নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বকাপ কিংবদন্তী: গারিঞ্চা

১৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৬





পিতৃপ্রদত্ব নাম ছিল ম্যানুয়েল ফ্রান্সিসকো দস সান্তোস। কিন্তু ছোটখাটো গড়নের জন্য বোন রোসা আদর করে ছোট্ট পাখি গারিঞ্চার নামে ডাকতেন দস সান্তোসকে। কিন্তু সেই আদরের ছোট্ট পাখি গারিঞ্চাই পরবর্তীতৈ অনেক বড় আসন দখল করে নেয় বিশ্ব ফুটবলে। গারিঞ্চাকে বলা হয়ে থাকে ফুটবল ইতিহাসের সেরা ড্রিবলার। উইঙ্গার পজিশনটিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা গারিঞ্চা ফিফার শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় হন সপ্তম, নির্বাচিত হন বিংশ শতাব্দীর ’ওয়ার্ল্ড টিম’ এর সদস্য।



বাকানো পায়ের পাতা আর এক পায়ের চেয়ে প্রায় ছয় সেন্টিমিটার ছোট আরেকটি পা নিয়ে জন্মেছিলেন গারিঞ্চা। কিন্তু কিংবদন্তীর ফুটবলার হবার জন্য যার জন্ম এইসব সমস্যা তাকে থামাতে পারেনি, মাঠে যেমন তাকে থামাতে পারত না প্রতিপক্ষের রক্ষণ। তার সময়ে পেলের চেয়েও অনেক বেশী জনপ্রিয় গারিঞ্চা বরং এই বাকানো পায়ের যাদুর জন্য পেয়েছিলেন ’এ্যাঞ্জেল উইথ দ্য বেন্ট লেগস’ উপাধি। বিখ্যাত ’ব্যানানা শট’ দিয়ে কর্নার থেকেও সরাসরি গোল করেছেন গারিঞ্চা।



১৯৫৪ বিশ্বকাপ আসতে আসতে ততদিনে পেশাদার ফুটবলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন গারিঞ্চা। ক্লাব বেটাফেগোর হয়ে খেলছিলেনও চমৎকার। কিন্তু একই পজিশনে খেলা জুলিনহো বা প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য ফুটবলের কারনে ১৯৫৪ বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত ডাক পাননি গারিঞ্চা। এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতেই যেন ১৯৫৮ এবং ১৯৬২--পর পর দু’টি বিশ্বকাপ জয় করেন গারিঞ্চা। ১৯৩৪-৩৮ এর ইতালির পর দ্বিতীয় দল হিসেবে গারিঞ্চার ব্রাজিল জয় করে টানা দুটি বিশ্বকাপ।



১৯৫৮র বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে দু’জন খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। যার একজনের নাম পেলে এবং অপর জন পেলের চেয়ে বছর সাতেকের বড় গারিঞ্চা। ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দুই সন্তান। বরং বলা হয়ে থাকে তার অসাধারণ ড্রিবলিং, দুরন্ত গতি, দু পায়ের সমান দক্ষতা, জোরালো শট সব মিলিয়ে পেলের চেয়ে অনেক বেশী ক্যারিশম্যাটিক ছিলেন গারিঞ্চা। গরিঞ্চা এবং পেলে একইসাথে খেলেছে এমন ম্যাচে কেউ কখনো হারাতে পারেনি ব্রাজিলকে।



অভিষেক ম্যাচের এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যেই গারিঞ্চা বিপক্ষ দলের তিন জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে যে শটটি নেন তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এক মুহুর্ত পরেই গারিঞ্চার বাড়িয়ে দেয়া বল থেকে পেলের দুর্দান্ত শটটিও ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। গারিঞ্চা এর পরও একের পর এক ব্যাতিব্যস্ত করে তোলেন বিপক্ষের রক্ষণ কে। গারিঞ্চার অভিষেক ম্যাচের প্রথম ৩ মিনিট কে বলা হয়ে থাকে ”দি গ্রেটেস্ট থ্রি মিনিটস ইন ফুটবল হিস্ট্রি”।



শুধু প্রথম ম্যাচেই নয়। বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচ গুলোতেও একই ভাবে প্রতিপক্ষের ঘুম হারাম করে ছাড়েন গারিঞ্চা। ফাইনালে সুইডেনের সাথে ১-০ তে পিছিয়ে থেকেও ব্রাজিল যে ২-১ এ জয় পায় গারিঞ্চার বাড়িয়ে দেয়া বল থেকেই গোল দু’টি করেন ভাভা। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই বিশ্বকাপ জয় করেন গারিঞ্চা। ব্রাজিলও জেতে তাদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা, শুরু হয় বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সাফল্যগাথার। গারিঞ্চা আসরের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এবং স্থান করে নেন আসরের সেরা একাদশে।



তবে গারিঞ্চা তার সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন ১৯৬২র চিলি বিশ্বকাপের জন্য। দ্বিতীয় ম্যাচেই ইনজুরির কারনে পেলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পরায় গারিঞ্চার কাধে নতুন দায়িত্ব বর্তায়। কেবল গোল করালেই চলবে না, গোল করতেও হবে। বলাবাহুল্য দক্ষতার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন গারিঞ্চা। বিশেষত ইংল্যান্ড এবং স্বাগতিক চিলির বিপক্ষে ম্যাচ দু’টিতে অসাধারণ খেলেন তিনি। ৪ গোল করেন সেই দুই ম্যাচে। পুরো আসরে ভাভা, আমারিলদোদের দিয়ে করান একের পর এক গোল। চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে প্রচন্ড জ্বর নিয়েও খেলা চালিয়ে যান গারিঞ্চা। ব্রাজিলকে টানা দ্বিতীয় বারের মতন বিশ্বকাপ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। বিশ্বকাপ শিরোপার পাশাপাশি জিতে নেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুটও।



১৯৬৬তে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও খেলতে গিয়েছিলেন গারিঞ্চা। গোড়ালির ইনজুরিতে ভুগতে থাকা গারিঞ্চা তবুও প্রথম দুটি ম্যাচে অংশ গ্রহণ করেন। বুলগেরিয়ার সাথে ২-০ তে জয়ে গোলও করেন একটি। কিন্তু পরের ম্যাচেই হাঙ্গেরির সাথে ম্যাচে ব্রাজিল পরাজিত হয় ৩-১ গোলে। ব্রাজিলের তৃতীয় ম্যাচটিতে গারিঞ্চা মাঠে না নামায় হাঙ্গেরির সাথে ম্যাচটিই হয়ে যায় গারিঞ্চার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে প্রথমবারেই শিরোপা জয়ী গারিঞ্চা ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ৫০ ম্যাচ খেলে মাত্র একটিতেই পরাজিত হন, সেটি ওই শেষ ম্যাচেই।



’শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ এই বাংলা প্রবাদটি গারিঞ্চাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।



প্রথম আলো অনলাইনে মাঝে মাঝে আমার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। সেই ভালোলাগা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কখনও কখনও ব্লগেও তা শেয়ার করি। কিন্তু এখানেই ঘটে বিপত্তী। অনেকেই সঙ্গত কারণেই বিভ্রান্ত হন, 'পুরোটাই কপি করার দায়ে' তেড়ে আসেন। বিভ্রান্ত হবেন না, এটি তেমনই একটি প্রয়াস।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:১১

নাছির84 বলেছেন: প্রথম আলো অনলাইনে আপনার লেখা পড়েছি। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার লেখা ভাল লাগে। তার চেয়েও বেশি ভাল লাগে গারিঞ্চাকে ! পুরোনো ভিডিও ফুটেজগুলো দেখে অন্তত এতটুকু বুঝেছি,বলের ওপর সে প্রজাপতির মতো নাচতে পারতো। কিছু নাম আছে-মিয়াজ্জা,নিল্টন স্যান্টোস,জাঁ ফঁতে,পুসকাস-ইউসোবিও কিংবা হিদেকুটি............ইত্যাদি.....এদের খেলা তো আর দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু নামগুলো শুনলেই কেমন যেন রোমাঞ্চ জাগে ! হয়তো এ কারণেই ওরা কিংবদন্তি।

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:১৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: এমনকি প্রথম আলোতেও আমার মতো দু'একজন আছে যারা আপনি যতগুলো নাম বললেন তাদের সবাইকে চেনে না!

একথা আবার কাউকে বলেন না কিন্তু!

কথা সত্য, এ কারণেই ওরা কিংবদন্তী।

২| ১৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪

সুমন কর বলেছেন: ফুটবল খেলা কম দেখি এবং দেখতাম। কিন্তু পত্রিকায় ঠিক খেলার পাতা প্রতিদিন পড়তাম। বিশ্বকাপ আসলে, একটু খোঁজ খবর নিয়ে নিতাম। খেলা দেখতে সুবিধে হতো।
আপনার লেখা আমার ভাল লাগে, সেটা মনে হয় আপনি ভাল করেই জানেন। তাই লেখা অসাধারণ। অনেক কিছু জানা গেল।



অ.ট.: আমি কিছুদিন ছিলাম না, তাই বলে আমার ব্লগে একবার এসেও খুঁজে গেলেন না ? ভাল থাকবেন।

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:১৯

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: একটু চাপেই পড়ে গেলাম। দুইটা কারণে--

১. লেখা অসাধারণ।
২. আমার ব্লগে একবার এসেও খুঁজে গেলেন না ?

৩| ১৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭

ফা হিম বলেছেন: বাকানো পা, এক পা আবার ছ' ইঞ্ছি খাট। তারপরও তিনি বিশ্ব্জয় করেছেন। বড়ই বিস্ময়কর।

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২১

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: বিধাতা ওকে পাঠিয়েছে গ্রেট ফুটবলার হবার এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে।

তিনি তাকে যে সীমাবদ্ধতা দিয়েছিলেন বুঝতে পারা মাত্রই সে ভুল শুধরে নিয়েছেন।

৪| ১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:০১

is not available বলেছেন: এখান থেকেই বোঝা যায় শারীরিক প্রতিবন্ধতকতা কোন কীর্তিমানকে দমিয়ে রাখতে পারেনা আর তারা কখনো নিজের সীমাবদ্ধতার দোহাই দিয়ে কর্তব্যকে অবহেলা করেনা!

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৪

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: বিধাতা ওকে পাঠিয়েছে গ্রেট ফুটবলার হবার এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে।

সব এ্যাসাইনমেন্ট তিনি সবাইকে দেন না। আবর সবাই তার এ্যাসাইনমেন্ট শেষও করতে পারেনা। বা হয়তো সেভাবে কাজও করে না।

এখানে দু'জনের চাওয়াই মিলে গেছে।

৫| ১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। গ্যারিঞ্চা পেলের মত ক্যারিশম্যাটিক খেলোয়াড়রা ছিলেন বলেই ব্রাজিল হয়ে ওঠেছে ফুটবল ঈশ্বর্ । ফুটবল খেলার সংজ্ঞা এমন ভাবে দেয়া যায় ফুটবল এমন একটা খেলা যেটা ব্রাজিল খেলে।ফুটবলের নান্দনিক ছন্দময় খেলা ব্রাজিলকে নিয়ে গেছে অন্যরকম উচ্চতায়।

চমৎকার পোস্ট।

আমি মুগ্ধ রোমারিও ফারিয়া ডি সুজার ফুটবল শৈলীতে।ব্রাজিলকে নতুন করে চ্যাম্পিয়ন হওয়া শিখিয়েছেন এই ফুটবল বিস্ময়।তার
খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে ৯৪ এর বিশ্বকাপে।।

গ্যারিঞ্চাকে নিয়ে করা পোস্টটি ভাল লেগেছে।

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: আমাদের এই আবেগটাই খেলাটাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। গারিঞ্চাদের মহান করেছে।

এই আবেগটা খুব ভালো লাগে আমার।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.