নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কান্না হাসির এই খেলা ঘরে।আমি এক জীবন্ত মাটির পুতুল।সব খেলা সাঙ্গ হবে একদিন।অপূর্ণ স্বপ্নদের কাকুতি থেমে যাবে।মায়ার পৃথিবীর সাথে হবে চির ছাড়াছাড়ি।

ক্লে ডল

বিধাতা তোমার দয়ার আশায় ই প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের শেষে নতুন স্বপ্ন বুনি।

ক্লে ডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রৌঢ়ত্বের যাত্রা

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০০



আমার সেদিনকার অস্থিরতাকে ইশারায়, কথ্য অথবা লেখ্য, কোন মাধ্যমেই প্রকাশ করতে পারব না। সেকি আনন্দের অস্থিরতা? নাকি পাপবোধের? নাকি হতাশার? তাও বুঝতে পারছিলাম না। রাহির হাতের প্রিয় ফুলকপির পাকোড়া ভীষণ বিস্বাদ লেগেছিল। বারান্দায় বসে রাতকে মনে হচ্ছিল সীমাহীন অন্ধকার কুয়া। আর আমি কেবলই ডুবে ডুবে যাচ্ছি।

অদ্ভুত এক ছিদ্রপথে অতীতের বায়স্কোপে চোখ রেখে, পঁয়তাল্লিশ বছর আগেকার দিনগুলি একে একে যেন ছবির মত দেখছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিখার সাথে প্রথম দেখা। প্রেম। ওর পরিবার থেকে প্রেমে বাধা। একে একে সব। সব দেখছিলাম।

আমাদের প্রেমে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল শিখার মা। আমার মত একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের সাথে মেয়ের মেলামেশা ভদ্রমহিলা কোনভাবেই মেনে নিতে পারলেন না। বাংলা সিনেমার মত মেয়েকে গৃহবন্দী করে রাখলেন। আমি যে রাতে ওদের বাড়ীর পাঁচিল টপকে, সুপারি গাছ বেয়ে শিখার ঝুল বারান্দায় গেলাম, আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল ও। কিছুই ঠিক করতে পারব না জেনেও ওকে আশ্বাস দিয়েছিলাম, “সব ঠিক হয়ে যাবে” বলে। কয়েক মাস পরে শিখাকে আমেরিকায় ওর ফুফুর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হল। আমিও পড়াশোনায় মনোযোগী হলাম। একে একে চাকরি পেলাম। রাহিকে নিয়ে সংসার পাতলাম।

শিখার সাথে যোগাযোগ যে একেবারে চুকেবুকে গেছে এমনটা বললে ভুল হবে। আমেরিকা গিয়ে ও চিঠি দিত, আমিও দিতাম। দিনে দিনে চিঠি দেওয়া নেওয়ার সময়ের ব্যবধান বেড়েছে। সময়, পরিস্থিতি, বাস্তবতা আমাদের সম্পর্কটা স্রেফ বন্ধুত্ব বানিয়ে দিয়েছিল। আমরা দু'জন ব্যাপারটা সহজভাবে মেনেও নিয়েছিলাম। এতটা বছর পেরিয়ে প্রযুক্তির এই যুগে এসে কালে ভাদ্রে ফেসবুকে বন্ধুত্বসুলভ হায়, হ্যালো চলত। সেভাবেই চলছিল।

কিন্তু সেদিন কি এক বিস্ময়কর অস্বাভাবিক কারণে আমি শিখাকে ফোন কল দিয়ে বসলাম। তারপর থেকে আমাদের প্রতিদিন কথা হচ্ছে আর আমার অস্থিরতার শুরু।।
প্রথম কিছুদিন আমাদের আলাপ রাহি, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি, সংসার আর সৌজন্যতাসূচক কথাবার্তায় সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সে সীমা অদৃশ্য হয়েছে।
শিখা দেশে আসলে আমরা কোথায় দেখা করতে পারি। কতক্ষণ একসাথে ব্যয় করব। শিখা কতদিন থাকবে। আলোচনার বিষয় হিসেবে এসবই এখন গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিটা মুহূর্তকে মহাকাল মনে হচ্ছে, বিমান অবতরণের মাঝেও আমি শিল্প খুজছি। এ যেন অস্থিরতা, আশঙ্কা , আবেগের চরম সীমা! আজকে সকাল নয়টা ত্রিশ মিনিটে শিখার বিমান ল্যান্ড করবে।

ইদানীংকালের স্থায়ী অপমানগুলো হয়ত ভূলুণ্ঠিত করতে পারব, সেটি ভাবতেই ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। অপমানই বলব। আমি দাঁত ব্যথার জন্য যখন ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার দাঁতটি ফেলে দিলেন। আমি বললাম
-ফেলে দেওয়া দাঁতের স্থানে আরেকটি দাত বাঁধিয়ে দিন।
-আসলে আপনার ফেলে দেওয়া দাঁতের দু' পাশের দাঁতও নড়ছে। বাঁধাবো কিসে? ওদুটো পড়ুক। একবারে বাধিয়ে দেব।
অপমানে ইচ্ছে হচ্ছিল। ডাক্তারের গালে ঘুষি দিয়ে তার সব দাত ফেলে দিতে!

কোমরের বেল্টে দু,তিনটা ঘর বেশি করা, চশমার কাচটা আরো পুরু বানানো, চুলে কলপ, খাবারে নিষেধাজ্ঞা এর সবই আমার কাছে করুন অপমান হয়ে বিঁধছে। যেদিন চাকরি থেকে অবসর নিলাম সকলের শুভেচ্ছাবাণী মনে হচ্ছিল অভিশাপ।যে যায়ই বলছিল আমি শুনছিলাম “আপনি অক্ষম। আপনার সময় শেষ”।

আমি আজ সক্ষমতা প্রমাণ করব। শিখাকে গাড়ীতে নিয়ে হোটেল ম্যাকপাইয়ের দিকে যাচ্ছি। ভিতরে ভিতরে ভীষণ মুষড়ে পড়েছি। একয়টাদিন যে উত্তেজনা, উদ্মাদনা, অস্থিরতা ছিল, শিখাকে দেখার পর দুপ করে যেন নিভে গেল। আমার হারানো দিনগুলোর প্রতিচ্ছবি ওর চোখে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম বিপত্নীক প্রৌঢ়া রমণীর স্রেফ একজোড়া ধূসর চোখ। সে চোখে আর কিছু আমি খুঁজে পাইনি।
“আমি আমার যৌবনের সেই দিনগুলো তোমার মাধ্যমে ফিরে পেতে চেয়েছি। প্রথম আলিঙ্গনের পর বুকের সেই ঢিবঢিবানি শুনতে চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই সতেজতা অনুভব করতে চেয়েছি ঠিক পঁয়তাল্লিশ বছর আগের মত করে। বার্ধক্যের স্নিগ্ধতা আমি স্পর্শ করতে পারছি না, যৌবনের দৈন্যতা আমাকে ক্লান্ত করছে”। কথাগুলো আমি শিখাকে বলতে পারিনি।

গাড়ীতে শিখা ওর যাত্রা পথের বর্ণনা, আর আগামীদিনগুলো নিয়ে নানা আলাপচারীতায় মুখরিত। আর আমি নীরবে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:১৮

ওসেল মাহমুদ বলেছেন: ভালো লেগেছে !

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৩৪

ক্লে ডল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হলাম। :)

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:২৬

ব্লগ মাস্টার বলেছেন: ভালো লাগল ।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৩৯

ক্লে ডল বলেছেন: ধন্যবাদ ব্লগ মাস্টারর। শুভকামনা জানবেন।

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৬:৫৩

প্রাইমারি স্কুল বলেছেন: “আপনি অক্ষম। আপনার সময় শেষ”।
ভালো লেগেছে

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৬

ক্লে ডল বলেছেন: ধন্যবাদ প্রাইমারি স্কুল।

ভাল থাকবেন।

৪| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৮

বিজন রয় বলেছেন: সময় চলে যায়, বদলে দিয়ে যায় সভ্যতাকে, সমাজকে, মানুষকে। এটা আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই। এই গল্পের নায়কের তাই-ই হয়েছে।

যেমন আমি যদি আমার ছোটবেলার কোন বন্ধুর কথা মনে করি, যাকে অনেক দিন দেখিনি, তার মুখটা সেরকমই দেখি, যেটা শেষবার তাকে দেখেছিলাম।

আশংকা...... এই বানানটি ঠিক করে দিন।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

ক্লে ডল বলেছেন: মানুষ অনেক সময় নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে ছেলেমানুষির আশ্রয় নেয়।

বানান ঠিক করে নিয়েছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৫| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:০৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: স্মৃতির নাম বেদনার ফুল। সবাই জীবনে একবার না একবার ফেলে আসা দিনগুলো ফিরে পেতে চায়। খুব সুন্দর লিখেছেন।+++

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩০

ক্লে ডল বলেছেন: প্রৌঢ়ে এসে যদি বার্ধক্যকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা না হয় সে মর্মান্তিক বেদনার।

আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ রইল

৬| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০

রাতু০১ বলেছেন: সময় কথা বলে।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

ক্লে ডল বলেছেন: হ্যাঁ। সেটাই।

৭| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১৩

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: পড়ে ভালো লেগেছে +

শুভ কামনা রইলো ।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০৭

ক্লে ডল বলেছেন: ধন্যবাদ। প্লাসে অনুপ্রাণিত হলাম।

৮| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৫০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খুবই ভাল লেগেছে এই সুন্দর গল্পটি ।
শুভেচ্ছা রইল ।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৬

ক্লে ডল বলেছেন: ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী।
শুভকামনা জানবেন।

আপনাকে ব্লগে এখন কম দেখা যায়। ব্যস্ত আছেন হয়ত।

৯| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: একটা সময়ে এসে সব মানুষ বুঝি অক্ষম হয়ে যায়!
খুব সুন্দর লিখেছেন।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯

ক্লে ডল বলেছেন: বার্ধক্যের অক্ষমতা হয়ত করুন বিষাদ সৃষ্টি করে।

ভাল থাকবেন মোস্তফা সোহেল।

১০| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ

১২ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:১০

ক্লে ডল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.