নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asrafulalam

ব্যোমকেশ বাবু

ব্যোমকেশ বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাক্তারী পানি পড়া

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:২৯


রয়েল লন্ডন হসপিটালে আমার স্ত্রী যখন তীব্র প্রসব বেদনায় চিৎকার করছিলো আমি তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম । সাথে আরো দুইজন মিডওয়াইফ বা ধাত্রী ছিল । ওরাও হাসি ঠাট্টা করছিলো। একজন নারীর প্রসব বেদনা কতটা প্রখর তা নিজে না দেখলে বুজতাম না । এই যন্ত্রনা সহ্য করার মতো না । আমার স্ত্রী বারবার চিৎকার করে বলছিলো ইনজেকশন বা পেইন কিলার দিতে । কিন্তু আমাদের দুজনের কথা সেখানে ছিল অচল । স্বাভাবিক এই যন্ত্রনা ভোগের পর একজন মা তার সন্তান এর জন্ম দেয় । এটাই প্রাকিতিক নিয়ম । এই সময় সব স্ত্রী তাদের স্বামীদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে এটাও খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার । এই অতি স্বাভাবিক নিয়মটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে খুবই অস্বাভাবিক । কয়েক ঘন্টার প্রসব বেদনা যেতে না যেতেই সি-সেকশন বা সিজার করে সন্তান বের করে আনা হয় । দেশের কতজন চিকিৎসকে এই সিজার বা অপারেশন কতটা অস্বাভাবিক তা কি রোগীর কাছে ব্যাখ্যা করেন ? মনে হয় না খুব বেশি বরং এই পদ্দ্বতিতে প্রসবকে রীতিমতো সহজলভ্য সামগ্রী করে দিয়েছেন আমাদের চিকিৎসাবিদরা ।

আমার মেয়ের বয়স যখন ৪ মাস তখন আমরা দেশে চলে আসি। এরপর দেশের ডাক্তারের কাছেই সব রকম চিকিৎসা পরামর্শ নেয়া হতো । খুবই আশ্চর্জজনক ভাবে আমার মেয়ের নাড়ি শুখাচ্ছিলো না । স্বাভাবিক ভাবে যেটা শুকিয়ে ঝরে পরে যাবার কথা তা না শুখিয়ে বেশ বড় আকার ধারণ করে । এবং আমরাও বেশ স্বাভাবিক ভাবে শহরের সবচেয়ে বড় শিশু বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল কলেজ এর বিভাগীয় প্রধান এর কাছে মেয়েকে নিয়ে গেলাম । দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে অপেক্ষার পর এই ডাক্তার সাহেবান অতি দ্রুত নাড়ি কেটে ফেলার তাগিদ দিলেন । বললেন নাড়ি কাটা ঠিক হয় নাই তাই এমন হচ্ছে । একটা অপারেশন এর মাধ্যমে নাড়ির বাড়তি অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে । আমি ঠিক বুজতে পারছিলাম না উনি কি বলছিলেন । কারণ আমার মেয়ের নাড়ি আমি নিজেই কেটেছি । আর বাড়তি বা অল্প এই সব এমনিতেই তো শুখিয়ে যাবার কথা । যাই হোক মা মেয়ে দাদি নানী সবার মাঝে কান্নার রোল । মাত্র ছয় মাসের একটা বাচ্চাকে অপারেশন । ভাবাই যায় না ।

মেয়ের জন্মের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে আমি কন্যা দায় গ্রস্থ পিতায় পরিণত হলাম । কি করবো বুজতে না পারলেও একটা চরম কুসংস্কার করে বসলাম । মেয়ের নাড়ির উপর একটা ধাতব পয়সা দিয়ে সব সময় চেপে রাখতাম । মাস খানেকের মধ্যে আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠল । এখন ওর বয়স ছয় বছর । আমার কুসংস্কার করার পেছনে অতীব পার্থিব যে কারণ তা হচ্ছে আমি মনে প্রাণে স্বাভাবিক আচরণ বিশ্বাস করি । যদি রয়েল লন্ডন হসপিটালে বেশির ভাগ ডেলিভারি খুব স্বাভাবিক নিয়মে হতে পারে ধাত্রীর হাতে তবে মাঝে মধ্যে মা খালার টোটকা ডাক্তারি মেনে নেয়া যেতেই পারে ।

এই ধরণের নানান ঘটনায় আমি আর আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেই আমরা খুব সহজে ডাক্তারের দেয়া ওষুধ হড়হড় করে খেয়ে ফেলবো না । আমরা যে জিনিসটি করি এখনো তা হলো একই সাথে কয়েকটা ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য যাই যে কোন ব্যাপারে । এরপর সব ডাক্তারের পরামর্শ গুলো টালি করে গুগল করে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেই । এক্ষেত্রে আমাদের সবসময় যে খুব বেশি রোগ বিরাজ লেগে ছিল তা কিন্তু না , বলতে পারেন আমরা প্রায় সুস্থ জীবন যাপন করছি ।

একজন ডাক্তার তার চেম্বারে সর্বোচ্চ রোগী দেখেন ২০ মিনিট আর এই ২০ মিনিটে রোগীর ২০ বছরের সমস্যা ডায়াগনসিস প্রায় অসম্ভব । প্রতিটা মানুষ আলাদা । আলাদা তাদের শারীরিক গঠন । আপনার শরীরে যে ওষুধ কাজ করবে আমার নাও করতে পারে । প্রচন্ড নেশা করে এমন একজন মানুষকে এনেস্থেসিয়া দিতে আমার আপনার চেয়ে একটু বেশি মাত্রার ইনজেকশন লাগতে পারে । নাহলে হয়তো অপারেশন এর মাঝখানে উনি উঠে বসে যেতে পারেন । কিন্তু ইমার্জেন্সিতে কতজন ডাক্তার রোগীর এই রকম ইতিহাস জানার চেষ্টা করেন আমার জানা নেই । আর অপারেশন থিয়েটারে কত জন রোগী মাঝপথে উঠে বসে তাও একমাত্র ডাক্তাররাই বলতে পারেন ।

আমাদের দেশের রোগীদের মেডিকেল হিস্টোরি বলে কিছু নেই । যখন যে ডাক্তারের কাছে যাবেন উনি আবার প্রথম থেকে সব শুরু করবেন । একত্রে আপনার বয়স যত বেশি হবে আপনার জন্য তত সমস্যা হবে নিজের হিস্টোরি বলতে । আর ঠিক কতজন ডাক্তার রোগীর মেডিকেল হিস্টোরি জানতে চান তাও ভাববার ব্যাপার । দেশ ডিজিটালি এতো এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের সবার জন্য সামান্য একটা মেডিকেল হিস্টোরি বানানোর ক্ষমতা কারো নেই । অথচ এটা খুবই সামান্য একটা ব্যাপার । চাইলে আমি আপনি নিজে নিজেদের মেডিকেল হিস্টোরি সবসময় আপডেট করে রাখতে পারি । আপনার হাতের ছোট মোবাইল এর একটা আপসেই এইসব জমা রাখা যায় । ডাক্তার দেখতে না চাইলেও দেখান । কারণ অসুখ আপনার আর আপনার ডাক্তারের পক্ষে ২০ মিনিটে আপনাকে বোঝা আসলেই কঠিন ব্যাপার ।

আমার বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে আমরা নগরীর প্রখ্যাত এক ক্লিনিকে যাই । উনি যে কদিন ওখানে ছিলেন প্রায় প্রতিদিন রাতেই রোগীর স্বজনদের সাথে ক্লিনিক কতৃপক্ষের হাতাহাতি হতো । দুচার দিন পর আমি অনেকটা যুদ্ধ করে উনাকে আ . সি . ইউ . থেকে বাসায় নিয়ে আসি । এর জন্য আমাকে পরিবারের পক্ষ থেকে রীতিমতো দোষারোপ করা হচ্ছিলো। কেও বলছিলো টাকা বাঁচাবার জন্য কেও বলছিলো সময় বাঁচাবার জন্য আমি এ কাজ করেছি। কিন্তু আমি আমার বাবাকে বাঁচাবার জন্য সেদিন ওই ক্লিনিক থেকে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম । বাবার রুম টাকে ক্লিনিকের মতো করে সব কিছু দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলাম । অক্সিজেন ক্লিনিক বেড সহ প্রায় সব কিছু । আর ডাক্তার ছিলাম আমি আর আমার বড় ভাই । দুজনে মিলে পালা করে বাবার পাশে বসে সেবা করতাম । দীর্ঘ প্রায় এক বছর শয্যাশায়ী থাকার পর বাবা আমার কোলে মারা যান ।

এটা কি খুব বেশি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে আপনার কাছে । অথচ একবার ভাবুন এমনটাই কিন্তু হবার কথা ছিল । একজন ডাক্তার বা চিকিৎসক সর্বোচ্চ কি করতে পারেন আপনার জন্য ? তাহলে এতটা আশা কেন করেন একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে ? আমার আপনার চাহিদাই উনাদের আজকে এই রকম ব্যাবসায়িক প্রেসক্রিপশন লিখতে বাধ্য করছে ।

আমাদের মাঝে অনেকে আছেন যারা পীর বা হুজুরের ফু দেয়া পানি খান । একবার ভাবুন আপনি একগ্লাস পানি নিয়ে গেলেন ডাক্তারের চেম্বারে আর ডাক্তার সাহেবকে বললেন ফু দিয়ে দিতে । উনি কি করবেন ? ভাবতেই যেন কেমন লাগছে । কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি এই মুহূর্তে যদি আপনি এক গ্লাস পানি নিয়ে কোন ডাক্তারের চেম্বারে যান উনি নির্ঘাত একটা লম্বা ফু দিয়ে দিবেন । হয়তো আপনি এই ফু তে উপকার পেতেও পারেন । সরকার ওষুধ ব্যাবসায়ী আর চিকৎসদের এই রকম অদ্ভুত আচরণকে কি কুসংস্কার বলা যায় না ? সরকার ভাবছে বড় হরফে ওষুধের নাম লিখলে রোগীর সুবিধা কিন্তু আমি বা আপনি ওষুধের নাম দিয়ে কি করবো ? পাড়ার মোড়ের ওষুধের দোকানদার পড়তে পারলেই তো হলো । এই অবস্থা চলতে থাকলে খুব শীগ্রই হয়তো ওষুধ প্রস্তূত কারকরা ওষুধের নাম আই ফোন স্যামসাং এই ধরণের রাখবেন । কারণ চিকিৎসকের পক্ষে জেনেরিক নাম ছাড়া ওষুধের প্রকৃত নাম মনে রাখা প্রায় অসম্ভব ।

যে চিকিৎসকদের উপর সাধারণ মানুষের এমনিতেই বিশ্বাস কম সেখানে সরকারের নতুন এই নিয়ম আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কি কাজে আসবে আমার জানা নেই । তাই বলছি আসুন সবাই মিলে চিকিৎসকদের কাছে পানি ফু নিতে যাই । অন্তত যতদিন না তারা সঠিক ভাবে ওষুধের নাম মুখস্ত করতে না পারেন । কারণ এই মুহূর্তে একজন রোগী হিসেবে আপনি মারাত্মক ঝুঁকির মাঝে বসবাস করছেন ।

https://www.facebook.com/asraful.alam

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:১৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অবিশ্বাস্য তাদের আচরণ! অচিন্তনীয় তাদের বানিজ্যিক ভাবনা! কোন ভাবেই আর সেবার পর্যায়ে নেই..

আমার মায়ের সময় বারডেমে দেখেছিলাম তাদের হেলােমো!
মায়ের সারা শরীর ফুলে গেছে-অথচ তারা নির্বিকার! কানাডা প্রবাসী ভাই সাউট করতেই মুখোশ খুলে রুঢ় আচরণ প্রদর্শনের প্রতিযোগীতায় নেমে পড়ল!
ভাগ্যচক্রে এক আত্মীয় বিগ্রেডিয়ার ঐদিনই মাকে দেখতে এসেছিলেন। তার বন্ধু ছিলেন বারেডেমের চীফ!
তাদের কেবিনে ঢুকতে দেখেই সাড়া পড়ে গেল! সব আগে আগে হাজির! চীফ রুগীর চার্ট দেখৈই সাউট করলেন- এই ইঞ্জেকশন কে পুশ করেছে!!!!???
সব মাথা নীচু!
উনি আরেকটা ইঞ্জকশন লিখে দিলেন ! পুশ করার ২ ঘন্টার মধ্যে মা স্বাভাবিক হয়ে এলেন! বাড়তি পানি শরীর থেকে গায়েব!

ঐ দিন ভাগ্যক্রমে ঐ আত্মীয় ভিজিটে না এলে কি হতো!!! ভাবতেই কেঁপে উঠেছি বহুদিন!!!

মূল্যবোধের নূন্যতম সীমার নীচে তারা নেমে গেছে! অতীব দু:খজনক!

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:১৪

রানা সাহেব বলেছেন: =p~

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:২৮

ওসেল মাহমুদ বলেছেন: কি বোঝালেন ব্যোমকেশ বাবু !? লণ্ডন ,ঢাকা একই চিকিতসা ব্যবস্থা ! শুধু আমাদের মানসিকতায় সমস্যা, রোগী ডাক্তার উভয়ের ই হয়তো এ মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে !

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:০২

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: ভাই কি বলব এত সব সমস্যা?
কিন্তু কই এই বাস্তব সমস্যার বিরুদ্ধে সমাধানের কোন পথ .........

৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:২৬

নাগরিক কবি বলেছেন: My Aim in Life : I want to be a Doctor in future because I want to help the poor people in our society. X(( সব মিথ্যে ছিল।

৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:১৭

লেখা পাগলা বলেছেন: এগুলো আমাদের জন্য খুবই বেদনা দায়ক বিষয়।

৭| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৩

ইউনিয়ন বলেছেন: অনেক কিছু উঠে এসেছে পোষ্টে। দেশে হ য ব র ল অবস্হা চলছে। ডাক্তার, মেডিসিন এই অবস্হার বাইরে নয়।

৮| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৩

টারজান০০০০৭ বলেছেন: গাড়ি, বাড়ি , নারী ,সমাজে স্ট্যাটাস , টাকা-পয়সা বানানোর এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় পেয়ে বসেছে আমাদের সবাইকে। শুধু ডাক্তারি না , সব পেশায়ই এমন আছে , কম আর বেশি ! সর্বাঙ্গে ব্যাথা , ওষুধ দেব কোথা !

৯| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সব পেশার জন্যই প্যাশন লাগে। এটার অভাবের কারণেই আমরা ভাল শিক্ষক পাইনা, ভালো ডাক্তার পাই না। মানুষ শিক্ষক হয়, অন্য কোন উপায় না থাকলে, ডাক্তার হয় মাবাবার চাপে কিংবা ডাক্তারের একটা অতিরিক্ত মর্যাদা আছে বলে। ডাক্তারি যে একটা স্বাভাবিক পেশা, এটা মেনে নিলেই আর সবাই এর পিছনে ছুটত না আর, এমন চিকিৎসা ব্যবস্থা পেতে হত না।
আপনার লেখাটা শেষ কপ্রতে পারিনি। অসহ্য লেগেছে ওদের কার্যকলাপ।

১০| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: এদেশের ডাক্তাররা পিশাচ অমানুষ বলা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.