নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারু মৃন্ময়

চারু মৃন্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প - একলা জ্বলো রে (পর্ব-১)

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮


রীতা সকাল থেকে চেস্টা করছে মেজাজ ভালো রাখতে । মেজাজ ভালো রাখাটা জরুরী তার। টেলিকম কোম্পানির লিখিত পরীক্ষা আর দুইটা ইন্টারভিউ পার করে আজ চুড়ান্ত ইন্টারভিউ এর ডাক পেয়েছে। কিন্তু কিছুতেই তা পারা যাচ্ছে না। মেজাজ ঠিক রাখতে সে নিজেকেই নিজে গান গেয়ে শোনানো শুরু করলো-
‘যদি সবাই ফিরে যায় , ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়—
তবে পথের কাঁটা
ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে।
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।’

এইটা সে শিখেছে তার শিক্ষক তোফাজ্জল কবির এর কাছে।
স্যার বলেছিলো- মাগো, কখনো খুব অসহায় লাগলে, কষ্ট পেলে- নিজেকে নিজে এই গান শোনাবা। আর কখনো সাহস হারাবা না । একজন মানুষের অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে গো মা! কিন্তু সবাই সে ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে না । মাগো, আমি জানি তুমি সেটা পারবা। তুমি একদিন অনেক বড় মানুষ হবা গো মা । কখনো হার মানবা না।

গান ধরতেই তার স্যার এর কথা মনে পড়ে গেলো। -ইস যদি আজ স্যারকে সালাম করে যেতে পারতাম!

রীতা কেনো যেনো উপরের দিকে তাকায়, যেখানে ধুলো ময়লায় কালো হয়ে থাকা ভাংগা বেড়ায় ঝুল-ঝুল অজস্র মাকড়শার জালের ফাঁক গলে টিনের চালের ফুটো দিয়ে তারার মতো আলো দেখা যায়।

-স্যার আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার চাকুরিটা যেনো হয়ে যায়। স্যার দেখেন আমি হার মানি নাই এখনো। আমি আপনার কথা রাখার চেস্টা করছি স্যার। স্যার, আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন! আপনার দোয়া আমার খুব দরকার স্যার। যেখানেই থাকেন আমার জন্য দোয়া করবেন।

এই কথা ভাবতেই তার হুহু করে কান্না পেয়ে গেলো। দশ ফিট বাই বারো ফিট এই ঘরে লুকিয়ে কান্না করার কোনো যায়গা নাই। দেয়ালের দিকে ঘুরে হাতের গামছাটা মুখে চেপে কান্না চাপা দেয়ার চেস্টা করতে থাকে রীতা। ছোটো জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে ছয় ঘরের বাসিন্দাদের জন্য বরাদ্দ একমাত্র বাথরুম এর সামনে দুই জন অপেক্ষায়, পুবের ঘরের দিলু মিয়া আর পাশের ঘরের সফুরা । সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে বেরুতে না পারলে বিরাট অসুবিধায় পড়ে যেতে হবে । বাসে ওঠা তো বিরাট যুদ্ধ । ছেলেদের সাথে গায়ের জোরে ঠেলে ঠুলে বাসে উঠা। উঠতে গিয়ে , বাসে দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে- গায়ে নোংরা ছেলে-পুরুষের নোংরা স্পর্শ, রাস্তার জ্যাম। আর দুরত্ব ও তো কম না যে হেঁটে যাবে।

রীতা নিজেকে সামলে গামছা-কাপড় নিয়ে ওড়না টা ভালো মতো পেঁচিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। দিলু মিয়া সুযোগ পেলেই চোখ দিয়ে রীতাকে খায় যেনো। দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে আপনা আপনি, অন্তত বাথরুম সহ একটা বাসা ভাড়া যে কবে করতে পারবে! আর নিজের একটা ছোটো রুম।

কান্নাটা ভালো কাজ করেছে। তার মেজাজ খারাপ কমে যেতে থাকে। মেজেজ খারাপ হওয়ার কারন ছিলো বিবিধ। কাল টিউশিনি শেষে ফিরতে দেরী হলো। দেরী করার কারন হলো তার ছাত্রী উম্মে সাফা। রীতা ইন্টারভিউ এর ডাক পাওয়ার পর উম্মে সাফাকে বলেছিলো সে কথা । বলার প্রয়োজন ছিলো । এর আগের ইন্টারভিউ-এ গিয়ে দেখেছে সবাই তার দিকে চোরা চোখে তাকাচ্ছে। তাকানোর কারন বের করতে ও রীতার সময় লাগেনি। কারনটা ওর পোষাক আর সাজগোজ। ও পরেছিলো একটা শাড়ী আর সাজ বলতে কাজল আর টিপ। কখনো পার্লারে যায় নি রীতা; যাবার সামর্থ হয় নি, ইচ্ছাও হয়নি। তার ভ্রু প্লাক করা না, তার মুখের আর হাতের লোম দৃশ্যমান। চুলে মুখে নেই কোনো রঙ এর ছোঁয়া। আর ওই শাড়ী পরার বুদ্ধিটা নিজেই বের করেছিলো চলনসই ভালো একটা যুগচলতি জামার অভাবে। বোর্ড রুমের সামনের লবিতে ইন্টারভিউ দিতে আসা অন্য ছেলে মেয়ে সবাই ছিলো বড় ঝা-চকচকে আর হাল ফ্যাশনের। ওইখানে সবার চেয়ে তাকে যে আলাদা লাগছিলো তা আর কারো বলে দেয়ার দরকার ছিলো না । শহরতলীর নানা বস্তি এলাকায় ভেসে ভেসে বেড়ে উঠা রীতা নিজের শ্রম আর মেধার জোরে সুন্দর প্রমিত বাংলা বা ইংরেজীতে কথা বলতে জানে, পড়ার ও জানার পরিধিও তার একেবারে কম না। যদিও সাজগোজ তার একেবারেই ভালো লাগে না , তবু সেদিন ওই ইন্টারভিউ এ অমন চকচকে ছেলেমেয়েদের মাঝে নিজের পোষার আর সাজকে নিজের দৈনতার সাইনবোর্ড মনে হচ্ছিলো তার। ভয় হচ্ছিলো এই পোষাক-আশাক এর কারনে না তার চাকুরীর সম্ভাবনা কমে যায়, শেখ সাদী’র পোষাক এর গল্পটা খুব মনে হচ্ছিলো তার। সেদিন ইন্টারভিউ শেষে ঠিক করেছিলো এর পর চুড়ান্ত ইন্টারভিউ-এ ডাক পেলে সে চলনসই সাজ পোষাকেই যাবে। সে জন্য যত কস্ট করতে হোক না কেনো।
(চলবে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: চলুক.........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.