নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asrafulalam

ব্যোমকেশ বাবু

ব্যোমকেশ বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষণের দর্শন তত্ত্ব

২১ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:১৩


কয়েকজন নারী দার্শনিকের নাম বলুনতো ? পারবেন না ।এমনকি গুগল করেও খুব একটা লাভ হবে না । এরিস্টটল ,প্লেটো অথবা এদের বন্ধু বান্দব প্রায় সবাই পুরুষ । দর্শন আর নারী খুব একটা যায় না । উকিপেডিয়ার এডিট প্যানেলের একটা পরিসংখ্যানে দেখা যায় শতের মাঝে মাত্র ৯ ভাগ নারী উকিপেডিয়ার এডিট করেন । মজার ব্যাপার হলো এডিটের ক্ষেত্রে দর্শন , ইতিহাস বা জিওগ্রাফি এই সব মোটেই নারীর আগ্রহের বিষয় নয় । বরং ব্যাক্তিগত প্রোফাইল এডিট নারীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে । এতে অবাক আবার কিছু নেই । নারী পুরুষের আগ্রহ ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক । তবে দর্শনের এই ভিন্নতা কিভাবে ধর্ষণকে প্রভাবিত করছে আসুন দেখা যাক ।


দর্শনের মতো আপেক্ষিক ব্যাপার স্যাপার পুরুষরা বেশ ভালো পায় । নারীর ক্ষেত্রে এভিডেন্স বা প্রমান হলো আসল জিনিস । যেমন ধরুন যে কোন নারী সবসময় অন্যের উদাহরণ দিতে পছন্দ করে । অমুক ভাবীর হাসব্যান্ড ঐটা করছে । অথবা অমুক ভাবি ওই জিনিসটা করছে । নারীদের বেশির ভাগ কথার মাঝে দেখবেন উদাহরণ থাকবেই । পুরুষদের ক্ষেত্রে যেটা আপেক্ষিকতায় পরিপূর্ণ । বেশির ভাগ পুরুষ অন্যকে বা অন্য কিছুকে উদাহরণ হিসাবে নেয় না । পুরুষদের এই ব্যাপারটা অনেকটা তত্ত্ব আর সত্যের মাঝামাঝি একটা জায়গায় অবস্থান করে । নারীর ক্ষেত্রে যা সত্য আর বাস্তব উদাহরণের মাঝখানের কোনো একটা অংশ । একটু জটিল মনে হলেও ছবি দেখলে বুজতে পারবেন কেন আপনি এতো খুঁজেও একটা নারী দার্শনিকের নাম মনে করতে পারেননি একটু আগে ।

এবার আসুন ধর্ষণের দর্শন তত্ত্ব কি বলে তা জানা যাক । ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মতো অপরাধের একটা সাইকেল বা জীবন চক্র আছে । এই জীবন চক্র অনেকটা ছোটবেলায় বায়লোজি বইতে পড়া প্রাণীর হাইয়ারেরকি পিরামিডের মতো । যার শুরুটা হয় নারীর প্রতি ছোট খাটো তাচ্ছিল্ল বা "ম্যান উইল বি ম্যান " এই ধরণের রসাত্ববোধক টিভি কমার্শিয়াল দিয়ে । যেখানে সবাইকে বুজতে দেয়া হয় পুরুষ পুরুষই । এর পরের ধাপে দেখতে পাবেন সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইল এ ছোট খাটো বুলিং বা মেয়েদের ছবি পোস্ট বা প্রতিশোধ মুলুক ভিডিও আপলোড এই সব । এবং সর্ব শেষ ধাপ পরিপূর্ণ ধর্ষণ বা নির্যাতন দিয়ে শেষ হয় । ভালো করে খেয়াল করে দেখুন আজকের আমাদের দেশে এই সব কয়টি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত ধর্ষণের মতো একটা নির্যাতনের ধাপ আমরা পেয়েছি । হয়তো আমরা আগে জানতাম না বলে প্রথম দিকের ধাপ গুলোকে অতো গুরুত্ব দেইনি । সে যাই হোক আজকের দিনে এসেও যদি বুজতে পারি তাহলে হয়তো প্রতিকার সম্ভব ।

এই অবস্থার প্রতিকার কি ? বা কিভাবে সব আবার আগের মতো অবস্থায় অথবা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে ? যেহেতু আমরা জানি ধর্ষণের মতো নির্যাতন বেশ কয়েকটি ধাপের পর সমাজে মহামারী আকারে সংগঠিত হয় । সেহেতু এই ধাপ গুলুকে ভেঙে দিতে পারলে হয়তো কিছু সময় পর আবার সব কিছু সহনীয় হতেও পারে । ধর্ষণের দর্শন পিরামিডের ধাপ ভাঙা খুবই সহজ । যেমন ধরুন প্রথম ধাপে যদি আমরা "ম্যান উইল বি ম্যান " ধরণের টিভি কমার্শিয়াল বানাতে বাধা দেই তাহলে কেও ধর্ষণের প্রথম ধাপে পা রাখতে পারবে না । পুরুষ মানেই পুরুষের মতো কিছুটা অহংকার জনিত কণ্ঠ বন্ধ করে দিতে হতে পারে এর জন্য । কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করা যাবে সেটা আমার ভাববার বিষয় নয় । সরকার আছে মিডিয়া আছে উনারা চাইলেই পারেন ধর্ষণের পিরামিড ভেঙে দিতে ।

মানলাম সবাই উদ্যোগী হয়ে ধর্ষণের সাইকেল বা পিরামিড ভেঙে দিলাম । কিন্তু যারা বর্তমানে পিরামিডের শেষ ধাপে এবং প্রায় পরিপূর্ণ ধর্ষক তাদের কিভাবে ঠেকানো যাবে ? এটাও খুবই সহজ একটা কাজ । আবার একটু কষ্ট করে খেয়াল করে দেখুন নারী পুরুষের দার্শনিক ভিন্নতা । যেহেতু পুরুষরা অন্য কোনো পুরুষের বা অন্য কারো সাথে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে খুব একটা নেয় না । এক্ষত্রে সপাং সপাং করে ধর্ষকদের ফাঁসি দিয়ে দিলেও প্রকৃত ধর্ষকরা তাদের মনোকাম পূরণে একটুও চিন্তা করবে না । কারণ ফাঁসির বা ন্যায় বিচারের এই উদাহরণ টুকু শুধু নারীরই পছন্দ হবে ।

সরকার জঙ্গি দমনে প্রথম থেকে কোনো ছাড় দেয়নি । উদাহরণ স্বরূপ প্রত্যেক জঙ্গিকে মৃত্যুর সাধ নিতে হয়েছে । সেই সাথে সরকার সবচেয়ে ভালো যে জিনিসটি করেছে তা হলো একটা ভালো ক্যাম্পাইন । টিভি মিডিয়া থেকে শুরু করে প্রায় সব জায়গায় জঙ্গি বিরোধী প্রচার । ফলাফল ছেলে জঙ্গি কমে গেলো । আর উদয় হলো নারী জঙ্গির । এর কারণ, সূত্র মতে পুরুষরা সরকারের জঙ্গি বিরোধী তত্ত্ব আর সত্য মেনে নিয়েছে । কিন্তু যেহেতু জঙ্গিদের উদাহরণ আছে তাই নারীরা খুব সহজে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয়ে পড়লো । কারণ এই ক্ষেত্রে নারী হিসেবে সত্য হিসাবে ইসলাম আর উধাহরন হিসাবে মৃত জঙ্গিদের মতবাদকে মূল্যায়ন করছে ।

সুতারং বুজতেই পারছেন কি করা উচিত । সরকার ঠিক যেভাবে জঙ্গি দমনে ব্র্যান্ডিং বা ক্যাম্পেইন করছে ধর্ষণের মতো নির্যাতন রোধেও একই রকম কর্মপন্থা বের করা উচিত । পুরুষদের ক্যাম্পাইনে তাদের বোঝাতে হবে নারীর দর্শন ভিন্ন । নারীরা এই ভিন্ন দর্শনে শীর্ষে । আর পুরুষ নিজের দর্শনে । এক করে ফেলা যাবে না কিছুতেই । সামাজিক মাধ্যম বা অন্য মিডিয়াতে আমরা যত বার এই সব নিয়ে লিখছি ততবার ধর্ষণের প্রথম ধাপের সবাইকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিচ্ছি চূড়ান্ত ধর্ষকের পথে । যতবার আমরা নারীর চুল ছোট করে ফেলার বিজ্ঞাপন দেখবো ততবার আমাদের মনে হবে " ম্যান উইল বি ম্যান " এই কথাটাই আমাদের ধর্ষণ পিরামিডের প্রথম ধাপে পা রাখতে সাহায্য করছে ।

ইউরোপের অনেক দেশে ৭ বছরের কম বয়েসের কাওকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন নির্মাণ বন্ধ । এর কারণ এই বয়েসের একটা বাচ্চা অনেক সহজে যেকোনো চটকদাড় বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয় । আমাদের হয়তো শারীরিক বয়স হয়েছে । কিন্তু মানসিকতা যদি ৭ বছরের বাচ্চার মতো হয় তবে আমরাও এই রকম আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ ও নারীর মাঝে দর্শনের বারোটা বাজিয়ে ধর্ষনিক হয়ে উঠবো । সরকারের কাছে একটা পরিপূর্ণ মিডিয়া প্ল্যান চাই জঙ্গি দমনের মতো করে । যেখানে নারী পুরুষ দুটি আলাদা দর্শনের মানুষের জন্য আলাদা আলাদা করে ক্যাম্পাইন থাকবে । কারণ দেখতে একই রকম হলেও আমরা কোনো ভাবেই একই দর্শনের মানুষ না । আমাদের বুজবার ক্ষমতাও ভিন্ন । আশা করি সরকার আমাদের মানে নারী পুরুষ সবাইকে বুজতে পারবেন । আলাদা আলাদা করে ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: সরকার ঠিক যেভাবে জঙ্গি দমনে ব্র্যান্ডিং বা ক্যাম্পেইন করছে ধর্ষণের মতো নির্যাতন রোধেও একই রকম কর্মপন্থা বের করা উচিত ।-----------সহমত ।

২| ২১ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে খুব সুন্দর লিখেছেন।

বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তবে আপনার সমাধান গুলো আমার কাছে যুক্তিপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।

সরকার এরকম করলে ভাল হতো।

৩| ২১ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৪১

ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা, অনেক ভাল কথা এসেছে।

৪| ২১ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮

জগতারন বলেছেন:
কারণ দেখতে একই রকম হলেও (নারী ও পুরুষ) আমরা কোনো ভাবেই একই দর্শনের মানুষ না।
আমাদের বুজবার ক্ষমতাও ভিন্ন।
আশা করি সরকার আমাদের মানে নারী পুরুষ সবাইকে বুজতে পারবেন।
আলাদা আলাদা করে।


সুন্দর উপলব্ধি, সুন্দর পোষ্ট।

৫| ২২ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:০৫

রুমি৯৯ বলেছেন: সুন্দর ব্যাখ্যা। সরকার কি করবে? তালা মেরে রাখবে! বরং এ কাজটা পারিবারিক শিক্খার মাধ্যমে হতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.