নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asrafulalam

ব্যোমকেশ বাবু

ব্যোমকেশ বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইনোরিটি রিপোর্ট

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৬:৪০


বেশির ভাগ গাড়ির ড্রাইভাররা গাড়িতে এ সি সহ্য করতে পারে না । দেখবেন চান্স পেলেই এ সি বন্ধ করে দিবে । আসলে আমরা আমাদের লক্ষ টাকা দামের গাড়িটা যাকে চালাতে দেই উনার বাসায় উনি কি অবস্থায় থাকেন তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না । আর দিনের বেলায় এ সি তে থেকে রাতের বেলায় ফ্যানের নিচে থাকা যে কতটা কষ্টকর তা হয়তো অনেকেই জানেন না । ঠান্ডা গরমে মিলে মিশে জ্বর সর্দি কাশি তো হতেই পারে । অদ্ভুত একটা ব্যাপার । আমাদের গাড়ির ড্রাইভারদের সব সময় আমরা আমাদের মতো করে চলতে বলি । গাড়িতে যেন বাংলা সিনেমার গান না শুনে বা সিগারেট না খায় এই ধরণের আবদার ।আর প্রতিনিয়ত এই সব ব্যাপারগুলো নিয়ে বাক বিতন্ডা লেগেই থাকে ।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাড়ির মালকিনের সাথে ।কেন যেন ড্রাইভারদের সব ঘৃণা গাড়ির মালকিনদের প্রতি ।এর একটা বিশ্লেষণ প্রয়োজন ।

ধরুন আপনি পরিবার সহ গাড়ি করে ঘুরতে বেড়িয়েছেন । আপনার ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে । আর আপনি আপনার যাবতীয় সুখ দুঃখের গল্পগুলো করছেন আপনার পরিবারের সাথে । আপনার গাড়িতে আপনার ড্রাইভার এক্ষেত্রে মাইনোরিটি বা সংখ্যা লঘু । বেচারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপনাদের প্যান প্যানানি শুনছে আর ভাবছে নিজের পরিবারের কথা । কি সাংঘাতিক ব্যাপার । কখনো যদি ঘৃণার মাত্রা অতিরিক্ত হয় আর তা যদি মাথায় চড়ে বসে তাহলেই শেষ । কারণ আপনি আপনার গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল একজন মাইনোরিটি বা সংখ্যা লঘু ব্যাক্তির হাতে দিয়েছেন ।আপনার পারিবারিক আলোচনার বিষয় বস্তূ যার কাছে ফ্যান্টাসি মাত্র । ভাববার বিষয় ।

কারণ মাইনোরিটি হবার অনেক জ্বালা । দিনের বেলায় এ সি র বাতাস আর রাতের মশার কামড়ের সাথে যুদ্ধ করাটা যে কোনো মাইনোরিটি বা সংখ্যা লঘুর জন্য কতটা কষ্টের তা হয়তো আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যদেরই জানা নেই ।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় হিটলার প্রচুর পরিমান ইহুদিদের হত্যা করে । বাকি যারা বেঁচে যায় তারা হয়ে পরে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায় । প্রচন্ড ট্রমা আর বাস্তবতা পার করা এই ইহুদিরা এখন সারা বিশ্বে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে । এর কারণ হিটলার । ওই ভদ্রলোক যদি ওই সময় ইহুদিদের মাইনোরিটি করে না দিতো তাহলে ওরা এতো ট্রমার ভিতর থাকতো না । ইহুদি বা জিউসদের ট্রমা আজও কাটেনি । এরা আজও কাওকে বিশ্বাস করতে পারে না । আমাদের ড্রাইভার ভাইদের মতো এরা এখনো নিউ ইয়র্ক বা লন্ডনের রাস্তায় মাইল এর পর মাইল পায়ে হেটে অফিস বা বাসায় যায় । ঠিক কি কারণে এরা বাস বা ট্রেন এ খুব একটা যাতায়ত করে না আমার জানা নেই । নিউ ইয়র্ক এর জিউসদের এলাকায় এরা কাওকে একা হাটতে দেখলে পুলিশ ডেকে বসে । ওদের ধারণা এখনো সারা বিশ্ব ওদের বিপক্ষে । পক্ষে বা বিপক্ষে যাই হোক বেশির ভাগ মাইনোরিটি বা সংখ্যা লঘুদের মানসিকতা অনেকটা এই রকম ।

বার্মার সামরিক জান্তারা রোহিঙ্গাদের সাথে যা করছে তা হিটলারের মতোই । পুরো একটা জাতিকে মাইনোরিটি করে দিচ্ছে । নতুন প্রজন্মের রোহিঙ্গারা ইহুদি জাতির মতো বড় হবে ঘৃণা আর প্রতিশোধ প্রবণতা নিয়ে । বাঁচার জন্য এরা লড়াই করে যাবে । মুখে কথা না বললেও এদের চোখ বলে দিবে এরা কি চায় । আজকে হয়তো এদের কাছে এক মুঠু চাল অনেক কিছু । সময়ের সাথে সাথে এরা চাল ডাল বাসস্থান সব কিছুই পাবে । কিন্তু মাইনোরিটি হিসেবে এদের ভেতর রয়ে যাবে ট্রমা বা হিংসার আগুন । মাইনোরিটি শুধু যুদ্ধ দিয়ে হয় না । আমেরিকার মতো দেশে যুগের পর যুগ থাকার পর ও কালোরা এখনো মাইনোরিটি । নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য এখনো এদের রাস্তায় নামতে হয় । এক সাথে থাকলেও সাধা আর কালোর বিভেদ স্পষ্ট । আলাদা গান আলাদা স্থান আলাদা আচরণ ।সব কিছুই আলাদা ভাবে নির্ধারণ করা সাদা কালোর জন্য । এক সাথে থেকেও যেন এরা ভিন্ন জগতে বাস করে । ফলাফল ঘৃণা আর অপরাধবোধ । যেন আমেরিকার সব অপরাধ কালোরাই করে । কারণ দোষটা অবশ্যই সংখ্যা লঘুর । এক সাথে থাকলেই যে আমরা সবাই একই রকম মানুষ টা মেনে নেবার কোনো কারণ নেই ।

সময়ের পালাক্রমে রোহিঙ্গাদের অবস্থায় এই রকম হবে । স্থানীয় সব অপরাধের ভার এদের বহন করতে হবে । একজনের জন্য পুরো রোহিঙ্গাদের দোষারোপ করা হবে । যেহেতু আমরা মাইনোরিটি না তাই দোষটা আমাদের খুব একটা হবে না ।এর সমাধান কি হতে পারে ? এক সাথে থাকা নাকি নির্জন ভাসান চরে এই মাইনোরিটি ট্রমা গ্রস্থ রোহিঙ্গাদের ভাসিয়ে দেয়া ?

আমার স্ত্রী বাসায় কাজের জন্য এক মহিলাকে নিয়ে আসে শশুর বাড়ি থেকে । সাথে পাঁচ সাথ বছরের একটা বাচ্চা । আমার প্রচন্ড অনিচ্ছায় এক মাস না যেতেই বিদায় হন ওই মহিলা আর বাচ্চা । এ নিয়ে আমার স্ত্রী আমার উপর বেশ ভার তা আমি জানি । কিন্তু আমি কোনো ভাবেই আমার ছোট দুইটা বাচ্চার সাথে ওই বাচ্চাটাকে মিলিয়ে আরেকটা মাইনোরিটি গেম খেলতে চাইনি । আমাদের না চাইতেও প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের আসে পাশে এই রকম অসংখ্য মাইনোরিটি বা সংখ্যা লঘুর ঘৃণার জন্ম দিচ্ছি । ফলাফল অপরাধ প্রবন সমাজ । আপনি যে মানুষটাকে বিপদের সময় নিজের বাসায় একটা চাকরি দিয়ে সাহায্য করেছেন সে মানুষটাই এক সময় সব ভুলে গিয়ে আপনাকে ঘৃণা করতে পারে । আমার আপনার জীবন ধারা আর আমাদের বাসার কাজের লোক বা ড্রাইভার এর জীবন ধারা এক নয় । এক সাথে থাকলেও একই বাসায় থাকলেও নিজেদের অজান্তেই আমরা নিজেদের মাঝে ঘৃণা তৈরী করছি ।

ত্রাণ দিচ্ছেন ভালো কথা । কিন্তু একবার ওদের চোখের দিকে তাকান । বুজতে পারবেন ওদের মনের কথা । না খাওয়া মানুষগুলো হয়তো একদিন ফিরে পাবে সব কিছু । তখন আপনার এই স্মৃতি টুকু ওরা মনে রাখবে । ওরা সব কিছুই বুজতে পারছে । আপনার সেলফি তোলা । ত্রাণের বস্তায় ত্রাণ গুলো । সব কিছুই । এখন হয়তো কিছু বলছে না । তবে দিন ফেরার সাথে সাথে ওরা বলবে । আমি আপনি না চাইলেও রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাবে । হয়তো আজকে না । তবে তারা যাবেই । অন্য কোনো ভাবে । নিজেদের দেশে নিজেদের ঘ্রানে । কিন্তু তার আগেই যদি আমাদের আচরণে আমাদের প্রতি এদের ঘৃণা জন্মায় তাহলে তা আমাদের জন্য ভয়াবহ হবে । যাদের আজকে ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করছেন তাদের চোখের দিকে কি একবার তাকিয়েছেন ? ওরা কি চায় ? মাইনোরিটি হবার যন্ত্রনা সবাই বুঝে না । অন্তত যারা দেশে বসে নিজেদের সংখ্যা গরিষ্ট ভাবেন তারা । একবার লন্ডন আমেরিকায় আসুন । বুঝে যান মাইনোরিটি কাকে বলে ।

মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিলে তবেই মাইনোরিটি সমস্যার সমাধান । এর জন্য ত্রাণ বা অর্থের প্রয়োজন হয় না । শুধু প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:০৮

মলাসইলমুইনা বলেছেন: খুবই চমৎকার লাগলো আপনার লেখাটা | জানিনা যতটা মানবিক হতে বললেন আপনি ততটা হওয়া যাবে কিনা কোনো দিন ! তবুও আশা করে থাকি একদিন ...|

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৩

ব্যোমকেশ বাবু বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৩২

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: খুব কমই লগইন করি। এখন করলাম মন্তব্য করব বলে। এমনটা সচেতনভাবে ভাবিনি। কিন্তু দিন শেষে অপমান, অবহেলা বাকি সব দান মুছে দেবে, জন্ম দেবে ঘৃনার, প্রতিশোধস্পৃহার। বিপন্নের প্রতি, মাইনরিটির প্রতি মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গি, মনুষ্যত্বের মর্যাদা দান পৃথিবীর অনেক সমস্যা ঘুচিয়ে দেবে। আপনার ব্লগে চলুক এমনই মনুষ্যত্বের জয়গান।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৩

ব্যোমকেশ বাবু বলেছেন: ধন্যবাদ :-)

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: খুবই চমৎকার লাগলো আপনার লেখাটি তবে কথা হচ্ছে মানবিক হতে হলে বিবেক থাকতে হবে কিন্তু দিন দিন আমাদের বিবেক বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। তারপরও আশা করতে তো আর দোষ নেই আমরা আশা করতেই পারি প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের। ধন্যবাদ্।

৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:০৫

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে।





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৩

আবু আফিয়া বলেছেন: লেখাটা ভাল লেগেছে, লেখককে ধন্যবাদ।

৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: লেখাটি ভালো লাগলো। সংখ্যালঘুর মনস্তত্ত্ব এরকমই হয়। তার ওপর অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও বঞ্চনা তাদেরকে আরও প্রতিশোধ পরায়ণ করে তোলে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪

ব্যোমকেশ বাবু বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভালোই বলেছেন(লিখেছেন)। আপনি তো বাচ্চার জন্য মাইনোরিটি গেম খেলতে চাননি। আমি তো আমার দ্বারা মাইনোরিটির উপর অবিচার হবে এই আশংকায় স্থায়ী কাজের মেয়েই রাখার বিপক্ষে! কারণ, তাকে খেতে বলতে হবে আলাদা। টিভি দেখার সময় সে টিভি দেখবে দাঁড়িয়ে বা পাশে বা দূরে বসে - এসব অবচেতন মনে খারাপ লাগা শুরু করবে। ফেসবুকে যখন দেখি মেমসাহেব বাসে স্লিপিং কোচে আর কাজের মেয়ে পায়ের কাছে বসে আছে কিংবা সাহেব এ/সি বাথে আর কাজের মেয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তখন মনে মনে সান্ত্বনা পাই আমার দ্বারা এই অন্যায়টা হলো না...

৮| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২২

রহমান সংশয় বলেছেন: পোস্ট ভালো লেগেছে। লেখককে ধন্যবাদ

৯| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৬

শরীফুর রায়হান বলেছেন: পৃথিবীর সব জায়গায় মাইনোরিটি একটা সমস্যা, পোস্ট ভালো লাগলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.