নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’ https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! ! https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব তিন)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫২


পাচ।
“আজ শুক্রবার, নভেম্বরের পঁচিশ তারিখ, ঘড়িতে এখন সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা। আমরা এখন আমাদের স্কুলের ল্যাবরেটরিতে আছি, আমরা আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত এক্সপেরিমেন্টটি করতে যাচ্ছি। এর আগেও বেশ কয়েকবার আমরা আমাদের পরীক্ষাটা করেছিলাম, তবে আফসোস, সেটা সফল হয়নি কোন কারণে।“ বলেই হাফাতে থাকে দিপু।

স্টকের অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে পুনরায় দম নিয়ে শুরু করে “আমাদের বিশ্বাস আমরা আমাদের পরীক্ষায় সফল হব, আমাদের এই এক্সপেরিমেন্ট সফল হলে আমরাই হব প্রথম মানুষ যারা সফলভাবে কোয়ান্টাম টেলিপোর্ট করেছে।“

সুমি তখন টিটুনের বাবার ডায়েরিটা পরছিল, বিরক্তি নিয়ে দিপুর দিকে তাকিয়ে বলল “তোর বকবক বন্ধ করবি, কি করছিস?“

“মোবাইলে ভিডিও করে রাখছি, আমরা সফল হলে এটাকে আমরা সারা দুনিয়ার সাথে শেয়ার করব“ বলতে বলতে হাতে ধরে রাখা মোবাইলের ভিডিও রেকডিং বন্ধ করে বলল দিপু।

টিটুন মনোযোগ দিয়ে তখন ডিভাইসটা দেখছিল, পুরো ডিভাইসের একটি প্রোটোটাইপ সে কম্পিউটার এ প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছে, তার বাবার ডায়েরিতে রাফ একটা ডিজাইন ছিল, সেটা দেখে কয়েক বছরে টিটুন এই ডিভাসটি বানিয়েছে। চিকুন ইলেকট্রিকের তারটি দাঁত দিয়ে ছিরে সার্কিটের ক্যাপাসিটরের লাগাতে লাগাতে বলল “ডায়েরির গাইডলাইন অনুসারে এখান একটি বৃত্তাকার ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ওয়ার্মহোল তৈরি হবে, যেটা আমাদের এই স্পেইসের সাথে অন্য প্রান্তের স্পেইসের সংযোগ করবে। “ ডিভাইসের উপরের প্রান্তের ক্ষুদ্র একটি সেন্সরের দিকে ইশারা করে বলল টিটুন।

থেমে বলল “এই ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ভিতর দিয়ে হেটে গেলে আমরা যে কোন জায়গায় যে কোন সময় পৌঁছে যাব।“

দিপুর যেন তর সইছে না এই পরীক্ষাটি করার জন্য। উত্তেজনায় ঘামছে সে, “আমরা একটি ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছি, আমার এখনো মাথায় ধরছে না আমরা কিভাবে অদৃশ্য হয়ে যাব? “ বলেই পকেট থেকে ফের মোবাইলটি বের করে ভিডিও রেকর্ডিঙটা চালু করল।

টিটুন সার্কিটের কানেকশন গুলো ভালভাবে পরীক্ষা করছিল মাথা নিচু করে, দিপুর দিকে না তাকিয়েই বলল “আইনস্টাইনের সূত্র অনুসারে এনার্জি সমান সমান এম সি স্কয়ার অর্থাৎ বস্তু বা আমাদের মানব শরীর হল এনার্জিরই আরেকটি অবস্থা, বলতে পারিস অত্যন্ত হাই এনার্জি পুঞ্জিভূত হয়ে আমাদের এই মানব শরীর গঠন করেছে, এই ডিভাইসটি আমাদের এই শরীরকে পুনরায় এনার্জিতে রূপান্তর করে ফোটন আকারে এই ম্যাগনেটিক ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে স্থানান্তর করবে। অন্তত বাবার ডায়েরি সেটাই বলে।“

“জিনিয়াস, তুই এত কিছু জানিস কিভাবে? “ ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করে সুমি।

টিটুন হাটু গেড়ে মনোযোগ দিয়ে ডিভাইসের ভিতরের সার্কিটকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শেষ বারের মত পরখ করে দেখছিল, কাজ বন্ধ করে সুমির দিকে তাকিয়ে বলল “বাবার কাছে গেলেই সে সারাদিন এগুলো নিয়ে বকবক করত, তার বকবকানি শুনতে শুনতে আমারো মুখস্থ হয়ে গেছে। আমি চার বছর বয়সেই বাবার কাছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখেছিলাম, বাবা বলত মানব শিশু অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায়, মানুষের মস্তিষ্ক হল এই পৃথিবীর সব থেকে আজব যন্ত্র। পৃথিবীর এমন কিছু নেই যে করতে পারে না“ বলেই থামে টিটুন। তাকে বেশ অন্যমনস্ক লাগে। বাবার কথা মনে হলেই সে কেমন জানি হয়ে যায়।

দম নিয়ে পুনরায় বলে “কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতিত এবং, পারিপার্শ্বিক অবস্থায় মানুষ তার সেই সম্ভাবনা অনেকটাই হারিয়ে ফেলে।“

“হুম, বুঝছি, তুই সত্যিই জিনিয়াস“ টিটুন খোঁচা মেরে বলে সুমি।

“ভুল বললি, এটা আমার কথা না, আমার বাবার।“ পুনরায় নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে সার্কিটটা একটি ধাতবের ভিতরে ঢুকিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে টাইট দিতে দিতে বলে টিটুন।

পুরো ডিভাইসটা রেডি, ডিভাইসটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেটা অসীম এনার্জির ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করবে। টিটুন ডিভাইসটা ল্যাবরেটরির টেবিলে রেখে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়। উত্তেজনায় তিনজনই ঘামছে, কি ঘটছে যাচ্ছে তারা হয়ত নিজেরাও জানেনা।

“আমরা এখন শুরু করতে পারি।“ বলল দিপু।

টিটুন হঠাত বৈদ্যুতিক সংযোগটা খুলে ফেলে।

সুমি এবং দিপু দুজনেই অবাক হয়ে টিটুনের দিকে তাকিয়ে সমস্বরে বলে “কি হল, খুলে ফেললি কেন?“

একটু থামে টিটুন তারপর বলে “আমি তোদের একটা কথা বলতে চাই ডিভাইসটা চালু করার আগে।“ বেশ নাটকীয়ভাবে বলে টিটুন।

থেমে বলে “তোদের হয়ত বলা হয়নি এই এক্সপেরিমেন্টটা ভয়ানক, যদি ভুল হয় তাহলে খুব খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে, ভুল হলে আমাদের এই ল্যাবরেটরি , এমনকি এই পুরো শহরটাই উড়ে যেতে পারে। আমি চাইনা তোদের কিছু হোক।“

“আমরা যদি এই এক্সপেরিমেন্ট না করি তাহলে কি তুই করবি না? “

“আমি একা হলেও করব। যা হয় হোক আমি করবই।“ দৃঢ প্রত্যয়ে বলে টিটুন।

“তাহলে আমাদের কথা চিন্তা করিস না। যাই হোক এটা করবই আজ“ বলে দিপু।

সুমি দিপুর কথায় সমর্থন জানিয়ে বলল “আমাদের কথা চিন্তা করিস না, যা হয় হবে আমাদের, আমরা এটা করবই।“

এই বয়সের ছেলেমেয়েদের সাহস থাকে অনেক, তারা যে কোন ভয়ংকর কিছুও অনায়াসেই করে ফেলতে পারে, ভয় পাওয়ার জন্য মানুষের মস্তিষ্ক যতটা পরিপূর্ণ হতে হয় ততটা পরিপূর্ণ নয় বিদায়ই হয়ত এই বয়সের ছেলেমেয়েরা একটু বেশীই সাহসী হয়। টিটুন পুনরায় ডিভাইসটি বৈদ্যুতিক সকেটের সাথে সংযোগ দিয়ে দেয়।

তিনজন চোখেমুখে উত্তেজনা। দিপু ডিভাইসের বাটনটা চেপে ধরে।

সার্কিটটাতে প্রথমে বেশ গরম হয়ে যায়, তারপর থরথর করে কাপতে থাকে। ডিভাইসের কাঁপুনির সাথে পাল্লা দিয়ে টেবিল টাও কাপতে থাকে, তারা তিনজনই কি হতে যাচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে না, তিনজন তিনজনের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে, হঠাত বিকট শব্দ হয়ে, সাথে শর্ট সার্কিটের চর চর শব্দ কানে এসে বাড়ি খায় প্রচন্ডভাবে, তীব্র আলোর ঝলকানি দিয়ে ল্যাবরেটরির উপর ঝুলে থাকা বাল্বটি আলো বেড়ে গিয়ে ঠাস করে শব্দ করে ভেঙ্গে যায়, ল্যাবরেটরির টিনের চালটা অনেক খানি উড়ে যায়। সার্কিটের ভিতরে থাকা তারগুলো পুরে যায়, পোড়া তারের তীব্র গন্ধে ভরে যায় এই ল্যাবরেটরিটা, মূহুর্তেই পুরো ল্যাবরেটরিতে কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়।

“আমাদের এখনই এখান থেকে যেতে বলে বলে সুমি, স্কুলের মতিন চাচা আশেপাশের থাকে, আমাদের দেখে ফেললে খবর আছে।“

টিটুন গরম হয়ে পুরে যাওয়া সার্কিট আর বাবার ডায়েরিটি ব্যাগে ঢুকাতে যাবে, হঠাত একটি কালো ধোয়া দেখতে পায়, যেটি পাক দিয়ে একটি ছায়ামূর্তির আকার ধরন করে, ছায়া মূর্তিটার মাঝখানে মাঝখানে বৈদ্যুতিক আল চমকাচ্ছে। টিটুনের মনে হয় এই ছায়ামূর্তিটাকে আগে কোথাও দেখেছে কিন্তু মনে করতে পারে না।

“কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছিস কেন? “ যাবার জন্য তাড়া দিয়ে জিজ্ঞেস করে দিপু।

টিটুন দিপুর দিকে তাকিয়ে পুনরায় ছায়া মূর্তিটি যেখানে ছিল সেদিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে কিছুই নেই।

ছয়।
এই সকাল সকাল সুমির কাছ থেকে ফোনে খবরটা শুনার পর থেকে টিটুনের অন্তরাত্মা কেপে উঠেছে। সে অনবরত ঘরের ভিতর পায়চারি করছে, ঘটনাটা কি লঘু ভাবে নেয়া উচিৎ না গুরুতর ভাবে সেটা এখনো ঠিক বুঝতে পারছে না। মনের অজান্তেই কানের থেকে ফোনটা নিচে নামিয়ে চিন্তার সাগরে ডুব দেয় টিটুন। ওদিকে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সুমি হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে, কিন্তু টিটুনের মনোযোগ নেই।

টিটুন তার রুমের জানালার পর্দাটা ফাঁক করে দেখল তার বাসার সামনেও একই রকম দুজন লোক অস্ত্রসহ দাঁড়িয়ে আছে সেই রাত থেকে, প্রত্যেকের পরনেই কালো প্যান্ট এবং স্যুট, চোখে সানগ্লাস। দুজনের প্যান্টেই পিস্তল।

সে নিজেকে সামলে লম্বা একটি দম নিয়ে বলে “ওরা কত জন লোক এবং কি পোশাক পরে আছে?”

সুমি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে “তোকে-তো বললামই দুজন লোক পরনে কালো প্যান্ট এবং স্যুট, চোখে সানগ্লাস। গতকাল থেকে রাত থেকে আমাদের বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করে দাঁড়িয়ে আছে।”

টিটুন চিন্তার সাগরে ডুব দেয়, এই লোকগুলো কে আর তাদের বাসার সামনেই কেন পাহারা দিচ্ছে। মনে মাঝে হাজারো প্রশ্ন উকি দিচ্ছে।

“কিরে কিছু বলছিস না কেন?” ফের প্রশ্ন করে সুমি।

সুমির প্রশ্নে চিন্তায় ছেদ পরে পরে টিটুনের, তার বাসার সামনেও যে দুজন দাঁড়িয়ে নজর রাখছে, ব্যাপারটা গোপন রাখে টিটুন, এতে সুমি আরো ভয় পেয়ে যেতে পারে। একটু চুপ থেকে নীরবতা ভেঙ্গে বলে “কখন থেকে ওরা তোর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে?”

“বললাম না সেই গতকাল রাত থেকে।“

“আমার বিশ্বাস এরা কোন আক্রমণ করবে না।“ গলার স্বর নামিয়ে বলে টিটুন।

“তুই কিভাবে নিশ্চিন্ত হলি এরা আক্রমণ করবে না?” পাল্টা প্রশ্ন সুমির।

“আক্রমন করলে এতক্ষন অপেক্ষা করত না নিশ্চয়ই!” বলে টিটুন।

“এরা কারা?” জিজ্ঞেস করে সুমি।

“আমি কি করে বলব?“ বিরক্তি নিয়ে বলে টিটুন।

“তোর কি মনে হয়? এরা কি পুলিশ? আমাদের এক্সপেরিমেন্টের ব্যাপারটা কি স্কুল কর্তৃপক্ষ জেনে গেছে, তারা কি পুলিশে খবর দিয়েছে?”

“এরা পুলিশ-তো মনে হয় না, তাছাড়া স্কুল থেকে পুলিশে খবর দিলে নিশ্চয়ই বাসায় পুলিশ আসত, আমাদের গার্জেনদের জানাতো।” বলে টিটুন।

“তাহলে এরা কারা?” ফের জিজ্ঞেস করে সুমি, তার গলায় আতংকের ছাপ।

টিটুনের নিজেরও বেশ ভয় লাগছে, সে নিজেকে সামলে প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে “দিপুর সাথে যোগাযোগ হয়েছে তোর?”
“না।“

“আচ্ছা আগে স্কুলে আয় সেখানে কথা হবে।“ বলে টিটুন।

টিটুনদের স্কুলটা উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা তবে ঢুকার গেট সবসময়ই উন্মুক্ত থাকে। দেয়ালের বাইরে কিছু টংয়ের দোকান, প্রতিদিনের মত বদরুল তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সিগারেট খাচ্ছে, ক্লাসে ইচ্ছে হলে যাবে আবার নাও যেতে পারে। সকালে স্কুলে এই সময়টাতে পিটি করায়, পিটি করাটা বদরুলের কাছে বিরক্তিকর, তার চেয়ে বরং সিগারেটে সুখ টান দেয়াটা আনন্দের।

তড়িঘড়ি করে দিপু স্কুলে ঢুকতে যাচ্ছিল কারণ পিটির পরে ঢুকলে পিটি স্যার পেঁদানি দিবে। বদরুল দিপুকে দেখে হাত উঁচিয়ে ডাক দিল। দিপু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই হেটে যাচ্ছিল।

বদরুল খাস চামচা বেঁটেখেঁটে সাইজের রিপন মুখ শক্ত করে ডেকে বলে “ঐ হতভাগা বড় ভাই ডাকে শুনিস না?”

“দেখিস না স্কুলে যাচ্ছি, দেরি হয়ে যাচ্ছে, আর আমরা সবাই একই ক্লাসে পড়ি, বদরুল আবার বড় ভাই হল কবে?“ রিপনের দিকে তাকিয়ে বলে দিপু।

বদরুলের ইশারায় তার আরেক চামচা শিপনকে বলে দিপুকে ধরে আনতে। শিপন তড়িঘড়ি করে থাবা দিয়ে দিপুকে ধরে নিয়ে আসে টংয়ের দোকানের কোনায়।

“আজকে থেকে আমাকে বড় ভাই ডাকবি ঠিক আছে?” সিগারেটের ধোয়াটা দিপুর মুখে ছেড়ে দিয়ে বলে বদরুল।

“দেখ বদরুল ঠিক হচ্ছে না কিন্তু, আমি স্যারের কাছে নালিশ করব।“ বলে দিপু।

বদরুল হাতের আধা খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে দিপুর কলার ধরে বলে “আমার নামে নালিশ করবি, আমি কি স্যারদের ভয় পাই হারামজাদা?”

দিপু চুপ হয়ে থাকে, নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার বৃথা চেষ্টা করে। “বদরুল ছাড় বলছি ব্যথা লাগছে।“

“একটা সিগারেট খাবি?” বলেই রিপনের কাছ থেকে একটি সিগারেট দিপুর দিকে এগিয়ে দেয় বদরুল।

“আমি সিগারেট খাই না।”

রিপন উত্তেজিত হয়ে দিপুর কলার ধরে দুই ঘুষি মেরে বলে “খাবি না কেন? বড় ভাই বলছে খা বলছি হতভাগা।“

ততক্ষণে সুমি চলে আসে স্কুলের ভিতর থেকে, তখনও দিপুর সাথে বদরুল এবং তার বাহিনীর ধস্তাধস্তি চলছিল। বদরুল প্রায় স্কুলের কারো না কারো সাথে এরকম করে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পায়, স্কুলের স্যারেরাও ব্যাপারটা জানে তবে সরাসরি বদরুলের ব্যাপারে কোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে না কারণ তারা বাবা বেশ প্রভাবশালী এবং এই স্কুলের হর্তাকর্তা।

“স্যার তোকে ডাকছে দিপু।” সুমি এসে বলে। মূলত বদরুলের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই মিথ্যেটা বলে সুমি।

নিজের জামাটা ঠিক করতে করতে নিজেকে বদরুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সুমি সাথে স্কুলে ডুকে দুজন।

“কি হয়েছিল ওরাকি তোকে মেরেছে? জিজ্ঞেস করে সুমি।

“না” গম্বীর মুখে বলে দিপু।

“মিথ্যে বলছিস কেন? তোকে দেখেতো মনে হয় মেরেছে।“ হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করে সুমি।

“মিথ্যে বলছি তাতে কি হয়েছে?” খেঁকিয়ে বলে দিপু।

“তুই রাগছিস কেন?” আমিতো শুধু জানতে

কথাটা শেষ করার আগেই দিপু বলে “হ্যাঁ মেরেছে এখন কি তুই ওদের বিচার করতে পারবি?”

দুজনেই চুপ থাকে, দিপু নীরবতা ভেঙ্গে বলে “আমার এগুলো নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।“

তারা দুজনেই হেটে স্কুলের ভিতরে যাচ্ছিস তখন পিছন থেকে টিটুন তাদের সাথে যোগ দেয়। “কি ব্যাপার তোরা কি নিয়ে কথা বলছিস?“ জিজ্ঞেস করে টিটুন।

সুমি ব্যাপারটা বলতে যাচ্ছিল তখন দিপু ইশারায় বদরুলের সাথে মারামারির ব্যাপারটা বলতে নিষেধ করে।

সুমি প্রসঙ্গ পাল্টে তাদের বাসার সামনে যে দুজন লোক দাঁড়িয়ে তার উপর নজর রাখছে ব্যাপারটা বলে। টিটুন এবং দিপুও স্বীকার করে নেয় যে তাদের বাসার সামনেও একই রকম পোশাক পরিহিত দজন লোক গতকাল রাত থেকে দাঁড়িয়ে ছিল। ব্যাপারটা কি ঘটছে তারা ঠিক বুঝতে পারছে না, তাদের কি কাউকে ব্যাপারটা বলা উচিৎ সেটাও মাথায় ধরছে না।

তারা তিনজনই স্কুলের ল্যাবরেটরির সামনে আসলে বড় ধরনের একটি ধাক্কা খেল, তারা এটা জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না। গতকাল রাতে তারা তাদের স্কুলের ল্যাবরেটরির ভিতর যেই এক্সপেরিমেন্টটা করেছিল, তাতে ল্যাবরেটরিতে বেশ বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছিল। তাদের স্পষ্ট মনে আছে ল্যাবরেটরির উপরের দিকটা উড়ে গিয়েছিল, শর্ট সার্কিটের ফলে বৈদ্যুতিক তার গুলো পুরে গিয়েছিল। অথচ ল্যাবরেটরির দিকে এখন তাকিয়ে দেখল বিস্ফোরণের কোন আলামতই নেই, তাছাড়া ল্যাবরেটরিটা তাদের এক্সপেরিমেন্টটা করা আগে যেমন ছিল এখন ঠিক অবিকল তেমনই আছে। এর মাঝে কেউ যদি পুরো ল্যাবরেটরিটা মেরামতও করে তারপরও পোড়া টেবিল, পুরা বৈদ্যুতিক তার দেখেই-তা বুঝা যেত। তারা তিনজনই প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে ল্যাবরেটরিটার দিকে তাকিয়ে আছে।

তাদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন উকি দিচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বাসার সামনে যেই লোক গুলো অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের উপর নজর রাখছে তারা কারা? আর এই ল্যাবরেটরিটাই বা কিভাবে অবিকল আগের মত হল? এই দুই ঘটনার সাথে কি কোন সংযোগ আছে?

বিঃ দ্রঃ প্রতিদিন একটি করে পর্ব দিয়ে বারটি পর্বে শেষ করে ফেলব।

আগের পর্বঃ ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব দুই )

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৪২

জুল ভার্ন বলেছেন: প্রথম দুই পর্ব পড়া হয়নি কিন্তু আপনার লেখাটা মুন্সিয়ানায় এই পর্ব পড়েই মুগ্ধ। +

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:২৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: এই পর্ব পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। বাকীগুলোও সময় করে পড়বেন আশাকরি!

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৭

ইসিয়াক বলেছেন:




দারুন রহস্যময়!!!
অধীর হয়ে পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম প্রিয় ব্লগার।
শুভকামনা সতত।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২১

কাছের-মানুষ বলেছেন: পাশের থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আর কিছুক্ষন পরেই পরে পর্ব দিয়ে দিব।

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: টিটুন আর সুমি ভালো।
কিন্তু বদরুল আসলেই বদ।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২৬

কাছের-মানুষ বলেছেন: আমি যখন স্কুলে নাইন/টেইনে পড়তাম, আমাদের সাথে এক ছেলে ছিল সে ক্লাসে পিস্তল নিয়ে আসত আর আমাদের কাছে গর্ব করে বলত তার পিস্তল আছে। পরে ছেলেটি র‍্যাবের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে অক্কা পায়।

আর একজন সহপাঠি ছিল আমাদের, সে টেষ্টে ফেইল করেছে দেখে সে পিস্তল নিয়ে স্যারের বাসায় গিয়েছিল স্যারকে শাসাতে, ছেলেটি স্যারের দিকে পিস্তল তাক করে নিজেই ভয়ে কাপতে থাকে, এবং স্যার তাকে ধরে ফেলে এবং পুলিশে দেয়।

আমার ধারনা এখনকার স্কুল পড়ুয়া অনেকে আছে যারা আরো ভয়াবহ!!


৪| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: আগামী বইমেলাতে তাহলে নতুন একটা বই পাওয়া যাবে?

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২৯

কাছের-মানুষ বলেছেন: একসময় অবশ্যই মলাটবদ্ধ হবে তবে এবারের মেলায় নাও আসতে পারে, কারন উপন্যাসটি অনেক দেরিতে লিখেছি, বইমেলাতো দেরি নেই আর, লেখা শুরু করেছিলাম গত মাসের শেষ দিকে! আরো কয়েক মাসে আগে লেখলে ভাল হত।

৫| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:২৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: পরের পর্ব

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বেশ জমে উঠেছে রহস্য...

দেরীতে পড়ার এই এক মজা
ওয়েট করা লাগে না ;) ক্লিক করলেই পরের পর্ব :) হা হা হা

++++

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৪০

কাছের-মানুষ বলেছেন: হ্যা সেটাই, দেরিতে পড়লে সব গুলো পড়া যায়, নয়ত এক পর্ব আজ পরের পর্ব আসতে আসতে দেরি হলে আগের পর্বের কাহিনী অনেক সময় মনে থাকে না। মূলত এর জন্যই আমি পুরো উপন্যাস শেষ করার আগে পোষ্ট দেই না, ২০২০ এ আমার প্রথম উপন্যাসও পুরোটা লেখা শেষ করার পরে ব্লগে দিয়েছিলাম।

পাঠের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.