নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কান্না হাসির এই খেলা ঘরে।আমি এক জীবন্ত মাটির পুতুল।সব খেলা সাঙ্গ হবে একদিন।অপূর্ণ স্বপ্নদের কাকুতি থেমে যাবে।মায়ার পৃথিবীর সাথে হবে চির ছাড়াছাড়ি।

ক্লে ডল

বিধাতা তোমার দয়ার আশায় ই প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের শেষে নতুন স্বপ্ন বুনি।

ক্লে ডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিনের চালে জন্মদিন।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪




অজ্ঞাত কারণে মূর্ছনার খুব ভোরে, সূর্যদয়ের সময় জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেতে ইচ্ছা হয়। বারটা এক মিনিটে শুভেচ্ছার রীতি তার মোটেও পছন্দ নয়। "শুভ জন্মদিন" বলে অনেকেই সৌজন্যতা দেখায় কিন্তু “ধন্যবাদ" বলে সে ভদ্রতাটুকু দেখাতে পারেনা। মোবাইলে কিছু ঘনিষ্ঠজনের শুভেচ্ছা বার্তা দেখে গা ঘিনঘিন করে! যেন বার্তা পাঠাতে হবে তাই পাঠায়। আর তার চেয়ে বেশি ঘিনঘিন করে উত্তরে “থ্যাংকস” বলতে ! এসব সাতপাঁচ ভেবে, তিনটা মোবাইলই একে একে বন্ধ করল রাত এগারোটার দিকে।
----------
আজকে যেহেতু জীবনের আরো একটি বছর পূর্ণ হল।তাই সৃষ্টিকর্তার প্রতি সে অনেকখানি কৃতজ্ঞ। পাপ পূণ্যের যোগ বিয়োগ করে, উদ্বৃত পাপের জন্য ক্ষমা আর ঘাটতিতে থাকা পূণ্যের প্রতিদান উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করল। কাজটা আজকেই করবে, সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘর থেকে বের হয় মূর্ছনা।
“আমার ভাল আমার চেয়ে আর কে বেশি চাইতে পারে! আমাকে আমার চেয়ে ভাল উইশ করতে কেউ পারবে না!” মনে মনে দু'বার বলল।
খুব কাছের দু'টি মানুষই তাকে কোন জন্মদিনে উইশ করেনি। মা বাবা! বুঝতে শেখার পর থেকে প্রতিটা জন্মদিনেই সে একই গল্প শুনে আসছে। তার জন্মের সময় প্রকৃতির অবস্থা কেমন ছিল, কি যানবাহনে মা হসপিটাল গিয়েছিল, জন্মের পর তার গায়ের বর্ণ কেমন ছিল ইত্যাদি শুনতে শুনতে দাড়ি কমা মুখস্ত হয়ে গেছে ওর। কিন্তু সেগুলো বলার সময় মানুষ দু'টির মুখ এত উজ্জ্বল থাকে! চোখ দিয়ে এত আনন্দ বের হয়! যে মূর্ছনার বুঝতে বাকী থাকে না, সে দুনিয়ায় আসাতে এক আকাশ আনন্দ কোলে পেয়েছিল তারা।
উজ্জ্বল মুখ দুটো দেখা আর সেই পরিচিত গল্পের বর্ণনাই জন্মদিনের অমূল্য উপহার মনে করে ও ।
মাকে বলল,
:আমি একটু পুরানো বাড়ী যাচ্ছি।
:কেন?
:জানোয় ত! ও বাড়ীর মায়া আমি ছাড়তে পারিনা। বেড়িয়ে আসি।
অন্য কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে মূর্ছনা বের হয়ে গেল।
ওর শৈশবের পুরোটায় এ বাড়ীতে কেটেছে। দাদার করা অনেক পুরোনো বাড়ী, দোতালায় থাকত ওরা। এখন শূণ্য। পোড়ো বাড়ী বলা যায়।
উঠান থেকে সিঁড়ি এসেছে দোতালায়,সেটা বেয়ে মূর্ছনা উঠে এল উপরে।কিন্তু তাকে আরো উপরে উঠতে হবে, একেবারে টিনের চালে।
এলবেস্টারের টিন দিয়ে ছাদ বানানো। ছোটবেলায় মন খারাপ হলে বা খুব আনন্দ হলে এই টিনের উপর বসে থাকত মূর্ছনা। খুব প্রিয় জায়গা ওর। টিভি এন্টেনার বাশের গিরার উপর পা দিয়ে, পাঁচ ছয় ধাপে উঠে যেত উপরে। কিন্তু আজ পারছে না। এন্টেনা নেই! বাশ নেই। সেও আর ছোটটি নেই। এই না পারা মর্মান্তিক লাগে ভীষণ ওর কাছে। “কেন যে সেই ছোটটি রইলাম না!” কপাল চাপড়ে নিজেকেই নিজে বলে।
কিন্তু যে করেই হোক আজকে উপরে উঠবে। আজকেই যে কাজটা সারতে চায় ও!
ভূপাতিত হওয়া আর উপরে ওঠার পঞ্চাশ পঞ্চাশ সম্ভাবনা নিয়ে,অবশেষে বুড়ো লিচু গাছটা বেয়ে উঠে গেল ছাদে।
ভীষণ ফুরফুরে মেজাজ! কার্ণিশে বসে সকালের ঠান্ডা বাতাস গায়ে মেখে, দূরে রাস্তায় লোক চালাচল দেখছে আর শৈশবের স্মৃতি হাতড়াচ্ছে।“বড় মধুময় ছিল সে সময়।” বিড়বিড় করে বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
ভাবছে, কাজটা এখন করা যাক। জন্মদিন! প্রিয় জায়গা! সুন্দর পরিবেশ! বেশ হবে.......!

মা বাবা, সমাজকে বড়ই ভয় পায়। বাধ্য হয়ে মূর্ছনাকেও ভয় করতে হল। নতুবা কাজটা বাড়ীতেই সমাধা করত।
“পোড়ো বাড়ী ভূতের আড্ডা, এসব ভূতেরই কারসাজি!” কত কাহিনী বের করবে লোকে! ভেবে ভীষণ হাসি পেল মূর্ছনার। কিন্তু আশ্বস্ত হল এই ভেবে যে মা বাবাকে অতিরিক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না “কেন এমন হল?”। সব দোষ ভূত বাবাজির কাঁধে যাবে।

সব পেয়েও যেন কিছু পাইনি! মুখে হাসির ঝর্ণা অথচ মনে কান্নার নদী বয়ে চলা। এসব টানাপোড়ন আর নিতে পারছে না মূর্ছনা! তাই এই সিদ্ধান্ত।
কোমরে গোজা শিশিটা বের করে, অবশিষ্ট না রেখে পুরো তরলটুকু খেয়ে নিল মূর্ছনা। প্রমাণ নিঃশেষ করার জন্য কাচের শিশিটা কার্ণিশে ঠুকে গুড়ো করে ফেলল।
আর পারছে না ও বসতে! অমানিশার চেয়ে শতগুণ কালো আধার নেমে এসেছে চারদিক। দুচোখ বেয়ে নেমেছে বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখা সেই নীল নদী। সর্বশক্তি দিয়ে একটা নিশ্বাস টেনে নিয়ে বলে আর দেরি নয়! নীরবে পা বাড়ালো টিনের বাইরে।

মূর্ছনার রক্তাক্ত নীথর দেহ পড়ে আছে বাড়ীর পিছনের ঝোপে!
-----------
হাপাতে হাপাতে ঘুম ভাঙ্গে মূর্ছনার। ভোর পাঁচটা বেজে দশ মিনিট………

জীবনের “না পাওয়া” রা এসে নতজানু হয়ে বলতে থাকে আমরা “পাওয়া” হয়ে আসব একদিন, হয়ত অন্যবেশে! ওর কষ্টরাও পালিয়ে যায় বেচে আছে সেই সুখের দাপটে!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩

মার্কো পোলো বলেছেন:
অসাধারণ!
স্মৃতি রোমন্থন। ভাল লাগলো।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৫

ক্লে ডল বলেছেন: ধন্যবাদ।

এখানে স্মৃতি রোমন্থন হয়েছে? আমার ত মনে হয় না।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: এটা মূর্ছনার গল্প নাকি স্বপ্ন ।।।। বেশ কিছু সুন্দর Sbdপ্রয়োগ হয়েছে বাট কোথায় যেনো অস্পষ্টতা।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৪

ক্লে ডল বলেছেন: আমার ব্লগে স্বাগতম!

মূর্ছনার গল্পও হতে পারে, আবার স্বপ্নও। আপনি যেকোন একটা ধরে নিতে পারেন। :)

শুভ কামনা রইল।

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:০৮

সাহসী সন্তান বলেছেন: গল্পটা ভাল ছিল! উপস্থাপনাটাও চমৎকার! শুধু ফিনিসিংটা আর একটু বিস্তারিত হলে পোস্টের মান বাড়িয়ে দিত! তারপরেও বলবো আপনি চমৎকার লেখেন! প্রথম দিক থেকে পড়তে পড়তে আসছিলাম আর কি মন্তব্য করা যায় সেটা ভাবছিলাম!

তবে হঠাৎ করে মূর্ছনার ঘুম ভাঙাতে সব আউলাইয়া গেছে! অবশ্য এইটাই ভাল হইছে! কেননা সত্যি বলতে আমার কাছে গল্প অথবা বাস্তব কোন অবস্থাতেই অভাগীর মৃত্যু কাম্য নয়!

শুভ কামনা মাটির পুতুল!

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯

ক্লে ডল বলেছেন: তবে হঠাৎ করে মূর্ছনার ঘুম ভাঙাতে সব আউলাইয়া গেছে!

আউলাইয়া গেছে জেনে ভাল লাগল! এতেই বোধ করি লেখকের সার্থকতা। :)

অনেক অনেক ধন্যবাদ আন্তরিক মন্তব্যের জন্য। আপনার জন্যও শুভ কামনা! :)

৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭

ক্লে ডল বলেছেন: আপনার ভাল লাগায় অনুপ্রেরণা পায়। :)

৫| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭

সামিয়া বলেছেন: চমৎকার গল্প প্রথমে ধরতেই পারিনি ও কি করতে যাচ্ছে, বেশ লাগলো।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯

ক্লে ডল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু! গল্পটি পড়ার জন্য এবং ভাল লাগা জানানোর জন্য! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.