নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন বক্ষে তাহার বেদনা অপার

ক্যাপ্টেইন পিকু

লেখালিখির অভ্যাস টা পুরাতন। অনেক দিন পরে নতুন করে শুরু করলাম। দক্ষিণের জানালা অবশেষে খুলেই দিলাম। :)

ক্যাপ্টেইন পিকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়াবন বিহারিণী

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৭

 সেমিনার রুমের ক্লাসগুলো বরাবর ই অলসতার । এসি র ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস আর হেলান দেবার মত আরামদায়ক চেয়ারে কম বেশি সবাই ঘুমায় । স্যার রা তাই ধরেই নিয়েছেন পেছনের দিকে যারা বসেছে তারা রাতের ঘুম দেবার নিয়্যাতে আছে । তার ওপর আজ ছুটির দিনের এক্সট্রা ক্লাস । রিলাক্স মুডে সবাই । আজকে অবশ্য ব্যাক বেঞ্চারদের দলে কথা ও আছে । কেউ একটু এতে অবাক ও হয়েছে । প্রতিদিন নিয়ম করে সময়মত এসে প্রথম দিকের চেয়ারে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কেউ ক্লাসনোট তুলছে এবং সে একজন মেয়ে তার মানে এটা কথা ই । ব্যতিক্রম নেই ।

‘ কি রে রাতে ঘুমাস নি ? আজ এখানে ? ‘ পচানি দেয় নীল । এসব কথার উত্তর দিলে আরো বেশি বাঁশ খেতে হবে । হাসি দিয়ে সামনে তাকায় কথা ।

গত কয়েক রাত থেকে আসলেই ঘুম হচ্ছেনা । হঠাত কি যে হোল ! ঘুম আসতে আসতে তিনটে চারটে । আর এদিকে তো ক্লাস ধরতে হয় আটটার । ঢাকার রাস্তার জ্যাম তো আছেই । ছয়টার দিকে ঘুম থেকে ওঠাটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।

‘ওই তোর ফোন বাজে ! ’ পাশ থেকে কলম দিয়ে খোঁচা মারে সুমি । তন্ময় হয়ে লেকচার শুনছিল কথা সাথে বোধ হয় ঘোর ও এসেছিল । স্যামসাং ফোন গুলো এদিক দিয়ে ভাল । নোকিয়ার মত ভূমিকম্প শুরু করেনা। ব্যাগটা সুমির পায়ের কাছেই ছিল শুধু ওই বুঝতে পেরেছে । স্যারের চোখ এড়িয়ে ফ্লিপ কভার খুলতে খুলতে ভাইব্রেশন অফ হয়ে যায় । কিন্তু নাম্বারটা দেখে যেন জমে যায় কথা । এত দিন পর !

- ‘তুই শালা ফোন দিবি না চলে যাব ? বলতেছি বিষে বিষ ক্ষয় হয় বিশ্বাস হচ্ছে না ?! ’ ফোন হাতে নিয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বসে আছে আতিক । এই লাইনটা এর মধ্যে কমপক্ষে পঞ্চাশ বার শুনে ফেলেছে । নিজেও কাল পর্যন্ত ডিটার্মাইন্ড ছিল ফোন করবে । কিন্তু আজ যে কি হল ! সকালে একটু আগেও তো সব ঠিক ছিল । এখন ইচ্ছে করছেনা না ভয় পাচ্ছে না অস্বস্তি না পুরোন সেই ইগো জেগে উঠেছে বুঝতে পারছে না । ‘তোরে দিয়ে হইত না বুঝছি । থাকো মামা তুমি দেবদাস ই থাকো আমি যাই কাজ আছে। ’ রিমনের চলে যাওয়া চুপচাপ দেখে আতিক । কি করবে ? এতদিন পর কি বলবে ? স্যরি ? সে তো মোটেই স্যরি না । তাহলে ? সব ঠিক করতে চাইছে ? তাও না । লাইফ এখন প্যারামুক্ত । নতুন করে আবার সেই পেইন নেবার ইচ্ছে নেই । ফোন করে কি এটা বলা সম্ভব গত দেড় মাস ধরে প্রতিদিন নিয়ম করে দুপুরে রাতে তোমায় স্বপ্ন দেখছি ! ভাল লাগছে না একদম তাই কল করলাম ! কি আজব মানব জীবন ! যার সাথে একটা সময় ঘন্টায় কথা না বললে অস্থির লাগত আজ তাকে ফোন করবার জন্য অজুহাত খুঁজতে হচ্ছে ! স্বপ্নের ব্যপারটা শুধু রিমন কেই বলেছিল । ওই সাজেশন দিল ফোন দেবার । তার ধারণা একবার কথা বললেই সব বন্ধ হয়ে যাবে। ব্রেনের সাময়িক এই গন্ডগোল বহুদিন ফরমালি কথাও হয়না তাই । তার ই উদ্ভাবিত সূত্র বিষে বিষ ক্ষয় হবে !

ধ্যাত ! ফোন দেব তো দেব । এত কি ! কথা না বললে রেখে দেব শেষ ! নিজের ওপর ই বিরক্ত হয়ে সবুজ বাটন টা প্রেস করেই ফেলে আতিক । ওয়েলকাম টিউনটায় অবাক হয়। স্কুল কলেজে ওর সবচেয়ে পছন্দের গান ছিল মায়াবন বিহারিণী ! এত দিন পরেও ! এই মেয়ে কি পাগল না কি !

প্রথম বারে কেউ রিসিভ করেনা । হেসে ফেলে । অভ্যাস বদলালো না আর ! কোনদিন এই মেয়ে প্রথমবারে ফোন ধরতে পারে নি । অভ্যাস আতিকের ও যায় নি । নিজের অজান্তেই রি ডায়াল হয়ে যায় ।

- দ্বিতীয় বারের মত ভাইব্রেট করছে ফোন । হাতের তালুতে কাঁপছে । কথা তাকিয়ে আছে । খুব চেষ্টা করছে দেখবার । ভাল মত । কতদিন পরে এই নাম্বার থেকে ফোন এসেছে ! এই ফোনের অপেক্ষায় গত তিনটি বছর নিজের নাম্বার বদলায় নি । আর আজ ভাল মত দেখবার ই উপায় নেই । চোখ যে বার বার ঝাপসা হয়ে আসছে ! এবার ও রিসিভ করা হয় না । এক মিনিট যায় দু মিনিট যায় তিন মিনিট যায় । কথা অপেক্ষা করে ! এই বুঝি আবার ফোন এলো । আসে না । ‘প্লিজ আর একবার দাও ! আর একবার ! এবার আমি ধরব ! প্রমিজ ! প্লিজ আর একবার !! ’ কথার ফিস ফিস প্রার্থনা কেউ শুনতে পারে না ।

- মেজাজ টা এবার দ্বিগুণ খারাপ হয় আতিকের । দুই দুই বার ফোন আর রিসিভ করার খবর নাই ! ঠিক ই আছে । আজ তো ছুটির দিন । বের হয়েছে হয়ত ওই ফাজিল গুলাকে নিয়ে । সাথে হয়ত বদমাশ টাও আছে । ফোন ধরবে কেন ! স্পেশালি আমার ফোন ! গজগজ করে আপন মনেই । শুধু শুধু নিজের প্রেস্টিজ টা গেলো ! হুর ! মামা তিনটা বেনসন দেন তো । টাকা বাড়িয়ে দেয় ক্যাফের কাউন্টারে । ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ডিপারটমেন্টের দিকে এগোয় । কাল নবীনবরণ আছে । অনেক কাজ ।

পুনশ্চ ১ –

অনেক দিন পরে কথা গান গায় । মায়াবন বিহারিণী হরিণী... কেউ একজন তার গলায় এটা সহ্যই করতে পারত না ! গলায় নাকি সুরের বংশ ও নেই ! তবে তার কাজল দেয়া চোখ হরিণীর মত । এখন আর কি আসে যায় । সে তো পাশে নেই । গুনগুন করাই যায় । হলের পাশেই বিশাল এক মাঠ । রাতের অন্ধকারে জোনাকি আর আকাশে তারা জ্বলছে মিটমিট করে । অন্ধকার ঘরে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে আলো ছুঁয়ে দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করে হরিণী ।

পুনশ্চ ২ –

মাঝরাতে কয়েক ফোঁটা চোখের পানিতে কার কি বা আসে যায় । কেউ দেখতে আসে না বুঝতে আসেনা । ঠাট্টা অথবা সান্তনা দিতেও না । হঠাত করে ঘুম ভেঙ্গে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আতিকের যখন হুট করে চোখে পোকা পড়ে সেটা সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে ধোঁয়া করে দিতে বেশ লাগে । সে ধোঁয়ায় আর কিছু দেখা না যাক মেয়েটার হাসি ভাল ই বোঝা যায় । আর দেখা যায় দু জোড়া চোখ । হরিণীর মত ।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:

স্বাগতম

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬

ক্যাপ্টেইন পিকু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.