঝে কেমন জানি এক ধরণের কম্পন অনুভব করে।

“কি বলব?” একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নিউক।

থেমে বলে “জানিনা এই অনিশ্চয়তার সময়ের অবসান কবে হবে। জানিনা কোন মরীচিকার পিছনে ছুটছি, এর শেষ হবে কিনা তাও জানিনা। চার হাজার বছর ধরে মনে হয় একটু সুখের আশায় ছুটে চলছি।”

প্রসঙ্গ পাল্টে প্লেরা বলে “আমি মৃত্যুকে ভয় পেতাম না এতদিন, তবে আজকাল আমার খুব বাচতে ইচ্ছে করে নিউক। একটি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে মন চায়, মনে হয় সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে পারতাম।” প্লেরার কণ্ঠে আবেগ ঝরে পরে।

নিউক গভীর মমতায় প্লেরার মাথায় হাত বুলায়।

“নিশ্চয়ই এই অনিশ্চিত সময়ের অবসান হবে এক সময়!” সান্ত্বনা দেবার সুরে বলে নিউক।

“জানিনা সেটা কবে হবে।” বলে প্লেরা।

“আমরা মনে হয় ঠিক পথেই আছি, শীঘ্রই আমাদের জয় হবে। সব অপশক্তি পরাজিত হবে প্লেরা।”

বড় কোন ঝরের আগে যেমন সব কিছু থুম ধরে থাকে, এখনকার সময়গুলো অনেকটা সেরকম। সামনে ভয়াবহ কোন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে প্লেরার মন বলছে।

প্লেরা গলায় আবেগ ঢেলে বলে “এ যাত্রায় যদি বেচে যাই তাহলে তোমাকে নিয়ে একটি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই নিউক।”

নিউকের বুকের ভিতরটা যেন ধুমরে-মুচড়ে যাচ্ছে কারণ সে জানে সেটা কখনও সম্ভব নয়। নিউক এই জগতে একটি বিশেষ প্রয়োজনে এসেছিল, তবে এখন প্রয়োজন পাল্টেছে, প্লেরা নামক এই মেয়েটাকে সুখী দেখতে পারলেই সে সুখী হবে। ইচ্ছে থাকলেও প্লেরাকে তা বলতে পারে না নিজের অসুখের কথা।

“তোমরা এখানে কি করছ? তোমাদের খুঁজছি কিছুক্ষণ ধরে। পিছন থেকে বলে আনা ওয়াটসন।”

আনার কথায় দুজনের ধ্যান ভেঙে বাস্তবতায় ফিরে আসে তারা। ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় নেয় তারা।

“এইতো এমনি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।” বলে নিউক।

এনি রোবটও আনার পিছন পিছন এসে হাজির হয়। “মহামান্য আনা আপনি আবার কোথায় চললেন?” পিছন থেকে বলে এনি রোবট।

“হতভাগা তুই আবার আমার পিছনে পিছনে আসলি কেন?” মাথাটা পিছনে ঘুরিয়ে বলে আনা।

আনার কথা শুনে এনি রোবটের চকচকে মুখটি কুচকে ফেলল। ধাতব কণ্ঠে বলল “আপনি আমাকে অপমান করছেন মহামান্য আনা।”

খেঁকিয়ে উঠল আনা। “আমার সামনে অপমানের কথা বলবি না হতভাগা। যন্ত্রের আবার অপমান কিরে? টেলিভিশন, স্কুপ, ড্রাইভার, ফ্রিজ এগুলোর কি আবার অপমান আছে?”

এবার এনি রোবট গলায় যথা সম্ভব ঝাঁঝ মিশিয়ে ধাতব কণ্ঠে বলল “আমি আপনাকে আগেও বলেছি আমি অতি বুদ্ধিমান রোবট, লেথরিন স্কেলে আমার………..”

কথাটা শেষ করতে পারল না, প্লেরা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল “আহা এখানে আমরা একটি বিশেষ কাজে এসেছি, ঝগড়া ঝাটি করতে নয়। আনা আপনি এনি রোবটের পিছনে লাগা বন্ধ করবেন?”

গম্ভীর মুখে আনা বলে “তুমি কি শুধু আমার দোষটাই দেখ? এই হতভাগাটা যে মুখে মুখে তর্ক করে সেটা দেখ না?”

তাদের কথোপকথনের মাঝে লিডান এসে হাজির হয়। “আমাদের কাজ হয়ে গেছে।” বলে লিডান

“মানে?” জিজ্ঞেস করে আনা।

“বায়ো কম্পিউটার পেয়ে গেছি একজনের কাছ থেকে।” বলে লিডান।

“এত সহজে পেয়ে গেলেন? এই ধরণের কম্পিউটার বাজারে বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এগুলো বিক্রি-কিনির জন্য লাইসেন্স লাগে।” বলে আনা। তার চোখেমুখে বিস্ময়।

“ওহু, আপনি ভুলে গেছেন আনা, এখানে সব অবৈধ জিনিষ বিকিকিনি হয়।” বলে লিডান।

তারপরও আনা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না এত সহজে জিনিষটা পাওয়া যাবে।

যোগ করে লিডান বলে “ইউনিট একটু বেশী খরচ করতে হয়েছে এই যা। সাধারণত যে দামে বিক্রি হয় তার থাকে বিশ গুন বেশী দামে কিনেছি এক জনের কাছ থেকে।”

পাশ থেকে নিউক বলে “কোথায় সেই বায়ো কম্পিউটার?”

লিডান পকেট হাতরে ছোট একটি ডিভাইস দেখায়।

নিউক চোখেমুখে অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করে বলে “এটা বায়ো কম্পিউটার? এই শক্তিশালী কম্পিউটার অথচ এত ছোট!”

“এটা ছয় হাজার আশি সাল নিউক। এটা তোমাদের সেই প্রাচীন যুগ নয়। এই ক্ষুদ্র ডিভাইসটা হল বায়ো কম্পিউটারের প্রসেসিং ইউনিট, এটাকে আমাদের মনিটরের সাথে যুক্ত করে দিলেই হবে।”

যোগ করে লিডান বলল “চল এখান থেকে কেটে পরা যাক। এখানে থাকা আর নিরাপদ নয়।”

আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল লিডান আর তখনই অতর্কিত হামলা টের পায় তারা। কয়েকজন রোবট ঢুকে পরে বারটাতে, এলোপাথাড়ি রশ্মি ছুড়তে থাকে। অনেকেই রশ্মিতে ঝাঁঝরা হয়ে পরে যায়, উপরের লাইটগুলো চুরমার করে ভেঙে পরে রশ্মির আঘাতে। বারের চারদিকেই রশ্মির আঘাতে ফাকা হয়ে গেছে, সেই ফাঁক দিয়ে যে যেভাবে পারে বের হয়ে যেতে থাকে বাহিরে।

“তাড়াতাড়ি চল বেরিয়ে যাই।” বলে উঠে লিডান।

তারা বারের ফাকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে ছুটে চলে নিজেদের গ্রাউন্ডফ্লায়ারের দিকে। গ্রাউন্ডফ্লায়ারের পিছনের দরজা দিয়ে উঠে পরে নিউক, প্লেরা এবং লিডান। এনি রোবট আগেই উঠে পরেছিল গ্রাউন্ডফ্লায়ার ড্রাইভিং সীটে, সে স্টার্ট দিতে নেয় আর অমনি তাকে হাত দিয়ে ইশারা করে স্টার্ট না দিতে বলে নিউক।

হাফাতে হাফাতে নিউক বলে “আনা আমাদের সাথে নেই। সে মনে হয় পিছনেই রয়ে গেছে।”

গ্রাউন্ডফ্লায়ারের পিছনের দরজাটা খুলে ফাঁক দিয়ে উকি দিয়ে আনাকে খুঁজার চেষ্টা করে প্লেরা।

পাশ থেকে খেঁকিয়ে উঠে লিডান। “তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ কর, সবাই আমাদের পিছু নিয়েছে, আনাকে রেখেই চলে যেতে হবে।”

রোবটগুলো তখনও তাদের গ্রাউন্ডফ্লায়ারকে লক্ষ করে রশ্মি ছুড়ছিল। রশ্মির আঘাতে গ্রাউন্ডফ্লায়ারের পিছনের ডানাটা কিছুটা ভেঙে পরল, আগুন জ্বলে উঠল ধপ করে। এনি রোবট গ্রাউন্ডফ্লায়ার চালু করে দেয়, প্লেরা দরজাটা বন্ধ করতে যাবে আর ওমনি একটি বড় লোহার দণ্ড কেউ ছুড়ে মারে, সেটা সরাসরি প্লেরার বুকের মাঝখানে এসে লাগে। পাশে দাঁড়িয়ে নিউক, তার চোখের সামনেই গ্রাউন্ডফ্লায়ারের মেঝেতে আঁচড়ে পরে প্লেরা।

আগের পর্ব:
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব এক)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব দুই)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব তিন)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব চার)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব পাঁচ)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব ছয়)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব সাত)

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক সুন্দর।

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫২

কাছের-মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে প্রথম পেলাম এই সিরিজে। আগের পর্বগুলো কি পড়েছেন্?
না পড়লে খুব একটা মজা পাবার কথা না!!

২| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: রোবটদের কর্মকান্ড কিছু বুঝতে পারছি না।
বোবটদের আমার ব্যাক্তিগত ভাবে পছন্দ না। বোবট তো আর মানূষের প্রতিদন্ডি হতে পারে না। এটা আমি ভাবতেপো চাই না।

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: আসলে রোবটদের দিয়ে অনেক কঠিন কাজ করিয়ে নেয়া যায় যেগুলো মানুষের জীবনের জন্য হুমকি সরুপ। তবে রোবট খারাপ মানুষের হাতে পরলে, মানুষ নিজের লাভের জন্য রোবটদের ভয়ঙ্কর কাজে ব্যাবহার করতে পারে!

এনি রোবট কেমন সেটা পরের পর্বে প্রকাশ পাবে।

৩| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১০

কল্পদ্রুম বলেছেন: আমার ধারণা উন্নত বুদ্ধিমত্তার একটা প্রমাণ হলো মিথ্যা বলতে পারা।এনি রোবটকে সেই হিসেবে বুদ্ধিমান/বুদ্ধিমতি স্বীকার করতেই হবে।

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৭

কাছের-মানুষ বলেছেন: অবশ্যই এতে দ্বিমত নেই। মিথ্যে বলতে পারার মত লজিক কেবল বুদ্ধিমানদেরই থাকে। এনি রোবট ভাল না খারাপ সেটা সামনের পর্বে প্রকাশ পাবে।

তবে সামনের পর্বে একটি টুইস্ট আছে।

৪| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:১১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন । শুভ কামনা

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি প্রথম থেকেই আছে এই সিরিজে। আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমার ভাল লাগল।

৫| ০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: উফফ...

এমন জায়গায় কেউ শেষ করে? ;)
পুরাই টেনশনে রেখে দিলেন.........

কি হলো প্লেরার?

অপেক্ষা যাতনাময় :)

++++++

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০০

কাছের-মানুষ বলেছেন: হা হা মাঝে মাঝে একটু সাসপেন্ট ক্রিয়েট করতে হয়! নয়ত মজা থাকে না!

সামনের পর্বে বুঝা যাবে কি হল। তবে ভাল কিছু হোক প্লেরার সেটা আমিও চাই।

একটি টুইস্ট আছে এটা বলতে পারি সামনের পর্বে।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রইল।

৬| ০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:২৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: পরের পর্ব

৭| ১০ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


ভালো জায়গায় থামিয়েছেন! মনে হচ্ছে পেছন থেকে পড়ে আসলে আরও ভালো লাগবে।
সাইয়েন্স ফিকশন তো আপনার বিষয়, যতটুকু মনে পড়ে :)

১০ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনাকে এই সিরিজে পেয়ে ভাল লাগল। আপনার কমেন্ট সবসময় আমাকে উৎসাহ যুগায়।

হা হা আপনার স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.