নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asrafulalam

ব্যোমকেশ বাবু

ব্যোমকেশ বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

উর্বরের UBER ট্যাক্সি

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:১৮


UBER , ঢাকাবাসীর জন্য নতুন ট্যাক্সি সেবা প্রতিষ্ঠান । আরেকটি ধসে পড়া ব্র্যান্ড যা পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় ধরা খেয়ে এখন ঢাকা শহরে আপনাদের সেবা দিতে প্রস্তূত ।আমাদের দেশে UBER এর মতো এই সার্ভিস অনেক আগে থেকেই চলছে । সকালে গাড়ির মালিককে অফিস নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফেরার সময় মতিঝিল বা বনানী থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা প্যাসেঞ্জার তুলে নেয়া ঢাকাবাসীর পরিচিত সার্ভিস । এর জন্য কোনো ওয়েবসাইট বা মোবাইল APPS এর দরকার হয় না । UBER যদি আজ থেকে ৫বছর আগেও ঢাকাতে এর সেবা দিতে আসতো, আমার চেয়ে খুশি আর কেও হতো না , কিন্তু যখন দেখি নিউ ইয়র্কে UBER প্রায় বন্ধের পথে আর ঢাকাতে UBER নিয়ে মাতামাতি তখন একটু তো সন্দেহ হতেই পারে । আসুন জেনে নেই UBER কেন ঢাকায় এতো দিন পর ?

UBER হচ্ছে এক ধরণের ট্যাক্সি বা রাইড শেয়ারিং । আপনি UBER এর ওয়েবসাইট বা মোবাইল APPS এর মাধ্যমে ট্যাক্সি বুকিং করতে পারবেন আর যারা UBER ড্রাইভার হতে চান তারাও অনলাইন বা মোবাইল APPS এর মাধ্যমে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন । আসল বেপারটা হচ্ছে UBER আপনার আর আপনার আশেপাশে থাকা কোনো ড্রাইভার এর মাজে অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করিয়ে দেয় । আর এর জন্য UBER কেটে নেয় একটা কমিশন । এটাই মোটামুটি UBER এর ব্যবসা ।ব্যাপারটা খুবই সহজ । আপনার প্রয়োজন আর ট্যাক্সি ড্রাইভারের প্রয়োজনকে একটা ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে এক করে দেয়া আর এর জন্য মাজখানে একটা কমিশন কেটে রাখা । এখন ভাববার বিষয় হচ্ছে এই ধরণের প্রযুক্তি আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কতটা নিরাপদ আর কতটা ব্যবসা বান্ধব ।

প্রথমেই আসি UBER এর পেমেন্ট মেথড নিয়ে, সধারনত UBER ট্যাক্সির ভাড়া আপনাকে ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে । নগদ টাকার লেনদেন UBER গ্রহণ করে না । এর কারণ কিন্তু যুক্তিসঙ্গত । আপনি যদি ট্যাক্সি ভাড়াটা নগদ টাকায় পরিশোধ করেন UBER তার কমিশন কেটে রাখতে পারবে না । আপনি যখনই UBER ট্যাক্সিতে উঠবেন তখনই আপনার একাউন্ট থেকে ট্যাক্সি ড্রাইভার এর একাউন্টে ভাড়ার টাকা জমা হয়ে যাবে সংক্রিয়ভাবে ।

UBER ড্রাইভাররা সাধারণত সাপ্তাহিকভাবে পেমেন্ট পেয়ে থাকে । অর্থাৎ সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটা দিনে UBER তাদের ড্রাইভারদের একাউন্ট এ সব টাকা জমা করে দেয় । তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে অনেকটা এই রকম, ট্যাক্সি ড্রাইভাররা ভাড়ার টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ না পেয়ে পাচ্ছে সপ্তাহ ঘুরে । আর এই লেনদেনটি হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে । ট্যাক্সি ড্রাইভারদের দিক থেকে যদি চিন্তা করি তাহলে প্রথম দিকে আপনার কাছে লাভজনক মনে হলেও বছর ঘুরতে ব্যাপারটা তেমন লাভজনক নাও হতে পারে ।এর কারণ UBER এর রেজিস্ট্রেশন ফী , আপনার গাড়ির রেজিশ্ট্রেশন ফী আর সরকারি ট্যাক্সি গাড়ির ট্যাক্স যদি আপনাকে দিতে হয় তাহাকে খুব সম্ভবত আপনাকে উল্টো নিজের পকেট থেকে দিতে হতে পারে ।

UBER এর ড্রাইভার হতে হলে একটা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পুরুন করে তবে রেজিস্ট্রেটার্ড ড্রাইভার হতে হয় । এখন আমেরিকার নিউ ইয়র্কের ড্রাইভার এর জন্য যে ফর্ম আমাদের ঢাকা শহরের ড্রাইভার এর জন্য ঠিক একই রকম ফর্ম ।সমস্যার শুরুটা এই জায়গায় । নিউ ইয়র্কের ড্রাইভিং লাইসেন্স হচ্ছে এখানকার যে কারো জন্য প্রথম সারির পরিচয়পত্র । এই ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মাধ্যমে একজন মানুষের সকল ধরণের জীবন বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে তার প্রতিদিনকার সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারে প্রশাসন । এর কারণ এদের ড্রাইভিং লাইসেন্স . ন্যাশনাল আইডি কার্ড , সোশ্যাল কার্ড সবকিছু ইন্টিগ্রেটেড । আপনার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স বাদ হয়ে যায় তবে আপনাকে এর জের সবখানে দিতে হবে । ঠিক এই কারণেই এইসব দেশের মানুষ গুলো এতো সোজা হয়ে চলে । কারণ এদের বাঁকা হবার পথ নেই । আমাদের দেশে একজন ড্রাইভার তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছুড়ে ফেলে দিয়ে আরেকটা নতুন করে আনতে মাত্র ঘন্টা খানেক সময় নিবে । ইন্টিগ্রেটেড না হবার কারণে আমাদের ন্যাশনাল আইডি নম্বর , ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর সবই আলাদা আলাদা । এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এইসব ড্রাইভারদের আমরা মনিটর করতে পারি । তাত্ত্বিক ভাবে এটা প্রায় অসম্ভব ঢাকা শহরের পরিপ্রেক্ষিতে । আমার নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে আমার যেতে হয়নি বি আর টি সি তে । তাহলে বুঝুন এটা কত সহজ আমাদের দেশে ।

কিন্তু আপনি ভাবতে পারেন এতে সমস্যা কোথায় । কারণ UBER ড্রাইভার সামান্য কিছু ভাড়ার জন্য এতো কাহিনী করবে না । আর যেখানে সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হচ্ছে সেখানে এতো চিন্তার তো কিছু নেই । আছে, চিন্তার কারণ আছে । একবার ভাবুন আপনার ৩০ লক্ষ টাকা দামি গাড়ির ড্রাইভারের বেতন কত মাসে ? ১০ থেকে ১৫ হাজার । একবার কি ভেবে দেখেছেন আপনি আপনার ৩০ লক্ষ্য টাকা দামের একটা গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন মাত্র ১০ -১৫ হাজার টাকার একজন মানুষকে । আর এই জন্যই আপনার প্রতিদিনের শুরু আর শেষ হয় আপনার ড্রাইভারের সাথে জগড়া করে । আজকে জোরে চালিয়েছে , সি এন জি এর টাকা মেরে দিয়েছে , এইসবের সাথে আপনার গিন্নির কয়েকশো অভিযোগ আপনার ড্রাইভারকে নিয়ে । এটা প্রতিদিনের ব্যাপার । এর একমাত্র কারণ হচ্ছে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে আপনার ড্রাইভার আর আপনার জীবন ধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন । তাই আপনারদের চিন্তা ধারাও ভিন্ন । ঠিক এই ব্যাপারটাই UBER ট্যাক্সির জন্য ভয়ের কারণ। UBER আপনাকে আর আপনার ট্যাক্সি ড্রাইভারকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসছে ।আপনি হয়তো এই ব্যাপারটা একজন আধুনিক মনের মানুষ হিসাবে সহজে মেনে নিচ্ছেন কিন্তু আপনার ট্যাক্সি ড্রাইভার সেই আপনার গাড়ির ড্রাইভারের মতোই একজন ।

নিউ ইয়র্কের প্রেক্ষাপটে এই ধারণা অন্য রকম । অনেক সময় UBER ট্যাক্সি ড্রাইভার পেসেঞ্জারের থেকে শিক্ষিত আর সামাজিকভাবে অবস্থাবান হতে পারে । কারণ এখানে আপনি যারা ট্যাক্সি ড্রাইভার তাদের সবাইকে আপনার চেয়ে কম কিছু ভাবতে পারবেন না ।যঢাকা শহরে শতভাগ ট্যাক্সি ড্রাইভারকে আপনি আপনার চেয়ে অধম ভেবে থাকেন চোখ বন্ধ করে ।ভাবতেই পারেন । সামাজিক এই অবস্থার ফলাফল ভয়াবহ । আর এর ফলে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার এর নীতি বা আচরণ নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলতেই পারি । সামাজিক এই নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের । সাধারণ ট্যাক্সি দূর থেকে দেখলে বোঝা যায় এর রং দেখে বা ট্যাক্সি নামটা দেখে । UBER এর ট্যাক্সি আপনি দূর থেকে দেখে চিনতে পারবেন না । পুলিশের নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে এই UBER ট্যাক্সিগুলো খুব সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে । কারণ সামাজিক অবস্থার কারণে একটা বিলাসবহুল গাড়ি চোলাই মদ বহন করার কাজে ব্যবহার হবে না , এমনটাই ধারণা আমাদের প্রশাসনের ।

দিল্লিতে ২০১৪ সালে UBER সার্ভিস নিশিদ্ধ করা হয় ৩২ বছর বয়স্ক এক নারীর ধর্ষণের অভিযোগে । ধর্ষিতা এই নারী ছিলেন UBER প্যাসেঞ্জার , আর ধর্ষক ছিল UBER ড্রাইভার । যেহেতু পুরো ব্যাপারটাই হয় অনলাইনে বা মোবাইলের মাধ্যমে, আপনি কোনো ভাবেই আপনার ড্রাইভার এর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন না ।আপনি হয়তো আপনার মোবাইলে দেখবেন আপনার আশেপাশে বিলাস বহুল কোনো ট্যাক্সি আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে আর ভাড়াটাও অনেক কম । কিন্তু একবার ভেবে দেখবেন যার এই বিলাসবহুল গাড়ি কেনার ক্ষমতা আছে সে আপনার সামান্য ট্যাক্সি ভাড়ার জন্য নিজের গাড়িকে UBER এর ট্যাক্সি বানাবে না । আর আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটা প্রায় অসম্ভব । আপনি শতভাগ নিচ্ছিত থাকতে পারেন গাড়িতে বসে থাকা ভদ্রলোক গাড়ির মালিকের ড্রাইভার আর অবস্যই মালিককে না জানিয়ে তিনি এই কাজটুকু করছে । এখন আপনার কোনো সমস্যা হলে এর দায়ভার আপনি UBER এর ওয়েবসাইটকে দিতে পারেন না। ঠিক এমনটিই হয়েছিল দিল্লিতে এবং এমনটিই হবে আপনার সাথে ।


এবার আসুন টাকা পাশের ট্রানসাকশান নিয়ে। কিসের ভিত্তিতে UBER এর ভাড়া নির্ধারণ হবে তা কিন্তু এখনো পরিষ্কার না । নিউ ইয়র্কে ট্যাক্সি ভাড়া নির্ধারণ করা আছে ।আর প্রত্যেক ট্যাক্সির পেছনে এই ভাড়ার চার্ট টাঙানো থাকে । আমাদের দেশে UBER গ্রাহকরা কার নির্ধারণ করা ভাড়া পরিশোধ করবে ? UBER ট্যাক্সিতে কি মিটার থাকবে ? মনে হয় না । কারণ UBER , GPS এর মাধ্যমে দুরুত্ব নির্ধারণ করে । তাহলে আমাদের প্রশাসনকেও GPS এর উপর ভাড়া নির্ধারণের কোনো একটা ফর্মুলা বের করতে হবে । কারণ ড্রাইভার বা গ্রাহক কেয়ই কিন্তু কোন কিছুই জানবে না কারণ সবকিছু UBER সাইটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে । কত ভাড়া আপনার একাউন্ট থেকে কাটা হলো আর ড্রাইভার কত টাকা সপ্তাহ শেষে পেলো এইসব জানার জন্য আপনাকে আপনার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট এর সাথে UBER এর স্টেটমেন্ট মিলাতে হবে প্রতি সপ্তাহে । কজন ড্রাইভার এই কাজটুকু করবে এখন তাই দেখার পালা ।

প্রতি সপ্তাহ শেষে UBER থেকে ড্রাইভারকে একটা লগ সিট দেয়া হবে যাতে পুরো সপ্তাহের ভাড়া আর দুরুত্ব দেয়া থাকবে । আমি সন্দিহান আমাদের কত জন ড্রাইভার এই লগ সিট দেখে ফেলে আশা সপ্তাহের দূরত্বের সাথে ভাড়া মিলিয়ে দেখবে । নিউ ইয়র্কে এই সমস্যার জন্য UBER ড্রাইভাররা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করে যাচ্ছে । কারণ ড্রাইভারের হিসেবের সাথে UBER এর হিসেবে মিলে না কখনোই । আর মিলবেই বা কিভাবে । GPS এর দুরুত্ব আর বাস্তব দুরুত্ব খুব একটা মিলে যাবার কি কথা ? মনে হয় না । এই ধরণের অভিযোগের তদন্ত হবে কিভাবে ? প্রশ্ন থাকতেই পারে ।

UBER তাদের যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক GPS এর মাদ্ধমে যাত্রীর লোকেশান ট্রেস করে থাকে। আমাদের দেশে বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্কের যে অবস্থা তাতে কিভাবে একজন যাত্রী সারাক্ষন GPS এর আওতায় থাকবে আমার বোধগম্য নয় । মোবাইলের কল ড্রপ আর ইন্টারনেট এর অভিযোগের কারণে সরকার গণ-শুনানি করে আর সেই মোবাইল নেটওয়ার্ক আর ইন্টারনেটের উপর ভিত্তি করে পুরো একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলবে , এটা এতো সহজে আমি মেনে নিতে পারছি না ।

UBER সেবার জন্য প্রয়জোন নিরিবিচ্ছিন্ন্য ইন্টারনেট সংযোগ তাও আবার আপনার মোবাইল ডিভাইস জাতীয় জিনিসে । এই সংযোগ আর এর বিল কি UBER দিচ্ছে ? মনে হয় না । আর এই একটি কারণেই বিশেষ একটা টেলিকম কোম্পানি UBER এর পার্টনার হয়েছে বাংলাদেশে । যেহেতু UBER ড্রাইভার আর যাত্রী সবারই হাই স্পিড ইন্টারনেট প্রয়োজন আর এই সেবা দিতে প্রস্তুত গ্রামীনফোন । যেখানে সাধারণ ইন্টারনেট সেবা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে গণ শুনানির সম্মুখীন হতে হয় সেখানে যাত্রী নিরাপত্তার জন্য ইন্টারনেট সেবা প্রদান করবে এই কোম্পানি । আবারো আমি সন্দিহান । সন্দেহ আমি করতেই পারি । এটা অমূলক অবশ্যই নয় ।

UBER কেন এই মুহূর্তে ঢাকা শহরে এর উত্তর হয়তো এমন হতে পারে। বর্তমানে সরকার ঢাকা শহরে স্মার্ট আইডি কার্ড দেয়া শেষ করেছে আর UBER এর রেজিশ্ট্রেশন ফর্মে এই স্মার্ট আইডি কার্ড নম্বর বাধ্যতামুলুক করছে । এটা অবস্যই একটা ভালো ভেরিফিকেশন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঢাকা শহরে বসবাসকৃত ড্রাইভারদের কতজন ঢাকায় স্থায়ী ? আর এদের কতজনের এই স্মার্ট আইডি কার্ড আছে বর্তমানে ।খুব সম্ভবত আরেকটা মোবাইল সিম নিবন্ধনের মতো সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে ।আশা করি সরকার এই ব্যাপারে নজর দিবেন ।

সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে UBER বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয় । এর কারণ , প্রচলিত ট্যাক্সি বা ইয়েলো ট্যাক্সি UBER এর সাথে পাল্লা দিতে পারছে না । আর পারবেই বা কেমন করে ? প্রচলিত ট্যাক্সিকে সরকারি ট্যাক্স , আলাদা করে ট্যাক্সি নিবন্ধন ট্যাক্স আরো কত কি দিতে হয় আর UBER ট্যাক্সি যারা চালান তাদের এইসব কোনো কিছু না দিলেও চলে । কারণ এই ট্যাক্সির অস্তিত্ব শুধু অনলাইনে । সরকার বা বি আর টি সি কিভাবে এইসব অনলাইনে নিবন্ধনকৃত ট্যাক্সিকে নিয়ন্ত্রণ করবে আমার ধারণায় নেই ।

যে কোনো হাই টেক প্লাটফর্ম ব্যবহার করার আগে নিচিত হতে হয় সেবা নিয়ে । আমাদের দেশে ইন্টারনেট , ব্যাংক ট্রানসাকশান , মবিলিটি এই সব এখনো UBER এর মতো প্লাটফর্ম ব্যবহার করার জন্য উপযোগী নয় । নিরাপত্তার বিষয়টি আরো ভাববার প্রয়োজন । যেখানে সাধারণ তিন চাকার সি এন জি ট্যাক্সি একটু রাত হলে মিরপুর যেতে চায় না সেখানে আপনি আপনার দামি একটা গাড়ি নিয়ে মাঝরাতে নিচ্ছই মিরপুর চিড়িয়াখানা যাবেন না ? যতই UBER আপনাকে ভাড়া ঠিক করে দিক না কেন , বলেন বুকে হাত দিয়ে যাবেন আপনি ? মনে হয় না । তাহলে মিরপুরের এই যাত্রী আপনার না যাওয়ার অভিযোগ কাকে জমা দিবে । আসেপাশের পুলিশকে ? খুব একটা সুবিধে হবে বলে মনে হয় না । কারণ UBER বুঝার মতো উর্বর বোধ হয় এখনো পুলিশ প্রশাসন না ।

সরকারি ভাবে UBER বা এর মতো অন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান দেশে ব্যবসা করছে এদের সবাইকে একটা নিয়মের মধ্যে আনা প্রয়োজন । কারণ ড্রাইভার বা UBER যারাই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে তারা আমাদের দেশেরই জনগন । ট্যাক্সি ড্রাইভার বা যাত্রী এদের সকলের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের । বর্তমানে UBER এর রেজিস্ট্রেশন এ শুধুমাত্র ন্যাশনাল আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক । কিন্তু এই আইডি কার্ডকে কিভাবে ইন্টিগ্রেটেড একটা আইডি কার্ড করা যায় প্রশাসনের সেই দিকে নজর দেয়া উচিত ।

কাচঘেরা রুমে বসে উর্বর মস্তিস্ক থেকে UBER এর ধারণা দেয়া খুব সহজ । কিন্তু এই ধারণা কতটুকু বাস্তব সম্মত তা ভাবার মতো উর্বর মতিস্ক কাচঘেরা রুমে বোধহয় এখন আর নেই । আমি সঙ্গত কারণেই UBER এর টেলিকম পার্টনার গ্রামীনফোনের কথা বলছি । এটা IPhone নয় যে অপারেটর ছাড়াও শুধু সেট ব্যবহার করা যাবে । UBER নিজেই একটা অপারেটর এবং যার কোনো অফিস নেই , লোকবল নেই , নেই কোনো আইনি স্তম্ভ যেখানে দৌড়ে আপনি যেতে পারেন প্রয়োজনের সময় । ফাঁকতালে যা হচ্ছে তা হলো প্রচন্ড অবৈধ একটা কর্মকান্ডকে সুন্দর মতো ডিজিটাল প্যাকেজে বৈধ করা হচ্ছে । যেখানে নিউ ইয়র্কের মতো শহরে UBER সার্ভিস নিয়ে মতভেদ আছে সেখানে ঢাকা শহরের মতো একটা শহরে কিভাবে UBER এর মতো ধারণার জন্ম হলো বুজতে পারলাম না । যেখানে বেশিরভাগ গাড়ির কাগজপত্র আর ড্রাইভার এর লাইসেন্স এর ঠিক নেই ।

আর সবচেয়ে বড় কথা যখন UBER এর ব্যবসা পড়তির দিকে তখন আমার শহরকে বেছে নিলে আমি প্রশ্ন করতেই পারি " এতদিন কোথায় ছিল " ভুলে করলাম , আমিই বা প্রশ্ন কাকে করবো ? UBER তো একটা ওয়েবসাইট মাত্র । । ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৪

জিয়াউল ইসলাম মামুন বলেছেন: যে দেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাবগুলোই (তিন চাকা বা চার চাকা) নিরাপদ নয় সেখানে এ ধরনের বায়বীয় পরিবহন সুবিধা কোন অবস্থাতেই নিরাপদ হতে পারে না । শুধুমাত্র নিরাপত্তার কারনে আমি নিজে রাতে ক্যাব-এ চলাচল না করে পাবলিক বাসে চলাচল করাকে বেশী নিরাপদ মনে করি। যতক্ষন পর্য়ন্ত না যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকীর আওতায় না আসবে ততদিন এ ধরনের সার্ভিস ব্যবহারের আগে একবার ভাবা দরকার।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৬

কলাবাগান১ বলেছেন: টেক্সি চালক ছাড়া আর কাউকেই উবারের বিরূদ্ধে কথা বলতে দেখি নাই।

উবার থাকাতে ঘরে বসে ৭০০ মাইল দুরে থাকা মেয়ের বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতাওয়াত এর ভাড়া দেওয়া থেকে ঘরে পৌছা পর্যন্ত্য সব ই পর্যবেক্ষনে রাখতে পারি....

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জরুরী তত্য জানানোয় ধন্যবাদ

কাচঘেরা রুমে বসে উর্বর মস্তিস্ক থেকে UBER এর ধারণা দেয়া খুব সহজ । কিন্তু এই ধারণা কতটুকু বাস্তব সম্মত তা ভাবার মতো উর্বর মতিস্ক কাচঘেরা রুমে বোধহয় এখন আর নেই । আমি সঙ্গত কারণেই UBER এর টেলিকম পার্টনার গ্রামীনফোনের কথা বলছি । এটা IPhone নয় যে অপারেটর ছাড়াও শুধু সেট ব্যবহার করা যাবে । UBER নিজেই একটা অপারেটর এবং যার কোনো অফিস নেই , লোকবল নেই , নেই কোনো আইনি স্তম্ভ যেখানে দৌড়ে আপনি যেতে পারেন প্রয়োজনের সময় ।

আর সবচেয়ে বড় কথা যখন UBER এর ব্যবসা পড়তির দিকে তখন আমার শহরকে বেছে নিলে আমি প্রশ্ন করতেই পারি " এতদিন কোথায় ছিল " ভুলে করলাম , আমিই বা প্রশ্ন কাকে করবো ?

সহমত।

৪| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৩

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: পোস্ট লেখকের তথ্য ঠিক নয় , বাকি মন্তব্য কারীরা না জেনে মন্তব্য করেছেন , কলাবাগান১ ছাড়া।
"যারা UBER ড্রাইভার হতে চান তারাও অনলাইন বা মোবাইল APPS এর মাধ্যমে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন ।" --- যারা Uber ড্রাইভার হতে চায় , তাদেরকে অরিজিনাল লাইসেন্স কপি , আইডেন্টিটি /রেসিডেন্স প্রুফ , পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ইত্যাদি সহ uber অফিস এ রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। Uber বা যেকোন কমার্শিয়াল পারপাসএ ভাড়া খাটানো গাড়ির ড্রাইভারের কমার্শিয়াল লাইসেন্স লাগে যেটা সাধারণ ব্যক্তিগত গাড়ীর ড্রাইভারের লাইসেন্স থেকে আলাদা। অন্তত ভারতে এটা করতে হয় , অন্যানো দেশেও নিশ্চয় একই নিয়ম।

"দিল্লিতে ২০১৪ সালে UBER সার্ভিস নিশিদ্ধ করা হয় ৩২ বছর বয়স্ক এক নারীর ধর্ষণের অভিযোগে । ধর্ষিতা এই নারী ছিলেন UBER প্যাসেঞ্জার , আর ধর্ষক ছিল UBER ড্রাইভার ।"

সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। দিল্লি , মুম্বাই কলকাতা , চেন্নাই , বাঙ্গালোরে এবং অসংখ্য শহরে কয়েক লক্ষ uber /ola ট্যাক্সি চলছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অফিস যাতায়াতের জন্য uber /ola ট্যাক্সি ব্যবহার করি , সাধারণ ট্যাক্সির থেকে ভাড়া অনেক কম। আর ধর্ষণের ঘটনা যেটা ঘটেছিলো , যেকোন প্যাসেঞ্জের ট্যাক্সির ড্রাইভারের পক্ষেই সম্ভব , তার জন্য আলাদা ভাবে uber ড্রাইভার হওয়ার প্রয়োজন নেই।

Uber যে কারণে অনেক কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে তার কারণ --১) economies অফ scale --২)প্রযুক্তির ব্যবহার --যার কারণে Uber ট্যাক্সির ড্রাইরান এবং খালি অবস্থায় ওয়েটিং পিরিয়ড অনেক কম।

"আপনি শতভাগ নিচ্ছিত থাকতে পারেন গাড়িতে বসে থাকা ভদ্রলোক গাড়ির মালিকের ড্রাইভার আর অবস্যই মালিককে না জানিয়ে তিনি এই কাজটুকু করছে ।"

কোনো ভাবেই এটা সম্ভব না , যেমুহূর্তে উবের এ রেজিস্টার্ড ড্রাইভার uber app এ লগ ইন করছে , ভাড়া নেয়ার জন্য , তার মালিকের কাছে তার মোবাইল app এ সেই খবর যাচ্ছে। সেই ড্রাইভার একটি মুহূর্তে কোন লোকেশন এ আছে , কোথায় ভাড়া নিয়ে যাচ্ছে , সেই ভাড়া কত --সমস্ত তথ্য মালিকের কাছে চলে যাচ্ছে।

"সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে UBER বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয় ।"---এই আন্দোলন সাধারণ জনগণ /প্যাসেঞ্জের করছে না , সাধারণ ট্যাক্সি মালিকরা /চালকরা করছে, কারণ তারা প্যাসেঞ্জের হারাচ্ছে । বিশ্বে কম্পিউটার আসার পর সাধারণ টাইপরাইটার রা যেরকম কাজ হারিয়ে ছিল এটা অনেকটা একই রকম ঘটনা। উন্নত প্রযুক্তি পুরনো প্রযুক্তির লোকেদের জবলেস করছে।কিন্তু প্রযুক্তিকে আটকানো সম্ভব নয় , যেমন সাধারণ টাইপরাইটার পারেনি কম্পিউটার কে রুখতে।

কলাবাগান১ এর মন্তব্যের সাথে একমত।

৫| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: খারাপ যে কোন পদ্ধতিতেই আসতে পারে। তবে যদি আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় তাহলে কেউ সাহস পাবেনা ঝামেলা করার। history চ্যানেলে দেখেছিলাম অনলাইনে বিডিং করে পিক আপ ভাড়া নেয়া হয় মাল ডেলিভারির জন্য। গ্রাহক ও ড্রাইভার দুই পক্ষই অনলাইনে থাকে। এটাও তো প্রযুক্তির সুফল...

৬| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

বুমকেশ বাবু,
মানুষ রিক্সা পায় না আর আপনি উবের আর কুবের ট্যাক্সি নিয়ে আছেন।

৭| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: তবে দেশের বাইরে গ্রাব/উবার অনেক ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। অনেক অনেক ভালো সার্ভিস। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা সম্ভব নয়।

৮| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৫

রিফাত হোসেন বলেছেন: খালি উইবার না এমন টাইপের কয়েকটা সার্ভিস আছে । এদেরটা ট্যাক্সির মত টপ নয় তবে সস্তা আর সহজলভ্য লাইসেন্স পাওয়া । যাই হোক হতে পারে ট্যাক্সি সমিতি গুলোর চক্ষুশূল হয়েছে । এই কারনে হাই কোর্ট পর্যন্ত দৌড় ঝাপ । :)

সিকিউরিটি খুজলে ট্যাক্সি খুজুন সস্তা হলে উইবার এ যান :)

কিন্তু ট্যাক্সি মানেই সিকিউরড না আবার ;)

তবে সাজ্জাদ সাহেব এর সাথে একমত আমাদের দেশে কঠিন এই রকম সার্ভিস দেওয়া কিন্তু সাহেব এমন হলে তো দেশ আর এগুতে পারবে না । :) যেভাবেই হোক সার্ভিস ভাল করার চেষ্টা করতে হবে, ভাল হতে হবে । কত দিন আর নীচু সারির দেশের কোটায় থাকতে ভাল লাগবে ।

সবাই মিলে একটু চেষ্টা করে হাত দিয়ে ধরলে , মন কে পরিবর্তন করলে, দেশ পরিবর্তন সম্ভব । তবে ১ দিনে নয় , ধীরে ধীরে । আম্রিকা হইতে হবে না , দেশের মত দেশ হতে পারলেই হবে ।

মনে অনেক কষ্ট মাতৃভূমি নিয়ে বলতে পারি নাই সাহেব :) বিদেশী মানুষ অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে, ভালটাই বলি, কিন্তু খারাপটা আসলে তখন চেপে যেতেই হয় । একটু ভাল সত একজন নেতার খুব অভাব । নেতৃত্ব ছাড়া ছন্নছাড়া ভাবে অমুকের পিতা, মাতা, ভাই, স্বামী, স্ত্রীর দোহাই দিয়ে দেশ চললে তো অন্ধকারেই থাকতে হবে ।

৯| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২০

মোঃ নূরুজ্জামান খান (সালেহীন) বলেছেন: উবার তো এখন ঢাকায় ভালই চলছে। গত শুক্রবার সকালে মিরপুর-১ বাসা থেকে সদরঘাট পর্যন্ত গেলাম। ভাড়া আসল ৪৭০ টাকা। ১০০ টাকা ডিসকাউন্টে ভাড়া প্রদান করলাম ৩৭০ টাকা। অবশ্য কোন জ্যাম ছিলনা তখন। আমারতো ভালই মনে হল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.