নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাতজাগা প্রহরী এবং একটি নেড়ি কুকুর

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৭

দু’জন ই চোর পাহারা দেয়। প্রহরী কে নিয়োগ দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। নেড়ি কুকুর কে নিয়োগ দিয়েছে প্রকৃতি!



সুনসান রাতে নিশ্ছিদ্র(!) আবেষ্টনী ভেদ করে নগরে ঢুকল চৌকস চোর!



প্রহরী বাঁশি বাজিয়ে তেড়ে এসে চোরের চোখের সামনে লাঠি ঘোরাতে লাগল!



নেড়ি ঘাও ও ও ও ও ...করে ছুটে এসে শ্বদন্ত ঝিকিয়ে চোরের চারিদিকে পাক খেতে লাগল!



চোর অনড়, অবিকার , নির্ভীক দাঁড়িয়ে আছে!!



প্রহরী বলল- তোর কত বড় সাহস! এই অভিজাত নগরী তে তুই চুরি করতে এসেছিস! জানিস এখানে কারা থাকে?নেড়ি বলল- প্রকৃতি র খাঁটি সন্তান আজো আমি! এই অভিজাত নগরে যখন কোন অসাধু তস্করের একটি পদক্ষেপ ও পড়ে ত আমার শরীরের বিশেষ ইন্দ্রিয়ে সেটা ধরা পড়ে। আমরা মত ‘তস্কর সনাক্তকারি’র চোখে ধুলা দিতে চাস! জানিস আমি ডাক দিলে মুহুর্তে আরো দশটা নেড়ি এসে তোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে!!



চোরের চোখ একটু ও কাঁপল না। বলল, দুজনের প্রশ্নের জবাব একসাথে দেয়া সম্ভব নয়। প্রহরী যেহেতু আগে প্রশ্ন করেছ তোমার প্রশ্নের জবাব আগে দেব। নেড়ির প্রশ্নের জবাব পরে দেব।



চোরঃ অভিজাত নগরী তে অভিজাত রাই থাকে। কিন্তু এরাও আমার মতই চোর!

প্রহরীঃ মুখ সামলে! আচ্ছা কিভাবে?

চোরঃ আমার চুরি’র কারন এবং পদ্ধতি সহজ। এদের চুরির কারন এবং পদ্ধতি দুটোই কঠিন!

প্রহরীঃ কি রকম?

চোরঃ আমি ক্ষুধা মেটানো’র জন্য চুরি করি। মানুষের ঘুম এবং অসচেতনতার সুযোগে তার বাড়তি টুকু টুক করে পেটে চালান করে দিয়ে আবারো ক্ষুধা লাগার আগে পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকি!

প্রহরীঃ আর ওরা?

চোরঃ ওরা চুরি করে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে। ওদের মধ্যেকার দুজনের কথা ধরা যাক। দুজনেরই পেট ভরানোর জন্য এক টুকরো করে মাংসের দরকার। একজন খামোকাই আরেক টুকরো মাংস তৃতীয় একজনের প্লেট থেকে চুরি করে আনবে অন্য কে দেখানোর জন্য যে আমি তোর চেয়ে বেশি মাংসাশী!

প্রহরীঃ ওদের চুরির পদ্ধতি?

চোরঃ খুব কঠিন তাত্ত্বিক পদ্ধতি! এক ধরনের ‘বিশ্বাস ট্রান্সফার’ বলতে পার!

প্রহরীঃ ভাই রে অত কঠিন করে বললে বুঝবার মত ঘিলু আমার মাথায় নাই! সহজ করে বল!

চোরঃ খুব বেশি সহজ করে বলা সম্ভব নয়। কারন বিষয় টা সহজ নয়! তুমি একেবারেই বুঝতে না পারলে অবশ্য বলে কাজ নাই!!

প্রহরীঃ বল না ছাই!!

চোরঃ ওরা যার থেকে চুরি করবে বলে টার্গেট করে তাকে বিশ্বাস করায় যে, তুমি যদি আমাকে চুরি করতে না দাও তাইলে তুমি নিজেও চুরি করার সুযোগ পাবে না এবং প্রতিযোগিতায় জিতবে না!



প্রহরী নির্বোধ চোখে নেড়ি কুকুরের দিকে তাকায়! নেড়ি কুকুর প্রহরীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। তারপর প্রশ্নবোধক চোখে চোরের দিকে তাকায়।



চোর নেড়ি কুকুরের সাথে কথা বলা শুরু করে।



চোরঃ আচ্ছা আমার যায়গায় যদি অভিজাত সমাজের কেউ হেঁটে যেত তাইলে ত তুমি ঘাউ করতা না তাই না!

নেড়িঃ বলেন কি!( চোরের এতক্ষনের দার্শনিক বক্তৃতা শুনে নেড়ি কুকুরের মনে তার সম্পর্কে শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছে) অভিজাত সমাজের কেউ হলে বরং ‘ কুঁই কুঁই’ করে তাকে বাসার দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসতাম!

চোরঃ দেখি এই নগরীর এমন একজন অভিজাতের নাম বলত যাকে দেখলে তুমি শ্রদ্ধায় ‘লেজ নিচু’ করে ফেল!

নেড়িঃ জনাব ঠাটারি খান! বিশিষ্ট অভিজাত! বিশাল তিনি কারবারী। নগরে আছে আলিশান বাড়ি!

চোরঃ ঠাটারি খান? তুমি কি জান সে একজন বিশিষ্ট চোর? তার কাজ হচ্ছে ‘ঝোল এবং ঘোল’ খাইয়ে মানুষের প্লেট থেকে তার ক্ষুধার মাংস চুরি করে আনা! কেমন প্রকৃতির সন্তান তুমি যে ঠাটারি খানের মত চোর কে দেখলে লেজ নাড়াও!



নেড়ি কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রহরী ইন্টারফেয়ার করল!



প্রহরীঃ নেড়ি ত প্রকৃতি র প্রোগ্রামে চলে। সে সাধু আর তস্কর চিনতে ভুল করলে সে ত প্রকৃতি’র ভুল!

চোরঃ প্রকৃতির ভুল নয়। আমাদের বোঝার ভুল।

প্রহরী এবং নেড়িঃ কি রকম? কি রকম?

চোরঃ নেড়ি যে পরিবেশে বড় হয় সে পরিবেশ যার সহজ ভাবে চলাফেরা নিশ্চিত করে তাকেই সে এলাউ করে। আর সেই পরিবেশ যার জন্য পীড়াদায়ক অর্থাৎসেই পরিবেশে যে আড়ষ্ট তাকে সে এলাউ করেনা এবং তাকে দেখলে ঘাউ করে উঠে!

চোর আর কিছু না বলে নির্ভয়ে সামনে এগুতে লাগল। পেছনে ফিরে তাকাল না। তাকালে দেখতে পেত নগরীর লজ্জিত মাটিতে মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে আছে একজন দু’পেয়ে এবং একটি চার পেয়ে প্রকৃতির সন্তান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.