নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’ https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! ! https://www.amazon.com/author/hossaink

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব দশ)

০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:১৫


উনিশ।
“তোমাদেরই খুজছিলাম” আজগর স্যার হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন।

স্কুলের করিডরে তখন দাঁড়িয়ে নিজেদের মাঝে গল্প করছিল টিটুন, দিপু এবং সুমি। আজ স্কুল খোলা তবে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী এমনি কি শিক্ষকও আসে নাই স্কুলে। আজ আর ক্লাস হবার সম্ভাবনা নেই, পৃথিবীর এই নতুন পালটে যাওয়া রূপ নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত সবাই, চায়ের দোকানে, রাস্তায় সব জায়গায় একই আলোচনা, হঠাত কেন সিগনাল বন্ধ, কেউ কারো সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছে না, ইন্টারনেট চলছে না, বিদ্যুৎ নেই, কার্যত পৃথিবীর প্রতিটা দেশে কে কি করছে সেটা কেউ জানে না, খবরের কাগজ বের হচ্ছে না ছাপা খানা বন্ধ বিদায়!

“কেন স্যার?” জিজ্ঞেস করে সুমি।

স্যার কিছুটা দম নিলেন তারপর বললেন “তোমদের মস্তিষ্কের কগনিটিভ পাওয়ার আর দশ জনের থেকে আলাদা, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারার কথা কি ঘটতে যাচ্ছে।“

তারা তিনজনই একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। টিটুন স্যারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “স্যার এটা কি সেই চথুর্ত মাত্রিক প্রাণীর কাজ? তারা নিশ্চয়ই আমাদের আক্রমণ করেছে!” হাতের মুঠি শক্ত হয়ে আসে তার।

স্যার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন আজগর স্যার।

“আমি ভাবছিলাম এই চথুর্ত মাত্রিক প্রাণী হয়ত বিকট কোন রূপ নিয়ে আমাদের মাঝে প্রকট হবে, তারপর আক্রমণ করবে, কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে তারা যে আক্রমণ করছে সেটা সরাসরি বুঝাই যাচ্ছে না!” বলল দিপু।

“হুম তাদের আক্রমণের ধরনটাই এমন।“ বলে আজগর স্যার।

“স্যার আমরা এখন কি করতে পারি? যেভাবেই হোক একে থামাতে হবে। ওর সাথে যোগাযোগ করব কিভাবে?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।
“ওর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার কোন রাস্তা নেই কারণ রেডিও সিগনাল কিছুই কাজ করবে না।“ বলে আজগর স্যার।

“তাহলে উপায়?” আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে সুমি।

“ইটস টাইম টু বি এ হিরো বলেই” স্যার তিনজনের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অপেক্ষা করলেন।

“বুঝলাম না স্যার?” সমস্বরে বলল তিনজন।

আবার বললেন “তোমাদেরই যা করার করতে হবে, এই প্রাণীর সাথে কেউ যোগাযোগ করতে পারে সে হচ্ছে একমাত্র তোমরা কারণ এখন পর্যন্ত এই পৃথিবীর তোমরাই তিনজন প্রথম টেলিপ্যাথি ক্ষমতা সম্পূর্ণ মানুষ।“

এই প্রাণীটিই টিটুনের বাবাকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে সেই তিনবছর আগে সেটা মনে করতেই হাতের মুঠি শক্ত হয়ে আসে তার। “স্যার ওকে আমি যদি পাই তাহলে ওর মাথা ভেঙ্গে ফেলব।“

“শান্ত হও টিটুন, তোমাদের তিনজনকেই একত্রে ওর সাথে যোগাযোগ করতে হবে, এই প্রাণীটি এই পৃথিবীর ভিতরেই একটি চথুর্ত মাত্রিক বলয় তৈরি করে আছে, তোমাদের সেখানে ঢুকতে হবে। বুঝলে?”

টিটুনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। “স্যার কিভাবে করতে হবে বলুন?”

স্যার বলে "হাতে সময় নেই খুব একটা, এই স্কুলের বাইরে ফিউচার ইনকর্পোরেশোনের লোকজন আছে, তারা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তিনজনের সাবকনসাস মাইন্ডকে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে সেটার ব্যবস্থা করবে।"

ফিউচার ইনকর্পোরেশোনের ব্যাপার তাদের তিনজনের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সুমি, টিটুন এবং দিপু মুখ কিছুটা অন্ধকার করে নিজেদের দিকে তাকায়।

“সমস্যা নেই আমার সাথে চল।“ বললেন আজগর স্যার।

তারা যাবে আর তখনই বদরুলের বাবার পাঠানো কেডার বাঁটু মুরাদ তার দলবল নিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়, সবার হাতেই দেশিয় অস্র, লাঠি সোঁটা, চাপাতি এবং কয়েকজনের পকেটে পিস্তল।

“আপনারা কারা?” জিজ্ঞেস করে আজগর স্যার।

“বদরুলকেতো চিনেন, তার বাবা মোবারক চৌধুরী পাঠিয়েছে আমাদের। আপনাকে একটি উত্তম মধ্যম দিয়ে এই পুচকে তিনজনকে নিয়ে যেতে এসেছি স্যারের কাছে।“ বলে বাঁটু মুরাদ।

আজগর স্যার কি বলবে বুঝতে পারছে না, তিনি নিজেকে সামলে বললেন “আমরা এখন একটু ব্যস্ত আছি। আমাদের সামনে থেকে সরে দাঁড়ান।“

“স্যার আমরাও ব্যস্ত আছি, আপনাকে ধোলাই না দিয়ে যাব না।“ হিসহিসিয়ে বলে মুরাদ।

“আমাদের সামনে থেকে যান বলছি? আমরা কিন্তু পুলিশ ডাকব” বলে সুমি।

“এই পুচকে মেয়ে, পুলিশ আমাদের কথায় উঠেবসে, পুলিশ এসে কি করবে?” পাল্টা প্রশ্ন বেটে মুরাদের।

“ভাল হবে না বলছি, আপনি সরে দাঁড়ান, এখানে মানুষজন আছে দেখতে পারছেন?” বলে সুমি।

ততক্ষণে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের একটা ছোটখাটো জটলা বেদে যায়, অন্যান্য স্যাররা দূর থেকে বুঝার চেষ্টা করছে কি ঘটতে যাছে তবে কোমরে ক্যালসিয়ামের অভাবে কেউ এগিয়ে আসতে পারছে না।

মুরাদ হাতের লাঠিসোটা ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাক করে খেঁকিয়ে বলে “এই তোমরা যার যার রুমে যাউ, নইলে খবর আছে।”

“মুরাদ সাহেব, আপনি বুঝতে পারছেন না আমরা জরুরী কাজ আছে, কাজ সেরে দরকার পরে আমি নিজে গিয়ে মোবারক চৌধুরীর সাথে দেখা করে আসব।“ বলে আজগর স্যার।

“চুপ হারামজাদা পরে দেখা করবে বলে কি? এখনই তোকে সাইজ করব।“ চোখ বড় বড় হয়ে যায় বেটে মুরাদের।

“তুই তোকারি করবেন না স্যারকে, নইলে কিন্তু ভাল হবে না।“ বলে সুমি।

এবার মুরাদ বলে “ভাল হবে না মানে কি?” বলেই হাতের লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসে কাছে।

তখন বদরুল এসে দাঁড়ায় সামনে, সিনা টানটান করে বলে “আপনি এখানে কি চান? কে পাঠিয়েছে আপনাকে?”

“তোমার বাবা পাঠিয়েছে, তোমার স্যারকে একটু আদর করতে আসছি।“ লাঠিটা স্যারর দিকে তাক করে বলে মুরাদ।

“খবরদার ভাল ভাবে কথা বলেন, তিনি আমার স্যার হন, তাকে কিছু বললে ভাল হবে না।“ বলে থামে বদরুল।

আবার সুমি, দিপু আর টিটুনদের দেখিয়ে বলে “ওরা আমার বন্ধু সহপাঠী”। ভুতের মুখে রাম নাম শুনে সবাই তাকিয়ে আছে বদরুলের দিকে।

পুনরায় বলে বদরুল “স্যার আপনারা যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানে যান আমি এদের দেখছি।“

তারা তিনজনই স্কুলের বাইরে রাখা বড় ভেনের ভিতর ঢুকে, গাড়িটি বিশাল বড়, ভিতরে ছোটখাটো একটি ল্যাবরেটরি আছে, সেটা কাচ দিয়ে ঘেরা। তারা গিয়ে দেখতে পায় সেখানে তিনটি বড় বড় চেয়ার রাখা আছে হেলান দিয়ে ঘুমানোর জন্য সাথে অসংখ্য যন্ত্রপাতি। বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব তিনটি চেয়ার দেখিয়ে টিটুন, সুমি এবং দিপুকে হেলান দিয়ে শুয়ে পরতে বলে।

“আমাদের বিজ্ঞানীদের জন্য এই যন্ত্র আবিষ্কার করেছি। আমরা যখন কোন কাজ করি তখন আমাদের মস্তিষ্ক একই সাথে বিভিন্ন কিছু চিন্তা করে, হয়ত কোন জটিল ইকুয়েশন নিয়ে চিন্তা করছি তখন একই সাথে আমাদের সাব কানসাস মাইন্ড হয়ত অন্য কিছু চিন্তা করে। এই যন্ত্রে শুয়ে থাকলে এখান থেকে এক ধরনের ড্রাগ অটোমেটিক পুশ করে শরীরে যেটা আমাদের মস্তিষ্কের সেই অংশটি কিছু সময়ের জন্য অকেজো করে যেটা অন্য চিন্তা করে, এতে আরো গভীর ভাবে চিন্তা করা যায় নিদিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে” বললেন বিজ্ঞানী রহমান সাহেব।

“এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাইতো?” জিজ্ঞেস করে আজগর স্যার।

আমতা আমতা করে বলে “সেটা নেই তবে মাথাটা কয়েকদিন বেশ ব্যথা করতে পারে, এছাড়া আরো কোন খারাপ দিক নেই।“

“হাতে সময় নেই আমাদের। তোমরা তিনজন তাড়াতাড়ি শুয়ে পর, পাওয়ার কিছুক্ষণ পর চলে গেলে এই মেশিন কাজ করা বন্ধ করে দিবে” বলেন বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব।

সুমি, টিটুন এবং দিপু তিনজনই এই চেয়ারে শুয়ে পরে।

“তোমাদের ভয় নেই, তোমরা তিনজন চিন্তা করবে এই প্রাণীটির কথা, সাথে সাথে ওদের চতুর্থ মাত্রিক বলয়ে প্রবেশ করবে।“ বললেন আজগর স্যার।

“ওরা কি আমাদের চিনবে, কি বলতে হবে ওদের?” আজগর স্যারকে জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“মনে রেখ যখনই তোমরা ওদের বলয়ে ঢুকবে তোমাদের মস্তিষ্কে ওরাও কানেক্ট হয়ে যাবে। তোমাদের নাম পরিচয়, অতীত, ভবিষ্যৎ এবং দুর্বলতা সবই ওদের নখদর্পণে থাকবে। সেখানে আঘাত করার চেষ্টা করবে” বলেই থামে আজগর স্যার।

পুনরায় বলে “ওদের চালে পরবে না। মনে রেখ তোমাদের কগনেটিভ পাওয়ার অনেক বেশি, তোমরা একজন নও তোমরা তিনটা মস্তিষ্ক দলগত-ভাবে চিন্তা করতে পারবে, সেটা কাজে লাগিও। নিজেদের শক্তির ওপর বিশ্বাস রেখ।“

“সেটা কিভাবে আঘাত হানতে হবে?” ফের প্রশ্ন টিটুনের।

স্যার কিছুটা চিন্তায় পরে গেল কারণ এই উওর যে তার কাছেও নেই।

আমাদের হাতে সময় নেই, মেশিনের পাওয়ার বেশীক্ষণ থাকবে না বলেই তাড়া দেন প্রধান বিজ্ঞানী শরিফ সাহেব। তিনি বিজ্ঞানী রহমানকে মেশিন চালুর নির্দেশ দিতেই বিজ্ঞানী রহমান সাহেব মেশিনটি চালু করে দেয়। মেশিনের বাইরে থেকে অটোমেটিক ভাবে কিছু বেল এসে প্রত্যেককেই শক্ত করে বেদে ফেলে, আরেকটি কৃত্রিম সিনথেটিকের হাত ওপর থেকে নেমে সবার শরীর সেই ড্রাগটি ঢুকিয়ে দেয়। তিনজনের চোখই বুঝে আসে, তিনজনই হারিয়ে যায় চেতন এবং অবচেতন জগতে, তারা হয়ত নিজেরাও জানেনা কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

বিশ।
“তোমাকে স্বাগতম টিটুন” বলল লোকটি।

লোকটি দেখতে উঁচা লম্বা, চেহারাটা দেখতে বেশ মসৃণ, মুখে সফেদ দাড়ি।

“আমি এখন কোথায় আছি?” বলেই চার দিকে এক বার চোখ বুলায় টিটুন। ধবধবে সাধা চারদিকে, কোন কিছু নেই শুধু সাধা আর সাধা।

“তুমি এখন এই পৃথিবীতেই আছ তবে আমাদের চথুর্ত মাত্রিক ডাইমেনশনের ভিতরে।“ বলল পৌঢ় লোকটি।

“আপনি কে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল টিটুন। তার চোখে হাজারো জিজ্ঞাসা।

“তোমাদের ভাষায় আমরা এলিয়েন।“

“আপনি কি সেই চথুর্ত মাত্রিক প্রাণী?”

“হুম।“ বলেই হাসে লোকটি।

“আপনাদের আর কাউকে দেখছি না কেন?” প্রশ্ন টিটুনের।

“টিটুন তুমি ভুলে গেছ আমরা রেডিও সিগন্যালের তৈরি। আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন সত্তা আবার একই সাথে একজনই।“
“ঠিক বুঝলাম না?”

“আপাতত না বুঝলেও চলবে। ধরে নাও আমরা সবাই এখন তোমার সাথে একই সত্তা হিসেবে কথা বলছি । অথবা বুঝার সুবিধার জন্য ধরে নাও আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি তোমার সাথে কথা বলছি।“

“হুম, আমার বন্ধুরা কোথায়?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“সুমি আর দিপুর কথা বলছ? ওরাও আছে আশেপাশেই। একটু পরই সব দেখতে পাবে।“ বলে লোকটি।

“চারদিকে এরকম সাদা কেন? তাছাড়া আপনাকে-তো মানুষের মত দেখায়?”

“টিটুন তুমি এখন আমাদের চথুর্ত মাত্রিক বলয়ে আছ, তুমি চারদিকে যা দেখতে পাচ্ছ সেগুলো তোমার মস্তিষ্ক তৈরি করেছে।“ বলেই টিটুনের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা করে লোকটি।

থেমে বলে “তুমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ তোমার একটি বায়োলজিক্যাল শরীর আছে, তাই না?”

“হুম, কারণ আমরা মানুষ আমাদের-তো দেখতে এমনই লাগবে।“ বলে টিটুন।

“সেটা ঠিক, তবে তুমি এখানে আসনি, এসেছে তোমার কনসাসানেস অর্থাৎ তোমার সত্তা বা তোমার চেতন এবং অবচেতন মন, কিন্তু দেখ এখানে দেখা যাচ্ছ তুমি তোমার সম্পূর্ণ দেহ নিয়ে এসেছে, তোমার হাত, পা এবং চোখ সবই আছে।” বলেই থামে সফেত দাড়ির পৌঢ় লোকটি।

থেমে বলে “এটা তোমার ভেলকি, তুমি হয়ত এগুলো দেখতে চাচ্ছ, তাই তোমার মস্তিষ্ক এগুলো দেখাচ্ছে।এগুলো সব তোমার মস্তিষ্কের কাজ, তোমার মস্তিষ্ক চিন্তা করছে তোমার পুরো শরীর আছে, তোমার মস্তিষ্কের সেই চিন্তাটাই ত্রিমাত্রিক প্রজেকশনের মাধম্যে একটি কাল্পনিক দুনিয়া তৈরি করেছে।“

“তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমার মস্তিষ্ক আমাকে, এই চারদিকের পরিবেশ এমনকি আপনাকে যেভাবে কল্পনা করেছে সেটা দেখতে পাচ্ছি?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

টিটুনকে বেশ বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। সে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে।

হ্যা, সুলভ মাথা নাড়ে। পুনরায় বলে “তুমি ভালভাবে তাকিয়ে দেখ চারপাশটা আরেকবার, তাহলে সত্যিটা দেখতে পাবে”

টিটুন চোখ-বুজে আবার তাকায় স্থির চিত্তে এবার দেখতে চারদিকে শুধু বিভিন্ন সিগন্যাল দেখাচ্ছে, সাইন ওয়েব আকারে প্রবাহিত হচ্ছে সিগন্যাল গুলো, এতক্ষণ যেই পৌঢ় লোকটিকে দেখাচ্ছিল সেখানে তার বদলে উজ্জ্বল আলো দেখা যাচ্ছে। চমকে যায় টিটুন, ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লাগে, সে পুনরায় চোখ বুজে আবার তাকায়। এবার আগের মত স্বাভাবিক দেখতে লাগল।

“তাহলে রিয়েলিটি কি?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“রিয়েলিটি ব্যাপারটি আপেক্ষিক, তুমি চারপাশে চিরচেনা যেই জগত দেখ, যেই আলো বাসাত, গাছ, গাছের রঙ এগুলো সব কিছু তোমার মস্তিষ্কের ভ্রম” বলেই পৌঢ় টিটুনের দিকে তাকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অপেক্ষা করে।

দম নিয়ে আবার বলে “তোমাদের শরীর বায়োলজিক্যাল উপাধান দিয়ে তৈরি, তোমাদের মস্তিষ্ক চার পাশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তোমাদের বায়োলজিক্যাল সেন্সর যেমন চোখ, কান, নাক ইত্যাদি দিয়ে, এই তথ্যগুলো প্রসেস করে তোমাদের মস্তিষ্ক একটি ত্রি-মাত্রিক প্রজেকশন তৈরি তোমার জন্য।“

টিটুন জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে “বুঝলাম না।“

“ধর তোমরা যেই ঘাসকে সবুজ দেখ, আসলেই কি তা সবুজ? তুমি অন্য বায়োলজিক্যাল প্রাণী যেমন সাপ, ব্যাং এরা যখন আবার একই ঘাসের দিকে তাকায় তারা কিন্তু ভিন্ন রঙ দেখতে পায়। অর্থাৎ তোমাদের এই জগত সবই হচ্ছে তোমাদের মস্তিষ্কের ভ্রম।!”

“আমি এমন এখন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না কেন? আর অন্যসময় পারতাম না কেন?” ফের প্রশ্ন টিটুনের।

"এখন তুমি পারছ কারণ এখন তুমি আমাদের চথুর্ত মাত্রিক বলয়ে আছে, তোমাকে চারদিক থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তোমার বায়োলজিক্যাল শরীর ব্যাবহার করতে হচ্ছে না" বলেই থামে,

“তুমি এখন অন্য ডাইমেনশনে আছ, তুমি তোমার বায়োলজিক্যাল ব্রেনের উপর পুরোপুরি নির্ভর নয়। বায়োলজিক্যাল ব্রেনের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, তুমি এখন সেখান থেকে মুক্ত তাই তোমার চিন্তা দিয়ে একটি রিয়েলিটি তুমি দেখতে পারছ” বলে পৌঢ় লোকটি।

“এটা কিভাবে সম্ভব? আমাদের চিরচেনা পৃথিবী, চারদিকটা এখন কোথায়?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“সেটা এখানেই আছে, ধর তুমি রেডিও শুনছ, একই রেডিওতে একবার একটা চ্যানেল চলে আবার তরঙ্গ পালটালে আরেক চ্যানেল আসে। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গে চলছে, কিন্তু কেউ কাউকে বাধা দিচ্ছে না, ঠিক একই ভাবে তোমাদের এই পৃথিবীতে আমাদের চথুর্ত মাত্রিক বলয় ভিন্ন একটি তরঙ্গতে চলছে যেটা তোমরা স্বাভাবিক ভাবে দেখতে পাও না!”

প্রসঙ্গ পাল্টে টিটুন জিজ্ঞেস করে “আপনারা আমাদের জগতে কেন এলেন? আর আপনারা যদি আমাদের এই পৃথিবীতে ভিন্ন একটি বলয় তৈরি করতে পারেন, তাহলে আমাদের মানুষদের আক্রমণ করতে চান কেন?”

লোকটি হাসল। “তোমাদের এই পৃথিবীটা আমাদের জন্য পারফেক্ট, এখানকার আলো বাতাস, আমাদের রেডিও সিগনালদের চলাচলের জন্য দারুণ জায়গা” বলেই থামে।

আবার বলে “তবে তোমাদের মানুষেরা যেই সিগনাল ব্যাবহার কর, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি আমাদের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। আমরা আমাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে আমাদের বলয় তৈরি করতে পারছি না এখানে।আমাদের গ্রহ বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছিল অনেক কষ্টে আমরা এই পৃথিবী পেয়েছি, তাই একে আমরা হারাতে চাই না।“

“আপনারা তোমাদের কথা চিন্তা করছেন আর আমাদের কি হবে?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“জানোইতো সারভাইভাল ফর দ্যা ফিটেষ্ট। আমি দুঃখিত টিটুন।“

টিটুন মুখ শক্ত করে বলে “আপনাদের জন্য কি আমাদের মরতে হবে?”

হাসে লোকটি। “মুক্তি টিটুন!”

“কি বলতে চান?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“মৃত্যু বলে কিছু নেই শুধু ডাইমেনশনের পরিবর্তন হয় মাত্র। যাইহোক তোমাদের বায়োলজিক্যাল জীবদের এই এক সমস্যা, তোমরা রোগ-শোক, জরা, ব্যথা, কান্না অনুভব কর। কারণ তোমরা বায়োলজিক্যাল জীব, তোমাদের কনসাস মাইন্ড কিন্তু এগুলো অনুভব করে না, অনুভব করে তোমাদের শরীর। তোমরা যদি এই বায়োলজিক্যাল শরীর থেকে মুক্ত হতে পার দেখবে তোমরা এগুলো অনুভব করছ না। রোগ-শোক, ঘৃণা, ক্রোধ এগুলো সব বায়োলজিক্যাল শরীরের কারসাজি, তোমাদের মস্তিষ্কের ক্যামিকাল রিয়াকশনের ফলে এগুলো ঘটে, তোমরা যদি এই বায়োলজিক্যাল শরীর থেকে মুক্ত হতে পার তাহলে তোমরা এই তুচ্ছ জিনিষ থেকে মুক্ত হবে।“ বলেই থামে

পুনরায় বলে “তাছাড়া আমাদেরকে তোমাদের মারতে হবে না তোমাদের ক্রোধ, ঘৃণাই তোমাদের নিজেদের নিজে শেষ করে দিবে। “

একটু থেমে বলে “টিটুন আমি চাইলে তোমার সাবকনসার্স মাইন্ডকে সারা জীবনের জন্য মুক্তি দিতে পারি, তোমার বেচে থাকার জন্য বায়োলজিক্যাল শরীরের দরকার নেই। কেন তুমি রোগ শোক, কষ্ট নিয়ে বেচে থাকবে? তাছাড়া আমাদের সাথে পারবে না তোমরা, তোমরা হচ্ছ তুচ্ছ প্রাণী, আমরা অমর কারণ আমাদের বায়োলজিক্যাল শরীর নেই , আমাদের ক্রোধ নেই ঘৃণা নেই।”

“আপনারা যদি ক্রোধ মুক্ত হোন তাহলে আপনারা আমার বাবাকে কেন কেড়ে নিয়েছন?” মুখ শক্ত করে বলে টিটুন।

“টিটুন তোমাদের বাবাকে আমরা মারিনি, আমরা তাকে এই তুচ্ছ শরীর থেকে মুক্ত করেছি মাত্র। সে ঘৃণা, ক্রোধ থেকে মুক্ত, আমাদের মত।“ বলে পৌঢ়।

আবার বলে “টিটুন তুমি আমাদের সাথে থাক, তোমার বাবার এখানেই আছে। খুব স্থির হয়ে বাবাকে অনুভব কর, তাকে দেখতে পাবে।“

বাবার কথা বলতেই টিটুনের মনের ভিতর যেই ক্রোধ ছিল সেটা উবে গেল, একধরনের প্রশান্তি অনুভব করল টিটুন। মুহুর্তেই এই চেনাজানা দৃশ্যপটটি পাল্টে গেল, যেই মানুষ রুপি চথুর্ত মাত্রিক প্রাণীটির সাথে কথা বলছিল সে হাড়িয়ে গেল, সামনেই দেখতে পেল তার বাবা বিজ্ঞানী সাফায়াত দাঁড়িয়ে আছে। টিটুনের চোখদুটো আদ্র হয়ে হয়ে উঠে, বুকের মাঝে হাহা করে উঠে। টিটুন জরিয়ে ধরে বাবাকে।

“বাবা তুমি এখানে? এটা কি সত্যিই তুমি?” ভারি গলায় বলে টিটুন।

টিটুনের বাবা সাফায়াত পরম মমতায় হাত রাখে টিটুনের মাথায়।

“হ্যাঁ সোনা, আমি তোমার বাবা সাফায়াত।“

“আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি বাবা।“ কান্নার মত শব্দ করে বলে টিটুন। তার আবেগের বাধ যেন ভেঙ্গে পরেছে।

বাবা পিঠে হাত রেখে বলে “আমার সোনা, আমি এখানেই, শান্ত হও।“

“আমি তোমাকে আর হারাতে চাই না বাবা।“ গলাটা ধরে আসে টিটুনের।

“তোমাকে আমাকে আর হারাতে হবে না সোনা।“ মাথায় হাত মমতা নিয়ে হাত দিয়ে বলে বাবা সাফায়াত।

“মানুষের মস্তিষ্ক ক্ষুদ্র, বায়োলজিক্যাল কোষ দিয়ে মস্তিষ্ক তৈরি, সেই মস্তিষ্ক দিয়ে মানুষ বড় কিছু চিন্তা করতে পারে না” বলে বাবা।

টিটুন ধাক্কা খায় বেশ, তার বাবা সবসময় বলত মানুষের মস্তিষ্ক এই মহাবিশ্বের সব থেকে আশ্চর্য এক জিনিষ, সে পারে না এমন কিছু নেই। টিটুনের মন বলছে তার বাবা রুপি যে আছে সে তার বাবা নয়, অন্য কিছু, হয়ত তার মস্তিষ্কের ভ্রম। টিটুন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জরে ধাক্কা মারে লোকটিকে মুহূর্তেই সেই লোকটি অদৃশ্য হয়ে যায়।

টিটুন যেই মুহূর্তে বুঝতে পারে এগুলো ভ্রম তখন চথুর্ত মাত্রিক প্রাণীর তৈরি করা মায়া-মোহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। সে দেখতে পায় তার পাশেই দিপু এবং সুমি। সুমি অদৃশ্য কি ধরে যেন কান্না করছিল আর দিপু একা একা বিকট শব্দ করে হাসছে। টিটুন দুইজনকে সজোরে ধাক্কা দেয়, হুশ ফিরে আসে দুজনেরই।

“কিরে ঠিক আছিস তোরা?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

সুমি বলে “আমি আমার দাদিকে দেখছিলাম। সে আমি ছোট থাকতে মারা গেছিল। এটা কি ঘটছিল?“

“মনে আছে স্যার বলছিল যে যখনই আমরা এই চথুর্ত মাত্রিক প্রাণীদের বলয়ে ঢুকব তখনই তারা আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনে ঢুকে আমাদের সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবে, আমাদের দুর্বলতা জেনে যাবে। ওরা আমাদের দুর্বলতা বের করে সেখানে আঘাত করতে চাইছে!” বলে টিটুন।

“হুম বলে সুমি। তুই কি দেখছিলি?” দিপুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে সুমি।

“বাদদেতো।“ বলে দিপু।

পুনরায় প্রসঙ্গ পাল্টে দিপু জিজ্ঞেস করে “ওরা আমাদের সাথে কি করতে চাইছে?”

“ওরা আমাদের কানসাস মাইন্ডকে চিরদিনের জন্য এখানে বন্ধী করতে চাইছে, কারণ ওরা জানে ওদের যদি কেউ কিছু করতে পারে তাহলে আমরাই পারব” বলে সুমি।

“হুম।“ সুমির কথায় টিটুনের সমর্থন।

“ওরা আমাদের এমনিও-তো সরাসরি আঘাত করতে পারত?” ফের জিজ্ঞেস করে দিপু।

“মনে হয় না, কারণ আমরা এখন ওদের মত একটি ফর্মে আছে, ওরা পূর্ন্য শক্তি নিয়ে এখনো আসতে পারেনি এখানে তাই আমাদের সরাসরি ধ্বংস করতে পারবে না, তাই একটি মোহ তৈরি করে বন্ধী করতে চাইছে। এটা এক ধরনের মাইন্ড গেইম বলতে পারিস!” পাশ থেকে বলে টিটুন।

“অবিশ্বাস্য তুচ্ছ বায়োলজিক্যাল জীব হয়েও আমাদের চাল বুঝে ফেলল?” বজ্র কণ্ঠে বলল প্রাণীটি।

এবার তাকে বেশ প্রকাণ্ড আকারে দেখা যাচ্ছে, মানুষের অবয়বয়ের চলে গিয়ে সেখানে উজ্জ্বল কিছু একটা দেখাচ্ছে, থেমে থেমে সেটার ভিতর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।

“আমরা তুচ্ছ কোন জীব নই আমরা মানুষ। আর পৃথিবী আমাদের, তোমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।“ হুংকার মেরে বলল টিটুন।

“সেটা সম্ভব নয় তুচ্ছ মানব। তুচ্ছ বায়োলজিক্যাল জীব হয়ে কিভাবে আমাদের সাথে পারবে?” বলে চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীটি।

“আমরা মানুষ, আমরা বায়োলজিক্যাল শরীর আমাদের আপনাদের থেকে আলাদা করেছে, আমাদের আবেগ অনুভূতি আছে, আমরা হাসতে পারি, কল্পনা করতে পারি, ভালবাসতে পারি। আমরা কবিতা লেখি, উপন্যাস লেখতে পারি এগুলো আমাদের আনন্দ দেয়, হাসায় কাদায়।“ বলেই থামে টিটুন।

বলে “আপনারা রেডিও সিগনালের তৈরি, আপনারা এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নন। আমাদের একশটা দোষ ধরতে পারেন, আমরা মারামারি করি, ঘৃণা করি, তবে আমরা ভালোও-বাসি, আমি হাজারটা কারণ দেখাতে পারি আমাদের ভাল গুনের। মনে রাখবেন এই পৃথিবী আমাদের, আমরা দোষ করব, ভুল করব আবার আমাদের ভাল মন্দ কি হবে আমরাই নির্ণয় করব। অন্য কোন প্রাণীর কাছ থেকে আমাদের ভাল মন্দের সার্টিফিকেট নিতে চাই না।“

রেগে যায় প্রাণীটি। পুরনো দিনের রেডিও এর মত ঘরঘর শব্দ করতে থাকে। প্রাণীটি বৈদ্যুতিক রশ্মি ছুড়ে মারে তিনজনের দিকে, তিনজনই ডিগবাজী দিয়ে ছড়িয়ে পরে। আশে পাশে লুকানোর জায়গা নেই, তিনজন তিন দিকে কুঁজো হয়ে বসে পরে।

“কি করব এখন?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“আমি ঠিক জানি না” বলে সুমি।

প্রাণীটি ক্রমাগত বৈদ্যুতিক রশ্মি ছুড়তে থাকে, রশ্মিগুলোতে মেঝেতে আঘাত করে সট সার্কিটের মত চড় চড় শব্দ করতে থাকে। একটি রশ্মি এসে দিপুকে আঘাত করে ছিটকে উড়ে গিয়ে পরে পিছনের সাধা দেয়ালে। দেয়ালে কিছুক্ষণ আটকে থেকে ধপাস করে পুনরায় মেঝেতে পরে, পুরো শরীর সাধা আলোয় জ্বলসে যায়, তবে এটা তার সত্যিকারের শরীর নয় বিদায় সেখানে কোন ক্ষত দেখা যায় না, তবে প্রচণ্ড দুর্বল দেখা যায় তাকে। টিটুন এবং সুমি তাকে গিয়ে ধরে, হাঁপাতে থাকে দিপু। তাকে বেশ দুর্বল দেখায়।

“তুই ঠিক আছিস?” দিপুকে জিজ্ঞেস করে সুমি।

“কিছুটা” বলেই কোনমতে উঠে দাঁড়ায় দিপু।

“আমাদের কি করা উচিৎ?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

দিপু বলে “আমাদের হাতে সময় নেই, আমাদের একত্রে ওকে আঘাত হানতে হবে। মনে আছে আজগর স্যার বলেছিল আমরা তিনজন একত্রিত হলে যে কোন কিছুই করতে পারব।” বলে তিনজন নিজেদের হাত ধারা ধরি ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রাণীটির দিকে।
“কি করতে চাইছিস?” জিজ্ঞেস করে সুমি।

“মনে রাখিস ও রেডিও সিগন্যালের তৈরি ওর প্রত্যেকটা সিগন্যালকে আলাদা করতে হবে তাহলে ওকে পরাস্থ করা যাবে , আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে মস্তিষ্ক থেকে সিগনাল পাঠাতে হবে, যাতে ওর সিগনালকে ধ্বংস করতে পারি। ওকে মানুষের ক্ষমতা দেখাতে হবে।“ বলে দিপু।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তিনজন, মস্তিষ্কের থেক তরঙ্গ বেরিয়ে আঘাত হানে প্রাণীটির শরীরে, প্রাণীটিও পাল্টা তরঙ্গ নিক্ষেপ করে। দুই তরঙ্গ সংঘর্ষে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ মনি মুক্তার মত বের হতে থাকে, শর্ট সার্কিটের মত চড়চড় শব্দ হতে থাকে। অনেকক্ষণ চলতে থাকে তারপর এক সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণে প্রাণীটি অদৃশ্য হয়ে যায়।

ফিউচার ইনকর্পোরেশনের গাড়ির ভিতরে তিনটি সীটে সুমি, টিটুন এবং দিপু ঘুমিয়ে ছিল। তিনজন জেগে উঠে সেখানে। উপস্থিত সবাই তাদের তিনজনকে ঘিরে দাড়িয়ে থাকে, সবার মুখ উজ্জ্বল এবং বিজয়ের হাসি।

“স্যার আমরা সেই প্রাণীটিকে মেরে ফেলেছি “ আজগর স্যারের দিকে তাকিয়ে অস্ফুষ্ট স্বরে বলে টিটুন। বেশ দুর্বল লাগছে তাকে।

“এনার্জির কোন মৃত্যু নেই টিটুন, রুপ পরিবর্তন হয় মত্র। এই প্রাণীটি সাময়িক ভাবে নিজের শক্তি হারিয়ে চলে গেছে তবে অন্যকোন ফর্মে ফিরবে হয়ত ভবিষ্যতে।“ বলেই থামে আজগর স্যার টিটুনের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।

পুনরায় বলে তবে “আপাতত চিন্তা নেই, সেটা যতদিনে আসবে ততদিনে আমাদের স্পেইসে টাইমের যেই ক্ষত হয়েছিল সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে, ও আর আসতে পারবে না হয়ত।“

“আমরা গর্বিত তোমাদের জন্য” বলে বিজ্ঞানী শরিফ চৌধুরী।

থেমে আবার বলে “আজ মানব জাতিকে তোমরা বাচালে, তোমদের তিনজনের কাছে আমরা চিরঋণী।“

“স্যার এর পর যদি আবার আসে আমরা প্রস্তুত আছি” বুকে থাবা মেরে বিজ্ঞানী শরিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে দিপু।

অবশ্যই। তবে এখন তোমাদের কাজ পড়াশুনা করে নিজেকে তৈরি করা, যখন মানব জাতির দরকার হবে তখন না হয় তোমাদের তলব করব। পরম মমতায় দিপু মাথায় হাত রেখে বলে বিজ্ঞানী শরিফ।

বিঃ দ্রঃ প্রথমে ভাবছিলাম ১২ পর্ব লাগবে শেষ করতে, তবে এখন দেখা যাচ্ছে ১১ পর্বেই শেষ করা যাবে। কাল শেষ পর্ব আসবে।

আগের পর্বঃ ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব নয়)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



হ্যাপী নিউইয়ার।
আমি কোনভাবে ফিকশানের ভেতর স্হান পেলাম না।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
এই বয়সে ফিকশান মিকশানে স্থান না পাওয়াই ভাল।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৮

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি। এত তারাতারি শেষ করবেন কেন? ভালোই তো লাগছে ।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪৯

কাছের-মানুষ বলেছেন: ধন্যবাস আপনাকে। আপনার ভাল লেগেছে দেখে ভাল লাগল, শেষ পর্বে মূল ক্লাইমেক্স আসবে।

পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। কোনো ভান ভনিতা নেই। বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করেন নি।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনামে। আমি সাইন্স ফিকশনে কঠিন শব্দ ব্যবহার করে কঠিন করতে চাই না।
প্রথম থেকে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল। শেষ পর্বের ক্লাইমেক্স আরেকটু বাকি আছে।

৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৭

জ্যাকেল বলেছেন: আপনি কি ইহা বই আকারে নিতে চাচ্ছেন?

০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ইহার গন্তব্য এখনো ঠিক হয়নি, প্রফেশনাল লাইফে ভয়াবহ ব্যাস্ততায় আছি, ইহা নিয়ে চিন্তা করার সময় পরে আছে!!

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:০১

কাছের-মানুষ বলেছেন: শেষ পর্ব

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অমা! এত ছোট্ট লড়াইয়েই শেষ!!!!!!!!!!!

যাই. শেষটা আগে দেখে নিই :)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৪৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: এনার্জির কোন মৃত্যু নেই, রুপ পরিবর্তন হয় মাত্র! ক্লাইমেক্স আরো বাকি আছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.