নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি স্বেচ্ছাচারী; করি মন যা চায়! শাসন কিংবা শঙ্কায় নয়, আমি স্থির হই ভালোবাসায়।

Biniamin Piash

প্রত্যেকটা মানুষের মতই সাধারণ হয়েও নিজেকে অসাধারণ মনে করি!

Biniamin Piash › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয়ন্তী

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৫

অনেকদিন ধরেই কিছু লেখার জন্য হাত নিশপিশ করছিলো।প্রবল ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও শুরু করতে পারছিলাম না।কিভাবে যে একটা লেখা শুরু করবো তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।আমি ছোটখাটো স্বঘোষিত কবি।মাঝেমধ্যে ছন্দ মিলিয়ে দু একলাইন লিখে ফেলি।ভেবেছিলাম গল্প লেখা,এ আর এমন কি!একবার শুরু করতে পারলে টপাটপ লেখা বের হতে থাকবে।কিন্তু,কিসের কি!ল্যাপটপ বের করে দুঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বসে থাকতাম।মাঝেমধ্যে দু একলাইন লিখে আবার ব্যাকস্পেস দিয়ে কেটে দিতাম।এরকম চলছিলো বেশ কয়েকদিন।শেষমেশ যখন হাল ছেড়ে দেবো এমন অবস্থা তখনি গল্পের প্লট পেয়ে গেলাম।
গল্পটা প্রিয়ন্তীকে নিয়ে।ওর আসল নাম অবশ্য প্রিয়ন্তী নয়।অন্য কি যেন একটা বিশাল বড় নাম ছিলো ওর।অনেকদিন ধরে সে নামে ডাকিনি তাই মনে পরছে না।ওহ মনে পরেছে,সামিহা তাজরীন রাত্রি।
রাত্রি,শব্দটা শুনলেই কালো অন্ধকারের কথা মনে পরে যায়।কিন্তু প্রিয়ন্তী মোটেও কালো ছিলো না।মায়াবী চেহারা,গোলগাল মুখ আর গায়ের রংটাকে শ্যামলা বলা চলে।নিকটাত্মীয়রা অবশ্য ফর্সা বলেই চালিয়ে দিত,আর প্রতিবেশিরা কালো বলে ক্ষ্যাপাতো।এ নিয়ে ও প্রায়ই হাসতে হাসতে বলতো,”দেখলি,গায়ের রঙ আমার কিন্তু চিন্তা অন্যদের।কে বলেছে মানুষ স্বার্থপর।সবাই কিরকম অন্যকে নিয়ে চিন্তা করে তুই দেখেছিস।“অন্যের খোচাকে কতটা সহজভাবে নেয়া সম্ভব সেটা ওকে দেখে বুঝতাম।
আমি অবশ্য ওকে প্রিয়ন্তী বলেই ডাকতাম।কেন ডাকতাম বা কিজন্য এই নামটাই মাথায় এলো তা জানিনা,তবে ও যে আমার প্রিয় একজন ছিল এটা বুঝতাম।আর এটাই ছিলো ওকে দেয়া নামের স্বার্থকতা।
ওহ,এত কথা বলে ফেললাম কিন্তু প্রিয়ন্তীর পরিচয়ই তো দেয়া হলো না।প্রিয়ন্তী হচ্ছে আমার খুব খুব কাছের একজন বন্ধু।হ্যা,বন্ধুই।
ছোটবেলা থেকেই আমি চুপচাপ থাকতে পছন্দ করতাম।অন্যকারো সাথে কথা বলতে গেলে জড়তায় মুখে কথা আটকে যেত।তাই আমার বন্ধু বলতে বাবা-মা আর পোষা বিড়াল ছাড়া আর কেউই ছিলো না।অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাসার কাছের স্কুলেই ছিলাম।ক্লাস শুরুর ঠিক পাঁচমিনিট আগে স্কুলে যেতাম,আর ছুটির ঘণ্টা বাজার সাথে সাথেই বাসায় আসতাম।বাকিটা সময় টিভি দেখে,বই পড়ে কাটিয়ে দিতাম।আমারও খুব ইচ্ছা করতো বাইরে গিয়ে অন্যদের সাথে ক্রিকেট-ফুটবল খেলে সময় কাটাতে।কিন্তু ওরা আমাকে কখনো পাত্তাই দিত না,তাই ইচ্ছাটাকে মনের ভেতরেই চেপে রাখতে হত।
হঠাত করেই আমরা বাসা পাল্টে শহরে চলে এলাম।আমিও নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম।আর এখানে এসি পরিচয় হয় প্রিয়ন্তীর সাথে।
প্রথম ক্লাসেঃ
আমি খুব ভয়ে ভয়ে স্কুলে গেলাম।এমনিতেই নতুন স্কুল,নতুন পরিবেশ তার উপর আমি আবার সবার সাথে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না তাই ভয় একটু বেশিই ছিল।ক্লাসে গিয়ে একেবারে পেছনের বেঞ্চে বসলাম।কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে এসে আমার পাশে বসলো।আড়চোখে মেয়েটাকে দেখলাম,খুব সাজগোজ করে এসেছে,হাসিখুশি প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে মেয়েটাকে।হাসি হাসি মুখ নিয়েই আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
-”নতুন এসেছো বুঝি।কি নাম তোমার?”
-“শু-শু-শুভ।“কোনরকমে উত্তর দিলাম আমি।
_”আরে,তুমি মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছো,ছেলেরা এত ভীতু হয় নাকি!”
বলেই সে হাসতে শুরু করলো।হাসি থামিয়েই বললোঃ
-“আমি রাত্রি।সামিয়া তাজরীন রাত্রি।আত্মীয়রা সবাই আমাকে সামিয়া বলে ডাকে কিন্তু স্কুলে সবাই রাত্রি নামেই ডাকে।তুমি যেকোন নামেই ডাকতে পারো।ইচ্ছে হলে নিজে নতুন কোন নাম ও দিতে পারো।“বলেই আবার হাসতে শুরু করলো মেয়েটা।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটাকে দেখছিলাম।এত সহজ,সরল,প্রাণবন্ত কারো সাথে আগে কথা হয় নি তাই আমার অবাক হওয়ার মাত্রাটাও বেশি ছিল।মেয়েটার কথা বলার ভঙ্গিও অনেক সুন্দর।এমনভাবে কথা বলছিলো যেন আমি ওর কত পরিচিত বন্ধু!
-“এভাবে হা করে আছো কেন!মুখের ভেতরে তো বাঘ-ভাল্লুক ঢুকে যাবে”
মেয়েটার কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম।
তারপর মেয়েটার সাথে অনেক কথাই হলো,কোন স্কুলে ছিলাম,স্কুল বদলি করলাম কেন,আমি এত চুপচাপ কেন এইরকম আরো শখানেক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে যখন আমি ক্লান্ত তখনই ক্লাসের ঘন্টা বাজলো।তখনকার মত কথাবার্তার সমাপ্তি ঘটলো।
স্কুল ছুটির পর বাড়ির পথে হাটছিলাম।হঠাত মাথায় কারো টোকার আঘাত পেয়ে ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালাম।স্কুল ছুটির পর বাড়ির পথে হাটছিলাম।হঠাত মাথায় কারো টোকার আঘাত পেয়ে ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালাম।দেখি মেয়েটা মুখ লুকিয়ে হাসছে।
-“কি হয়েছে? টোকা মারলে কেন?”
-“আমি!আমি কখন টোকা মারলাম!এমা এ এলাকায় অনেক ভূত আছে,জানো তো।দেখো কোন দুষ্টুভূত এসে তোমাকে টোকা দিয়েছে।“
আমার আর এই নিয়ে কথ বলতে ইচ্ছে করছিলো না।হনহন করে হাটা শুরু করতেই মেয়েটা পেছন থেকে বলে উঠলো,
-“আরে দাড়াও।আমার বাসাও ঐদিকে।একসাথেই যাই।“
পুরোটা পথ এই মেয়েটার বকবক শুনতে হবে ভেবেই আমার কান্না আসছিলো কিন্তু মুখ ফুটে যে কিছু বলবো তাও পারছিলাম না।ভাগ্যের হাতে সবকিছু ছেড়ে দিয়েই মেয়েটার সাথে হাটতে শুরু করলাম।
সেখান থেকেই শুরু।এরপর ওর সাথে কাটিয়েছি জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো।আমার মত একটা চুপচাপ ছেলের সাথে ওর কিভাবে বন্ধুত্ব হলো এটা নিয়ে প্রায়ই চিন্তা করতাম।অবশ্য ওর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর আমিও অনেকটা বদলে গিয়েছিলাম।আমি যেন একটা নতুন জীবন শুরু করেছিলাম।
স্কুলের দুই বছর পেড়িয়ে গেলো,কলেজে ভর্তি হলাম।ওর রেজাল্ট ভালো ছিল তাই ভাল একটা কলেজেই চান্স পেয়েছিলো,কিন্তু আমি ভর্তি হলাম অন্য কলেজে।ওকে ছাড়া কয়েকদিন ক্লাস করে বুঝতে পারলাম ও কতটা আপন হয়ে গিয়েছিল।একদিন কলেজের মাঠে আনমনে বসে আছি,হঠাতই মাথার উপর কেউ একটা টোকা দিলো।চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখি প্রিয়ন্তী তার স্বভাবসুলভ হাসিহাসি মুখটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখে আমি অনেক খুশি হলেও,খুশি খুশি ভাবটা লুকিয়ে রেখেই বললাম,
-“এত জোরে মারলি কেন?”
-“বলতো আমি এখানে কেন এসেছি?’
-‘কেন আবার,নতুন কলেজে আমার মত কোন হাদারাম পাসনি মারার জন্য তাই এখানে এসেছিস গুন্ডামি করতে।“
-“হুম,ঠিক ধরেছিস।তোকে মারার জন্য পার্মানেন্টলি চলে এলাম এই কলেজে।“
-“মানে?”
-“মানে আমি এই কলেজে ভর্তি হয়েছি।“
-“কেন?”
-“ঐ কলেজ ভাল লাগেনা তাই।“
-“হু হু,নাকি আমি নেই এইজন্য।“
-“ইশস,বয়েই গেছে আমার।কি আমার রাজপুত্তুর উনি,উনার জন্য কলেজ ছাড়তে হবে।“
এবার আমি সত্যিই রাগ করলাম।সেখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলাম,তখনই প্রিয়ন্তি বললো,
-“ওলে ওলে,রাজপুত্তুর দেখি রাগ ও করতে পারে।থাক বাবা ভুল হয়ে গেছে আপনাকে রাজপুত্তুর বলে।এখন ভিখারি বললাম।এবার নিশ্চয়ই খুশি।“
প্রচন্ড রাগ নিয়ে ওর দিকে তাকালাম,পারলে তখনই ওকে খেয়ে ফেলি এরকম অবস্থা।যাইহোক তখনকার মত ঝগড়া মিটিয়ে দুজনে বেশ আড্ডা দিলাম।
মাঝে মাঝে ভাবতাম,আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি কিনা।পরক্ষণেই ভাবতাম আরে না,আমরা তো জাস্ট বন্ধুই।প্রিয়ন্তীকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে ও বলতো,
-“কেন,তোর কি মনে হয় আমি তোকে ভালবাসি না?”
-“হ্যা,কিন্তু সেটা তো বন্ধু হিসেবে।“
-“তাহলে কি তোকে জামাই হিসেবে ভালবাসবো?”
এরপর আর আমার বলার মত কিছু থাকতো না।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল সময়।দুষ্টুমি,খুনসুটি,ঝগড়া,আড্ডা মিলিয়ে বেশ ভালোই যাচ্ছিলো দিনগুলি।দেখতে দেখতে কলেজের দুবছর শেষ হয়ে এলো।এইচএইসসি দিলাম।ভার্সিটি ভর্তির জণ কোচিং করতে ঢাকায় আসলাম।ভীষণ ব্যস্ততার মাঝে দিন যাচ্ছিলো।এই সময়টায় প্রিয়ন্তীর সাথে খুব একটা দেখা হত না।আমি ভার্সিটির জন্য কোচিং করতাম আর ও মেডিকেলের জন্য।সময় খুব দ্রুতই কেটে যচ্ছিলো। ওর পরীক্ষা আগে ছিলো।পরীক্ষা দিলো,রেজাল্ট বের হলো।খুব ভালো একটা মেডিকেলে ওর চান্স হলো।দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষার দিন ও ঘনিয়ে এলো। পরীক্ষা ভালোই দিলাম।চান্সও হয়ে গেল।মজার কথা আম্র আর ওর ক্যাম্পাস কাছাকাছিই ছিলো’ফলে যা হবার তাই হলো।আবার আগেরমত আড্ডাবাজি আর খুনসুটি চলতে লাগলো।কিন্তু এবার আমি যেন খুব ভালোভাবেই টের পেলাম যে আসলে আমি ওকে অনেক ভালবাসি।কিন্তু ওর সামনে গিয়ে মুখফুটে বলার মত সাহস কখনোই ছিলোনা।
একদিন বুকভরা সাহস নিয়ে ওর সামনে হাজির হলাম,“প্রিয়ন্তী শোন,তোর সাথে আমার খুব জরুরী কথা আছে।“
-“ওম্মাহ,একেবারে সিরিয়াস মনে হচ্ছে।তা কি এমন জরুরী কথা ভণিতা না করে বলে ফেল।“
-“দেখ,আর আগে যতবারই এ নিয়ে কথা বলেছি তুই প্রত্যেকবারই হেসে উরিয়ে দিয়েছিস।কিন্তু এবার আমি আসলেই অনেক সিরিয়াস।“
-“হুম,কেস জন্ডিস মনে হচ্ছে।বলে ফেল কি এমন জরুরী কথা।“
-“আ-আ-আমি-...”
-“তুই আমাকে ভালোবাসিস এইতো?”
-‘হ্যা,কিন্তু শুধু বন্ধু হিসেবে নয়।“
-“তাহলে,শত্রু হিসেবে?”
-চুপ থাকবি তুই?নাকি আমি চলে যাবো?”
-“আচ্ছা,এইযে চুপ করলাম।“
-“আমি তোকে অনেক ভালবাসি,প্রিয়ন্তী হিসেবে।তুই কি সারাজীবনের জন্য আমার হবি?”
এবার প্রিয়ন্তী ফিক করে হেসে ফেললো।
-“হাসির কি হলো?”
-না কিছুনা।তোর কেন এরকম মনে হচ্ছে যে আমি তোর থেকে দূরে চলে যাবো?”
-“দামী সম্পদ হারানোর ভয়ই মানুষের বেশি থাকে।“
-“নারে হাদারাম,আমি তো অনেক আগে থেকেই তোর।নতুন করে আর কি হবো।আর কখনো তোকে ছেড়েও যাবো না।“
প্রিয়ন্তীর কথা শুনে আমার ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছা করছিলো।তাই আশেপাশের মানুষজনের তোয়াক্কা না করেই প্রিয়ন্তীকে কোলে তুলে আনন্দে চিতকার করে ফেললাম।প্রিয়ন্তী হেসে বললো,
-“আরে বুদ্ধু,মাথা কি গেছে তোর?চারপাশে মানুষ দেখছে।ছাড় শয়তান।“
সেদিন যদি বুঝতে পারতাম প্রিয়ন্তী তার কথা রাখবে না তাহলে হয়তো কখনোই তার হাত ছাড়তাম না!

বিধাতা আসলে তার জগতে অনেক অলিখিত বিধান তৈরি করে রেখেছেন।যেমন,কারো কপালে সুখ খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।কোন এক অজানা কারণেই সুখে আর দুঃখ পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে।
সেদিন ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম,মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো প্রিয়ন্তীর নাম্বার থেকে।
শুধু দুটি শব্দেলেখা ম্যাসেজ।কিন্তু দুটি শব্দই যেন দুহাজারটা অর্থ বোঝাচ্ছে।দুহাজারটা ব্যাখ্যা দাড় করানো যায় এই দুটি শব্দ দিয়েই।আমি মেসেজটি পড়ে কিছুই আঁচ করতে পারি নি।কল দিলাম প্রিয়ন্তীর নাম্বারে,বন্ধ পেলাম।সারাদিনে প্রায় হাজারবার কল দিয়ে বারবার একই কথা শুনলাম।ওর হলের অন্য মেয়েদের কাছে জানতে চাইলাম ও কোথায়,কেউই বলতে পারলো না।
প্রায় সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেলেও প্রিয়ন্তীর কোন খোজ পেলাম না।সম্ভাব্য সব জায়গায় প্রিয়ন্তীর খোজ করে আমি ক্লান্ত।তবে তার দেয়া শেষ ম্যাসেজটাই অনেক কিছু পরিস্কার করে দিয়েছিল।বুঝতে পেরেছিলাম অনেককিছুই কিন্তু মানতে পারছিলাম না।ভুলে যেতে চাইতাম ওকে,কিন্তু পারিনি।হৃদয় মন্দিরে স্বর্ণাক্ষরে যে নাম লেখা রয়েছে তাকে মুছে ফেলা কি এতই সহজ!আমার পৃথিবীটা আবার বদলে যেতে শুরু করলো।চেনা দৃশ্যপট যেন অচেনা হয়ে গেলো কয়েকদিনের ব্যবধানেই।
দিন কেটে যায়,মাস কেটে যায়,বছর পেড়িয়ে যায়।স্মৃতিগুলো ঝাপসা হতে থাকে কিন্তু মুছে যায় না।এর মধ্যে কোন এক কাজে আমাদের সেই পুরনো এলাকায় যেতে হয় আমাকে।যেখান থেকে শুরু হয়েছিল প্রিয়ন্তী অধ্যয়ের।কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলাম,প্রিয়ন্তীর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাত থেমে পড়লাম।নিয়ন বাতির আলোয় স্পষ্টই দেখছিলাম,তবুও চোখ কচকে আবার তাকালাম ভুল দেখছি নাতো!
না ভুল নয়,যা দেখছি সত্যিই দেখছি।একটা বাধানো কবরের গায়ে খোদাই করে লেখা শুধু “প্রিয়ন্তী”।বুকের ভেতরটা একটা মোচড় দিয়ে উঠলো।তড়িঘড়ি করে প্রিয়ন্তীদের বাসায় গিয়ে জানতে চাইলাম আসল ঘটনাটা কি।
আসলে প্রিয়ন্তী আমাকে ধোকা দেয় নি।সেদিন ক্লাস করে ফেরার পথে একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায় প্রিয়ন্তী,এরপর তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিলেও বেশিক্ষণ বাচতে পারেনি।শেষ মুহূর্তে অনেকেই বলেছিল আমার সাথে যোগাযোগ করতে,কিন্তু ও চায়নি।সবাইকে নিষেধ করেছিল আমাকে সত্যটা জানাতে।বলেছিল,”ভালবেসে ভুলে যাওয়াটা অনেক কঠিন,তারচেয়ে বরং ঘৃণা করেই ভুলে যাক।“নির্মম সত্যটাকে আড়াল করেই তাই দিয়েছিল সেই ম্যাসেজটা।
আমি এখন প্রিয়ন্তীর কবরের সামনে বসে আছি।না,কাদছি না।ওর সাথে রাগ করেছি।কথা দিয়েও কেন কথা রাখলো না।আমিও প্রতিশোধ নেব।তোর দেয়া শেষ ম্যাসেজে যেরকমটা বলেছিলি সেরকমটা কখনোই হবে না।হওয়া সম্ভব নয়।ক্ষমা করিস আমাকে প্রিয়ন্তী,তোর শেষ ইচ্ছাটা আমি পূরণ করতে পারবো না।
ওহ হ্যা,কি বলেছিল শেষ ম্যাসেজটায়?
হাজারো অনুভূতি মিশ্রিত দুটো শব্দ,
“ভালো থাকিস।"

-বিনিয়ামীন পিয়াস

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০১

সাদাত তানজির বলেছেন: অসাধারন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.