নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রহান্তরের বাসিন্দা

গ্রহান্তরের বাসিন্দা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায়রে

১২ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:১৩

কেউ রসিকতা করে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করলে আমি সংগত কারণেই হাসি। রসিকতাই যে এই হাসির একমাত্র কারণ তা নয়। বরং বলা যেতে পারে রসিকতা এই হাসির কোন কারণই নয়। রসিকতা শুনে যারা হাসতে পারেনা এদেরকে নির্বোধ ধরা হয়, তাই আমি হাসি।
কয়দিন আগে বাসায় এক আত্নীয় এলো। সেই আত্নীয়ের সাথে তার ছেলেটিও এসেছে। সেই ছেলে নানান ঘটনা বলে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করলো। যদিও একটি ঘটনায়ও হাসির কোন কারণ খুজে পেলাম না।
তার প্রথম ঘটনাটি হল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে এক সাথে বসে ছিল দুজন দুজনকে জড়িয়ে। একটি পুলিশ এসে নাকি তাদের উঠিয়ে দিয়েছে। ছেলেটিকে কানে ধরে উঠবস করিয়েছে। মেয়েটি লজ্জায় কেদে ফেলেছে।
আমি ঘটনাটি শুনে গলা ফাটিয়ে হাসলাম। যদিও এইখানে হাসির কি আছে ধরতে পারলাম না। আমার হাসি দেখে সে খুশি হল। হাসির গল্প বলে কাউকে হাসাতে পারলে বক্তা নিজেকে স্বার্থক মনে করে। নিজের রসবোধ নিয়ে তার সামান্য গর্ব হয়। এই ছেলেও গর্ববোধ করল। সে বলল, ভাই এর চেয়েও মজার ঘটনা আপনাকে শোনাবো। শুনলে হাসতে হাসতে মারা যাবেন।
আমি নিতান্ত অনিচ্ছায় বললাম, তাই নাকি? আপনি বরং গল্পটা আরেকদিন বলেন। আমিও প্রিপারেশান নিয়ে রাখলাম।
‘হাসির আবার প্রিপারেশান কি? ঘটনাটা এখনই বলি। মারাত্নক হাসির, যে শুনে সেই হাসতে হাসতে মাটিতে শুয়ে পড়ে।’
‘ও।’
‘ব্যাপারটা কিছুটা অশ্লীল ভাই, বলা ঠিক হচ্ছেনা, আনইজি লাগছে, তাও বলি। এমন হাসির ঘটনা না বললে আরাম পাওয়া যায়না। আমার ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে পাশের বাড়ির একটা রুম দেখা যায়। সেইখানে এক ভাইয়া আর ভাবী থাকে। মাঝে মাঝে সেই রুমে দারুন সব ব্যাপার হয়। হা হা হা। সেইরুমে কি কি ঘটে সেটা দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন না, করলে আমি বলতে পারবোনা, খুব লজ্জার। হা হা হা।’
আমি তাকে বললাম, ভাই আপনার ঘটনাটা খুবই হাসির। দয়া করে এত হাসির গল্প আমাকে আর বলবেন না। বললে আমি মারা যাব হাসতে হাসতে। আমার হার্ট আলগা। যেকোন সময় ছিড়ে পড়ে যাবে।
আমার কথা শুনে সে চোখ মুখ কালো করে ফেলল।
আমি সেদিন শিওর হলাম, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নোংরামী এবং অন্যকে অপমানিত হতে দেখা – এই দুই জিনিস থেকে মজা পেয়ে থাকে সবচেয়ে বেশী। এই মজা এতই বেশী যে শুধু নিজে মজা নিয়েই মানুষ ক্ষান্ত হয়না, অন্যকে জোর করে এইসব ঘটনা শুনিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মজা দেয়ার চেষ্টা করে।
এটা গেল রসিকতার গল্প। এবার বলি মন খারাপের গল্প নিয়ে।
এক পরিচিত বড় ভাই জানতে পেরেছেন যে, তার গার্ল ফ্রেন্ড অন্য ছেলের সাথে ঘুরে। একদিন সোহরাওয়ারদী উদ্যানে তিনি নিজে দেখেছেন সেই মেয়ে অন্য এক ছেলের হাত ধরে বসে আছে। বসে থাকার ভংগিটা খুব একটা সুবিধার না। এটি দেখে বড়ভাই খুবই শকড। তিনি শোকে পাথর হয়ে গেছেন। জীবনের প্রতি তার ঘৃণা এসে গেছে।
সেই মেয়েকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে তার পক্ষে বিয়ে করাও সম্ভব নয়। তাই তিনি সিন্ধান্ত নিয়েছেন এই জীবন আর রাখবেননা। আত্নহত্যা করার আগে তিনি আমার সাথে দেখা করতে চান। আমি তার সাথে দেখা করলাম। তাকে বললাম, চলেন আপনাকে আমাদের জগন্নাথের ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে আনি। এই ক্যাম্পাসে একটি বিরাট ঝর্ণা আছে।
তিনি অবাক হয়ে বললেন, জগন্নাথের ক্যাম্পাসে ঘোরার মত জায়গা কি আছে?
‘আমরা একই জায়গায় বার বার চক্কর দেব, সমস্যা নাই। আপনে আসেন।’
আমি তাকে জগন্নাথে নিয়ে গিয়ে আমাদের বিবিএ ফ্যাকাল্টির বিল্ডিংটি দেখালাম। এরপর আর্টস ফ্যাকাল্টি থেকে ঘুরিয়ে এনে আবারও বিবিএ ফ্যাকাল্টির বিল্ডিং দেখালাম। তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, এক বিল্ডিং কতবার দেখাইবা, আর ঝর্ণার কথা বললা, ঝর্ণা কই, পাইপ দিয়ে ময়লা পানি পড়ছে, ওটাই কি ঝর্ণা?
আমি বললাম, জী ওটাই।
আধাঘন্টা তাকে নিয়ে সিড়িতে বসে থাকলাম। তারপর তাকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে এলাম।
তাকে বললাম, চলেন লাঞ্চ করি। আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানগুলোতে ভালো কলা পাওয়া যায়।
‘কলা আবার ভালো খারাপ কি?’
‘সব কিছুরই ভালো খারাপ আছে। আপনাকে আমি আজকে কফি-চা খাওয়াবো, জিবে টেষ্ট আজীবন লেগে থাকবে। আত্নহত্যা করার পর নিজের মধ্যে অনুশোচনা আসবে কারণ পরকালে এই চা আর পাওয়া যাবেনা, পরকালে গুড় চা পাওয়া যায় শুধু। চিনির চা পাবেন না। কারণ চিনির চা ডায়বেটিস রোগীরা খেতে পারেনা।’
তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি রসিকতা করার চেষ্টা করছি কিনা সেটি বুঝার চেষ্টা করলেন। তিনি নিজে কিছুই মুখে দিলেন না।
আমি নিজে এক কাপ কফি-চা খেলাম। যে চায়ে চা এবং কফি কোনটিই থাকেনা সেটিই মূলত কফি-চা। কফি-চা শেষে কাঁদি থেকে ছিড়ে একটি সাগর কলা খেলাম। বড়ভাই পাথরের মত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার চেহারায় একটি দুঃখী ভাব ফুটে রইলো।
মানুষের কষ্টের মধ্যে কিছু অভিনয় থাকে। তার কষ্ট যতটুক সে প্রমান করার চেষ্টা করে তার চেয়েও বেশী।
অনেকদিন পরে একদিন সেই বড়ভাই আমাকে ফোন দিলেন। দিয়ে বললেন, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে কোন এক মেয়ের সাথে। মেয়ের উচ্চতা দুই ইঞ্চি কম সাড়ে পাচ ফুট। লাভ ম্যারেজ। তিনি ফোন দিয়েছেন আমাকে দাওয়াত দেয়ার জন্য। আমি যেন তার বিয়েতে যাই।
আমিও তাকে দাওয়াত দিলাম। বললাম, একদিন জগন্নাথের এদিকে আসবেন। ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাবো। সাথে থাকবে কফি-চা এবং সাগর কলা। কফি-চা হল এমন চা যে চা খেলে জিব্বায় টেষ্ট লেগে থাকে। এই চা খাওয়ার জন্য আত্নহত্যা পথ থেকেও অনেকে ফিরে আসে।
তিনি হো হো করে হাসলেন। তারপর ফোন রেখে দিলেন। আমি বুঝলাম যে মেয়েকে ছাড়া তার বেচে থাকার কথা নয়, সে মেয়েকে ছাড়াও তার দিনকাল ভালোই চলছে। যে আত্নহত্যা তিনি নিজেই করতে চেয়েছিলেন, আজকে সেটি শুনে তার কাছে রসিকতা মনে হল।
আজকে যেটি রসিকতা সেটিই নিজের জীবনে ঘটলে সেটির নাম কষ্ট কিংবা অপমান। আজকে যেটি কষ্ট কিংবা অপমান সেটিই অন্যের জীবনে ঘটলে রসিকতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.