নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

facebook.com/pageCCA/ | ccabd.org

সিসিএ ফাউন্ডেশন

সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে আমরা স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ccabd.org

সিসিএ ফাউন্ডেশন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিসিএ ফাউন্ডেশনের স্বপ্ন যেভাবে শুরু হয়...

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:১০



গত ১৭ জুলাই দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ পাতা ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে প্রকাশিত আমার লেখা ‘সাইবার অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ’ এবং তার আগের দিন রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবিতে সাংবাদিকদের জন্য ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন’ শীর্ষক ওয়ার্কশপ আয়োজন প্রসঙ্গে অনেক সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষি আমার প্রশংসা করেছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন এগিয়ে যাওয়ার। প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখায় কম কথায় আমার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি। তবুও অনেকে দেখা হলেই জানতে চাচ্ছেন যে, কিভাবে আমার ভেতর এই স্বপ্নের জন্ম হলো। কারো কারো সঙ্গে বিষয়টি পুরো শেয়ার করেছি। আবার কেউ রাস্তায় দেখা হলে জিজ্ঞেস করেছেন, তখন হয়তো অফিসে চলে যাচ্ছি, হাতে সময় নেই। তাই পরে বলব জানিয়েছি। মূলত তাদের জন্যই এই লেখা।

সাইবার ক্রাইম নিয়ে মূলত ২০০৯ সালের ২৭ ও ২৮ জুন Bangladesh Police সদর দফতরে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য একটি ট্রেনিংয়ের আয়োজন করেছিলেন বর্তমানে বাংলাদেশের কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং জগতের ‘বস’ বলে পরিচিত শ্রদ্ধাভাজন Sufi Faruq Ibne Abubakar । সেখানে আমার অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছিল। তখন আমি ঢাকায় একটি আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকায় কাজ করি। ওই পত্রিকার সম্পাদক মহোদয় আমাকে ওই ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছিলেন রিপোর্টার হিসেবে। ওই প্রোগ্রাম শেষে অফিসে ফেরার পর সম্পাদক মহোদয় জানতে চাইলেন, কী জানলাম সেখান থেকে। আমার উত্তর ছিল- কম্পিউটার ব্যাবহার করে কেউ কোনো অপরাধ করলে তাকে সনাক্ত করা যায় সহজে। কম্পিউটারে আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) বলে এক ধরনের নাম্বার আছে। সেটি হলো ওই কম্পিউটারের পরিচয়। ওই নাম্বার দিয়ে খুঁজলে ওই কম্পিউটার দিয়ে কোথায় থেকে কে অপরাধ করেছে সেটি সনাক্ত হয় সহজে। আরো এ রকম অনেক কিছু আলোচনা হয়েছে। সব কিছু বুঝিনাই। সম্পাদক মহোদয় আমার উত্তরে মোটামুটি সন্তুষ্ট মনে হলো।
----
আমি নিজেই যখন সাইবার ক্রাইমের শিকার
প্রথম ধাপ: ২০১০ সালের শেষের দিকে। জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রীর একটি ভিডিও ফুটেজ বাজারে ছাড়েন তার সেই সময়ের হবু বর। মুহুর্তেই তা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের বিয়ে পারিবারিকভাবেই চুড়ান্ত হয়েছিলো। সব ঠিকঠাক এগুচ্ছিলোও। তাই অনেকটা দাম্পত্য জীবনের মতোই ছিলো তাদের সম্পর্ক। কিন্তু এর মাঝে আরেকজন অভিনেতার সঙ্গে ওই মডেলের মনদেয়া নেয়া হয় এবং দুজনে পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপরই প্রতিহিংসার বশে ওই মডেলের সঙ্গে নিজের একান্ত সময়ের কিছু ফুটেজ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেন ওই হবু বর। মডেল অভিনেত্রীর পক্ষ থেকে এমনটাই অভিযোগ করা হয়েছিল। এ নিয়ে তুমুল বির্তকে জড়িয়ে পড়েন সেই মডেল। পালিয়ে যে বিয়ে হয়েছিল সেই সংসারও ভেঙ্গে যায়। ক্যারিয়ারে ধস নামে। দীর্ঘ ২ বছর মিডিয়া থেকে আড়ালে ছিলেন তিনি।

ওই মডেল অভিনেত্রীর ভিডিও প্রকাশের কিছু দিন পর আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক (বেদখল) হয়ে যায়। ক্রিমিনাল আমার ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করে দেয় সেই ভিডিও। সিনিয়র-জুনিয়র সবার কাছে আমার রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন। বিব্রতকর পরিস্থিতি। কী যে মানসিক যন্ত্রণা, তা ব্যাখ্যা করে এখানে বুঝাতে পারব না। যার সঙ্গে ফোনে কথা হয়, তিনি বলে- এই তুমি এসব কী দিয়েছো ফেসবুকে। তোমার রুচি যে এতো খারাপ তা আগে জানতাম না। -এ রকম আরো কতো রকম কথা। সব আগে শুনতে হতো। এরপর বলতে হতো, ভাই অথবা বোন- এটি আসলে আমার কাজ নয়। আমার আইডিটা হ্যাক হয়েছে। হ্যাকার এটি ছড়িয়ে দিয়েছে। তারপর তারা বুঝতেন বিষয়টি আসলে কী। এই ঘটনা সম্পর্কে জানেন আমার সাংবাদিকতার শিক্ষক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নির্বাহী পরিচালক জনাব মির্জা তারেকুল কাদের।

দ্বিতীয় ধাপ: ২০১৩ সাল। অফিস থেকে রিপোর্টিং অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে আমার সঙ্গে কিছু লোকের ভুলবুঝাবুঝিতে একটি দুর্ঘটনার শিকার হই। অবশ্য দুর্ঘটনা হলেও সেটি আমার পেশাগত বড় অভিজ্ঞতা। পজেটিভলি দেখি। এর পর প্রায় দুই মাস আমাকে মোবাইল ফোন, ইমেইল, ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়েছে। পরে যখন ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করতে যাই, দেখি আমার ফেসবুক, ইমেইল আইডি সব হ্যাকড। সবগুলো আইডিতে নিরাপত্তার জন্য টু স্টেপ ভেরিফিকেশন ছিল (মোবাইল নম্বর দিয়ে)। অর্থাৎ কেউ আমার ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড জানলেও ওই মোবাইল ছাড়া লগইন সম্ভব নয়। পাসওয়ার্ড দেয়ার পর মোবাইলে একটি কোড আসবে, সেটি দেয়ার পর লগইন হবে।তাহলে আমার আইডি হ্যাক হলো কীভাবে? আশঙ্কা তৈরি হলো কেউ আমার মোবাইল সিম রিপ্লেস করেছে অপকর্মটি করেছেন। রবি কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে আমার সেই আশঙ্কার সত্যতা পাই।

১২/৫/২০১৩ইং সন্ধ্যায় মোবাইলে রবি (Robi Axiata Limited) কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ মি.জাহিদ জানান- ২৯/৪/২০১৩ইং তারিখে আমার নিবন্ধনকৃত সংযোগটির (০১৮২৬০৯৭৫৭৭) সিম রিপ্লেস করা হয়েছে। কিন্তু আমার মালিকানাধীন একটি মোবাইল সংযোগ, যেখানে অপারেটর রবি’র ডাটাবেজে আমার ছবি, নাম, ঠিকানা, স্বাক্ষর সংরক্ষিত রয়েছে, সেই মোবাইল সিম কীভাবে অন্য কারো দ্বারা রিপ্লেস করা সম্ভব? দ্রুত দাগনভূঞা থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলাম। জিডি নাম্বার ২৯৫, তারিখ ১৩/৫/২০১৩।

রবি (Robi Axiata Limited) যা বলল: একজন সিনিয়র কলিগের পরামর্শে রবি’র এক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমেইলে লিখিত অভিযোগ পাঠালাম। বিষয়টি যেহেতু সত্য, রবি’র কর্মকর্তারা অপরাধ করেছেন সিমটি কাউকে রিপ্লেস করার সুযোগ দিয়ে, সেহেতু তারা সরি বলবে, এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু না, অনেক দিন নানা টালবাহানা পর আমার অভিযোগের জবাব হিসেবে দেয়া হলো ইংরেজিতে একটি ইমেইল।তবে আমার অভিযোগ লেখা ছিল বাংলায়। এখন কি আমি তাদের এই উত্তর বুঝার জন্য দৈনিক বাংলা মোড়ে গিয়ে টাকা খরচ করে সেটি অনুবাদ করব? মহাবিপদ! প্রচলিত প্রবাদ, ‘চুরি চুরি সিনা চুরি’ বা ‘চোরের মা’র বড় গলা’। এই টাইপের অবস্থা। যাই হোক, একেবারে ভাল না হলেও একটু-আধটু ইংরেজি তো বুঝি। রবি ’র দেয়া ইমেইলের সারমর্ম ছিল এমন যে, আমার ভোটার আইডি দিয়ে সিমটি রিপ্লেস করা হয়েছে। আমার তথ্য না জানলে বা ভোটার আইডি না থাকলে এটি সম্ভব নয়। তার মানে সিম রিপ্লেস করার সময় মালিকের কোনো স্বাক্ষর লাগে না? স্বাক্ষর দেয়ার পরও সেটি আসল না নকল যাচাই হয় না?
এই হলো মোবাইল অপারেটর রবির গ্রাহকদের জন্য নাজুক নিরাপত্তা ব্যবস্থার নমুনা। শেষমেষ আমি মামলা করতে পারতাম রবি’র (Robi Axiata Limited) বিরুদ্ধে। কিন্তু কী লাভ? ওই সময় টা আমি পেশাগত কাজে দিলে আমার দক্ষতা একটু হলেও বাড়বে। আর ঝামেলায় যাইনি।

অবাক করার বিষয় হলো- দুটি ঘটনা যিনি ঘটিয়েছেন তাকে আমি সনাক্ত করতে পেরেছি। তিনি হলেন আমার সেই শিক্ষকতুল্য সম্পাদক মহোদয়, যার কাছে আমি ইন্টারনেট ব্রাউজিং শিখেছি। মূলত আমার মায়ের সম্পদ বিক্রির কিছু টাকা ছিল আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেটি তিনি জানতেন। সেখান থেকে একদিন ৭০ হাজার টাকা ধার চেয়ে বসলেন। তার প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা-ভক্তি না করতে পারলাম না। কিন্তু পরে সেই টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য বাধে। তার প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেই। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি এসব করেছেন...। তাকে ধন্যবাদ জানাই এজন্য যে, তিনি সেই ঘটনা দু’টি না ঘটালে সাইবার অপরাধ নিয়ে আমার কাজ করার এই প্রবল ইচ্ছাশক্তি তৈরি হতো না।

এই দুই ঘটনা থেকে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে কাজ করার স্বপ্ন তৈরি হয়। ভাবতে থাকি দেশে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম শুরু করার। ২০১৫ সালের ২০ মে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে শুরু করি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন। কোথাও সাইবার নিরাপত্তা জনিত কোনো পোস্ট পেলে সেটি গ্রুপে শেয়ার করি। গ্রুপটি নাম দিয়েছিলাম সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম। কিছু দিন আগে ভাবলাম, আমার স্বেচ্ছাসেবী এ কার্যক্রম এক সময় অনেক বড় হবে, সারা দেশে আমি মানুষের ঘরে ঘরে যাবো সচেতনতা তৈরির বার্তা দিতে। তাহলে আমার এ কার্যক্রমের সরকারি অনুমোদন থাকতে হবে না? ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নিবন্ধন সম্পর্কে জানলাম। জয়েন্ট স্টক থেকে এবং ঢাকা জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নেয়া যাবে। দুই জায়গাতেই নিবন্ধনের প্রথম ধাপ নামের ছাড়পত্র নেয়া। জয়েন্ট স্টকে সুবিধা হলো এ কাজটি ঘরে বসে অনলাইনে করা যায়। শুধু এক হাজার টাকা ফি দিতে ব্যাংকে যেতে হয়।

এবার আমার সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম নামটি খালি আছে কি না জয়েন্ট স্টকের ওয়েবসাইটে দেখলাম। ওমা! একি! এ নামে তো নিবন্ধন নেয়া যাবে না! তাদের সোসাইটি ক্যাটাগরিতে তিন ধরনের নামের ছাড়পত্র দেয়া হয়। সোসাইটি, ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্ট। অর্থাৎ সংগঠনের নামের মধ্যে এ তিনটি শব্দের যেকোনো একটি থাকতে হবে। ইন্টারনেটে খুঁজে দেখি সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি নামে ভারতে একটি অর্গানাইজেশন আছে। এ নামে নিলে লোকে বলবে আমি ভারতের ওই প্রতিষ্ঠানের নাম কপি করেছি। পরে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের কার্যক্রমের নাম হবে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশন। নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলাম অনলাইনে। গত ২০ জুলাই সেটি অনলাইনে পেয়ে কী যে আনন্দিত হয়েছি, যেন পৃথিবীর আর কোনো কিছুতেই আমাকে সুখি করা যাবে না, এটিই শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মূলত এটি অনলাইনে এসেছিল আরো প্রায় এক মাস আগে। আমি বুঝতে পারিনি। এর মধ্যে ফেসবুক গ্রুপের নাম সংশোধন করলাম। নতুন পেজ তৈরি করলাম facebook.com/pageCCA ।
গত বেশ কিছু দিন ধরে সাংবাদিক সহকর্মীদের জন্য একটি ওয়ার্কশপ করার চিন্তা করি। এজন্য অনেকের পরামর্শও চেয়েছি, যে উদ্যোগটি নেয়া হলে কেমন হবে, সহকর্মীরা সাড়া দেবেন কি না। এজন্য ফেসবুকে যোগাযোগ করেছি দৈনিক সমকালের চিফ ক্রাইম রিপোর্টার শ্রদ্ধাভাজন Shahadat Hossain Parosh, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের Rashed Nizam ভাই, আমার সাবেক কলিগ বিডিনিউজ২৪.কমের Golam Mujtaba Dhruba সহ অনেকের সঙ্গে। সবাই উৎসাহ দেন আমাকে।

গেল রমজানের আগ থেকে চেষ্টা করছি। ভাবতে ভাবতে রমজান চলে এলো। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম রমজান ঈদের পর অফিস আদালত শুরুর প্রথম দিকে ঢিলেঢালা সময়টায় ওয়ার্কশপে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে সহজ হবে, কাজের চাপ কম থাকবে। সে হিসেবে ১৬ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করি। ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের জন্য গুগল ডক-এর সাহায্যে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য ফর্ম তৈরি করলাম। এ কর্মশালায় সহকর্মীদের যে অভুতপূর্ব সাড়া পেয়েছি, তার কাছাকাছিও কল্পনা করিনি। অর্থাৎ কর্মশালায় অংশ নিতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। প্রথম ইচ্ছে ছিল ২০ জন। আমার এ কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জনাব মেহেদি হাসানের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলাম। তিনি বললেন, কী বলেন। এতো কম? ২০ জনের মধ্যে কারো সমস্যা থাকতে পারে। কাটছাট গিয়ে হয়তো ১০ জন টিকবে। উপস্থিত হতে পারবে না সবাই। পরে এটি ৫০ জন করলাম। কাকরাইলের আইডিইবি’র প্রেসিডেন্ট পিতৃতুল্য একেএমএ হামিদ (Akma Hamid) অনেক আগে তাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সাংবাদিকদের কোনো প্রোগ্রাম থাকলে তাদের কনফারেন্স রুমটি ফ্রিতে ব্যবহার করতে দেবেন। সেই কথাটি মনে রেখেছি। দৃঢ় মনোবল ছিল তারা আমাদের এমন গুরুত্বপূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী একটি প্রোগ্রামের কথা বললে ভেন্যু দিতে অবশ্যই রাজি হবেন। তাদের সঙ্গে আলাপ ছাড়াই গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাড়লাম। মনে মনে ভাবলাম, তারা না দিলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আছে, পল্টন মোড়ে আমাদের ফেনী সমিতির নিজস্ব অফিস আছে। ভেন্যু ম্যানেজ করা কোনো ব্যাপার না।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাড়ার পর নিবন্ধন করেছেন প্রায় আড়াইশ’ জন। কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখি? অনেক কষ্টে ১০০ জন বাছাই করলাম। ঈদের আগেই একদিন গিয়ে আইডিইবি প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি জানালাম। তিনি রাজি হলেন। লিখিত আবেদন দিতে বললেন। ঈদের পরে গিয়ে লিখিত আবেদন দিলাম। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ওয়ার্কশপের আগের দিন ১৫ জুলাই রাতে আমাদের টিমের একজন সিনিয়রের সঙ্গে আলাপ করলাম- সব তো ঠিকভাবে করেছি। শুধু একটি জিনিস বাকি। তা হলো- দেশের পরিস্থিতি ভালো না, ১০০ সাংবাদিকের প্রোগ্রাম। যদি নেতিবাচক কিছু হয়, সেটার দায় নেবে কে? সিকিউরিটির জন্য বলেছিলাম আইডিইবিকে। কিন্তু আইডিইবি জানালো তাদের এ ব্যবস্থা নেই। আমাদেরই করতে হবে। কথাগুলো শুনে ওই সিনিয়র বললেন তুমি সিকিউরিটির ব্যবস্থা করো। থানায় যোগাযোগ করো। তাই তো। থানা তো নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত সব সময়।

রাতে বাসায় ফিরে রমনা থানার ওসিকে ফোন দিলাম। ব্যস, হয়ে গেলো। ঠিক সকাল ৯টায় চারজন পুলিশ সদস্য হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরসহ হাজির। প্রত্যেককে চেক করে করে ঢুকতে দিয়েছেন। ওয়ার্কশপটি শেষে অংশগ্রহণকারীরা খুব ইতিবাচক মন্তব্য করলেন। তবে সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পৌনে ১১টায় শুরু করতে হয়েছে। উদ্বোধনী পর্বে অতিথিরা আসতে দেরি করেছেন। কারণ শনিবার সরকারি ছুটির দিন হলেও ঈদের পর ১৬ জুলাই শনিবার সরকারি ছুটি ছিল না। শেষ হওয়ার কথা ছিল ১২টায়। শেষ হলো দুপুর সোয়া ১টায়। ওয়ার্কশপ শেষে অংশগ্রহণকারীদের ভাষ্য, ঠিক সময়ে শুরু করলে ভালো হতো। আরো দীর্ঘ হলে ভালো হতো। অনেক ভালো কিছু শিখতে পেরেছি।

আমার এই স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছি সেই শ্রদ্ধাভাজন Sufi Faruq Ibne Abubakar -এর সঙ্গে। তিনি আমাকে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিযেছেন।
-------------------
সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালা কেন? সেটি বলেছি ওয়ার্কশপে স্বাগত বক্তব্যে--
সিসিএ ফাউন্ডেশন ও আইডিইবি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন’ শীর্ষক কর্মশালায় উপস্থিত অতিথিবৃন্দ, সম্মানিত প্রশিক্ষকদ্বয়, সিসিএ ফাউন্ডেশনের ভলান্টিয়ারগণ ও উপস্থিত সাংবাদিক ভাই-বোনেরা, আসসালামুআলাইকুম।

আপনারা জানেন, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির সুবিধা যেমন বাড়ছে, তেমন রয়েছে নানা নেতিবাচক দিকও। ‘সাইবার অপরাধ’ বলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে অপরাধ করা হয়, তাকেই বোঝানো হয়। যেমন: তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, প্রতারণা, অর্থ চুরি ইত্যাদি। সাইবার অপরাধ মূলত কম্পিউটারে ব্যবহৃত কর্মকান্ড, যার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী অপরাধ পরিচালিত করে থাকে অপরাধিরা।

দেশে দিন দিন প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সঙ্গে সাইবার অপরাধও বাড়ছে। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান, সবাই ঝুঁকির মধ্যে। কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে শুরু হয়ে যাচ্ছে অনলাইনে অপপ্রচার। ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আপত্তিকর ছবি, ভিডিও, ইত্যাদি। হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ-কড়ি। এ ধরণের অপরাধের মাত্র কতোটা ভয়াবহ হতে পারে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঘটনাই প্রমাণ করে।

মূলত প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও কারিগরি নিরাপত্তার বিষয়গুলো না জানার কারণেই সাইবার অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। তাই এ থেকে নিস্তার পেতে সচেতনতার বিকল্প নেই। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা তৈরি করতে চায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিসিএ ফাউন্ডেশন। শুরু থেকে আমরা অনলাইনে ক্যাম্পেইন করছি। এখন মাঠ পর্যায়ে কাজের উদ্যোগ নিয়েছি। গণমাধ্যম সমাজের দর্পনের মতো। তাই শুরুতেই গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন। কারণ, গণমাধ্যমকর্মীরাই সমাজে সচেতনতা তৈরিতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারেন।

এ কর্মশালায় সহকর্মী বন্ধুরা ব্যক্তিগত ও পেশাগতভাবে যদি সামান্যতমও উপকৃত হন, সেটি হবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমরা আইডিইবিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সহযোগী হওয়ার জন্য। সর্বোপরি স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং যারা এ আয়োজনে উপস্থিত হয়ে কর্মশালাকে সফলতার দিকে নিতে সহযোগিতা করেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা আশা করি, আজ উপস্থিত সব সাংবাদিক বন্ধুই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সিসিএ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করবেন। আমাদের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক বন্ধুদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজে সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে।
সবাইকে ধন্যবাদ।

কাজী মুস্তাফিজ,
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.