নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটিমাত্র মোমবাতি (রম্য রচনা)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৪

ঘণ্টা খানেক আগে বৌ কে বললাম, একশ পঁচান্নব্বুই টা টাকা দাও।



বৌ চোখ কপালে তুলল! এত টাকা দিয়ে কি করবা?



একটার দাম পাঁচটাকা করে উনচল্লিশটা মোমবাতির দাম একশ পঁচান্নব্বুই টাকা। কালকে না চব্বিশে ডিসেম্বর। আমার উনচল্লিশ তম জন্মদিন!



বেহুদা এতগুলা টাকা নষ্ট!



আরে টাকা নষ্ট হবে কেন? কারেন্ট গেলে মোমবাতি কাজে লাগবে।



এখন ত শীতকাল। কারেন্ট যায় না!



মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। হাজার হোক আমি একজন পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ে করেছি বলে আজকে আমার দাম এতই কম?সামান্য মোমবাতি কিনার টাকাও আমার জন্য বরাদ্দ নাই?



থাক থাক! আমার আর কিসের জন্মদিন? আমার কাজ ত শুধু চাকরি করা আর বাজার করা! বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।



এই এই তুমি রাগ করছ? বৌ আমার কাছ ঘেঁসে আসল। তোমাকে আমি ছয় টাকা দিচ্ছি! তুমি দোকানে গিয়ে শুধু একটা মোমবাতি আর একটা দেশলাই নিয়ে আস।



একটা মোমবাতি মানে? আমি কি প্রথম জন্মদিনের লেদাবাবু যে এক মোমবাতি দিয়ে জন্মদিন পালন করব?



আহা যাওনা! তোমার উনচল্লিশ তম জন্মদিন ই পালন হবে। কিভাবে করব সেটা সারপ্রাইজ। যাওনা লক্ষ্মীটি!



‘যাওনা লক্ষ্মীটি’ বলার পর আর কথা চলেনা। কাজেই আমি তীব্র অভিমান বুকে নিয়ে শীতের স্যুয়েটার পরে বৌয়ের দেয়া ছয় টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। পাঁচ টাকা দিয়ে একটা মোমবাতি এবং বাকী একটাকা দিয়ে একটা দেশলাই কিনলাম।



বাসায় ফিরতে ফিরতে কিছুতেই ভেবে পেলাম না একটা মাত্র মোমবাতি দিয়ে কিভাবে মানুষের উনচল্লিশ তম জন্মদিন পালন হয়!বৌ নিশ্চয় আমার সাথে ফাইজলামী করতেছে।বৌয়ের গত জন্মদিনের শাড়ী’র দাম কিছু কম ছিল আর বুফে ডিনার ও এম্ব্রোশিয়া তে না খাইয়ে মেরিডিয়ানে খাইয়েছিলাম। সেইটার ই শোধ নিচ্ছে হয়ত!



বাসায় ফিরে দেশলাই আর মোমবাতি বৌয়ের হাতে দিয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। যেভাবেই হোক রাত বারটা বাজার আগেই ঘুমিয়ে পড়ব।বৌ হাজার ডেকেও তুলতে পারবে না।



কাঁথা মুড়ি দেয়া অবস্থাতেই ক্রমাগত ঠুং ঠ্যাং, ছ্যাঁতছোঁত শব্দ শুনছি। আমার মেয়েটাও হইছে বান্দর। একটু পর পর এসে মুখের উপর থেকে কাঁথা সরিয়ে ফেলে! ঘুমানোর চেষ্টা বৃথা।



বারটা বাজতে পাঁচ মিনিট। ফ্রিজ থেকে ঐতিহাসিক কিছু নাস্তা চুলার আগুনে গরম করে ডায়নিং টেবিলে রাখা হয়েছে। আমার মেয়ের ক’দিন আগে হয়ে যাওয়া জন্মদিনের কেকের অবশিষ্ট কয়েক টুকরাও আছে।

সবকিছুর মধ্যমনি হয়ে আছে একটি মাত্র মোমবাতি। সামনে দেশলাই হাতে আমার স্ত্রী। ভাবভঙ্গি যেন পায়রা হাতে প্রধানমন্ত্রী! একটু পরে পায়রা উড়িয়ে চীন মৈত্রী সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।



আমি বললাম- এক মোমবাতি তে উনচল্লিশ বছর! ক্যাম্নে কি!



বৌ নির্বিকার ভাবে দেশলাই থেকে একটা কাঠি বের করল। দেশলাইয়ে ঠুকে মোমবাতি টা জ্বালিয়ে দিল।



এগারটা উনষাট মিনিট তিরিশ সেকেন্ড থেকে সেকেন্ড কাউন্ট করা হচ্ছে। আমার মেয়ে একবার মায়ের দিকে একবার আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু দুষ্টু হাসছে। দেখে মনে হচ্ছে বাবাকে বোকা বানানোর পরিকল্পনায় সেও রয়েছে!

বারটা বাজতেই বৌয়ের নির্দেশে আমার মোমবাতি নেভানো এবং বৌ ও মেয়ের যুগল ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু য়্যু’ তে আমার কান ঝালাপালা!!



বৌ কে শুনিয়ে কড়া গলায় বললাম, একটা মোমবাতি দিয়ে উনচল্লিশ বছর বয়সে তুমি আমার প্রথম জন্মদিন পালন করলা!



বৌ আমার কথায় বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে দেশলাই থেকে আরেকটা কাঠি বের করল। নিভে যাওয়া মোমবাতি টা আবার জ্বালাল! বলল- ফুঁ দাও।



পাঠক বুঝতেই পারছেন। একই মোমবাতি গুনে গুনে উনচল্লিশ বার জ্বলল, উনচল্লিশ বার নিভল!



শুনেছি অধিক মোমবাতি কেনার ভয়ে অনেক বৃদ্ধই নাকি জন্মদিন পালন করতে চান না। উনাদের জন্য এরকম চমকপ্রদ একটা সমাধান বের করার জন্য আমার বৌ কে একটা নোবেল প্রাইজ ত দেয়াই যায়! না কি?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েসন বলেছেন: হুম দারুন আইডিয়া

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: দারুন আইডিয়া । সুন্দর গপ্পো +

ভালো থাকবেন সবসময় :)

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২০

আহমেদ নিশো বলেছেন: আইডিয়া মন্দ না , তবে এতো বার মোম জ্বালানো নিভানো......

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২০

হাসান মাহবুব বলেছেন: হাহা! ভাবীর উপস্থিত বুদ্ধি চমৎকার!

৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

মুহিব জিহাদ বলেছেন: ভাবীর আগামী জন্মদিনে এক কাজ করবেন, মোম ও কিনা দরকার নাই একটা সাদা দিয়াশলাই হলে ই চলবে,আপনি বারবার জালাবেন আর ভাবী নিভাবে ২ টাকায় সব ফিনিস,পুরা চার টাকা ই লাভ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.