নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asrafulalam

ব্যোমকেশ বাবু

ব্যোমকেশ বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার ব্যাবসায়ীকরণ

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২০



আমার স্ত্রী সম্প্রতি ফেসবুকে একটা বুটিক শপ খুলেছে মেয়ের নাম দিয়ে । খুবই মহৎ পারিবারিক এক উদ্যোগ । আমাদের দেশের বেশির ভাগ স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম হয় মালিকের নাম অথবা ছেলে মেয়ের নামে । যেমন আবুল খায়ের গ্রূপ আকিজ গ্রূপ এস আলম গ্রূপ ইত্যাদি ইত্যাদি । আবেগী এই ব্যাবসীয়রা ট্রেড লাইসেন্স করার সময় বাবার নাম বৌয়ের নাম বা মেয়ের নামে রেজিস্টার করেন । যদিও ব্যবসা বাণিজ্যে বৌ বা মায়ের খুব একটা দেখা মিলে না । ব্যবসা বাণিজ্য আসল বিষয় নয় । নামটাই আসল । অনেকটা এরকম বুজ দিয়ে চলে আসছেন আমাদের ব্যাবসীয়রা । নামকরণের স্বার্থকথা যাই হোক না কেন নিজের স্ত্রীর প্রতি কতটুকু বিশ্বাস আছে এই সকল ব্যাবসায়ীর আমার জানা নেই ।

স্বামী স্ত্রীর মাঝে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক কতটা কার্যকর এটাও আমার জানা নেই । এই ধরণের খুব একটা উদাহরণও চোখে পরে না । কিন্তু স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সবচেয়ে নিরাপদ আর বিশ্বস্ত হবার কথা । আর যদি তাই হয় তবে এই দুইজনের মাঝে ব্যবসা পাতিও বেশ জমে যাবার কথা । বড়জোর যেটা দেখা যায় ব্যাবসায়ীর স্ত্রীরা ব্যাবসায় অনেকটা স্লিপিং পার্টনার মানে নীরব পার্টনার থাকে । ঠিক কেন এই নীরবতা এ নিয়ে মনে হয় না ফিলিপ কটলার কিছু জানেন । স্ত্রীরা স্বামীর স্লিপিং পার্টনার হবে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । কিন্তু ব্যাবসায় কেন স্লিপিং বা নীরব থাকবে এটা ভাববার বিষয় ।

আমেরিকায় স্বামী স্ত্রী একই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমান অংশীদার হতে পারে না । যেকোন একজনকে পুরো প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে হবে আর অন্য জন ওই প্রতিষ্টানের কর্মচারী । ঠিক কি কারণে আমেরিকার মতো দেশে এই নিয়ম আমার জানা নেই । একই পরিবারের হলে কি সমান অংশীদারের ব্যবসা বাণিজ্য করা যাবে না ? এ কেমন নীতি ? তবে আমাদের দেশে চাইলেই যেকোন স্বামী তার স্ত্রীকে সম অংশীদারি পার্টনার করতে পারে ।

আমি আর আমার স্ত্রী আমাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করি চাকুরী দিয়ে । আমরা দুজনেই চাকরি করতাম । আর প্রতিদিন রাতের বেলা নতুন কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখতাম । নতুন কিছু করাটা স্বপ্ন পর্যন্তই । এর বাস্তবতা চোখে পড়ার মতো না । ভুল না করলে আমার মতো প্রায় বেশির ভাগ চাকুরীজীবি দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন এমনই । এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই স্বপ্ন শেয়ার মার্কেটে টাকা লগ্নি করা পর্যন্ত গড়াতে পারে । এর বেশি কিছু নয় । আমাদের নামকরা অর্থনীতিবিদরা সামাজিক ব্যবসা বা এই জাতীয় তত্ত্ব নিয়ে ব্যাস্ত । কিন্তু পারিবারিক ভাবে ব্যবসা পাতি কেন হয় না এ নিয়ে বোধ করি কেও ভাবেন না । ব্যাপারটা খুবই স্পর্শকাতর । কারণ আমাদের স্ত্রীরা স্বামীর অর্জিত টাকায় চলবে এটা খুবই স্বাভাবিক আর যদি সংসারে টানাটানি থাকে তবে বড়জোর স্ত্রী ব্যাংকে একটা চাকরি করতে পারে । এটুকু আমার পক্ষে মেনে নিতে সমস্যা হয় না । সমস্যার শুরু হয় আমি যখন ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করি তখন আমার স্ত্রীকে অন্য আরেকজন পার্টনার এর মতো করে ভাবতে ।

ফিরে আসি আমার স্ত্রীর বুটিক শপের গল্পে । বুটিক শপে মেয়েদের নানা রকম কাপড় চোপড় বিক্রি হয় । বেশির ভাগ ভারতীয় পণ্য ।আমি নিউ ইয়র্ক থেকে অনলাইন এ পেমেন্ট করি আর আমার স্ত্রী সেগুলো এস এ পরিবহনে ডেলিভারি করে । সঙ্গত কারণেই এস এ পরিবহন দেশের ফেসবুক ভিত্তিক পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে । যদিও এই প্রতিষ্ঠানের কোন কিছুই ডিজিটাল না ।আমার ক্ষমতা থাকলে এস এ পরিবহনকে নন ডিজিটাল প্লাটফর্ম অ্যাওয়ার্ড দিতাম । আমার সাথে আমার স্ত্রীর ব্যাবসায়িক সম্পর্ক বেশ পুরোনো । আমরা এর আগে একসাথে কম করে হলেও দু থেকে তিনটা বাণিজ্য করেছি । কিন্তু বিধী বাম থাকায় আমাদের ডান দিকটা দেখা হয়নি । এর জন্য অবশ্য আমাদের নিজেদের মধ্যেকার প্ল্যানিং এরও দোষ আছে । যেমন ধরা যাক আমি সব কিছুতেই ফিলিপ কটলার টেনে আনি । টার্গেট মার্কেট প্রাইসিং আরো কঠিন কঠিন শব্দ । আর আমি যতবার এই সব শব্দ উচ্চারণ করি আমার স্ত্রী ততবার খিটমিট করে উঠে । আমি হাল ছাড়ি না । আমার ধারণা ব্যবসা পাতি করতে হলে কটলার সাহেবের বাতলানো পথের বিকল্প নাই । সে আমার স্ত্রী যাই ভাবুক আমি ওর কথায় খুব একটা পাত্তা দেয় না । মেয়ে মানুষ অনেক কথাই বলবে । সব কি শুনতে হয় ? এই আচরণের পরিণতি আমাদের রাতের দাম্পত্য জীবনকে অসহায় করে তুলতো । খুবই স্বাভাবিক । ভালোবাসার মাঝে যদি ফিলিপ কটলার ঢুকে যায় তাহলে তো কলহ শুরু হতেই পারে । ব্যবসা বাণিজ্য অনেকটা উচ্ছন্নে গিয়ে নিজেদের রাতের ঘুম বিসর্জন দিতে হলো আমাদের । কলহ নামক শব্দের বহু বচনীয় ব্যবহার সকল বাণিজ্যের উর্ধে উঠে গেলো ।

আমার স্ত্রীই যে শুধু ফিলিপ কটলার বুজে না তা কিন্তু না । দেশের বেশির ভাগ নামকরা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষও কিন্তু এই ভদ্রলোককে খুব একটা চিনেন না । চাকরি সুবাধে দেশী নামকরা এক প্রতিষ্ঠানের পরিচালককে মিশন ভিশন অবজেকটিভ শিখানোর দায়িত্ব পড়লো আমার কাঁধে । আমি প্রায় দীর্ঘ ৬ বছর চেষ্টা করেছি আমার চেয়ারম্যান সাহেবকে এই চারটি শব্ধ উপলব্ধি করানোর । এবং প্রতিবারই আমাকে ক আর ছ বর্গীয় গালি গালাজ শুনতে হয়েছে । যারা দেশীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তারা জানেন এই গালি গালাজ হজম করে কিভাবে চাকরি করতে হয় । তবে আমার স্ত্রী নিতান্তই আমাকে ভালোবাসে বিধায় গালি গালাজ করে না । আমি কৃতজ্ঞ । আমি এখনো হাল ছাড়িনি । সময় সুযোগ মতো মিশন ভিশন অবজেক্টিভ বোজাতে ছাড়ি না ।

একটা জিনিস কি লক্ষ করেছেন ? আমরা যখন আমাদের স্ত্রীদের নিয়ে বাজার করতে যাই তখন আমাদের বিরক্তির সীমা থাকে না । বেশির ভাগ বিরক্তির কারণ গুলো অনেকটা নিন্মরূপ,

১ . যদি কাওরান বাজার টাইপের কিছু হয় তবে বেশির ভাগ দোকানদার আপনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে আর আপনাকে সম্পূর্ণ রূপে অবজ্ঞা করে আপা বা আপু বলে আপনার স্ত্রীর সাথে দরদাম করছে ।
২ .আপনার স্ত্রী খুব অল্প সময়ে দর কষাকষি করে বেশ একটা দর কমিয়ে ফেললো । আপনি একা এলে কখনোই দোকানদার এতো কমে ছাড়তো না ।
৩ . আপনার স্ত্রী যে কোন ধরণের অফার যেমন একটা কিনলে একটা ফ্রি এই জাতীয় জিনিস পত্র অপ্রয়োজনীয় হলেও কিনছে । আর কারণ হিসেবে আপনাকে অংক করে বলে দিচ্ছে এক সাথে কিনে কিভাবে আপনার লাভ করে দিচ্ছে ।

স্বামী স্ত্রীর সামান্য সাপ্তাহিক বাজারের যদি এই দৃশ্য হয় তবে সামগ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের কি হবে ? তাহলে আমরা কেন ভাবি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে সব কিছু এক সাথে করতে হয় ? আবেগী ভালোবাসা সব বুজে শুধু ব্যাবসাটা বুজে না । উপরের বাজারের দৃশ্যটি চিন্তা করুন ।আমি বা আপনি যদি সামান্য দোকানদারের সামনে নিজের স্ত্রীকে উপস্থাপন করতে এই রকম বিব্রত বোধ করি তবে আপনার অফিসের অন্য পার্টনারদের সামনে কল্পনাই করা যায় না । ঠিক এই কারণেই আমাদের বেশীর ভাগ ব্যাবসায়ীদের স্ত্রীরা বাবসাতে শুধুই স্লিপিং বা নীরব পার্টনার ।

আবার ঠিক উল্টো দিকটাও আছে । যেসব স্ত্রীরা সফল ব্যাবসায়ী তাদের স্বামীরাও অগোচরে থেকে যায় । কোথায় যেন আমরা নিজেদের মাঝে এক প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি । একজন সামনে এগিয়ে গেলে আর একজন হতাশায় বসে পড়ি । চাকরি ব্যবসা শিল্পী জগৎ তারকা দম্পতি প্রায় সব জায়গাতে দেখবেন এই একই অবস্থা । নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটাকে যদি বিশ্বাস করা না যায় তবে ভালোবেসে কি লাভ ? মানলাম কটলার সাহেব হয়তো উনার বইতে ভালোবাসার ব্যাবসায়িক দিক উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন । তাই বলে সারাটা জীবন যার সাথে কাটাবেন তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে দিবেন না । এমনটা কি ভাবা যায় ? না ভাবতে পারলেও ঠিক এমনটাই সবাই করছে প্রতিনিয়ত ।

আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি শেষ কখন আপনার স্ত্রীর সাথে একমত পোষণ করছেন একবার চিন্তা করুন । কি বিষয়ে আপনি একমত হয়েছেন তা সঠিক না বলতে পারলেও সময়টা রাত্রিকালীন এটা হলপ করে বলতে পারি । স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার দিন রাত্রির এই চিত্র অনেকটা সবার জবার জন্য প্রযোজ্য । তবে নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর অর্থাৎ যখন দুজনের শরীর আর মন যখন অবসর খুঁজে তখন প্রায় সব ব্যাপারে একমত পোষণ করি আমরা । দেখবেন ৫০ বছর উর্ধ স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া ঝাটি তেমন একটা হয় না । এই সময় এদের ভালোবাসা অকৃত্রিম থাকে । এর কারণ এই বয়সে এরা কেওই আর দৌড়াবার কথা চিন্তা করেন না । এরা জানেন জীবনের শেষ কটা দিন একসাথে থাকতে হবে । এই সময়ের উপলব্ধিটা নিতান্তই ভালোবাসার ।

ভালোবাসা দিবস আসছে সামনে । আপনার প্রিয়জন কিছু না কিছু আপনাকে উপহার দিবেই । এটা এখনতো প্রায় সংস্কৃতির অংশ । আসুন না কোন উপহার না নিয়ে দুজনে মিলে কিছু একটা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিন । দেখবেন পরের বছর পর্যন্ত যেন এই শুরুটা টিকে থাকে । নিজেরাই বুজতে পারবেন কে কাকে কতটা বিশ্বাস করেন আর ভালোবাসেন । ভালোবাসা দিয়ে ব্যবসা না হলেও ছোট খাটো ব্যবসা ভালোবাসা পোক্ত করবে এটা নিশ্চিত ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৫৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আমেরিকায় স্বামী স্ত্রী একই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমান অংশীদার হতে পারে না । যেকোন একজনকে পুরো প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে হবে আর অন্য জন ওই প্রতিষ্টানের কর্মচারী ।

বলেন কি! এই বিষয়টি আগে জানা ছিল না।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০১

ব্যোমকেশ বাবু বলেছেন: Click This Link

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১১

আহা রুবন বলেছেন: রসালো, তথ্যপূর্ণ, চিন্তনীয়, চমৎকার! প্রিয়তে।

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

টুনটুনি০৪ বলেছেন: চমৎকার!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.