নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ

চাঁদগাজী

শিক্ষা, টেকনোলোজী, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি জাতিকে এগিয়ে নেবে।

চাঁদগাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিযোগ, অভিযোগ, অভিযোগ

২০ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৫:৫৫



সবার মতোই, আমার প্রাইমারী স্কুলের জীবনটা বেশ আনন্দের ছিলো: টিফিনের সময় ও স্কুল ছুটির পর ফুটবল খেলাই আমাকে স্কুলে ধরে রেখেছিলো। আমাদের টিফিনের ছুটি হতো, আমরা কোনদিন টিফিন খাইনি, টিফিন কি জিনিষ আমরা জানতামও না, টিউব-অয়েলের পানি খেয়ে ফুটবল খেলেছি, এ হলো টিফিনের ছুটি। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকেই, আমি আমার সমবয়সীদের মাঝে ভালোই খেলছিলাম; বলের মালিক ছিলো এক ক্লাশ সিনিয়র, দুলালদা; উনিও ভালো খেলতেন; তবে, দুনিয়ার বিরক্তিকর ছেলে ছিলেন: উনি উনার ইচ্ছে মতো ফাউল, সেমসাইড, হ্যান্ডবল, অফসাইড, আউট, কর্ণার ও গোল ঘোষণা দিতেন। আমি খেলার সময় কথা বলতাম না; উনার ঘোষণা আমার পছন্দ না হলে, আমি আরো চুপ করে দাড়ি্যে থাকতাম; এতেই উনি বুঝতেন যে, আমি উহা মেনে নিইনি; উনি আমার কাছাকাছি থাকলে, ১টা থাপ্পড় লাগিয়ে দিতেন। উনার থাপ্পড় বড় একটা সমস্যা ছিলো না, সমস্যা ছিলো উনার ২ চামচা ছিলো: সাধনদা ও মন্টুদা; দুলালদা আমাকে ১ ধাক্কা দিলে, সাধনদা ও মন্টুদা আমাকে দু'টো করে থাপ্পড় দিতেন। খেলতে খেলতে আমার ও দুলালদার ২টি আলাদা টিম আপনা থেকেই হয়ে গিয়েছিলো; আমি কোন প্রকার অভিযোগ করতাম না; আমার দলের কেহ কোন অভিযোগ করলে, দুলালদা বলটি হাতে নিয়ে খেলা বন্ধ করে দিতেন; সেই কারণে, আমি একরেবারেই চুপ থাকতাম।

দুলালদার চাচাতো বোন মালতী আমার সাথে পড়তো, সে খেলা দেখতো; মাঝে মাঝে আমাকে বলতো,
-দুলালদা'র বিল্লিপনা তুই কি করে সহ্য করিস? তোকে ১ থাপ্পড় দিলে, তুই ২ থাপ্পড় দিবি; গায়ে গতরে তো তুই বড়!
-উনি আমার সিনিয়র, আর খেলার সময় কিছু নিয়ে উনার সাথে লাগলে, উনি খেলা বন্ধ করে দেবেন।
-তোকে তো দুলালদার চামচাগুলোও পিটায়!
-আমার গায়ে লাগে না।

আসলে, সাধনদা ও মন্টুদা আমার ১ ক্লাশ উপরে পড়লেও, শারীরিকভাবে আমার চেয়ে ছোট ছিলেন; আমার মুখে থাপ্পড় দেয়ার চেষ্টা করলে, আমার কাঁধে লাগতো। ক্লাশ থ্রি'তে উঠার কয়েকদিন পরে, একদিন আমি গোল করার পর, দুলালদা সেটা মানেনি; আমি হাসলাম; দুলালদা রেগে আমাকে জোরে ঘুষি দেয়ার চেষ্টা করার সময়, আমি কিভাবে হাত দিয়ে ঠেকাতে গিয়ে, উনার ডান হাতের বুড়ো আংগুল মচকে যায়; আংগুলের গোড়ালী ফুলে গেছে; খেলা বন্ধ, পরেরদিন ক্লাশে উনি লিখতে পারছিলেন না; মৌলভী সাহেবের ক্লাশ ছিলো, উনি কারণ জানতে গিয়ে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পান, আমি আংগুলে ব্যথা দিয়েছি। ব্যাপার গেলো হেডমাষ্টারের কাছে, জুনিয়র ছেলে সিনিয়রের গায়ে হাত তুলেছে, ভয়ংকর সমস্যা। হেড মাষ্টারের অফিসে গিয়ে দেখি দুলালদা দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ব্যান্ডেজ। হেড মাষ্টার দুলালদাকে জিজ্ঞাসা করলো করলো,
-ব্যাপার কি?
-স্যার, খেলার সময়, এই ছেলে আমাকে ব্যথা দিয়েছে!
হেডমাষ্টার সাহেব বললেন,
-টিফিনের সময়, তোমরা ফুলবল খেল, আমি অফিসে বসে দেখি; তুমি ঐ ছেলেকে সব সময় থাপ্পড় দাও; এখন তুনি সামান্য ব্যথা পেয়েছ মাত্র; অভিযোগের কিছু নেই, যাও।

দুলালদা হয়তো অভিযোগ করতে চাহেননি, লিখতে না পারার কারনে, এবং মৌলভী স্যারের কারণে, উহা বিচার অবধি গড়ায়েছে; দুলালদা মনে করেছেন যে, উনি সঠিক বিচার পাননি; খেলা টেলা সব বন্ধ। আমার ঘরে বল ছিলো; কিন্তু চলিত নিয়ম ভেংগে, বল এনে খেললে উহা গ্রহনযোগ্য হবে না; তাই সবাই চুপচাপ, ২ দিন কেটে গেছে।

শুক্রবার, স্কুল বন্ধ, আমি বাজার করতে গেছি। বাজারে ঢুকার মুখেই দুলালদার বাবার ফার্মেসী; ফার্মেসীর সামনে একটা বেন্চ ছিলো; উহাতে দুলালদা, সাধনদা, মন্টূদা, দুলালদার বোন, কল্পনা ও মালতী বসে আছে; বাজার বারে ওরা ওখানে বসে, দুলালদার বাবা এটাসেটা খেতে দেয়, ওরা কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। দুলালদার বাবাকে আমি অনেকদিন থেকেই জানি, উনি স্হানীয় ইউনিয়ন কাউন্সেলের মেম্বার ও ফার্মেসী ব্যবসা করেন, ভদ্রলোক। দেখা হলে নমস্কার দিই। আমি উনাদের দোকান পেরিয়ে একটু আগ্রসর হতে, দুলালদা পেছন হতে ডাক দেয়,
-এদিকে আয়, বাবা ডাকছে তোকে।
আমি গিয়ে নমস্কার দিয়ে দাঁড়ালাম। উনি একজন লোককে ঔষধ বুঝায়ে দিচ্ছিলেন। উনাদের চাকর ছেলে ছিলো দোকানে, ওকে বললেন, মিষ্টি আর চা আনতে। এরপর আরো ২/৩ জন কাষ্টমার এলো, বাবু ব্যস্ত; আমাকে ইশায় বসতে বললেন; আমি দাঁড়িয়ে আছি। বাবু কাজ সেরে বললেন,
-দুলাল, এই ছেলে তোকে ব্যথা দিয়েছে?
-হ্যাঁ, বাবা।
বাবু সবাইকে মিষ্টি তুলে দিলেন; আমাকে দিলেন ২টি। আমাকে ইশারা দিলেন খেতে।
সাধনদা বললো,
-কাকাবাবু, এটা দস্যি ছেলে!
-তোমাকেও ব্যথা দিয়েছে এই ছেলে? বাবু জিজ্ঞাসা করলেন।
এবার মন্টুদা মুখ খুললেন,
-কাকা, এই ছেলে আমাদের ৩ জনের সাথেই লেগে যায়!
-ও একা তোমাদের ৩ জনের সাথে লেগে যায়? তা'হলে, ওকে তো ৩টি মিষ্টি দিতে হয়! তোমরা ৩ জন যদি ওর সাথে পেরে না উঠ, আমিও ওর সাথে পেরে উঠবো না।
ওদের উৎসাহ কমে গেলো; বিমল বাবু বললেন,
-শোন, পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা; আমি কোন রকম অভিযোগ শুনতে চাই না।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:১২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: স্কুল জীবন আসলেই অনেক মজার ছিল। তোকে আমার স্কুল জীবনে বই নেওয়ার জন্য কোন ব্যাগ ছিল না । পায়ে জুতো ছিল না।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


গরীব দেশে কিসের জুতা, কিসের ব্যাগ; আমাদের সময়, শতকরা আশীজন একদিনের জন্যও স্কুলেই যেতে পারেনি। তবে, তখন ম্যাঁওপ্যাঁও চিঁছকাদুনে ইত্যাদি কম ছিলো!

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:৪০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: স্কুল জীবন আসলেই অনেক মজার ছিল। তবে আমার স্কুল জীবনে বই নেওয়ার জন্য কোন ব্যাগ ছিল না । পায়ে জুতো ছিল না। আমাদের কেউ কেউ রুমাল দিয়ে বই খাতা বেঁধে নিত। আমাদের বন্ধ ছিল রবিবার। এরশাদ সাহেব উহা শুক্রবার করে দেন।

আগের মন্তব্যে তবে র স্থলে তোকে টাইপ হওয়ায় বানান ভুলের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাকে মার্জনা করিবেন।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমি ধরে নিয়েছি যে, "তবে" শব্দটা টাইপোর কারণে, অন্য শব্দ হয়ে গেছে, চিন্তার কিছু নেই।

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৭:২৬

বলেছেন: শেষ লাইনে আপনার সবসময় মুন্সীয়ানাটা গল্পের জৌলুস বাড়িয়ে দেই।
এমন পিতা কয়জন আছে ওারলে বাপ বেটা একসাথে ঝগড়া লেগে যায়।।


পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা - এখন তো খেলা হয় মোবাইলে!!!

২০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


মোবাইলের ফলে, মাথা বড় হয়ে যাবে, হাত-পা ছোট হয়ে যাবে; মানুষ কিম্ভুতাকারের জীবে পরিণত হবে।

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ছোটবেলায় আমি খুব ভালো ফুটবল খেলতাম।
মালতি এখন কোথায় আছেন?

বাঙ্গালীর অভিযোগের শেষ নেই। বাঙ্গালী অভিযোগ শুনতেও ভালোবাসে। প্রতিটা অফিসে আদালতে একটা অভিযোগ বাক্সও থাকে।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


মালতির বিয়ে হয়েছিলো আগরতলায়, আশাকরি ভালো আছে! অভিযোগ বাংগালী জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য

৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:২৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: এখন হলে পাড়া প্রতিবেশি স্কুল সব মিলে দুই দল হয়ে মারামারি কোপাকোপি লেগে যেত। এত আদরে মিষ্টি খাওয়া হতো না।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের সমাজ দ্রুত বদলে গেছে; তবে, মানুষ মানুষকে সন্মান করছে না: মানুষ নিজ পরিবারের বাহিরে অন্যদের জন্য কিছু করতে চাচ্ছে না

৬| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:০১

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: স্কুলে আপনার কোন নিক নেম ছিল না? B-))

২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


না, কোন নিক ছিলো না তখন।

৭| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:২৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আমাদের কেউ কেউ রুমাল দিয়ে বই খাতা বেঁধে নিত। আমাদের বন্ধ ছিল রবিবার। এরশাদ সাহেব উহা শুক্রবার করে দেন।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের সময়ও শুক্রবার বন্ধ ছিলো, বৃহস্পতিবার ১২টা অবধি ক্লাশ থাকতো। বুকব্যাগ ইত্যাদি ছিলো না তখন।

৮| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৫৪

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: আপনিতো গায়ে গতরে বড় ছিলেন, তো দুলালদাকে কোন এক চিপায় নিয়ে দু-চার ঘা দিয়ে দিতেন :P :P (মজা করলাম)

দুলালদার এখন কি খবর? দেখা সাক্ষাৎ হয় নাকি দেশে আসলে?

২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


দেখা হয়, বড় ব্যবসায়ী ছিলেন এক সময়; চিটাগং নিুমার্কেটে দোকান ছিলো; চাঁদাবাজদের জ্বালায় ছেড়ে দিয়েছেন; এলাকার বাজারে দোকান (রিয়েলষ্টেট) আছে, দোকানের ভাড়া পান।

৯| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ২:০৩

বঙ্গদুলাল বলেছেন: প্রানবন্ত স্মৃতি।আপনি গ্রামে কত ক্লাস অবধি ছিলেন?

২১ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


১০ম শ্রেণী অবধি। কলেজের ২ বছর আমি শহরে পড়লেও, মুলত: গ্রামেই ছিলাম।

১০| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:১৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: "টিউব-অয়েলের পানি খেয়ে ফুটবল খেলেছি" - সত্যিই, সে সময়ে আমাদের খেলাধুলার স্পৃহার কাছে ক্ষুধা পরাজিত হতো।
"তোকে তো দুলালদা'র চামচাগুলোও পিটায়" - আপনার প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা থেকেই মালতী এ কথাগুলো বলেছিল। মানুষের মন, স্নেহ-ভালবাসার কথা মনে রাখে, দুর্ব্যবহারের কথাও যেমন রাখে।
বিচার-বিবেচনায় হেডমাস্টার এবং বিমল বাবু এর ন্যায়পরায়ণতা ভাল লেগেছে।

২২ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের জাতির মানুষের সাধারণ জ্ঞান'এর লেভেল মাঝে মাঝে কমে বাড়ে; আমাদের শৈশবে, শিক্ষক ও সমাজের গুরুজনদের সাধারণ জ্ঞান আজকের চেয়ে ভালো ছিলো; আশাকরি, বর্তমান স্তর থেকে আমরা উপরে উঠতে পারবো আবারো।

১১| ২২ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৪৩

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সময় সবকিছু পরিবর্তন করে দেয়।

২২ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


তা ঠিক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.