নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’ https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! ! https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব সাত)

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৭


তেরো।
প্রাণীটির কপালে একটি চোখ, মিচমিচে কালো, আকাশে বজ্রপাতের মত সারা শরীর বৈদ্যুতিক আলো চমকাচ্ছে, চড় চড় শট সার্কিটের মত শব্দ হচ্ছে। সমস্ত আকাশ মেঘাছন্ন, ঘনঘন বৃষ্টি। প্রাণীটি এগিয়ে আসছে টিটুনের দিকে। টিটুন বুঝতে পারে না কি করবে। শরীরটা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে, ব্যাপারটা কি ঘটছে ঠিক সে বুঝতে পারছে না। মনের অজান্তে বুক ফুরে চিৎকার দিয়ে উঠে আর তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।

এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিল ভাবে টিটুন। স্বপ্ন এত সত্যি হয় কখনও। ধড়ফড় করে বিছানা থেকে উঠে টিটুন। ঘড়িতে দেখে সকাল সাতটা বাজে। স্কুলে যাবার সময় হয়েছে। গতকাল রাতে কমিক্সের বই পড়ছিল, সেগুলো বিছানাতে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে টিটুন।

“কিরে স্কুলে যাবি না?” রুমে ঢুকেই জিজ্ঞেস করে মা রাবেয়া।

“একটু পরে যাব।“

“রাতেই কি এই বই নিয়ে ঘুমিয়েছিলি? ঘরতো একবারও গুছাস না?”

“মা কথা বলনাতো আমার ভাল লাগছে না।“ বলে টিটুন।

“ঔষধ খেয়েছিস? কয়েকদিন ধরে “ঔষধ দেখি খাস না।“

“আমার ঔষুদ খেতে ভাল লাগে না, কয়বার বলব?”

মা দেখতে পেলেন টিটুনের বিছানায় কমিক্সের বই, তারা যখন আমেরিকায় ছিল তখন টিটুনের কমিক্সের বই এর নেশা হয়েছিল, ঔ অল্প বয়সে প্রচুর কমিক্স বই পড়ে শেষ করে ফেলেছিল টিটুন, বাংলাদেশে আসার পর কমিক্সের বইগুলো তেমন পড়ত না, ছেলেকে আবার আগের মত বই পড়তে দেখে ভালই লাগছে রাবেয়ার। তিনি ঘর গোছানর কাজে মনোযোগ দিলেন।

“কিরে ঘুম থেকে উঠেছিস?” জিজ্ঞেস করে দিপু।

টিটুন বুঝতে পারল মস্তিষ্কের ভিতর থেকে শব্দটা আসছে, “হুম।“

“আজকে একটা দুঃস্বপ্ন দেখলাম” বলল দিপু।

“কি দুঃস্বপ্ন?” প্রশ্ন টিটুনের।

“এক কালো প্রাণী, প্রাণীটির কপালে একটি চোখ, আকাশে বজ্রপাতের মত সারা শরীর বৈদ্যুতিক আলো চমকাচ্ছে, প্রাণীটি এগিয়ে আসছিল আমাকে গ্রাস করতে।“ বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে দিপু।

চমকে উঠল টিটুন। কারণ এই একই স্বপ্ন দেখেছে।সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে সাথে সাথে সুমির সাথে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।

“আজকে কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছিস?” জিজ্ঞেস করে টিটুন। হাফাতে থাকে সে।

“হ্যাঁ। কেন বলতো?”পাল্টা প্রশ্ন সুমির।

টিটুন বলে “এক কালো প্রাণী, প্রাণীটির কপালে একটি চোখ, আকাশে বজ্রপাতের মত সারা শরীর বৈদ্যুতিক! তাইতো?”
“তুই জানলি কি করে?”

চুপ থেকে বলে টিটুন “আমার ধারনা আমরা তিনজনই এই একই স্বপ্ন দেখেছি।“

তিনজনই বেশ চিন্তায় পরে যায়, কি করবে বুঝতে পারে না।

সকাল সকাল স্কুলে হুলস্থূল একটি কাণ্ড ঘটে গেছে। গতকাল রাতে দিপুকে বদরুল বাহিনী যে রাতে ধরে বেদম পিটিয়েছিল এই ব্যাপারটা কিভাবে যেন চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে। আজ ছাত্রছাত্রীরা কেউ ক্লাসে নেই সবাই এই ব্যাপারটা নিয়ে কানাঘোষা করছে প্রধান শিক্ষক মজিদ স্যারের রুমের বাইরে। এই স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর আগে, তবে এই প্রথম স্কুলে পুলিশ এসেছে, স্কুলের সমস্ত শিক্ষকেরা থমথমে মুখ করে বসে আছে প্রধান শিক্ষক মজিদ স্যারের কক্ষে। বদরুল বাহিনীর প্রধান সেনাপতি বদরুল এবং তার সঙ্গি রিপন আর শিপনকেও প্রধান শিক্ষকের রুমে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে, মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন। বদরুলের বাবা মোবারক চৌধুরী দাতে দাত চেপে বদরুলের দিকে একবার তাকায়, তারপর পুনরায় প্রধান শিক্ষকের দিকে।

মোবারক চৌধুরী হুংকার দিয়ে বলেন “এই স্কুলের আমার, আমার ডোনেশোনে এই স্কুল টিকে আছে, আমার ছেলেকে কে বিচার করে দেখে ছাড়ব।“

শিক্ষকেরা সব চুপ কররে বসে আছে কেউ কোন শব্দ করছে না মোবারক সাহেবের সামনে, বদরুলের কুখ্যাতি স্কুলে আগেই ছিল তবে হকিস্টিক দিয়ে কাউকে আক্রমণ করবে রাতে সহপাঠীর উপর এই ব্যাপারটা কেউ মানতে পারছে না।

“আপনার বেতন কে দেয় বলেন দেখি?” প্রধান শিক্ষক মজিদ স্যারের দিকে হাত উঁচিয়ে বলেন মোবারক চৌধুরী।

প্রধান শিক্ষকের কোমরে ক্যালসিয়ামের অভাবে নিচু স্বরে বলে “আপনি!”

“আমি সমাজ সেবক মানুষ, সমাজের মানুষের ভাল করি আর আমার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে? এতে আমার মান সম্মান থাকবে, ওসি সাহেব আপনাকে কে ডেকেছে?” উত্তেজনায় কাঁপছে মোবারক চৌধুরী।

“সকালে একজন শিক্ষক গিয়েছিল” মিনমিন করে বলে ওসি সাহেব।

কথাটা শেষ না করতেই মোবারক সাহেব বলে উঠেন “কোন শিক্ষক? কার এত বড় সাহস আমার ছেলের নামের পুলিশে কাছে বিচার দেরে?”

“তিনি এখনও আসেন-নি স্কুলে, আমরা স্কুলের দপ্তরি মতন চাচার মাধম্যে খবর পাঠিয়েছি।“ বলেন মজিদ স্যার।

“নবাবজাদা আমরা বসে আছি তার আসার খবর নাই। দেখি কি প্রমাণ নিয়ে আছে, আমিও দেখে ছাড়ব। ছেলেপেলে এই বয়সে না হয় একটু দুষ্টামি করেছে তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে?” বলেই সবার দিকে তাকায় সমর্থনের আশায় বদরুলের বাবা মোবারক চৌধুরী।

সবাই চুপ করে আছে দেখে, পুনরায় বলে “কি বলেন, ঠিক কিনা?”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কয়েকজন শিক্ষক মিনমিন করে “হু” বলে।

মোবারক চৌধুরী টেবিলে থাবা মেরে বলে “কে সেই শিক্ষক, নাম কি তার? আমার ছেলের নামে থানায় মামলা, সাহস কত বড়?”

প্রধান শিক্ষকে নাম বলতে যাবে তখন ওসি সাহেব বলে উঠেন “থানায় এসেছিল সকালে, নাম অজগর না কি যেন বলল।“

প্রধান শিক্ষক অসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে “নামটা অজগর নয়, আজগর, বি,এস,সি। পদার্থ বিজ্ঞানীর সম্মানিত শিক্ষক।”

“রাখেন আপনার সম্মানিত শিক্ষক, এরকম কত দেখলাম শিক্ষক। কত শিক্ষক আসল আর গেলো।“ ধমকের সুরে বলে মোবারক চৌধুরী।

পুনরায় বলে চলে “নিজের পকেটের টাকা খরচ করে স্কুল চালাই, আমি দিল দরিয়া মানুষ, আমি চাই এই অঞ্চলের মানুষ শিক্ষিত হোক, সমাজ সেবাই আমার একমাত্র কাজ। কি বলেন?” প্রধান শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে বলেন সমর্থনের আশায় বলে মোবারক চৌধুরী।

প্রধান শিক্ষক গোমরা মুখে মাথা নিচু করে আছে, মনে মনে গালি দিয়ে বলে “হারামজাদা সমাজ সেবা না ছাই, স্কুলের নাম করে সরকারী অনুদান এনে সব নিজের পকেটে ভরে আর বলে সমাজ সেবা? স্কুলের নামে অল্প কিছু জায়গা দিয়ে আসে পাশের মানুষের বিশাল এলাকা দখল করে বসে আছে। তাছাড়া এই স্কুল প্রথম থেকেই এমপিভূক্ত বিদায় শিক্ষকদের অর্ধেক বেতন সরকার থেকেই আসে, তার উপর জায়গার থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে স্কুল সুন্দর ভাবে চলতে পারবে। তবে কে প্রতিবাদ করবে? স্কুলটাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে এই বদের হাড্ডিটা।“ প্রধান শিক্ষকের মনে মনে তুমুল প্রতিবাদে ফেটে পরছে, ইচ্ছে করছে চড় মেড়ে মোবারক চৌধুরীর চোখা মুখটা ভোতা করে দেয় কিন্তু সাহসের অভাবে সেই ইচ্ছের বাস্তবায়ন করতে পারছেন না তিনি।

“স্যার চা খাবেন?” চায়ের কাপটা মোবারক চৌধুরীর দিকে প্রসঙ্গ পাল্টানোর সুরে বলে প্রধান শিক্ষক মজিদ স্যার ।

“রাখেন মিয়া আপনার চা” বলেই মোবারক চৌধুরী তর্জনী ওসি সাহেবের দিকে তাক করে বলেন “ওসি সাহেব, আপনি বসে আছেন কেন? থানায় যান, কোন কাজ নাই আজ?”

“স্যার, আমি সরকারী চাকরী করি, আজগর সাহেব প্রমাণ পত্র নিয়ে এসেছে, এখানে না এলে আবার কোন ঝামেলায় পরতে পারি।“ ওসি সাহেব হাত কচলায়।

মোবারক চৌধুরী চোখ গরম করে তাকিয়ে থাকে ওসি সাহেবের দিকে।

ততক্ষণে প্রধান শিক্ষকের রুমে আজগর স্যার প্রবেশ করে। সবাই দৃষ্টি আজগর স্যারের দিকে। মোবারক সাহেব আজগর স্যারকে দেখেই ফাল দিয়ে উঠে, হুংকার দিয়ে বলে “আপনি পুলিশকে ফোন দিয়েছেন, আপনি জানেন?”

কথাটা শেষ করার আগেই আজগর স্যার নিজের পাশে আশা আরেকজনকে দেখিয়ে বলেন “ইনি সাংবাদিক, ভাবলাম তাকে নিয়ে আসি, আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।“

সাংবাদিক মোবারক চৌধুরীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন “আপনাকে আমরা চিনি, যদিও সামনাসামনি দেখা হয়নি কখনও। আমি এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, আজগর স্যার নিয়ে এলেন, তাই ভাবলাম আপনাদের স্কুলটা পরিদর্শন করে যাই।“

সাংবাদিক শুনের মোবারক সাহেব চুপসে গেল, তিনি কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।

“এখানে কি ঘটছে?” প্রশ্ন সাংবাদিকের।

আজগর স্যার তথ্য সরবরাহ করার গলায় বললেন “তেমন কিছু নয়, মোবারক চৌধুরীর ছেলে এই স্কুলে পড়ে, কয়েকজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে নিজের সহপাঠীকে রাতে বেদর পিটিয়েছে। তাই তিনি নিজে এসেছে নিজের ছেলের বিচার করতে।“ মোবারক চৌধুরীকে খোঁচা মেরে বলল আজগর স্যার।

মোবারক চৌধুরী রাজনীতি করেন, তিনি ভালই করেই জানেন একটি স্ক্যান্ডাল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ফেলতে পারে, তার উপর সামনের মাসে নির্বাচন। আজগর স্যার যে তার সাথে গেইম খেলছে সেটা সে ভাল করেই বুঝতে পারছে।

মোবারক চৌধুরী ভোতা মুখে কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল “আমার ছেলে হতে পারে তবে যা অন্যায় তা অন্যায়। তাই নিজে পুলিশ ডেকে এনেছি ছেলেকে ধরিয়ে দিতে।“

ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে “ঠিক কিনা ওসি সাহেব?”

বদরুল ব্যাপারটা কি ঘটছে বুঝতে পারছে না, সে চুপ করে এতক্ষণ সব কিছু অবলোকন করছিল, তবে তার বাবার তিনশত ষাট ডিগ্রি পালটে যেতে দেখে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল “কি বলছেন আপনি?”

মোবারক সাহেব সবার সামনে ছেলেকে থাপ্পড় মেড়ে বলল, “চুপ থাক হতভাগা, আর এরকম করবি?”

প্রধান শিক্ষক এবার নিজের কোমরে কিছুটা ক্যালসিয়াম ফিরে পেলেন, তিনিও বদরুলকে ঠাডায়া একটা চড় মারলেন। মোবারক চৌধুরী আড়চোখে তাকালে প্রধান শিক্ষক মজিদ স্যার দুর্বল গলায় বললেন “একটু শাসন করলাম আরকি”।

প্রধান শিক্ষকের রুমে দিপু, সুমি এবং টিটুনকে ডাকা হল এবং তাদের বয়ান নিলেন ওসি সাহেব। ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীরাও আসতে আসতে মুখ খলল। বদরুল এবং তার বন্ধুদের ধরে থানায় নিয়ে গেলেন এবং পরে কোর্টে চালান করে দিলেন ওসি সাহেব।

মোবারক চৌধুরী দাঁত কড়মড় করে আজগর স্যারের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল “আমি আপনাকে দেখে ছাড়ব। আমি যদি আপনাকে না দেখি তাহলে আমার নাম মোবারক চৌধুরী না।“

সবাই যার যার রুমে চলে গেলে, প্রধান শিক্ষকের রুমের ভিড় কমল।মজিদ স্যার সুমিকে ডাকলেন। “আমি দুঃখিত সুমি।“ বললেন প্রধান শিক্ষক।

“কেন স্যার?”

“সেদিনে বদরুলের নামে যখন বিচার নিয়ে এসেছিলে সেদিন তোমার সাথে ভাল ব্যাবহার করিনি। আমাকে ক্ষমা করো।“ মাথা নিচু করে বললেন মজিদ স্যার।

“স্যার, আপনি আমার সম্মানিত শিক্ষক, শিক্ষক বাবার সমতুল্য। আপনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না।“ বলল সুমি।

“মা, চাকরির জন্য, দুনিয়াতে অনেক কিছু করতে হয়। তবে মনে রেখ এখন থেকে আর এগুলো সহ্য করব না, আমার চাকরি গেলে যাবে, দরকার পরে টিউশনি করে খাবো।“ দৃঢ় প্রত্যয়ে বলল মজিদ স্যার।

সেদিন স্কুল শেষে সুমি, দিপু আর টিটুন একসাথে বাসায় ফিরছিল। তারা স্কুল গেট থেকে বের হয়ে মেইন রাস্তায় উঠে। রাস্তার দু ধারে সাড়ি সাড়ি খেজুরের গাছ, স্কুল ছুটির এই সময়টাতে রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকা থাকে। তারা তিনজনই আজকের দেখা দুঃস্বপ্নটা নিয়ে কথা বলতে থাকে। তিনজনেই একই স্বপ্ন দেখেছে ব্যাপারটা কাকতালীয় না কি এর মাঝে কোন বিশেষ ইঙ্গিত আছে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকে তিনজনই। হঠাত একটি মাইক্রোবাস তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। কয়েকজন কালো কোর্ট পরিহিত মানুষ নেমে পরে গাড়ি থেকে সবার পকেটেই পিস্তল, কিছু বুঝে উঠার আগেই টিটুন, দিপু এবং সুমির চেহারায় একটা স্প্রে মারে লোকগুলো, অজ্ঞান হয়ে যায় তিনজনই, তারপর গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়।

চৌদ্ধ।
কক্ষটি কাচের তৈরি, বাইরে থেকে সব কিছু দেখা যায়। কক্ষটির ভিতরে তিনটি বেড পাশাপাশি রাখা, সেখানে টিটুন, সুমি এবং দিপুকে পাশাপাশি শুইয়ে রাখা হয়েছে। সে এই মুহূর্তে তারা অচেতন, শরীরে উচ্চ মাত্রার ড্রাগ দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের শরীরেরই অসংখ্য তার মাকড়সার জালের লাগিয়ে রাখা হয়েছে। মাথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক অনেকগুলো চিপ লাগানো, সেখান থেকে অসংখ্য তার বেরিয়ে মাথার পাশে রাখা একটি বৈদ্যুতিক ডিভাইসে সংযুক্ত করা আছে। রুমের মাঝে থাকা হলোগ্রাফিক ডিসপ্লেতে তিনজনের শরীরের রক্ত চাপ, তাপমাত্রা, মস্তিষ্কের রেডিয়েশন গ্রাফের মাধম্যে দেখাচ্ছে।

টিটুনের সাইক্রিয়াস্টিক ওরফে ফিউচার ইন-কর্পোরেশনের পৌঢ় বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব, কক্ষটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতা রাখা ডিজিটাল ডিসপ্লেতেও টিটুন, সুমি এবং দিপুর শরীরের সমস্ত তথ্য গ্রাফ আকারে দেখাচ্ছে।

সবার কনিষ্ঠ বিজ্ঞানী রহমান সাহেব, হালকা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল “স্যার স্যাম্পলগুলো থেকে আমরা সেরকম কোন রেসপন্স পাচ্ছি না। তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে”

আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বললে “স্যাম্পল বলতে কি বুঝাতে চাইছ?”

“স্যার এই তিনজন ছেলেমেয়েকে” গলার স্বর নামিয়ে বলে বিজ্ঞানী রহমান।

বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব হালকা ধমন দিয়ে বললেন “ওদের স্যাম্পল বলবে না। স্যাম্পল বললে কেমন জনি পশুপাখি মনে। নাম ধরে বলবে।”

“দুঃখিত স্যার।” বলে বিজ্ঞানী রহমান।

কিছুটা চুপ থেকে বলে “আমরা টিটুন, সুমি এবং দিপুর এই তিনজনের সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আর দশটা সাধারণ মানুষের সাথে কোন পার্থক্য পাচ্ছিনা।“

বিজ্ঞানী শরিফ সাহেবকে বেশ অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে, বিজ্ঞানী রহমান সাহেবের কথা শুনে যেন নিজেকে ফিরে পেলেন, “হুম সেটাইতো দেখতে পাচ্ছি। তবে আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে, তারা তিনজনই আর দশটা সাধারণ মানুষের মত নয়!”

“কিন্তু তিনজনেরই মস্তিষ্কের তরঙ্গ, শরীরের তাপ, চাপ বিশ্লেষণ করেতো কিছু পেলাম না স্যার!” কিছুটা হতাশ গলায় বলল বিজ্ঞানী রহমান।

প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞানী শরীফ সাহেব বলল “তুমি কি ভুতে বিশ্বাস কর রহমান?”

বিজ্ঞানী শরীফ সাহেবের কথা শুনে যেন কিছুটা থতমত খেয়ে গেল বিজ্ঞানী রহমান। নিজেকে সামলে বলল “কেন স্যার?”

বিজ্ঞানী শরীফ সাহেব কিছুটা ঝাঁঝ মিশিয়ে বললেন বিজ্ঞানী রহমানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন “তাহলে কি বলতে চাও তারা কোন ভৌতিক শক্তি অর্জন করেছে?”

“দুংখিত স্যার আমি সেটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছিলাম”

আরো কিছু বলতে নিয়েছিল বিজ্ঞানী রহমান সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল বিজ্ঞানী শরীফ সাহেব “আমাদের যন্ত্রগুলো মস্তিষ্কের তরঙ্গ, শরীরের তাপ, চাপ ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ কোন অসামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছে না। এর মানে সেখানে যে কোন অসামঞ্জস্যতা নেই এমনটি নয়, হয়তবা আমাদের যন্ত্রগুলো এই সিগনালগুলো ধরার মত ততটা সংবেদনশীল নয়।“

“তাহলে কি করব?” এখন গলা কিছু নিচু করে বলল বিজ্ঞানী রহমান সাহেব।

“কি করবে জানি না? আমার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট চাই।” হতাশার চাপে গলাটা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানী শরীফ সাহেবের।

কিংকর্তব্য-বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে শরীফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে বিজ্ঞানী রহমান সাহেব। সে কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না।

“কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও কাজ করো” হালকা ঝাড়ি দিয়ে বললেন বিজ্ঞানী শরিফ।

বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব চিন্তায় পরে গেলেন, তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না কি করবেন। সেদিন রাতের ভিডিওটায় আবার চোখ ভুলালেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে দিপু তাকিয়ে আছে বদরুল বাহিনীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আর বদরুল বাহিনী মাথায় হাত চেপে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করছে। টিটুন আর সুমিও ঠায় দাঁড়িয়ে দিপু দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলছিল। কিছুক্ষণ পরেই তীব্র আলোর ঝলকানি দিয়ে কিছু একটি জিনিষ উদয় হয় ভিডিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তারপর আর কিছুই নেই, তাদের পাঠানো লোকদুজন ভয় পেয়ে ভিডিও না করেই সেখান থেকে পালিয়েছে। তখন কি উদয় হয়েছিল সেটা ভিডিও-তে দেখতে পারলে ভাল হয়, তাদের পাঠানো লোকগুলো ভিডিও না করেই পালিয়েছে ভেবেই মনে মনে বেশ রাগ হলেন তিনি। ভিডিওটি দেখিয়ে গতকাল রাতে টিটুন, সুমি এবং দিপুকে ঝেরা করা হয়েছিল, সেদিন ঠিক কি ঘটেছিল সেই ব্যাপারগুলো জানার জন্য, ছেলেপেলেগুলো ত্যাঁদড় মুখ দিয়ে কিছুই বের করছে না ভেবেই ভিতর থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব। কিছু যে একটা জিনিষ ঘটেছে সেটা নিশ্চিন্ত তিনি, সেটা কি ঠিক বুঝতে পারছেন না তিনি। আমেরিকায় হেড অফিসে বিজ্ঞানী ওয়াটসনকে এর ব্যাখ্যা কি দিবেন ভাবতে ভাবতেই দুশ্চিন্তায় কপালে ঘাম ঝমে উঠল শরিফ সাহেবের।

ততক্ষণে টিটুনের মা এই রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে এসে হাজির। টিটুনের মা এসেই দেখেন সাইক্রিয়াস্টিক শরিফ সাহেব একটি কাচের রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে। গতকাল থেকে টিটুনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, অবশেষে ফিউচার ফিউচার ইন-কর্পোরেশনের ল্যাবরেটরি থেকে ফোনে তাকে এখানে ডেকে পাঠানো হয়েছে, আমেরিকার ফিউচার ইন-কর্পোরেশন ল্যাবরেটরি যে বাংলাদেশেও আছে, তার উপর এই মফস্বল শহরে সেটা তিনি জানতেন না! তার মনে অঙ্কে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, টিটুন কে তারা কেন নিয়ে এলো এভাবে না বলে? এই কোম্পানিই বা এখানে কেন?

“আপনি?” বিজ্ঞানী শরিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন টিটুনের মা।

অনেক লম্বা ইতিহাস, আমি সংক্ষেপে বলছি “আমি সাইক্রিয়াস্টিক নই, আমি ফিউচার ইন-কর্পোরেশন একজন বিজ্ঞানী, আমি আপনার স্বামী বিজ্ঞানী সাফাহাতের কলিগ ছিলাম।“ বলেই রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তাকালেন বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে টিটুনের মা, ধাতস্থ হতে সময় নেয় তারপর বলে “আপনি আমাদের মিথ্যে বলেছিলেন কেন যে আপনি একজন সাইক্রিয়াস্টিক ?”

“মিসেস সাফায়াত, আপনার এবং আপনার ছেলের উপর নজর রাখার জন্যই আমাদের এখানে আসতে হয়েছে।“

“বুঝলাম না” প্রশ্ন টিটুনের মার।

“আমেরিকার ফিউচার ইন-কর্পোরেশন ল্যাবরেটরি আমেরিকার সরকারের একটি গোপন প্রতিষ্ঠান, এখানকার রিসার্চ বাইরে প্রকাশ করা হয় না। সেখানে আপনার স্বামীর অসভাবিক ভাবে অদৃশ্য হয়ে যাওয়াটা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে”

আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব রাবেয়া বলে উঠে “তার মানে কি বলতে চান আপনি? আমাদের দিকে নজর রাখার কারণ কি?”

“আমরা কি চাই সেটা এখনো নিশ্চিন্ত না। আবারো বলছি আপনার স্বামী যেদিন হারিয়ে গিয়েছিল, সেদিন আমাদের তথ্য মোতাবেক আপনাদের বাসায় এক ধরনের উচ্চ মাত্রার ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন হয়েছিল। যেই মাত্রার ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন হয়েছিল সেটা অকল্পনীয়, ব্যাপারটা আমাদের ভাবিয়েছে, তাই আপনাদের উপর নজর না রেখে আমাদের কোন উপায় ছিল না। আমরা বিজ্ঞানী কারন অনুসন্দানই আমাদের উদ্দেশ্য যাতে ভবিষতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেটার ব্যাবস্থা নিতে পারি। “ শান্ত স্বরে বলে বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব।

“আমার ছেলে এতদিন যা বলত তা সত্যি?”

“আংশিক, তবে আপনার ছেলে একটি ট্রমার মধ্যে আছে এটা নিশ্চিন্ত।“ বলে শরিফ সাহেব।

কথা বলার মাঝে টিটুনের মার কাচের রুমের দিকে চোখ যায়, তিনি দেখতে পেলেন টিটুন এবং তার বন্ধুদের অচেতন করে শুইয়ে রাখা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের শরীরেই অসংখ্য তার, তিনি চমকে উঠলেন একই সাথে আতংকিত।

“আপনারা কি করেছেন আমার ছেলের সাথে?” আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞাসা টিটুনের মার।

“ঘাবড়াবেন না, ও ভাল আছে।“

টিটুনের মা মুখ শক্ত করে বললেন, “আপনারা আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করেছেন তার উপর এভাবে রেখেছেনে, আর বলছেন ভাল আছে?” হাতের মুঠি শক্তি হয়ে আসে তার। ফের টিটুনের দিকে তাকাতেই বুকের ভিতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠে।

থেমে টিটুনের মা কাচের দরজায় কাছে গিয়ে দারায় তারপর গ্লাসের উপর থাবা মেড়ে বলেন “এখনই ছাড়েন ওদের। নয়ত আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব।“

“আমি বলছি আপনি শান্ত হোন, আপনার ছেলের কিছুই হয়নি। আমরা ওকে পরীক্ষা করছি। “ হাত নেড়ে টিটুনের মাকে সান্ত্বনা দেবার সুরে বলে বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব।

“পরীক্ষা মানে? রাবেয়া বেগম থাবা মেড়ে বিজ্ঞানী শরীফ সাহেবের জামা ধরলেন খামচে, দাতে দাঁত চেপে বললেন আপনই একজন মিথ্যেবাদী, ছাড়ুন বলছি আমার ছেলেকে?”

ততক্ষণ চারদিকে অন্যসব বিজ্ঞানীরা জড়ো হয়েছেন, সিকিউরিটি গার্ড এসে হাজির, তারা রাবেয়াকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছে। শরিফ সাহেব সবাইকে যার যার জায়গায় যেতে বললেন, তারপর বললেন “শান্ত হোন আপনি।“

“রাবেয়া শান্ত হলে তিনি সেই ভিডিওটি দেখান তাকে। তারপর বলেন আমরা দুঃখিত আপনার ছেলেকে আমাদের এই মুহূর্তে ছাড়া সম্ভব না” বলে বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব।

“কেন?” খেঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে রাবেয়া।

“আমাদের বিশ্বাস টিটুনরা মানুষের জন্য নিরাপদ নয়।“

রাবেয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, “আমি পুলিশ ডাকব?”

“আমাদের কাছে যেই প্রমাণ আছে তাতে আপনার ছেলের উপর আমাদের পরীক্ষা চালাতেই হবে, আমাদের এর কারণ উদঘাটন করতে হবে।আমার মনে হয়নি পুলিশ আমাদের কথার বাইরে যাবে।“জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব।

টিটুনের মা কি করবে বুঝতে পারল না, তিনি বিজ্ঞানী শরিফ সাহেবকে বুঝানোর চেষ্টা করল, তবে তারা কিছুতেই কর্ণপাত করল না। অবশেষে তাকে ডেকে নিয়ে কানে কানে কিছু একটা বলল, কথাটা শুনে বিজ্ঞানী শরিফের চমকে উঠল। একটু চুপ থেকে টিটুন এবং তার দুই বন্ধুকে ছাড়তে রাজি হল। তবে সাথে একটি শর্ত জুরে দিলেন ফিউচার কর্পোরেশন ল্যাবরেটরি যখনই চাইবে তখনই তাদের এই ল্যাবরেটরিতে আসতে হবে।

বিঃ দ্রঃ প্রতিদিন একটি করে পর্ব দিয়ে বারটি পর্বে শেষ করে ফেলব।

আগের পর্বঃ ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব ছয়)

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০০

অপু তানভীর বলেছেন: পর্ব দেখেই এখনও পড়া শুরু করি নি । আরও ৫ পর্ব চলবে । একেবারে শুরু করবো !

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১৪

কাছের-মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যা আর বেশী দিন নেই, শেষ হয়ে যাবে। তখন এক সাথে পড়তে পারেন।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩১

জুল ভার্ন বলেছেন: সাইন্স ফিকশন সাবলীল গতিতে এগুচ্ছে। পড়তে ভালো লাগছে।
শুভ কামনা।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১৪

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনার ভাল লাগছে শুনে ভাল লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ১। মোবারক চৌধুরী চরিত্রটা ভালো লাগে নাই। কিন্তু এরকম চরিত্র সমাজে আছে।
২। সাইয়েন্স ফিকশন বই গুলোয়ে এলিয়েন গুলো একই রকম বর্ননা পাওয়া যায়।
৩। টিটুন এঁর মতো আমিও খুব কমিকস পড়তাম।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: মোবারক চৌধুরী-মত চরিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। গল্প উপন্যাস-তো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আপনি বই পড়েন এটা ভাল অভ্যাস, কমিকস পড়তে সত্যিই ভাল লাগে।

ধন্যবাদ পাঠের জন্য।

৪| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ৬ ও ৭ নং পর্ব পড়িনি। সমস্যা শুরু হয়েছে ৬ নাম্বারে।
সুমিদের যখন অতীতে পাঠানো হলোতখন সেখানে আগেই আরেকজন করে সুমি, টিটন থাকার কথা। একজন সুমির ভেতরে আরেকজন সুমীতো ঢুকে যাওয়া সম্ভব না!!

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০২

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন সুমিদের যখন অতীতে পাঠানো হল তখন আরেকজন সুমি এবং ছিল। প্রশ্ন হল তাদের কি হল?

সব প্রশ্নের উত্তর আছে এবং সব রহস্যের সমাধান হবে এবং নতুন প্রশ্ন এবং রহস্যের তৈরি হবে। একটু অপেক্ষা করতে হবে, তবে সব উত্তর আসবে, কারণ সামনে এমন পরিস্থিতি আসবে যখন একটি চরিত্র অতীতে ফিরে যাবে সেই সময়ে যেখানে তার অনুলিপি থাকবে, ভাবছিলাম এই ব্যাখ্যা সেই সময় আসবে। তবে এখন মনে হচ্ছে এরকম ব্যাখ্যা পর্ব ৬ বা ৭ এ দেওয়া দরকার ছিল, তা না হলে অনেক পাঠকের কাছে ব্যাপারটা খটকা লাগবে, আবার এই ব্যাখ্যা পর্ব ৭ ও যোগ করব !

যাই হোক, এখানে কিছুটা উত্তর দেই আপনার জন্য।

পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে টাইম ট্রাভেল সম্ভব, তবে টাইম ট্রাভেল করে নিজের অতীতের অনুলিপির কাছে যাওয়া সম্ভব না কারণ থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্রের লঘ্নন হয় তাতে। থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্র অনুসারে, এই ইউনিভার্সের মোট এনার্জির পরিমাণ সমান, এটা কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। আইনস্টাইনের এনার্জি-মাস সূত্র অনুসারে আবার বস্তু হল এনার্জিরই আরেকটি রূপ, মানুষের শরীরও এনার্জিই বলা যায়। তাই টিটুন এবং সুমি যখন তাদের অতীতে গেল সেখানে পূর্বেই তাদের প্রতিলিপি ছিল, তাহলে দুইজন টিটুন এবং সুমি এক সাথে একই সময়ে অবস্থান করল হল অতীতে অর্থাৎ এনার্জির পরিমাণ বাড়ল। এই যে এনার্জি বাড়ল এটা থার্মোডাইনামিক্স এর সূত্রের ভায়োলেশন বা লঙ্ঘন, এটা অসম্ভব। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কি?

টাইম ট্রাভেল নিয়ে যারা উপন্যাস লেখে, একদল লেখক যাছে তারা দেখায় দুইটা অনুলিপিই এক সাথে থাকে, যেটা র্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্রের লঘ্নন করে । আবার অনেকেই দেখায় যখন কোন চরিত্র তার পূর্বের অতীতের অনুলিপির সাথে দেখা হয় তখন একটা অনুলিপি শূর্নে মিলিয়ে যায় থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্র মেনে, আমার কাছেই এটাই বিজ্ঞান সম্মত। আমি সেরকম একটি হাইপোথেসিস দিয়ে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছি সামনের দিকে, যখন একটি ভ্যানিশ হয় বা শূন্যে মিলিয়ে যায় তখন তার নিউরনের যেই স্মৃতিগুলো ছিল সেগুলো বায়োসিগন্যাল আকারে প্রথম জনের কাছে থেকে যায়।

[গল্প ভেদে কোন লেখক দেখায় দুইটা প্রতিলিপি এক সাথে থাকে যদিও এটা থার্মোডাইনামিক্সের সূত্রের লঘ্নন, আবার হয়ত অন্যকোন গল্পে সেই একই লেখকই দেখাচ্ছে দুইটি প্রতিলিপি একসাথে থাকলে একটি ভ্যানিশ হয়ে যাবে থার্মোডাইনামিক্সের সূত্র মেনে। যেমন আমরা স্পেস নিয়ে অনেক মুভিতে এবং উপন্যাসে দেখি রকেটে আগুন ধরে বাস্ট হয় যেটা অসম্ভব বিজ্ঞান-মতে কারণ স্পেসে অক্সিজেন নেই আগুন লাগবে কিভাবে!! তাই লেখকের এখানে স্বাধীনতা আছে কোন গল্পে দেখাবে দুইটা প্রতিলিপি এক সাথে থাকবে আবার কোনটাতে থার্মোডাইনামিক্সের সূত্র মেনে একটা ভ্যানিশ হয়ে যাবে ]।

৫| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১০

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে । এর পর কি?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: আজকেই নতুন পর্ব আসবে। পড়ার জন্য অগ্রিম আমন্ত্রণ রইল। পাশে থাকবেন আশা করি।

৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:৪৯

কাছের-মানুষ বলেছেন: পরের পর্ব

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একটানে পড়ার মজাই আলাদা ;)
হা হাহা

টেনশন বেশিক্ষন রাখা লাগে না:)

+++

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৪৪

কাছের-মানুষ বলেছেন: হা - হা, আমিও আপনার সাথে একমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.