নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কান্না হাসির এই খেলা ঘরে।আমি এক জীবন্ত মাটির পুতুল।সব খেলা সাঙ্গ হবে একদিন।অপূর্ণ স্বপ্নদের কাকুতি থেমে যাবে।মায়ার পৃথিবীর সাথে হবে চির ছাড়াছাড়ি।

ক্লে ডল

বিধাতা তোমার দয়ার আশায় ই প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের শেষে নতুন স্বপ্ন বুনি।

ক্লে ডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই নিয়ে বকর বকর - মন্মথের মেলানকোলিয়া

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:০৭


লেওপোলদো লুগোনেস্। আর্জেন্টাইন একজন লেখক। তাঁর লেখা “ইসুর” নামের একটা গল্প পড়েছিলাম। একটি বানর এবং তার প্রভুর সম্পর্ক, একটা পশুর মাঝে মানবিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রভুর সে বৈশিষ্ট্যকে পূর্ণতা দানের প্রাণান্ত চেষ্টা এসব নিয়ে গল্পটি লেখা। অসাধারণ এক গল্প ছিল।
মন্মথের মেলানকোলিয়াতে যখন বিট্টু নামের কুকুরের সাথে পরিচয় হয়, আমার সর্বপ্রথম ইসুরের কথাই মনে এসেছে। কোন পশুর মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করার সাহসিকতা দেখানোর জন্য ঔপন্যাসিককে সাধুবাদ জানাতেই হয়! যদিও শরৎচন্দ্রের “মহেশ” গল্পের সাথে হাসান মাহবুবের “মন্মথের মেলানকোলিয়া” উপন্যাসের সাদৃশ্যতা বা তুলনীয় কিছু নেই। তবু সে প্রসঙ্গ তোলা এই কথা বলার জন্য যে, বাংলা সাহিত্যে পশুকে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়ে কোন সাহিত্যকর্ম আমার ওই একটি ছাড়া চোখে পড়েনি।

এতো গেল চরিত্রের স্বাতন্ত্র্যতা। উপন্যাসের আর একটি বড় আকর্ষণীয় বস্তু হল বর্ণনার স্বাতন্ত্র‍্যতা।
“নামবিহীন একটি অধ্যায়” সহ অভিনব নামযুক্ত আরো ছ'টি অধ্যায় রয়েছে। লেখক কেমন যেন খেলেছেন, লিখেছেন আবার খেলেছেন। অধ্যায়ের মাঝে আবার ছোট পয়েন্ট। যা একটা নিজস্ব বর্ণনাভঙ্গি তৈরি করেছে।

“সমান্তরাল আখ্যান” এবং “জলের ভেতর ফুটফুটে অন্ধকার” অধ্যায় দুটো চমৎকার সাবলীল ছন্দে প্রবাহিত। এবং উপন্যাসে পাঠককে নিবিষ্ট করে রাখতেও সক্ষম। পাঠক কাজলীকে জেনেছে, তার একাকিত্বকে জেনেছে, কাজলীর রুদ্ধশ্বাস ব্যস্ততা অথবা নিঃসঙ্গ অবসর বুঝেছে এদু অধ্যায়ে। বিট্টুর শৈশব, কৈশোর, যৌবনে পদার্পন, কলির সাথে প্রেম। বিট্টুর অভিভাবক মিরু। কুকুর সম্পর্কে তার পড়াশোনা। সব এ দু অধ্যায়েরই ঘটনা।

তারপর “রূপান্তরের তেপান্তরে” এ চরিত্রদের খানিকটা রূপান্তর চোখে পড়ে। কলি গর্ভবতী হয়। কাজলী সিরাপ খায়, কাজলীর প্যানিক এ্যাটাকের অভিজ্ঞতা হয়। এখানে পাঠককে বুঝে নিতে হবে অধ্যায়ের শিরোনাম যেহেতু এই, সেহেতু অস্থির হওয়া চলবে না। লেখক আমাদেরকে তেপান্তরে(অধ্যায়ে) একটু ছুটিয়েই নেবেন। তাও বেশ তড়িঘড়ি করে ছুটাবেন।
এরপর “পাশমানবিক”। শুরুটা অসাধারণ! পশুর প্রতি মানুষের নিগ্রহকে এককথায় মানুষের পশুত্বকে ধারালোভাবে কটাক্ষ করেছেন। তবে সেখানে ডেক্সপোটেন, এবং এর কুফল সম্পর্কে বর্ণনাটা আরোপিত মনে হয়। উপন্যাসের ফ্লো এখানে কেমন যেন বাধা পায়।
“এসব তোদের মানায় না” অধ্যায়ে এসে উপন্যাস তার গতি আর ধরে রাখতে পারেনি।

প্রথম তিন অধ্যায়ে উপন্যাসের গতি ছিল স্বাভাবিক। তারপর দ্রুত পায়ে হেটে “নামবিহীন একটি অধ্যায়” থেকে একেবারে কেমন লাফিয়ে চলেছে! মহান শক্তিধর, বেনী দোলানো, তর্ক যুদ্ধ পাঠককে যেমন অনেক ভাবায় তেমন কোন সমাধানও আবার দেয় না।

“তো কি করা যায়? কিছু কুকুর মারা গেছে, একটি মেয়ে বিষণ্ণতায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে, কিছু মানুষ দেশছাড়া হচ্ছে। একটি ছেলের মন ভেঙ্গে গেছে কাঁচের মত, একটি খরগোশের পা ভেঙ্গে দিয়েছে কেউ। অনেক অনেক সমস্যা, অনেক অনেক সমাধানের জায়গা। একগুচ্ছ ঐশী আশীর্বাদ পাঠিয়ে দেয়া যায়? যেমন দুর্গত এলাকার আকাশ থেকে নাশপাতি ফলের বৃষ্টি হবে, অথবা মৃতকে জাগিয়ে তোলা?”


এই অধ্যায়টি আমার মতে সবথেকে সাহিত্যগুণ সমৃদ্ধ কিন্তু সবথেকে বিচ্ছিন্ন। এখানে কি করলে ভাল হত তা বলতে পারব না। তবে এখানে লেখক পাঠককে কোন সমাধান না দিন অন্তত বিচ্ছিন্নতা রোধে কিছু করতে পারতেন। উপন্যাসের সাথে তাল মিলাতে কেউ যে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন না, এর তো নিশ্চয়তা নেই।
তারপরও কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। কাজলী কি শুধুই নামে একজন নারী? কথাবার্তা, হাবভাব কিন্তু অনেকটা পুরুষসুলভ। বেনী দোলানো মেয়েটা আসলে কে? ……….. ..

ভিতরে ভিতরে সবাই যেমন একা, আবার ঘূর্ণায়মান এ পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে,উজ্জ্বল করতে সবাই ভীষণ ব্যস্ত। কারো জন্য কারো সময় নেই, এমনকি নিজের জন্য নিজেরও সময় নেই। নিজের জন্য একটু সময় বের করতে কাজলীর অভিনব বিজ্ঞাপনই প্রামাণ করে মানুষের মন, মনে মনে কতখানি ক্লান্ত এখন। মানুষের পাশবিকতার কাছে পশুও কতখানি অসহায় বিট্টু জানে।
মন্মথের মেলানকোলিয়া অর্থাৎ কামদেবের বিষাদে এসবকিছু মিলেমিশে একাকার। এবং গভীর থেকে গভীরতর কিছু। যার তল খুঁজতে ভাবতে হয়। শুধু ভেবেই যেতে হয়……….

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৩১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বইটা আমাকে একটা ঘোরের জগতে নিয়ে গিয়েছিল৷
হাসান মাহবুবকে আমি চিনি একজন গল্পকার হিসেবে। কিন্তু তিনি বেশি সফল ঔপন্যাসিক হিসেবেই, বলতে দ্বিধা নেই।
আপনার রিভিউটিও দারুন। চাচাছোলা। আমার ইদানিং চাচাছোলা লেখা ভাল লাগছে বেশি

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫১

ক্লে ডল বলেছেন: তার ইউনিক প্লট আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে। উপন্যাসও আর দশটা কমন উপন্যাসের মত হয়নি। এটিও একধরণের সফলতা।

"নামবিহীন একটি অধ্যায়" আসলেই একটি ঘোরের জগত।

শুভেচ্ছা জানবেন। :)

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭

বিজন রয় বলেছেন: গত বইমেলা থেকে কিনেছিলাম লেখকের অটোগ্রাফ সহ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫২

ক্লে ডল বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান অটোগ্রাফ পেয়েছেন। :)

ভাল থাকবেন বিজন রয়।

৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: ‘‘লেখকের কাছে বন্ধুত্ব হচ্ছে তার অজানা পাঠক।’

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৪

ক্লে ডল বলেছেন: হ্যাঁ। তাইতো!! লেখকের কাছে পাঠক হল প্রেরণা।

৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৩৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: প্রথমেই আমার ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন। এ পর্যন্ত যতগুলো রিভিউ পেলাম, তার মধ্যে আপনারটাই সবচেয়ে নির্মোহ। আপনাকে একটা কথা শেয়ার করি। আমার চোখের সামনে একদিন চারটা কুকুরছানাকে গাড়িতে পিষ্ট হতে দেখেছিলাম। ওটা নিয়ে একটা গল্প লেখার কথা ছিলো। পরে আরো কিছু ভাবনা মিলেমিশে উপন্যাস হয়ে গেলো। বিট্টু চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলতে আমাকে অনেক স্টাডি করতে হয়েছে। এদিকে সময় ফুরিয়ে আসছিলো। আপনার এবং আমার অপ্রাপ্তি এভাবেই জন্ম নিলো।

নতুন উপন্যাসের কাজ ধরেছি। তিন ভাগের এক ভাগ লিখেও ফেলেছি। এটা শেষ হবার পর আবার গল্পে ফিরবো। অনেক অনেক গল্প লিখবো। অনেকদিন গল্প লেখা হয় না।

ভালো থাকবেন।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৫০

ক্লে ডল বলেছেন: উপন্যাস লিখছেন!! খুব অনন্দের খবর!!

"প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত" থেকে ১ম গল্পটা পড়েছিলাম। নামটা মনে নেই। খুবই ভাল লেগেছিল। আপনার লেখায় বাঁক এসেছে হয়ত। বাঁক যেন উন্নততর দিকে প্রবাহিত হয়! সেই কামনা করি।

হ্যাঁ। অনেক অনেক লিখুন। পৃথিবীর বুকে আপনার পদচিহ্ন গভীর থেকে গভীরতর হোক।

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

আলোরিকা বলেছেন: বাহ! বইটি পড়ে আমারও একটা রিভিউ দেয়ার সুপ্তবাসনা ছিল । আধুনিক মানুষের ক্লান্তি , বিষাদ, ক্লেদ সবকিছুই যেন এখানে উঠে এসেছে । সেই সাথে জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখা ---মানুষের চোখে পশু বা পশুর চোখে মানুষ !

মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রাণী নিয়ে আমারও গবেষণা করতে ইচ্ছে করে ! এই যেমন পিঁপড়ে , মশা , মাছি ---আসলেই কি তুচ্ছ তাদের জীবন ? কি সহজেই পায়ের তলায় পিষে মারি পিঁপড়ে বা অন্য কোন প্রাণী --- কিন্তু সেটাও একটা প্রাণ , জীবন বা আত্মাই । তাই মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনও আপেক্ষিক -- কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ , কুকুর বা অন্য কোন প্রাণী সবই একই সমান্তরালে এসে যায় :)

ভাল থাকুন।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ক্লে ডল বলেছেন: আপনার জন্য সুনীলের কবিতা,
আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ
এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ
পরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা
আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা
করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।আমি আক্রোশে
হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি
অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)


আমার ভাল লাগার একটি উপন্যাস মন্মথের মেলানকোলিয়া। আপনার সুপ্তবাসনাকে জাগ্রত করুন। লিখে ফেলুন একটা রিভিউ। :)

অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন আলোরিকা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.