নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিউ টিউ ভালবাসা!!

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৫৫

দুপুরে কলেজ থেকে এসে ভাত খেয়ে ঘুম দিয়েছিল। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে পাঁচটায় ঘুম ভাঙল মুনিয়ার। ঘুম ভেঙ্গেই মনে হল স্যার আসার সময় হয়ে গেছে। এখুনি কলিং বেলটা কোকিলের ডাক ডেকে উঠবে! পরক্ষনেই মুনিয়ার মনটা হতাশায় ছেয়ে গেল। স্যার আর আসবে না। আজকে শুধু নয়, আর কখনোই আসবেনা! বুক ঠেলে আসা কান্নাটাকে প্রাণপণে দমন করল মুনিয়া।



বিছানা ছেড়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল মুনিয়া। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। আকাশে বড় বড় দুইটা কাল মেঘ। মেঘ দুটোকে দেখতে কেমন অশুভ লাগছে। মনে হচ্ছে এরা পৃথিবীর জন্য নিষ্ঠুর কান্না নিয়ে এসেছে! জলভরা চোখ নিয়ে নিচের দিকে তাকাল মুনিয়া। সামনের রাস্তা জাম লেগে পুরা ঝিম ধরে আছে। বালির ট্রাকের পেছনে সিএনজি, সিএনজির পেছনে মাইক্রো, মাইক্রোর পেছনে ভ্যান! মুনিয়ার চোখ সরতে সরতে রাস্তায় খামোকাই লাল রঙের ফিফটি সিসি একটা ইয়ামাহা মোটর বাইক খুঁজে বেড়াল!



একসময় না দেখা লাল রঙ, সিএনজির সবুজ রঙ, আকাশের নীল রঙ সব মিলেমিশে অশ্রুর নোনাজল হয়ে মুনিয়ার চোখ বেয়ে অঝোরে ঝরতে লাগল। জানালা ছেড়ে আবার বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁধ ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মুনিয়া।



সবুজ স্যার গত তিনমাস ধরে মুনিয়াকে পড়াচ্ছে। বিচ্ছিন্ন গনিত সে বলতে গেলে কিছুই বুঝত না। আর ফিজিক্স? প্রিজমের প্রতিসরাঙ্ক পড়তে গিয়ে মনে হয়েছিল ফিজিক্স বইটাকেই ধরে একটা আছাড় দেয়! অথচ সবুজ স্যার আসার পর সবকিছু কত সহজ হয়ে গেল! মুনিয়া স্যার কে যেদিন কলেজের প্রিজম হোমওয়ার্কের কথা জানাল স্যার তার পরের দিন পকেটে করে একটা কাঁচের প্রিজম নিয়ে আসল। মুনিয়া কে বলল-



- যাও ত মুনিয়া একটা মোমবাতি নিয়ে আস। ম্যাচ লাগবেনা। আমি সিগারেট খাই ত, লাইটার আমার পকেটে আছে।



- মোমবাতি দিয়ে কি করবেন স্যার? কারেন্ট ত যায় নাই!



- মোমবাতি আমরা আজকে খেয়ে দেখব! চর্বি থেকে নাকি মোমবাতি তৈরি হয়। খেয়ে দেখি মোমবাতিতে চর্বির স্বাদ কিছু পাওয়া যায় কিনা?



মুনিয়া হাসি চাপতে চাপতে রান্নাঘর থেকে মোমবাতি নিয়ে এসেছিল। স্যার ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি আর প্রিজম দিয়ে ঘরের দেয়ালে কি সুন্দর রংধনু তৈরি করে দেখাল। মুনিয়ার সেদিন মনে হয়েছিল রংধনুর যেমন সাত রঙ সেরকম মানুষের মনেরও অনেক গুলো রঙ!

পড়াশোনায় দিনকে দিন উন্নতি হচ্ছিল মুনিয়ার। ক্লাসের যে বান্ধবী’রা আগে তার সাথে ভাব মারত তাদের কে সে এখন লগারিদম, কুলম্বের সুত্র বুঝিয়ে দেয়! বান্ধবী’রা চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে-



- অ্যাই অ্যাই তোকে কোন স্যার পড়ায় রে?



- দাড়িওয়ালা বুড়া হুজুর! বিয়াল্লিশ বছর প্রফেসারি করে রিটায়ার করেছে!



মুনিয়া হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়ে!বান্ধবীরা প্রশ্নবোধক চোখে একে অন্যের দিকে তাকায়!



ছোট্ট একটা ঘটনা সবকিছু উলট পালট করে দিল।



সেদিন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল। স্যার রেইন কোট আর হেলমেট খুলে রেখে মুনিয়াকে পড়াচ্ছিল! হেলমেট থেকে পানির ফোঁটা গড়িয়ে গড়িয়ে টেবিলের উপর পড়ছে। স্যার মুনিয়া কে চুম্বকের উত্তর মেরু দক্ষিন মেরু পড়াচ্ছিল। মুনিয়া হঠাৎ স্যার কে জিজ্ঞেস করল-



-স্যার ভালোবাসার উল্টো পিঠে কি থাকে?



- ভালবাসার সব পিঠেই ভালবাসা থাকে মুনিয়া!



স্যারের স্পষ্ট জবাব!



ঠিক সে সময় মা চা নিয়ে ঢুকছিল!



মুনিয়া আর স্মরন করতে চায় না! এর পরের দৃশ্য গুলো অনেক বেদনার রঙে নীল!



নজরুল ইসলাম হলের নিচ তলার ডাইনিং এর পরে যে ফাঁকা জায়গাটা সবুজ সেখানে তার ফিফটি সিসি ইয়ামাহা মোটর বাইক টা রাখে। বাইক আগে টেনে হলের বাইরে আনতে হবে। তারপর কিক মেরে স্টার্ট! হাতে বাইক টানতে গিয়ে বাইক টাকে অনেক বেশি ভারি মনে হয় সবুজের। সবকিছু ঠিক থাকলে এখন মুনিয়াকে পড়াতে যাবার কথা সবুজের। ক্লাস-ক্লাস টেস্ট- সেশনাল- কুইজ- ভাইভার ক্লান্তিকর দিন গুলোতে মুনিয়া যেন দিন দিন আশ্রয়ের দ্বীপ হয়ে উঠছিল!



আচমকা ঝড়ে দ্বীপ সমুদ্রের অতলে তলিয়ে গেছে!!



সিগারেট জ্বালানোর জন্য পকেট থেকে লাইটার টা বের করল সবুজ। লাইটার টা যেন তাকে ব্যঙ্গ করছে! লাইটার টা মুনিয়া সবুজ কে তার গত জন্মদিনে গিফট করেছিল। লাইটারের গায়ে খোদাই করে লিখা-



স্যার শুভ জন্মদিন

ধূমপান ছেড়ে দিন!



সবুজের হঠাৎ কি যেন হয়! সে তার পকেট থেকে বের করা বেনসনের প্যাকেটটা হাতের ডানপাশের ঘাসে ঢাকা উঠানের উপর সজোরে ছুঁড়ে মারে! তারপর ইয়ামাহায় কিক নেয়! এক কিকেই দীর্ঘদিন সার্ভিসিং না করা পুরানো ইয়ামাহা ব্রুউউ...ম ম ম শব্দে স্টার্ট নেয়!



সবুজ বুয়েটে লেভেল থ্রি তে পরে। আর এক বছর পরেই ত পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার! মুনিয়ার মায়ের সামনে বুক চিতিয়ে একবার দাঁড়ানোই যায়!



ঢাকার যানজটের রাস্তাতেই সবুজের ফিফটি সিসি বাইক গতির ঝড় তোলে!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:২৩

রাজু মাষ্টার বলেছেন: যাব পেয়ার কিয়া তো ডারনা ক্যায়া নাহি,ডারনা ভি মানা হ্যায় :)

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪২

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: প্রেম যখন খাঁটি, তখন জ্বলবেই ভালোবাসার বাতি! ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.