নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

My scrapbook!

বৃতি

অলস সময়ে শব্দ নিয়ে কিছু কাটাকুটি খেলা চলে। সাহিত্য, গভীর চিন্তাশীলতা, দর্শন- ইত্যাদি ইত্যাদি এখানে না খোঁজাই ভালো।

বৃতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী, নারীত্ব, যৌন হয়রানি

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

নারী, নারীত্ব, যৌন হয়রানি- কথাগুলো আজ সমার্থক হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশে। একই সমাজে বসবাস করে শুধুমাত্র নারীত্বের কারণে একজন পুরুষের থেকে আমি অন্যভাবে বেড়ে উঠব, যৌন হয়রানির শিকার হব- কিন্তু কেন? কেন আমাকে ভুলতে হবে, একজন নারীর আদলে বাস্তবিকপক্ষে আমি একজন মানুষ? একজন পুরুষের মত আমারও নিজস্ব ভুবন আছে, মনন আছে - আমারও কিছু শখ- ইচ্ছে আছে। "মানুষ" আমার প্রথম পরিচয়- নারীত্ব দ্বিতীয়তে। কেন আমার প্রথম পরিচয় অস্পষ্ট করে দ্বিতীয় পরিচয়ে শুধুমাত্র পরিচিত হতে হবে?



নিজের জীবন থেকেই প্রথমে কিছু বলতে চাই। শালীন পোশাক বলতে যা বোঝায়, তার জ্ঞান আমার আছে- কোথায় কি পরতে হবে , আর দশটা বাঙালি মেয়ের মত সেভাবেই দেশে আমি চলাফেরা করেছি। কিন্তু উটকো লোকের ঝামেলা কোনদিন কমেনি। বয়সের কারণে অনেক সময় নিজের বাবা- মাকেও বলা যায়নি সেই অপমানকর পরিস্থিতির কথা। ভারি বইয়ে ভরা জিন্সের ব্যাকপ্যাক একদিন ঘুরিয়ে ছুঁড়ে মেরেছিলাম এক লোকের (!!!!!!) ওপর- যে ফুটপাতের ভীড়ের ভেতর আমার পেছন স্পর্শ করছিল ক্রমাগত- একবার, দুইবার, তিনবার। সেই কুলাঙ্গারের ব্যথায় কুঁচকে ওঠা চেহারা দেখে কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছিলাম। বলতে পারেন, এক লাজুক কিশোরী কোন পরিস্থিতিতে একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষকে শারীরিক আঘাত করে শান্তি পায়? কেনই বা তাকে এই ঋণাত্মক শান্তিটা পেতে বাধ্য হচ্ছে? কেন এক কিশোরীর গোলাপিরঙা ভুবনে আপনারা কেউ কেউ একরাশ কালি ছিটিয়ে দেন?



বাংলাদেশে আমার অভিজ্ঞতা আর দশটা মেয়ের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার মতই। আমি জানি, ইভটিজিং এর শিকার হয়ে কেউ চুপ করে থাকছে আত্মসম্মানের স্বার্থে, কেউ প্রতিবাদ করছে, কেউ নীরবে কাঁদছে। কিন্তু ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি প্রতিনিয়ত একজন মেয়ে কেন হবেন? শুধুমাত্র নারীত্বের কারণে? কিছু অতিমাত্রার পুরুষের বাণী বাদই দিলাম, পহেলা বৈশাখে টিএসসির ঘটনায় খোদ একজন মেয়েকে এই কথা বলতে দেখলাম- মেয়েরা কেন মেলায় যাবে? হজ্জেও ভিড় হয়, সেখানে তো এমন সমস্যা হয় না। সেই আপুকে আমার প্রশ্ন, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে হজ্জের পরিবেশের মিল খুঁজে পান? আপনি কি নিজেকে মানুষ ভাবেন? নাকি শুধুই নারী? আপনি কি অন্তঃপুরবাসিনী হয়ে জীবন চালাবেন বলে স্থির করেছেন? আপনার নিজের মেয়ে থাকলে তাকে নিয়ে কি ভাবনা আপনার? সেও অন্তঃপুরবাসিনী হবে? চমৎকার!



মেলার কথা বাদ দিলাম আপু আর ভাইয়ারা- যারা কাপড় দিয়ে আচার আচরণের শিক্ষা দিতে চান। দৈনন্দিন জীবনে বাজার, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি, চাকুরি, বেড়ানো- আপনারা স্বস্তিতে আছেন তো? স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পাচ্ছেন কি? শুনতে খারাপ শুনালেও আমি বলব, দেশের বাইরে এসে আমি স্বস্তিতে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করি। আপনাদের যাদের মুখে পশ্চিমা অপসংস্কৃতির কথা শুনি, তাদেরকে বলব, আপনারা পারলে একবার পশ্চিমে এসে ঘুরে যাবেন, কিছুদিনের জন্য হলেও। বাংলা সিনেমা দেখে যেমন বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা পাবেন না, পশ্চিমা মুভি দেখেও পশ্চিম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন না। আপনাকে কিছুদিন বসবাস করে জানতে হবে "পশ্চিমা অপসংস্কৃতি" সম্পর্কে, জানতে হবে এদের শিক্ষার ধরণ। সভ্যতা কাকে বলে, স্বাভাবিক জীবনের সংজ্ঞা কেমন হয় দেখে যাবেন। নিজেদের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে আর কতদিন?



শিক্ষা মানে কখনই পুঁথিগত বিদ্যা নয়, কিছু কাগজের সার্টিফিকেট নয়। শিক্ষা মানে নিজের ভেতর কিছু মূল্যবোধ জাগ্রত করা। অন্যের সাথে আমার আচরণ কেমন হওয়া উচিত, ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা, সহিষ্ণুতা, দায়িত্ববোধ-আরও অনেক কিছুর এক সমন্বিত প্যাকেজ। বই পড়ে আমরা কিছুটা শিখি, বাস্তবজীবনে শিখি তার থেকে অনেক বেশি। হয়ত আমি নিজেও ভুলে ভরা একজন মানুষ- তবু আমি শিখতে চাই। একজন সিএনজি চালকের ছবি দেখলাম ফেইসবুকে, কিছুদিন আগে। পঞ্চাশ হাজার টাকার ওয়ালেট আর মোবাইল দিয়ে গেছেন সেগুলোর প্রকৃত মালিককে- যিনি ভুলবশতঃ ফেলে এসেছিলেন সেই বাহনে। সেই চালকের কাছ থেকে কিছুটা হলেও নৈতিকতা শিখি, এক শিশুর কাছে সততার শিক্ষা নিই। একজন দিনশ্রমিকের কাছ থেকে রক্ত পানি করা পরিশ্রমে অর্জিত পয়সা দিয়ে দিনযাপনে আনন্দের শিক্ষা নিই। তথাকথিত শিক্ষা নয়, প্রকৃতির সব অনুসঙ্গের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শেখা যায়। শিক্ষার শেষ নেই।



আমার জানার আগ্রহ নেই জড়িত ব্যক্তিরা তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত, নাকি অশিক্ষিত । ভিডিও ফুটেজে যা দেখেছি, তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি সুস্থ সামাজিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শিষ্টাচারবোধটুকু এদের অজানা। এরা অসুস্থ মানসিকতার অধিকারী, এককথায়- ক্রিমিনাল। আশা করব, সরকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই যৌন হয়রানি ঘটনার সাথে জড়িতদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই। দৈনন্দিন জীবনে নারীদের চলাফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারপ্রধানের অন্যতম দায়িত্বের ভেতর পড়ে। আর সেইসাথে ছোট-বড় সব নারীদেরকে বলব, আপনার প্রতি যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন- সাথেসাথে। আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু ঘটামাত্র প্রতিবাদ করতে শিখুন। আপনার জীবন, আপনার মনন, আপনার শরীর- এসব কিছুর অধিকারী শুধুমাত্র আপনি। লজ্জিত বা কুন্ঠিত হবেন না। সাহায্য চাইতে কখনো দ্বিধাবোধ করবেন না। কাপুরুষ, কুলাঙ্গারদের পাশাপাশি সত্যিকার মানুষরাও আপনার পাশেই আছে- কেউ না কেউ আপনার সাহায্যার্থে অবশ্যই এগিয়ে আসবে।



"পার্সোন্যাল স্পেস" বলে একটি টার্ম আছে। এটা আপনার নিজস্ব বলয় ভাবতে পারেন- আপনাকে কেন্দ্র করে চারপাশের এক অদৃশ্য বলয় সেটা। এই বলয়ের ভেতরের স্থানটুকু একান্তই আপনার নিজস্ব। আপনি কাকে এই বলয়ের ভেতর স্থান দেবেন, কি দেবেন না- এই অধিকারটুকু সম্পূর্ণই আপনার এক্তিয়ারে। আপনার পার্সোন্যাল স্পেসে অনুমতি ছাড়া, জোরপূর্বক প্রবেশ করার অধিকার কারোর নেই। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাউকে জোর খাটাতে দেবেন না। আপনি চিন্তা ভাবনায় একজন সম্পূর্ণ মানুষ। নিজেকে দেখাশুনার দায়িত্ব আপনার নিজেরই। শুধুমাত্র নারী পরিচয়ে নয়, একজন মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৫০

টকদঐ পার্ট ২ বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটার জন্য

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৫৩

বৃতি বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:১৩

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
সচেতনতার চাইতে স্বচেতনাকে আমি অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর এই স্ব-অস্তিত্বকে স্বাধীন করতে চাইলে শিক্ষার বিকল্প নাই। এখন কথা হলো কেমন শিক্ষা ! শুধু কাগজের সার্টিফিকেট দেয়া-নেয়ার মাঝেই যদি তার উদ্দেশ্য হয়। এমন ঘটনা রোজ রোজ ঘটবে ঘটছে; এটাই স্বাভাবিক। ঘটনা ঘটবে দু-চারদিন ও নিয়ে কথা হবে ব্যাস্ প্রতিক্রিয়া শেষ। এখনও সময় আছে, শিক্ষা সংস্কৃতিটিকে যথাসম্ভব উন্নততর নীতি-নৈতিকতার পথে ফিরিয়ে আনতেই হবে। এর বিকল্প নেই। পৃথিবীর কোথাও নেই।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:২৩

বৃতি বলেছেন: দেশের তথাকথিত শিক্ষা ঠিক শিক্ষা দিচ্ছে না। তবে সেটাও শেষ কথা নয়, আমরা অন্যভাবেও শিক্ষিত হতে পারি। যে সিএনজি চালকের কথা উল্লেখ করলাম, তিনি হয়ত প্রচলিত অর্থে সেইভাবে শিক্ষিত নন। কিন্তু তিনি আমার কাছে একজন আদর্শ মানুষ। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং আচার ব্যবহারের শিক্ষাটা ভয়ানকভাবে জরুরী হয়ে গেছে।

স্বচেতনা দরকার। সহমত। অনেক ধন্যবাদ, অন্ধবিন্দু।

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫

সুমন কর বলেছেন: শিক্ষা মানে নিজের ভেতর কিছু মূল্যবোধ জাগ্রত করা। অন্যের সাথে আমার আচরণ কেমন হওয়া উচিত, ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা, সহিষ্ণুতা, দায়িত্ববোধ- আর অনেক কিছুর এক সমন্বিত প্যাকেজ। বই পড়ে আমরা কিছুটা শিখি, বাস্তবজীবনে শিখি তার থেকে অনেক বেশি। আমি নিজেও ভুলে ভরা একজন মানুষ- তবু আমি শিখতে চাই।

চমৎকার লেখায় ভালো লাগা।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:২৭

বৃতি বলেছেন: থ্যাংকস, সুমন ভাই।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:১০

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সবকিছু। একটি মেয়ে এদেশে আজো স্বাধীন নয়। আজো তারা পণ্য সমতুল্য ব্যবহার পায়। আজো তারা হেয় হয় সমাজের লালসার কাছে।

ভারি বইয়ে ভরা জিন্সের ব্যাকপ্যাক একদিন ঘুরিয়ে ছুঁড়ে মেরেছিলাম এক লোকের
এই কাজটা করা উচিত সকলের।
পহেলা বৈশাখে এই সাহস টা যদি সবাই দেখাতো তবে লজ্জার ইতিহাস না হয়ে সাহসী বাঙালির পরিচয় পাওয়া যেত।

আমি আমরা লজ্জিত প্রতিটি নারীর কাছে।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৫২

বৃতি বলেছেন: বাংলাদেশে একজন মেয়ে স্বাধীন কিনা সেই প্রশ্নে যাচ্ছি না। তবে ন্যূনতম শিষ্টাচারবোধ থাকা উচিত সবার। শুধুমাত্র "শারীরিক শক্তি" দিয়ে নিজের পৌরুষ জাহির করাতে কোন বীরত্ব নেই।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৬

আজকের বাকের ভাই বলেছেন: আমাদের নারীরা সর্বদাই ছাড় দিয়ে এসেছে আসছে, আমাদেের মা-বোনেরাও দিচ্ছে। কিন্তু কিছু নরপুরুষ তাদের সেই ছাড় দেবার মানসিকতার সুযোগ নেবার চেষ্টা করছে। আমাদের নারীরা প্রতিবাদী হলেই সব সমষ্যার সমাধান হবে, দেখবেন ইদুরকে কিভাবে গর্ত থেকে বের করে পিটানো হয়।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:১৩

বৃতি বলেছেন: বাঙালি নারীরা স্বভাবগতভাবে লাজুক। তাতে এই কুলাঙ্গারগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছাড় পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে মেয়েদেরকেই সরব হতে হবে সবচেয়ে আগে।

অনেক ধন্যবাদ।

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৩৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:




ভিডিও ফুটেজটা দেখার পর নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। এই ছেলেগুলো এদেশেরই আমাদেরই কারো ভাই, চাচা, মামা, বন্ধু। বিশ্বাসই করতে পারছি না আমরা এতোখানিই নিজে নেমে গেছি। আমাদের নৈতিকতার পতন দেখে হতবাক।

আরে আমি উলঙ্গ হয়ে হাটলেই আমার কি হাত গায়ে স্পর্শ করার অধিকার আছে??? অবশ্যই নাই।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮

বৃতি বলেছেন: বখাটেদের জন্য আইন কঠোর হওয়া দরকার।

ধন্যবাদ, আমিনুর ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.