নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

My scrapbook!

বৃতি

অলস সময়ে শব্দ নিয়ে কিছু কাটাকুটি খেলা চলে। সাহিত্য, গভীর চিন্তাশীলতা, দর্শন- ইত্যাদি ইত্যাদি এখানে না খোঁজাই ভালো।

বৃতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন প্রিয় কবি আবুল হাসান- জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:২৪


সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র,
মায়াবী করুণ
এটা সেই পাথরের নাম নাকি? এটা তাই?
এটা কি পাথর নাকি কোনো নদী? উপগ্রহ? কোনো রাজা?
পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?
মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তীক্ষ্ণ তমোহর
কী অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর?
~ আবুল হাসান

একজন প্রিয় কবি আবুল হাসানের আজ জন্মদিন (জন্মঃ ১৯৪৭, ৪ আগস্ট-মৃত্যুঃ ১৯৭৫, ২৬ নভেম্বর)। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

আবুল হাসান আমার প্রিয় প্রসঙ্গ .. আসাদ চৌধুরী
(কবি আসাদ চৌধুরীর স্মৃতিচারণ)
আবুল হাসান আমার প্রিয় প্রসঙ্গ। এই প্রসঙ্গ একবার উঠলে আমি খুব সহজে অন্য প্রসঙ্গে যেতে চাই না। প্রসঙ্গের সূত্র ধরে আলাপের আয়তন বাড়াই। মাত্র তিনটি কবিতার বই-র মধ্যে হাসান আছেন। হাসান আছে স্মৃতিতে। তাঁর কবিতার মূল্যায়নের চেষ্টাই আমি করবো না, নিশ্চয়ই যোগ্য সমালোচক এই আনন্দময় কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজটি করবেন। আমি যেখানেই কবিতা পড়তে যাই, প্রথমেই হাসানের কিছু কবিতা পড়ি। মনে হয়, হাসান বেঁচে থাকলে তিনিও যেতেন।

হাসান যেদিন মারা গেলেন, সেদিন আমিও টেলিভিশনের স্মরণসভায় ছিলাম। শামসুর রাহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন। কথা ছিল আমি সবার শেষে বলবো, আর যদি সময় থেকে হাসানের কিছু কবিতা শোনাবো। আমি কবিতা পড়তে পারিনি। এমন কি, কবিতা পড়ার মতো মানসিক অবস্থাও আমার সে-সময় ছিলো না। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলো হাসপাতালের একটি মুখ, তাঁর নাকে তুলো গোঁজা, মুখে ম্লান হাসি, চোখ বোঁজা। আমার বুকটা হু হু করছিল। এত দিন পড়ে হাসানকে নিয়ে কিছু লিখতে গিয়ে সেই একই রকম আবেগ ভেতরে নাড়া দিচ্ছে।

আবুল হাসান, শুনতাম, কেননা তখন আমি ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়, বেশ বেয়াড়া, উদ্ধত, এমনকি বেয়াদবও। অথচ আমার ধারণা ঠিক উলটো। কেন জানি না, হাসান আমাকে অতিরিক্ত সমীহ করতেন। মাঝে-মাঝে ছোটখাট ব্যাপারে ছোট ভাইয়ের মতোই আবদার করতেন।কোনো সময়ে মৃদু তিরস্কারে দেখেছি শিশুসুলভ নিষ্পাপ অভিমান। যেন, ‘আসাদ ভাই শেষ পর্যন্ত আপনিও ভুল বুঝলেন’ মার্কা হাসি। জার্মানি থেকে ফিরে গুলবাগে ছিলেন। আমি তাকে কোনোদিন বাসায় পাইনি। ঢাকার রাস্তা, ঢাকার গাছপালা, অনর্গল মানুষের প্রবাহ তাকে ঘরছাড়া করেছিলো? হাসানকে কখনও কখনও মনে হতো নাগরিক বাউল। শিল্প সাহিত্য সম্পর্কে মতামত দিতেন অকপটে। বলতেন প্রবল বিশ্বাস নিয়ে, যেখানে তর্ক অচল। তাঁর সরলতা, তাঁর আচরণ আমার বড় ভাল লাগতো। হাসান সুন্দর ছিলেন, যথার্থ সুপুরুষ ছিলেন, আর সুন্দরের প্রতি আমার অসীম দুর্বলতা তো রয়েছেই।

হাসান মারা যাওয়ার পর যারা হাসপাতালে, জানাজায় গিয়েছিলেন তাঁদের চোখে যে শোক প্রত্যক্ষ করেছি তার মধ্যে সামাজিকতার অনেক ঊর্ধে, প্রাণের ব্যাপার ছিল। সামাজিক প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত যারা-তাদের মৃত্যুতে উৎসবের অহঙ্কার থাকে, দেখানোর ব্যাপার থাকে, কিন্তু সেখানে তা ছিলো না। হাসানের সংস্পর্শে যারাই এসেছেন, পেশায় তিনি যেই হোন, কবিতা তাকে স্পর্শ করতো। তিনি বুঝতে বাধ্য হতেন, একজন কবির মুখোমুখি তিনি হয়েছেন। সমগ্র অস্তিত্বে জীবন-যাপনে এমন কি মৃত্যুকে কি সহজভাবে মেনে নেয়ার মধ্যে স্মৃতিতে – তিনি, আবুল হাসান, সমকালের সবচেয়ে সোচ্চার কবি – কবি- একজন কবিই। ...

( শিশির দত্ত সম্পাদিত ‘সম্পাদক’, ১৯৭৯ থেকে)
- মুহম্মদ যুবায়ের

প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী
অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড় খোঁপা নিয়ে
অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিঃশ্বাস নিয়ে
যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ
যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা
যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা
যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী
আঁচলে আলগা করো কোমলতা, অন্ধকার
মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন
আমি ফিরব না আর, আমি কোনদিন
কারো প্রেমিক হবো না; প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ
আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।
.....
লেখাটি গ্রুপে দেওয়া যথাযথ হোল কিনা জানিনা। হাসান কে নিয়ে কোন লেখা চোখে পড়লেই আবেগাক্রান্ত হয়ে যাই। কবিতা ভালোবাসে কিন্তু হাসানের কবিতার প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চেয়েছিলেন যিনি, তিনি অনুরাগী ছিলেন সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী মেধাবী, সুন্দরী সিনিয়র সুরাইয়ার। তার সে প্রেম কতখানি সুরাইয়ার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল,তা জানা যায়নি।। কিন্তু জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সুরাইয়া তার গভীর মমতার হাত হাসানের উপর থেকে সরাননি জানা যায় এই লেখা থেকে। হয়তো এই ক্ষণকালীন প্রাপ্তিতেই হাসানের অধরা ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছিল।
(আফরোজা সিমিন, প্রিয় কবিতারা, জানুয়ারী ১০, ২০১৫ )

"১৯৭৫-এর ২৬ নভেম্বর। সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে খবর পাওয়া গেলো, তরুণ কবি আবুল হাসান প্রয়াত। তাঁর কবিতা আমার প্রিয়। আবুল হাসান দীর্ঘকাল অসুস্থ ছিলেন, সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসার জন্যে তাঁকে পাঠানো হয়েছিলো বার্লিনে। যতোদূর জানি, একজন কবির চিকিৎসার জন্যে সরকারি তৎপরতা ও সহায়তার ঘটনা বাংলাদেশে সেই প্রথম।

ফিরে আসার পর হাসান অল্প কিছুদিন ভালো ছিলেন, তারপর তাঁকে আবার পি জি হাসপাতালে (এখন শেখ মুজিব হাসপাতাল) ভর্তি করতে হয়। চিকিৎসকরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, সুরাইয়া আপা ছাড়েননি। আবুল হাসানের সঙ্গে সুরাইয়া আপার বন্ধুত্ব বা ততোধিক ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো, এই মর্মে কথাবার্তা শোনা যেতো। সেসব অবান্তর, কবির সেই শেষ সময়ে সুরাইয়া খানম অবতীর্ণ হয়েছিলেন মমতাময়ীর ভূমিকায়।
প্রিয় কবির মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ক্লাস করতে যাওয়া যায় না। পি জি হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম উদভ্রান্ত সুরাইয়া আপাকে, প্রয়াত কবির বিছানার পাশে দাঁড়ানো। তাঁকে অমন করুণ ও অসহায় আগে কোনোদিন দেখিনি। কিছু কিছু ছবি চিরকালের মতো হৃদয়কন্দরে জেগে থাকে, আজও সে মুখ ভোলা হয়নি।

কবির বন্ধু-আত্মীয়-ভক্তরা তখন ধীরে ধীরে সমবেত হচ্ছেন পি জি হাসপাতালে কবির অন্তিম শয্যাটিকে ঘিরে। অতো মানুষের সংকুলান সেই ছোট্টো কক্ষে হওয়ার কথা নয়, আমরা কেউ কেউ বাইরে বারান্দায় দাঁড়ানো। সুরাইয়া আপা হঠাৎ বেরিয়ে এলেন। কী ভেবে কে জানে, আমার হাত ধরে বললেন, ‘ওরা হাসানের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। তা কিছুতেই হতে পারে না, হাসানের খুব ইচ্ছে ছিলো তার কবর হবে রেসকোর্সের একপাশে। সে বলে গেছে। আমার কথা কেউ শুনছে না, তুমি একটু বুঝিয়ে বলবে ওদের?’
জীবনে একেকটা অসহায় সময় আসে যখন মানুষ খুব অবুঝ ও যুক্তিহীন হয়ে যায়। তখন অতি সামান্য কিছুকেও শক্ত অবলম্বন ভাবতে ইচ্ছে করে। না হলে এতো মানুষ থাকতে সুরাইয়া আপা আমাকে এই অনুরোধটি কেন করবেন? আমার কী ক্ষমতা, আমি তো সত্যিই কেউ না, আমার কথা কে শুনবে? তাঁর তখন সেসব বিবেচনা করার অবস্থা নেই।

বুঝতে পারি, অনেকের কাছে প্রত্যাখ্যাত ও উপেক্ষিত হয়ে সবাইকে তিনি একই অনুরোধ করে যাচ্ছেন, হাসানের কবর যেন ঢাকায় হয়। হঠাৎ রাহাত খানকে দেখতে পাই। আমি সুরাইয়া আপাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাই। বলি, ‘রাহাত ভাই কিছু একটা করতে পারবেন হয়তো।’
নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে সরে এসেছিলাম সেদিন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া আর কোনোদিন হয়নি। পেরে উঠিনি। সুরাইয়া আপা একটিমাত্র অনুরোধ করেছিলেন, যা রক্ষা করার ক্ষমতা আমার ছিলো না।"
(মোহাম্মদ যুবায়ের)


ছবি দুটি সুরাইয়ার।

ভালোবাসার কবিতা লিখবো না
- আবুল হাসান
‘তোমাকে ভালোবাসি তাই ভালোবাসার কবিতা লিখিনি।
আমার ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো কবিতা সফল হয়নি,
আমার এক ফোঁটা হাহাকার থেকে এক লক্ষ কোটি
ভালোবাসার কবিতার জন্ম হয়েছে।
আমার একাকীত্বের এক শতাংশ হাতে নিয়ে
তুমি আমার ভালোবাসার মুকুট পরেছো মাথায়!
আমাকে শোষণের নামে তৈরি করেছো আত্মরক্ষার মৃন্ময়ী যৌবন।
বলো বলো হে ম্লান মেয়ে,এতো স্পর্ধা কেন তোমার?
ভালোবাসার ঔরসে আমার জন্ম! অহংকার আমার জননী!
তুমি আমার কাছে নতজানু হও,তুমি ছাড়া আমি
আর কোনো ভূগোল জানি না,
আর কোনো ইতিহাস কোথাও পড়িনি!
আমার একা থাকার পাশে তোমার একাকার হাহাকার নিয়ে দাঁড়াও!
হে মেয়ে ম্লান মেয়ে তুমি তোমার হাহাকার নিয়ে দাঁড়াও!
আমার অপার করুণার মধ্যে তোমারও বিস্তৃতি!
তুমি কোন্ দুঃসাহসে তবে
আমার স্বীকৃতি চাও,হে ম্লান মেয়ে আমার স্বীকৃতি চাও কেন?
তোমার মূর্খতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে,পৃথিবীটা পুড়ে যাবে
হেলেনের গ্রীস হবে পুনর্বার আমার কবিতা!
এই ভয়ে প্রতিশোধস্পৃহায়
আজো আমি ভালোবাসার কবিতা লিখিনি
কোনোদিন ভালোবাসার কবিতা লিখিনি।
হে মেয়ে হে ম্লান মেয়ে তোমাকে ভালোবাসি তাই
ভালোবাসার কবিতা আমি কোনোদিন কখনো লিখবো না!’

নির্মলেন্দু গুণকে লিখা আবুল হাসানের শেষপত্র

আবুল হাসান
মহাদেবের বাসা
প্রিয় গুণ,
আজ রাত্রে মহাদেবের সাথে আল মাহমুদের এক তুমুল বাক বিতন্ডার পর, মহাদেবের বাসায় এসে দেখি তোমার একটি অভিমানী চিঠি, মহাদেবের কাছে যা তুমি লিখেছ। চিঠিটা বারবার পড়লুম- অনেকদিন পর তোমার সান্নিধ্য চিঠির মাধ্যমে পেয়ে একদিকে যেমন ভালো লাগলো, অন্যদিকে তেমন আহত হলুম, এই ভেবে যে তুমি আমার ঠিকানা জানা সত্বেও একটা চিঠি আমাকে লেখোনি। জানি না কী কারণ; তবে চিঠি না পেলেও তোমার সম্পর্কে অনবরত এর ওর কাছ থেকে খবর নিতে চেষ্টা করেছি- মাঝে মাঝে তোমার অনুপস্থিতির নৈঃসঙ্গের তাড়নায়ই হয়তোবা। এছাড়া এর পেছনে আর কোনো মানবিক কারণ নেই। এক সময় ছিল, যখোন তুমি আমাকে হলুদ পোষ্ট কার্ডে চিঠি লিখতে-তখন তুমি বাইরে থাকলেও মনে হতো তোমার উপস্থিতি উজ্জ্বলভাবে বর্তমান।
আমি মানুষ হিসেবে কতটুকু সৎ এবং শুভ বুদ্ধির সেটা বিচার সাপেক্ষ, তবে বন্ধু হিসেবে এক সময় তো আমরা পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিলাম। আমাদের জীবন যাপনের সূত্রগুলি একে একে পরে ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে চতুর্দিকে বিক্ষিপ্ত হলেও সেই প্রবল প্রোচ্ছন্ন দিনগুলির কি কোনো কিছুই আর আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই, যা তোমার স্মৃতিকে একবারও নাড়া দিতে পারে? বা পারতো? এবং সেই স্মৃতির সুবাদে একটা চিঠি কি আমিও পেতে পারতুম না? মানি, আমার নিজের কিছু কিছু এককেন্দ্রিক দোষ-ত্রুটি এবং মানবিক দুর্বলতা শেষকালে আমাদের দু’জনকে দুদিকে সরিয়ে দিয়েছিলো- প্রথম দিকে আমি যা ভালোবাসতুম না সেইগুলি তোমার ভালোবাসার জিনিস ছিলো- পরে যখোন, তুমি সে সব পরিত্যাগ করলে এবং সেই সময়ে যখোন আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়ার সময়, কেন জানি না এক অনির্দিষ্ট অদৃষ্টের তাড়নায় আমরা দু’জন পরস্পরের কাছ থেকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম। বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ত আমার দুরারোগ্য ব্যাধির তাড়না।

বার্লিন থেকে আসার পর আমি অন্য মানুষ। ফলে পুরনো যোগসূত্র সংস্থাপনের চেষ্টা করেছি যতবার-ততবার দেখেছি আমার শরীর আমার বৈরী। তুমি যা ভালোবাসো সেই সব আমার শরীর ভালোবাসে না, তবে অসুস্থ্যতার কারণেই। কিন্তু সত্তায় আমাদের যে গভীর সম্পর্কের সূত্র, কবির সঙ্গে কবির, সেই সম্পর্ককে তো আমি কোনদিন ম্লান করিনি। ১৫ই আগষ্টের পরে; তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে-ি কন্তু পরে একটি হঠাৎ জানলুম তুমি আর ঢাকায় নেই। তোমার ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারটায় দুঃখ পেয়েছিলাম, নৈঃসঙ্গও কম বাজেনি। কিন্তু পরে আবার ভেবেছি যেভাবে তুমি মাঝে মাঝে বাড়ী যাও সেইভাবেই হয়তো গিয়েছ পরে আবার কিছুদিনের মধ্যে ফিরে আসবে। কিন্তু পরে জানতে পারলুম, তুমি গিয়েছ অনেক দিনের জন্য। বাড়ী গিয়ে তুমি বিভিন্ন জনের কাছে চিঠি দিয়েছ, সেইসব চিঠিতেই এসব জানতে পেরেছি। আমিও অপেক্ষায় ছিলুম। একটা চিঠি পাবো, কিন্তু সব সময় অপেক্ষা যে ফলপ্রসু হবে, এটার কোনো কথা নেই।

মহাদেবের কাছে তোমার চিঠি বারবার পড়েছি বারবার পড়ার মতোই। কবির চিঠির মধ্যে যে দুঃখবোধ এবং নৈঃসঙ্গবোধ এবং থাকে, তার সব রকম চীৎকার হঠাৎ আমাকেও একা সম্পূর্ণ একা করে দিয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। এই একাকীত্বের দরকার ছিল আমারও। আমি অনেকদিন এরকম সুন্দরভাবে একা হতে পারিনি। বার্লিন থেকে আসার পর আমি এই একাকীত্বই বিভিন্ন জনের সান্নিধ্যে খুঁজতে চেষ্টা করেছি। যার জন্য আমি এক রমণীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম, এখন সেই শ্রীমতিও আমাকে আর একাকীত্ব দিতে পারেন না। হতে পারে এই একাকীত্ব কেবল তুমিই একবার আমাকে অনেকদিন ধরে দিয়েছিলেন। তুমি কি ভুলেই গেলে সেইসব দিনের কথা যখন শীতের কুয়াশার মধ্যরাত্রির বাতাসকে আমরা সাক্ষী রেখে ঢাকা শহরের অলিগলি বেড়িয়েছি। আমরা তখোন কী সুখী ছিলাম না। সেই সুখের কারণেই কি তুমি আবার ফিরে আসতে পারো না? যতোই ভালোবাসার পিছনে ধাবমান আমাদের ছায়া এর ওর সঙ্গে ঘুরুক তুমিও জানো আর আমিও জানি, এক সময় আমরাই আমাদের প্রেমিক ছিলাম। আর একমাত্র পুরুষ এবং আর একজন পুরুষই ভালোবাসার স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারে- কারণ রমণীরা অতি নশ্বর-কিন্তু সেই নশ্বরতার বেদনাবোধ কেবল কবি পুরুষেরাই একমাত্র গ্রহণ করিতে পারে। সেই নশ্বরতার অঙ্গীকারে আমরা আমাদের বে’ধেছিলুম একদিন। এখনও সেই বোধ, সেই ভালোবাসা আমার জীবনের একমাত্র স্মৃতি জানি না তোমার ক্ষেত্রে তার স্পর্শ আর কতদূর মূল্যবান। ভালোবাসা নিও। ভালো থেকো। এবং ফিরে এসো।
ইতি
চির শুভাকাঙ্খী
হাসান

আমার কথাঃ
বলা দরকার এই চিঠিতেই প্রথম হাসান আমাকে ‘প্রিয় গুণ’ বলে সম্বোধন করলো। তীব্র অভিমান প্রসূত না হলে, হাসান সর্বদা আমাকে নির্মল বলেই সম্বোধন করতো। গ্রামে ফিরে গিয়ে আমি হাসানের কাছে কেন কোনো পত্র লিখিনি, পাঠকের কাছে তা কৌতুহলের বিষয় হতে পারে ভেবেই বলি-১৯৭৪ এর স্বীয় চিকিৎসার্থে হাসান যখন বার্লিনে গিয়েছিলেন, আমি অনেক আশা করেও হাসানের একটি চিঠিও তখন পাইনি। হাসানের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে আমারও অভিযোগ ও অভিমান কম ছিল না। পুরো ব্যাপারটাই ছিল শিশু সুলভ মান-অভিমানের।
নির্মলেন্দু গুণ
( সূত্রঃ সম্পাদক, শিশির দত্ত,১৯৭৯। সংগ্রহঃ কমলেশ দাশগুপ্তের লিটল ম্যাগাজিন গবেষণা কেন্দ্র, চট্টগ্রাম)


(কবি নুরুল হুদার সাথে হাসান)

শুভ জন্মদিন, প্রিয় কবি- যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন।

মন্তব্য ৬১ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (৬১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অসাধারন পোস্ট বৃতি মন ভালো হয়ে গেল ব্লগে ঢুকেই ।
প্রিয় কবি কে নিয়ে একসাথে এত কিছু এই প্রথম ।
হাসান কে আমার সব সময় আমার সমসাময়িক মনে হয় ১৮ বছর বয়সে যেভাবে আমাকে মুগ্ধ করছে এখন ও ঠিক সেভাবেই
প্রিয় কবির পোস্ট প্রিয় তে রাখলাম , অনেক অনেক ধন্যবাদ :)

জন্মদিনের শুভেচ্ছা প্রিয় কবি ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

বৃতি বলেছেন: অনেকদিন আগে একবার ভেবেছিলাম প্রিয় কবি আবুল হাসানকে নিয়ে দু'লাইন হলেও কিছু লিখবো। মাত্র ২৮ বছর বয়সের ভেতর কি চমৎকার কবিতা সব তাঁর!

ধন্যবাদ, মনিরা আপু :)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮

বৃতি বলেছেন: মনিরা আপু, তোমার জন্য :)

স্বীকৃতি চাই
আবুল হাসান


আমি আমার ভালোবাসার স্বীকৃতি চাই
স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে,
মৃত্যুমাখা মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছি একলা মানুষ,
বেঁচে থাকার স্বীকৃতি চাই,
স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে।
ঐ যে কাদের শ্যামলা মেয়ে মৌন হাতের মর্মব্যথায়
দাঁড়িয়ে আছে দোড়ের গোড়ায়
অই মেয়েটির স্বীকৃতি চাই,
স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে।
সস্তা স্মৃতির বিষণ্নতার
নাভিমূলের অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি চাই
স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে।
আমি আমার আলো হবার স্বীকৃতি চাই
স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে।
অন্ধকারের স্বীকৃতি চাই
স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

যোগী বলেছেন:
পড়তে আসলাম কবি আবুল হাসানের কথা, কী জানি ইন্টারেস্টেড হয়ে পড়লাম সুরাইয়া খানমের প্রতি। জানলাম উনিও মারা গেছেন। অসম্ভব রুপসী এবং গুনী মানুষ ছিলেন তিনিও।
কবি আবুল হাসানের 'ভালোবাসার কবিতা লিখবো না' ভাল লেগেছে। তাকে আগে চিনতাম না। কবিতার সাথে নিজেকে যুক্ত করলে সব সময় কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাই। ব্যাপারটার মধ্যে কিছুটা একাকিত্বের ভয়ও পাই :(

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮

বৃতি বলেছেন: সুরাইয়া খানম বেশ ক'বছর আগে মারা গেছেন- শেষ বয়সে অ্যারিজোনায় থাকতেন খুব সম্ভবতঃ। যতটুকু জানি, ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি।

কবি আবুল হাসানের কবিতা পড়ুন- ভাল লাগবে :)

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮

দূরের পথযাত্রী বলেছেন: আমি বহুদিন একা একা প্রশ্ন করে দেখেছি
নিজেকে,
যারা খুব হৃদয়ের কাছাকাছি থাকে, যারা
এঘরে ওঘরে যায়
সময়ের সাহসী সন্তান যারা সভ্যতার সুন্দর
প্রহরী
তারা কেউ কেউ বলেছে আমাকে-
এটা তোর জন্মদাতা জনকের রুগ্ন রুপান্তর,
একটি নামের মধ্যেই নিজেরই বিস্তার ধরে
রাখা,
তুই যার অনিচ্ছুক দাস!
- আবুল হাসান

কবি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে চলেছেন আমাকে।জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনেক অনেক সুন্দর পোস্ট।ধন্যবাদ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

বৃতি বলেছেন: প্রিয় কবি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে চলেছেন, আমাকেও :)
আপনাকেও ধন্যবাদ, দূরের পথযাত্রী, চমৎকার কবিতাটির জন্য।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:



অসাধারণ পোষ্ট।

আমার প্রিয় কবিতা

আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
…রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে কি লাগে, কষ্ট লাগে
তুমি আমার জামার বোতাম অমন কেনো যত্ন করে
লাগিয়ে দিতে?
অমন কেন শরীর থেকে অস্তে আমার
ক্লান্তিগুলি উঠিয়ে নিতে?
তোমার বুকের নিশীথ কুসুম আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতোন তুমি উড়িয়ে দিতে?
বেলজিয়ামের আয়নাখানি কেন তুমি ঘরে না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে
রেখে দিতে?
আমার এখন চাঁদ দেখলে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম, মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে
কথাবার্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা. . .
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর, আমি অনেক কষ্টে আছি.. কষ্টে আছি বুজলে যুথী
আমার দাঁতে, আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষন
চতুর দিকে দাবি আদায় করার মত মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ বুজলে যুথী
হাসি খুশী উড়নচন্ডি মানুষ এখন তাইতো এখন খারাপ লাগে, খারাপ লাগে
আরে তাছাড়া, আমি কি আরে যিশু নাকি- হাবিজাবী ওদের মতন সবসহিষ্ণু
আমি অনেক কষ্টে আছি
কষ্টে আছি, কষ্টে আছি
আমি অনেক কষ্টে আছি
কষ্টে আছি, কষ্টে আছি |

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪

বৃতি বলেছেন: নিঃসঙ্গতা
____আবুল হাসান

অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!


কি সুন্দর কবিতা সব! :)

৫| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: কবির জন্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬

বৃতি বলেছেন: কবির জন্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য।

ধন্যবাদ, হাসান ভাই :)

৬| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

সুমন কর বলেছেন: উনার সম্পর্কে তেমন জানা ছিল না। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
কবিতাগুলো সুন্দর।
অনেক ধন্যবাদ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৪

বৃতি বলেছেন: বদলে যাও, কিছুটা বদলাও
-আবুল হাসান

কিছুটা বদলাতে হবে বাঁশি
কিছুটা বদলাতে হবে সুর
সাতটি ছিদ্রের সূর্য; সময়ের গাঢ় অন্তঃপুর
কিছুটা বদলাতে হবে

মাটির কনুই, ভাঁজ
রক্তমাখা দুঃখের সমাজ কিছুটা বদলাতে হবে…

বদলে দাও, তুমি বদলাও
নইলে এক্ষুনি
ঢুকে পড়বে পাঁচজন বদমাশ খুনি,
যখন যেখানে পাবে
মেরে রেখে যাবে,
তোমার সংসার, বাঁশি, আঘাটার নাও।
বদলে যাও, বদলে যাও, কিছুটা বদলাও!

আপনাকেও ধন্যবাদ, ভাইয়া :)

৭| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮

ব্লগার আয়নাল ভাই ইতি বলেছেন: আমাদের প্রিয় কবি শুদ্ধেয় আবুল হাসান তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল তার একটি কবিতা শেয়ার করলাম
আকাঙ্খা – আবুল হাসান
তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাব
আমার মনের মত করে ।
তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে
তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।
তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়ে
নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।
তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে
বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৩১

বৃতি বলেছেন: অপরূপ বাগান
-আবুল হাসান

চলে গেলে- তবু কিছু থাকবে আমার : আমি রেখে যাবো
আমার একলা ছায়া, হারানো চিবুক, চোখ, আমার নিয়তি।
জল নেমে গেলে ডাঙ্গা ধরে রাখে খড়কুটো, শালুকের ফুল :
নদীর প্রবাহ পলি, হয়তো জন্মের বীজ, অলঙ্কার- অনড় শামুক!
তুমি নেমে গেলে এই বক্ষতলে সমস্ত কি সত্যিই ফুরোবে?
মুখের ভিতরে এই মলিন দাঁতের পঙ্ক্তি- তা হলে এ চোখ
মাথার খুলির নীচে নরম নির্জন এক অবিনাশী ফুল :
আমার আঙ্গুলগুলি, আমার আকাঙ্ক্ষাগুলি, অভিলাষগুলি?
জানি কিছু চিরকাল ভাস্বর উজ্জ্বল থাকে, চির অমলিন!
তুমি চলে গেলে তবু থাকবে আমার তুমি, চিরায়ত তুমি!
অনুপস্থিতি হবে আমার একলা ঘর, আমার বসতি!
ফিরে যাবো সংগোপনে, জানবে না, চিনবে না কেউ;
উঠানে জন্মাবো কিছু হাহাকার, অনিদ্রার গান-
আর লোকে দেখে ভাববে- বিরহবাগান ঐ উঠানে তো বেশ মানিয়েছে!


ধন্যবাদ, ব্লগার আয়নাল ভাই ইতি ।

৮| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
প্রেম ও দ্রোহের কবি আবুল হাসানকে তার জন্মদিনে
স্মরণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪৯

বৃতি বলেছেন: তাঁর আরেকটি কবিতা পড়ুন, নূর মোহাম্মদ নূরু :)



তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না
--আবুল হাসান

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ, শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝরনার প্রথম জলে স্নান করবো
কালিমা রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাবো
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা–
আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো
আমি আঁধার রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভির দুধের সাদা
হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না – তোমার চিবুকে
তারা নিশ্চয়ই আছেন!

তোমার চিবুকে সেই গাভির দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরোনো রাখাল!
আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!

৯| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯

আবু শাকিল বলেছেন: কবি সম্পর্কে জানলাম।ধন্যবাদ আপু।

কবিতা গুলো সুন্দর ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২৫

বৃতি বলেছেন: স্রোতে রাজহাঁস আসছে
--আবুল হাসান

পুনর্বার স্রোতে ভাসছে হাঁস, ভাসতে দাও
কোমল জলের ঘ্রাণ মাখুক হাঁসেরা;
বহুদিন পর ওরা জলে নামছে, বহুদিন পর ওরা কাটছে সাঁতার
স্রোতে রাজহাঁস আসছে, আসতে দাও,
বহুদিন পর যেন রোদ আসছে, আসতে দাও
নত হতে দাও আকাশকে,
আর একটু নত হোক আলো
আর একটু নির্জন হোক অন্ধকার!
আর তুমি পরে নাও তোমার গহনা, দুল
তোমার আঙ্গুল হোক হেমন্তের ফুল,
আমি শুঁকি, শুঁকতে দাও!
বহুদিন পর যেন শুঁকছি বকুল!
বহুদিন তোমার ভিতরে যাই না, বহুদিন বকুল ফুলের ঘ্রাণ
পাই না এ মনে!
মনে করতে দাও তবু কোনখানে বকুলবাগান ছিল
গেরস্থের হাজার দুয়ারি ঘরবাড়ি
উঁচু আসন, সিংহাসন
মনে করো, মনে করে নাও
আমাদেরও সিংহাসন আছে আজও
আমাদের হাজার দুয়ারি বাড়ি আছে
মাটির ময়ূর, ঠোঁটে ঠোঁট, ফুলে ফুল
লুকোনো ডাকবাকস আছে সবুজের কাছে
মনে করো আমাদেরও ভালোবাসা আছে
খাগের কলমে লেখা তাদের অক্ষরগুলি
ধানের শিষের মতো টলমলায় সেখানে শরীরে
তুমি মনে করো, মনে করে নাও
তোমার শরীরে শাড়ি,
গেরস্থের হাজার দুয়ারি ঘরবাড়ি
আলো আর অন্ধকার মনে করো, মনে করে নাও
আমরা নৌকার জলে ভাসতে ভাসতে যেন প্রতীকের হাঁস
ঐ রাজহাঁস
জল থেকে আরো জলে,
ঢেউ থেকে আরো ঢেউয়ে ছড়াতে ছড়াতে
পৌঁছে যাবো আগে।

ধন্যবাদ, আবু শাকিল :)

১০| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:২২

এহসান সাবির বলেছেন: ওয়াও!!!

সেরা পোস্ট।

চমৎকার।

এক গুচ্ছ ভালো লাগা।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫৪

বৃতি বলেছেন: অপরিচিত- কবি আবুল হাসান

যেখানেই যাই আমি, সেখানেই রাত!
স্টেডিয়ামের খোলা আকাশের নীচে রেস্তোরাঁয়
অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর
ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর
সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত
আমার কেবলই রাত হয়ে যায়!

শুভেচ্ছা, এহসান সাবির :)

১১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৯

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: শুভ জন্মদিন, প্রিয় কবি- যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন।

উনার লেখা একটা কবিতা আমার খুব প্রিয়। সেটা খুঁজছিলাম পোস্টে, কমেন্টে। না পেয়ে নিজেই শেয়ার দিচ্ছি। আসলেই "উচ্চারণগুলো শোকের"

লক্ষ্মী বউটিকে
আমি আর কোথাও দেখি না
হাঁটি হাঁটি শিশুটাকে
কোথাও দেখি না
কতকগুলি রাজহাঁস দেখি
নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি
কতকগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখি না
তবে কি বউটি কি রাজহাঁস?
তবে শিশুটি আজ
সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ
কেবল উৎসব দেখি
স্বাধীনতা দেখি
তবে কি আমার ভাই আজ
স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন তিমিরের বেদিতে উৎসব .......


পোস্ট প্রিয়তে। প্রিয় কবিকে নিয়ে তাঁর জন্মদিনে এত চমৎকার একটা পোস্ট দেবার জন্য কৃতজ্ঞ রইলাম আপনার কাছে।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:১৫

বৃতি বলেছেন: চমৎকার কবিতাটি শেয়ারের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ, মহামহোপাধ্যায় :)
আমার একটি প্রিয় কবিতা এখানে-

প্রত্যাবর্তনের সময়

আমি আবার ফিরে এলাম, আমাকে নাও
ভাঁড়ার ঘরের নুন মরিচ আবার মশলাপাতা গেরুয়া ছাই
আমায় তুমি গ্রহণ করো।
আমি আবার ফিরে এলাম,
স্নিগ্ধ কাক, আলাপচারী তালচড়াই
আমাকে আজ গ্রহণ করো।
বহুদিনের নির্বাসনের কাতরতার চিহ্ন আমার সর্ব অঙ্গে
বহুদিনে দৃশ্য দেখার উৎসাহ তাই
এক জোড়া চোখ নিয়ে এলাম নিজের সঙ্গে
আমি আবার ফিরে এলাম আমাকে নাও,
আমাকে নাও, ডুবতে ডুবতে বেঁচে গিয়েছি
নক্‌শী কাঁথা, নদীর বালিশ অনেক রকম গ্রাম্য শালিস
মনে কি পড়ে , মনে কি পড়ে?
পারদমাখা শয্যা আমায় শান্তি দেয়নি, নারী আমায় নিদ্রা দেয়নি
গ্রন্থ এখন কেবলি শুধু ছাপার হরফ, সভ্যতা যে অধঃপতন,
অমল কোনো পাইনি মানুষ যাকে ধারণ কোরলে আমি আলো পেতাম !
শুধু শুধুওই দুপুর গেছে মানুষ গেছে ব্যর্থ মানুষ,
শিল্প এখন সুবিধাবাদ!
তাইতো আমি ফিরে এলাম, আমাকে নাও
আমাকে আজ গ্রহণ করো,
মাছের আঁশটে, হলুদ রৌদ্রে ভাঁড়ার ঘরের নুন মরিচ আর
মশলা পাতা গেরুয়া ছাই, শালিধানের গন্ধ তুমি,
ভেজা মাটির বৃষ্টি তুমি গ্রহণ করো আমাকে নাও, আমাকে নাও !

১২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৫৬

জেন রসি বলেছেন: দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও আমি অনাবাদী রাখবো না আর আমার ভেতর
সেখানে বুনবো আমি তিন সারি শুভ্র হাসি, ধৃতপঞ্চইন্দ্রিয়ের
সাক্ষাৎ আনন্দময়ী একগুচ্ছ নারী তারা কুয়াশার মতো ফের একপলক
তাকাবে এবং বোলবে,‘তুমি না হোমার? অন্ধ কবি ছিলে? তবে কেন হলে
চক্ষুষ্মান এমন কৃষক আজ? বলি কী সংবাদ হে মর্মাহত রাজা?
এখানে আঁধার পাওয়া যায়? এখানে কি শিশু নারী কোলাহল আছে?
রূপশালী ধানের ধারণা আছে? এখানে কি মানুষেরা সমিতিতে মালা
পেয়ে খুশী?
গ্রীসের নারীরা খুব সুন্দরের সর্বনাশ ছিলো। তারা কত যে উল্লুক!
ঊরুভুরুশরীর দেখিয়ে এক অস্থির কুমারী কত সুপুরুষ যোদ্ধাকে
তো খেলো!
আমার বুকের কাছে তাদেরও দুঃখ আছে, পূর্বজন্ম পরাজয় আছে
কিন্তু কবি তোমার কিসের দুঃখ? কিসের এ হিরন্ময় কৃষকতা আছে?
মাটির ভিতরে তুমি সুগোপন একটি স্বদেশ রেখে কেন কাঁদো
বৃক্ষ রেখে কেন কাঁদো? বীজ রেখে কেন কাঁদো? কেন তুমি কাঁদো?
নাকি এক অদেখা শিকড় যার শিকড়ত্ব নেই তাকে দেখে তুমি ভীত আজ?
ভীত আজ তোমার মানুষ বৃক্ষশিশু প্রেম নারী আর নগরের নাগরিক ভূমা?
বুঝি তাই দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও তুমি অনাবাদী রাখবে না আর
এম্ফিথিয়েটার থেকে ফিরে এসে উষ্ণ চাষে হারাবে নিজেকে, বলবে
ও জল, ও বৃক্ষ, ও রক্তপাত, রাজনীতি ও নিভৃতি, হরিৎ নিভৃতি
পুনর্বার আমাকে হোমার করো, সুনীতিমূলক এক থরোথরো দুঃখের
জমিন আমি চাষ করি এদেশের অকর্ষিত অমা!

কবির লেখা আমার প্রিয় কবিতা।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

বৃতি বলেছেন: মাতৃভাষা
- আবুল হাসান

আমি জানিনা দুঃখের কী মাতৃভাষা
ভালোবাসার কী মাতৃভাষা
বেদনার কী মাতৃভাষা
যুদ্ধের কী মাতৃভাষা।
আমি জানিনা নদীর কী মাতৃভাষা
নগ্নতার কী মাতৃভাষা
একটা নিবিড় বৃক্ষ কোন ভাষায় কথা বলে এখনো জানিনা।
শুধু আমি কোথাও ঘরের দরোজায় দাঁড়ালেই আজো
সভ্যতার শেষ মানুষের পদশব্দ শুনি আর
কোথাও করুণ জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে,
আর সেই জলপতনের শব্দে সিক্ত হতে থাকে
সর্বাঙ্গে সবুজ হতে থাকে আমার শরীর।
সর্বাঙ্গে সবুজ আমি কোথাও ঘরের দরোজায় দাঁড়ালেই আজো
পোষা পাখিদের কিচিরমিচির শুনি
শিশুদের কলরব শুনি
সুবর্ণ কঙ্কন পরা কামনার হাস্যধ্বনি শুনি !
ঐযে নষ্ট গলি, নিশ্চুপ দরোজা
ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা, গণিকারা-
মধ্যরাতে উলঙ্গ শয্যায় ওরা কীসের ভাষায় কথা বলে ?
ঐযে কমলা রং কিশোরীরা যাচ্ছে ইশকুলে
আজো ঐ কিশোরীর প্রথম কম্পনে দুটি হাত রাখলে
রক্তে স্রোত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে, শব্দ হয়, শুনি
কিন্তু আমি রক্তের কী মাতৃভাষা এখনও জানিনা !
বেদনার কী মাতৃভাষা এখনো জানিনা !
শুধু আমি জানি আমি একটি মানুষ,
আর পৃথিবীতে এখনও আমার মাতৃভাষা, ক্ষুধা !

কি চমৎকার তাঁর কবিতাগুলো! আপনার প্রিয় কবিতাটি শেয়ারের জন্য থ্যাংকস, জেন রসি। শুভেচ্ছা থাকলো।

১৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪০

এম এম করিম বলেছেন: শুভ জন্মদিন কবি।
চমৎকার পোস্ট।
+++

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

বৃতি বলেছেন: ধন্যবাদ, এম এম করিম :) শুভেচ্ছা জানবেন।

১৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১৯

জুপিটার মুহাইমিন বলেছেন: অতটুকু চায়নি বালিকা..।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬

বৃতি বলেছেন: বালিকা চেয়েছিল আরও কিছু কম :)

১৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২৫

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২৩

বৃতি বলেছেন: বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসা
– আবুল হাসান

মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল?
একবার ডাউন ট্রেনের মতো বৃষ্টি এসে থেমেছিল
আমাদের ইস্টিশনে সারাদিন জল ডাকাতের মতো
উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা;
ছোট-খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায়-পাড়ায়
জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান।
তবু কেউ আমাদের কাদা ভেঙে যাইনি মিটিং-এ
থিয়েটার পণ্ড হলো, এ বৃষ্টিতে সভা আর তাসের আড্ডার লোক ফিরে এলো ঘরে;
ব্যবসার হলো ক্ষতি দারুণ দুর্দশা,
সারাদিন অমুক নিপাত যাক, অমুক জিন্দাবাদ
অমুকের ধ্বংস চাই বলে আর হাবিজাবি হলোনা পাড়াটা।
ভদ্রশান্ত কেবল কয়েকটি গাছ বেফাঁস নারীর মতো
চুল ঝাড়ানো আঙ্গিনায় হঠাৎ বাতাসে
আর পাশের বাড়ীতে কোনো হারমোনিয়ামে শুধু উঠতি এক আগ্রহী গায়িকা
স্বরচিত মেঘমালা গাইলো তিনবার!
আর ক’টি চা’খোর মানুষ এলো
রেনকোট গায়ে চেপে চায়ের দোকানে;
তাদের স্বভাবসিদ্ধ গলা থেকে শোনা গেল :
কী করি বলুন দেখি, দাঁত পড়ে যাচ্ছে তবু মাইনেটা বাড়ছেনা,
ডাক্তারের কাছে যাই তবু শুধু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই
হৃদরোগ, চোখের অসুখ !
একজন বেরসিক রোগী গলা কাশলো :
ওহে ছোকরা, নুন চায়ে এক টুকরো বেশী লেবু দিও।
তাদের বিভিন্ন সব জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ সমস্যায় তবু
সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের
কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল,
সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে
আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন।
আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল !

ধন্যবাদ, কাজী ফাতেমা :) শুভেচ্ছা জানবেন।

১৬| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৯

লেখোয়াড়. বলেছেন:
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র,
মায়াবী করুণ"

...................... ওহ!! যদি এরকম লিখতে পারতাম!!

অনেক সুন্দর একটি পোস্ট। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৪০

বৃতি বলেছেন: গোলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশোর
- আবুল হাসান

গোলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশোর আমিও ভবঘুরেদের প্রধান
ছিলাম ।
জোৎস্নায় ফেরা জাগুয়ারা চাঁদ দাঁতে ফালা ফালা করেছে আমারও
প্রেমিক হৃদয় !
আমিও আমার প্রেমহীনতায় গণিকার কাছে ক্লান্তি
সঁপেছি
বাঘিনীর মুখে চুমু খেয়ে আমি বলেছি আমাকে উদ্ধার দাও !
সক্রেটিসের হেমলক আমি মাথার খুলিতে ঢেলে তবে পান করেছি মৃত্যু
হে কবি কিশোর
আমারও অনেক স্বপ্ন শহীদ হয়েছে জীবনে কাঁটার আঘাত সয়েছি
আমিও ।
হৃদয়ে লুকানো লোহার আয়না ঘুরিয়ে সেখানে নিজেকে দেখেছি
পান্ডুর খুবই নিঃস্ব একাকী !
আমার পয়ের সমান পৃথিবী কোথাও পাইনি অভিমানে আমি
অভিমানে তাই
চক্ষু উপড়ে চড়ুইয়ের মতো মানুষের পাশে ঝরিয়েছি শাদা শুভ্র পালক !
হে কবি কিশোর নিহত ভাবুক, তোমার দুঃখ আমি কি বুঝি না ?
আমি কি জানি না ফুটপাতে কারা করুণ শহর কাঁধে তুলে নেয় ?
তোমার তৃষ্ণা তামার পাত্রে কোন কবিতার ঝিলকি রটায় আমি কি
জানি না
তোমার গলায় কোন গান আজ প্রিয় আরাধ্য কোন করতলও হাতে লুকায়
আমি কি জানি না মাঝরাতে কারা মৃতের শহর কাঁধে তুলে নেয় ?
আমারও ভ্রমণ পিপাসা আমাকে নারীর নাভিতে ঘুরিয়ে মেরেছে
আমিও প্রেমিক ক্রবাদুর গান স্মৃতি সমুদ্রে একা সাম্পান হয়েছি
আবার
সুন্দর জেনে সহোদরকেও সঘন চুমোয় আলুথালু করে খুঁজেছি
শিল্প ।
আমি তবু এর কিছুই তোমাকে দেবো না ভাবুক তুমি সেরে ওঠো
তুমি সেরে ওঠো তোমার পথেই আমাদের পথে কখনও এসো না,
আমাদের পথ
ভীষণ ব্যর্থ আমাদের পথ ।

যদি এরকম একটা কবিতা লিখতে পারতাম!! :)
পাঠের জন্য ধন্যবাদ, লেখোয়াড়।

১৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২৮

মম্ময় অপর্ণা বলেছেন: প্রিয় কবির প্রতি ট্রিবিউট ভালো লেগেছে বৃতি।
অনেক অজানা কথা জানা হলো। ভালো থেকো।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬

বৃতি বলেছেন: এক সময় ইচ্ছে জাগে
আবুল হাসান

একসময় ইচ্ছে জাগে, মেষপালকের বেশে ঘুরিফিরি;
অরণ্যের অন্ধকার আদিম সর্দার সেজে মহুয়ার মাটির বোতল
ভেঙ্গে উপজাতি রমণীর বল্কল বসন খুলে জ্যোৎস্নায় হাঁটু গেড়ে বসি-
আর তারস্বরে বলে উঠি নারী, আমি মহুয়া বনের এই
সুন্দর সন্ধ্যায় পাপী, তোমার নিকটে নত, আজ কোথাও লুকানো কোনো
কোমলতা নেই, তাই তোমার চোখের নীচে তোমার ভ্রুর নীচে তোমার তৃষ্ণার নীচে
এই ভাবে লুকিয়েছি পিপাসায় আকণ্ঠ উন্মাদ আমি
ক্ষোভে ও ঈর্ষায় সেই নগরীর গুপ্তঘাতক আজ পলাতক, খুনী
আমি প্রেমিককে পরাজিত করে হীন দস্যুর মতোন
খুনীকে খুনীর পাশে রেখে এখানে এসেছি, তুমি
আমাকে বলো না আর ফিরে যেতে, যেখানে কেবলি পাপ, পরাজয়
পণ্যের চাহিদা, লোভ, তিরীক্ষু-মানুষ- যারা কোজাগরী ছুরি
বৃষ্টির হল্লায় ধুয়ে প্রতি শনিবারে যায় মদ্যশালায়, যারা
তমসায় একফোঁটা আলোও এখন আর উত্তোলন করতে জানে না।
আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ে কেবলি যাদের রক্ত, রাত্রিবেলা আমি আজ
তোমার তৃষ্ণার নীচে নিভৃতের জ্যোৎস্নায় হাঁটু গেড়ে বসেছি আদিম আজ
এখন আমার কোন পাপ নেই, পরাজয় নেই।
একসময় ইচ্ছে জাগে, এভাবেই অরণ্যে অরণ্যে ঘুরে যদি দিন যেতো।


তোমার জন্যও শুভেচ্ছা :)

১৮| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১

মহান অতন্দ্র বলেছেন: উনি মারা গেছেন জানতাম না, অনেক প্রিয় কবি আমার। ভাল লেগেছে আপনার লেখা ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০২

বৃতি বলেছেন: বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ১
- আবুল হাসান


একদিন ঝরা পাতার মতো নামহীন নিঃশব্দে
তোমাদের কাছ থেকে ঝরে যাবো যখোন
পিছনে ফেলে রেখে আমার নিদ্রাহীনতার কয়েক গুচ্ছ ফুল।
সম্ভব হবে না আর তোমাদের সাথে
রেস্তোরাঁর স্বগত সন্ধান।
সন্ধ্যেবেলা ইসলামপুর থেকে একতোড়া ফুল কিনে নিয়ে
গ্রীন রোড়ের নিষ্ফলতায় ফেলে আসা।
তোমরা তখন ভেবো একদিন কথাচ্ছলে
কোনো আমি এক জোড়া চোখের অবিনশ্বর সান্নিধ্যে
কী এক অমোঘ আলোয়
তার ব্লাউজের গন্ধময় চিত্র গেঁথে গেঁথে
আঁকতে চেয়েছি রক্তময় লাল নাশপাতি!

অনেক ভাল থাকুন মহান অতন্দ্র :)

১৯| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:১৮

তুষার কাব্য বলেছেন: প্রিয় কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।তাঁর সৃষ্টি বেঁচে থাকুক যুগ থেকে যুগান্তর ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:২৭

বৃতি বলেছেন: বনভূমিকে বলো
- আবুল হাসান


বনভূমিকে বলো, বনভূমি, অইখানে একটি মানুষ
লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
হেমন্তে হলুদ পাতা যেরকম ঝরে যায়,

ও এখন সে রকম ঝরে যাবে, ওর চুল, ওর চোখ
ওর নখ, অমল আঙুল সব ঝরে যাবে,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি অইখানে একটি মানুষ

লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
ও এখন নদীর জলের স্রোতে ভেসে যেতে চায়
ও এখন মাটি হতে চায়, শুধু মাটি

চকের গুঁড়োর মতো ঘরে ফিরে যেতে চায়,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি ওকে আর শুইয়ে রেখো না !
ওকে ঘরে ফিরে যেতে দাও। যে যাবার

সে চলে যাক, তাকে আর বসিয়ে রেখো না।



তাঁর সৃষ্টি বেঁচে থাকুক যুগ থেকে যুগান্তর। শুভেচ্ছা, তুষার কাব্য :)

২০| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:১৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তিনি আমার ভাললাগার একজন কবি । দারুন সব রোমান্টিক কবিতা সৃষ্টি করেছেন তিনি ।শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রিয় কবি ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

বৃতি বলেছেন: বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ২
--আবুল হাসান


দল বেঁধে সিনেমায় ঢুকে
মনে পড়ে যায় যদি আমাকে সবার কোনোদিন
দীর্ঘায়িত পর্দার অলৌকিক স্পর্শে সেদিন
পরিপূর্ণ শিহরনময় একটি দুঃখের দৃশ্যে
আমাকে খুঁজবে তুমি?
ঘরে ফিরে যাবার বেলায় মনে হবে?
নাকি, সে-রাতের কথা আকস্মাৎ দগ্ধ কোরে দেবে?
যে রাত্রে অর্থহীন পাগলের মতো
কী সে এক দুর্মর আকাঙ্খায়
শহরের শব্দহীন রাস্তায় সারারাত ঘুরে
শৈশবের পুরনো ইতিহাস
ইন্দ্রধনুর মতো পরেছি যখন চোখে মুখে!
এবং সমস্ত নারীর প্রেম-পাপে
ঘুমহীন নিয়নের মতো এই দেহ
টাঙ্গিয়ে দিয়েছি শেষ রাত্রির বিনিদ্র বাতাসে।

এক মূ্র্ছিত ঠোঁটে
পরম দুঃখে গেয়ে গেছিঃ
সহজ উপায় নেই কোনো স্বপ্নহীনতার?


বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ৩
--আবুল হাসান

নরক-শয্যায় বৃথা আমাদের শূণ্য হুতাশন,
আজ মনে হয়ঃ নিরন্তর শোকের হাতের
আঙ্গুল আমরা সব!

কিছু-নেই-দুঃখের ভেতর ধ্বংসময় ক্ষণিক পাগল!
যেখানে প্রশান্তি নেই মানুষের লোকক্ষত গাঁথা,

সেখানে মৃত্যু, শুধু মৃতের ঘুমের অন্ধকার;
গ্রীনরোডের পুষ্পিত শাড়ীর মতো

মনে হয়না পৃথিবীকে তাই আর,
ইসলামপুরের পুষ্পস্তবকের মতো

পৃথিবীর নারীর হৃদয়!

তাই বলি তোমাদের একমাত্র মৃত্যুই সুন্দর
চাঁদের মতোন আত্মা আমার মেলে দিতে পারি
আজ অনন্ত মৃত্যু সম্ভাষণে।


প্রিয় কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শুভেচ্ছা, সেলিম ভাই।

২১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: সশ্রদ্ধ কবিকে ও মুগ্ধতা তার সৃষ্টিকর্মের প্রতি ৷ কৃতজ্ঞতা রইল ৷

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

বৃতি বলেছেন:
ধূলো
-আবুল হাসান

ধূলো কি দগ্ধ কয়লা? ধূলো কি বারুদ?
রাস্তায় বেরুলে শুধু ধূলোর কাহিনি ওড়ে
ধূলোর কাহিনি ওড়ে!
ধূলো যেনো দগ্ধ কয়লা যতদূর যায় কেবলি পোড়ায়
ধূলো যেনো একটি সুড়ঙ্গ পথ
ধূলো যেনো হৃদয়ের গোপন সম্পদ
যতদূরে যাই ঠিক ততদূর সেও যায়
মানুষের সকল শাখায়
সাথী হয়ে জ্বালায় পোড়ায় - ধূলো কি বারুদ?

মুগ্ধতা কবির সৃষ্টিকর্মের প্রতি :) শুভেচ্ছা, জাহাঙ্গীর.আলম ভাই।

২২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২১

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
অসাধারণ পোস্ট।++++++++্


সশ্রদ্ধ কবিকে ও মুগ্ধতা তার সৃষ্টিকর্মের প্রতি ৷ কৃতজ্ঞতা রইল ৷

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:১৩

বৃতি বলেছেন: আমার হবেনা, আমি বুঝে গেছি
-আবুল হাসান


ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেপ সমস্ত কাগজ!
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না!
ক্ষমা করবেন বৃক্ষ, আপনার শাখায় আমি সত্য পাখি বসাতে পারবো না!
বানান ভীষণ ভুল হবে আর প্রুফ সংশোধন করা যেহেতু শিখিনি
ভাষায় গলদঃ আমি কি সাহসে লিখবো তবে সত্য পাখি, সচ্চরিত্র ফুল?

আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাট!
সচ্চরিত্র ফুল আমি যত বাগানের মোড়ে লিখতে যাই, দেখি
আমার কলম খুলে পড়ে যায় বিষ পিঁপড়ে, বিষের পুতুল!


ধন্যবাদ, বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় :)

২৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রিয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশে আপনার প্রয়াসের প্রতি শ্রদ্ধা , প্রিয় বৃতি আপু! কবিতা এবং চিঠির মধ্যে মান অভিমানের বিনিময় সুন্দর লাগল।
কবি নুরুল হুদার মেয়ে এখন আমার ঢাবির ইংরেজি বিভাগে আমার সহপাঠিনী। ভালোই লাগে ইতিহাস সংশ্লিষ্ট মানুষদের সাথে যোগসূত্র খুঁজে পেলে।
ভালো থাকুন নিরন্তর :)

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

বৃতি বলেছেন: আমার শুনতেই ভাল লাগলো যে কবি নুরুল হুদার মেয়ে আপনার সহপাঠিনী :) ইতিহাস সংশ্লিষ্ট মানুষদের সাথে যোগসূত্র খুঁজে পেলে সেটা অবশ্যই বাড়তি আনন্দের।

অনেক শুভেচ্ছা, আবির।

২৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১

এহসান সাবির বলেছেন: ৯০ দশকের একদম শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর একদম শুরুর দিকের ঘটনা, ছফা ভাই (আহমেদ ছফা) তখনও বেঁচে আছেন। আজিজ সুপার মার্কেটে উনি একটা ঘর ভাড়া করেছিলে শুধু আড্ডা দেবার জন্য। সেই আড্ডায় আমার হাজিরা দেবার সৌভাগ্য হতো, জমজমাট আড্ডা, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া- সব জয়াগার কবি সাহিত্যিকরা আসত। বেশি আসত লিটল ম্যাগাজিনের ছেলেরা। তখনই মূলত প্রিয় কবি আবুল হাসান এর সাথে পরিচয়। এখানে পরিচয় বলতে উনি কে ছিলেন, কেমন ছিলেন এবং উনার লেখার সাথে পরিচত হওয়া। উনাকে জানার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রচুর কারণ উনার নাম জানার আগেই উনাকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল, গিয়েছিল কি!! এখনো ছুঁয়ে আছে.............!!

'হাসানের জন্যে এলিজি'- নির্মলেন্দু গুন লেখা কবিতা। কে এই হাসান?
প্রিয় আবুল হাসান নিয়ে জানবার পর শিহরণ জেগেছিল মনে.... নিজের অজান্তে মুখে চলে আসত কিছু প্রিয় শব্দগুচ্ছ.......

পাপে-পুণ্যে এ পৃথিবী, এই প্রাণ তারচে অধিকে ।
আমি আছি, তুমি নেই--,এইভাবে দু'জন দু'দিকে
অপসৃত; -তাই তো নশ্বর নারী কবির বিশ্বাসে,
ভালোবেসে যাকে ছুঁই, সেই যায় দীর্ঘ পরবাসে......


শুভ কামনা রইল।


২১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০০

বৃতি বলেছেন: থ্যাংকস, আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য।
অনেক শুভেচ্ছা, এহসান সাবির :)

২৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: নিঃসঙ্গতা
____আবুল হাসান
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!

প্রিয় কবিকে নিয়ে দারুন পোস্ট

২৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০১

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: নিঃসঙ্গতা
____আবুল হাসান
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!

প্রিয় কবিকে নিয়ে দারুন পোস্ট

২৭| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: নিঃসঙ্গতা
____আবুল হাসান
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!

প্রিয় কবিকে নিয়ে দারুন পোস্ট

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৮

বৃতি বলেছেন: স্রোতে রাজহাঁস আসছে – আবুল হাসান


পুনর্বার স্রোতে ভাসছে হাঁস, ভাসতে দাও
কোমল জলের ঘ্রাণ মাখুক হাঁসেরা;
বহুদিন পর ওরা জলে নামছে, বহুদিন পর ওরা কাটছে সাঁতার
স্রোতে রাজহাঁস আসছে, আসতে দাও,

বহুদিন পর যেনো রোদ আসছে, আসতে দাও
নত হতে দাও আকাশকে,
আর একটু নত হোক আলো
আর একটু নির্জন হোক অন্ধকার !

আর তুমি পরে নাও তোমার গহনা, দুল
তোমার আঙ্গুল হোক হেমন্তের ফুল,
আমি শুঁকি, শুঁকতে দাও !

বহুদিন পর যেনো শুঁকছি বকুল !
বহুদিন তোমার ভিতরে যাইনা, বহুদিন বকুল ফুলের ঘ্রাণ
পাইনা এ মনে !

মনে করতে দাও তবু কোনখানে বকুলবাগান ছিল
গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি
উঁচু আসন, সিংহাসন
মনে করো, মনে কোরে নাও
আমাদেরও সিংহাসন আছে আজও
আমাদের হাজার দুয়ারী বাড়ি আছে

মাটির ময়ূর, ঠোঁটে ঠোঁট, ফুলে ফুল
লুকোনো ডাকবাকস আছে সবুজের কাছে
মনে করো আমাদেরও ভালোবাসা আছে
খাগের কলমে লেখা তাদের অক্ষরগুলি
ধানের শীষের মতো টলমলায় সেখানে শরীরে

তুমি মনে করো, মনে করে নাও
তোমার শরীরে শাড়ি,
গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি
আলো আর অন্ধকার মনে করো, মনে করে নাও
আমরা নৌকার জলে ভাসতে ভাসতে যেনো প্রতীকের হাঁস
ঐ রাজহাঁস
জল থেকে আরো জলে,
ঢেউ থেকে আরো ঢেউয়ে ছড়াতে ছড়াতে
পৌঁছে যাবো আগে।

প্রিয় কবির আরও একটি কবিতা আপনার সাথে পড়া হলো :)

২৮| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: নখের ভেতর নষ্ট ময়লা
চোখের ভেতর প্রেম


-----

-----
এখন তুমি কোথায় যাবে
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে
রক্তে কি প্রব্লেম?

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৩

বৃতি বলেছেন: একলা বাতাস
- আবুল হাসান


নোখের ভিতর নষ্ট ময়লা,
চোখের ভিতর প্রেম,
চুলের কাছে ফেরার বাতাস
দেখেই শুধালেম,

এখন তুমি কোথায় যাবে?
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?
কোন আগুনের স্পর্শ নেবে
রক্তে কি প্রব্লেম?

হঠাৎ তাহার ছায়ায় আমি যেদিকে তাকালেম
তাহার শরীর মাড়িয়ে দিয়ে
দিগন্তে দুইচক্ষু নিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে আমি আমাকে শুধালেম

এখন তুমি কোথায় যাবে?
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?
কোন আগুনের স্পর্শ নেবে
রক্তে কি প্রব্লেম?


পুরো কবিতাটা এখানে দিলাম- মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ :)

২৯| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: কবি আবুল হাসানের লেখা আমার একটি প্রিয় কবিতাঃ

বনভূমিকে বলো
– আবুল হাসান
বনভূমিকে বলো, বনভূমি, অইখানে একটি মানুষ
লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
হেমন্তে হলুদ পাতা যেরকম ঝরে যায়,
ও এখন সে রকম ঝরে যাবে, ওর চুল, ওর চোখ
ওর নখ, অমল আঙুল সব ঝরে যাবে,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি অইখানে একটি মানুষ
লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
ও এখন নদীর জলের স্রোতে ভেসে যেতে চায়
ও এখন মাটি হতে চায়, শুধু মাটি
চকের গুঁড়োর মতো ঘরে ফিরে যেতে চায়,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি ওকে আর শুইয়ে রেখো না !
ওকে ঘরে ফিরে যেতে দাও। যে যাবার
সে চলে যাক, তাকে আর বসিয়ে রেখো না।বনভূমিকে বলো
– আবুল হাসান
বনভূমিকে বলো, বনভূমি, অইখানে একটি মানুষ
লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
হেমন্তে হলুদ পাতা যেরকম ঝরে যায়,
ও এখন সে রকম ঝরে যাবে, ওর চুল, ওর চোখ
ওর নখ, অমল আঙুল সব ঝরে যাবে,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি অইখানে একটি মানুষ
লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
ও এখন নদীর জলের স্রোতে ভেসে যেতে চায়
ও এখন মাটি হতে চায়, শুধু মাটি
চকের গুঁড়োর মতো ঘরে ফিরে যেতে চায়,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি ওকে আর শুইয়ে রেখো না !
ওকে ঘরে ফিরে যেতে দাও। যে যাবার
সে চলে যাক, তাকে আর বসিয়ে রেখো না।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩০

বৃতি বলেছেন: চমৎকার একটি কবিতা- আমারও খুব প্রিয় :)

৩০| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: দুঃখিত, দু'টি কারণেঃ
১। 'বনভূমিকে বলো' কবিতাটা ভুলক্রমে দু'বার কপি হয়ে গেছে।
২। কবিতাটা আগেই ১৯ নং মন্তব্যের উত্তরে আপনি লিখে দিয়েছিলেন, আগে থেকে মন্তব্যগুলো না পড়াতে তা খেয়াল করিনি।
প্রিয় কবির প্রতি আপনার এ শ্রদ্ধাঞ্জলি আমাকে অভিভূত করেছে।
'প্রিয়'তে রাখলাম। 'লাইক'ও দিলাম।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৩

বৃতি বলেছেন: প্রিয় কবিতা বারবার পড়া যায় :) আমাদের সাথে শেয়ার করলেন আপনার প্রিয় কিছু- অনেক ধন্যবাদ, খায়রুল আহসান। ভালো থাকবেন :)

৩১| ২৭ শে জুন, ২০১৯ রাত ১:৩৫

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট বৃতি হক :)

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:১০

বৃতি বলেছেন: আপনি কবিতা পছন্দ করেন? :) জেনে ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.