নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দেশ, আমার জন্মদিন

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪২

শনিবার। দুপুর আড়াইটার দিকে সানরাইজ প্লাজার সামনে যাত্রীবোঝাই বাস থেকে নামল সোহেল। তারপর সানরাইজ প্লাজার পিছনে একটা কোচিং সেন্টারের ছাত্রীবোঝাই ক্লাস রুমে ঢুকল। ক্লাস রুমে ঢুকে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল সোহেল। ছাত্র ছাত্রীরা কেউ তাকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না। সামনে বসে দুজন মোবাইল টিপাটিপি করছে। পেছনের বেঞ্চিতে একটা ছেলে সোহেলের সামনেই দুম করে পাশের মেয়েটার নাক টিপে দিল!ওদের আচরণ দিয়ে ওরা সোহেলের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে। সোহেল কে ওরা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছে-ওরা সোহেলের ক্লাস করতে চায় না। কো অর্ডিনেটর মিস এর কাছেও এরা সোহেলের নামে একগাদা কমপ্লেন দিয়ে রেখেছে। সোহেল নাকি আন্সমার্ট। তার কথায় প্রচুর আঞ্চলিক টান।



সোহেলের বিরুদ্ধে এই ক্লাসের ছাত্রছাত্রী’রা ক্ষেপার কারন আছে। সপ্তা খানেক আগের কথা। ছাত্রছাত্রী’রা ক্লাস টেস্ট দিচ্ছিল। সোহেল বসে বসে কপি চেক করছিল। হঠাৎ কানে আসল- ফাক, ফাক,ফাক!



দুইটা ছেলে ক্লাসে সেদিন অনুপস্থিত একটা মেয়েকে নিয়ে আলাপ করছে এবং প্রতিটা বাক্যে এই শব্দটা ব্যবহার করছে। ওদের ভাবভঙ্গি এমন- যেহেতু শব্দটা ইংরেজি সেহেতু এটা ক্লাসরুমে সবার সামনে উচ্চারণ করার পক্ষে যথেষ্ট অশ্লীল নয়!



সোহেল ওদের কে থামাল। তারপর ওদের কে উদ্যেশ্য করে ছোটখাট একটা বক্তৃতা দিল। যেটার সারাংশ হল- পড়াশোনা শেখার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে আদবকায়দা শেখা। অন্যকে সন্মান করতে শেখা। তোমরা যে তোমাদের একজন সহপাঠী কে নিয়ে এই ভাষায় কথা বলছ এটা অত্যন্ত নিম্নরুচির কাজ এবং এর সাথে আধুনিকতার কোন সম্পর্ক নাই।



বক্তৃতা শেষ করবার পর সোহেল বুঝতে পারল তার বক্তৃতা সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছে যখন দেখল দ্বিতীয় বেঞ্চিতে বসা একটা মেয়ে বক্তৃতা শেষ হবার পর পর ই হাই উঠানোর ভঙ্গিতে অস্ফুটে বলল- ফা আ ক!



সোহেল ওদের কে একটা রচনা লিখতে দিয়ে বসে বসে ঝিমাতে লাগল। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া এই ট্যাঁস ছেলেমেয়েগুলার দুই চারটা বাদ দিলে বাকিগুলা চূড়ান্ত বেয়াদব। এরা ক্লাস রুমে শিক্ষক কে পঁচায়ে আনন্দ পায়। এদের কাছে মানুষের গুনের মাপকাঠি হল জুতার ব্রান্ড, কানের ছেঁদা( ব্যাটা ছেলের কানের ছেঁদা, এদের ভাষায় পিয়ার্সিং), ব্রান্ডের চশমা ইত্যাদি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল এদের মধ্যে ‘দেশ’ ফিলিং টা একেবারেই নাই। এরা নিজেদের মনে মনে কানাডা আমেরিকার নাগরিক ভাবে! তবে সবাই এরকম না। দু চারটা একেবারেই ব্যতিক্রম। এই ব্যাতিক্রম গুলার দুই একটা ক্লাসে থাকলেও ক্লাস সামলানো সহজ। কিন্তু এই ক্লাস টা ট্যাঁস দিয়ে ভর্তি। এই ক্লাস সামলানো সোহেলের কর্ম নয়।



এদের ক্লাস শেষ করার পর সোহেলের আরো দুটো ক্লাস আছে। শেষ ক্লাসের ছেলেমেয়েরা অবশ্য সোহেল কে খুব পছন্দ করে। এদের মধ্যে বাঙ্গালিয়ানা আছে। এদের কে ‘এমন দেশ টি কোথাও খুঁজে পাবে না ক তুমি’ বোঝাতে গিয়ে সোহেলের চোখের কোনা যখন ভিজে যায় তখন সোহেল লক্ষ্য করেছে এদের চোখের কোনাও ভিজে উঠে।এদের নাকের বোঁটাও আবেগে কাঁপতে থাকে তির তির করে। এরা সোহেল স্যার কে ভালবাসে।



সোহেল সিদ্ধান্ত নিল, আজকে শেষ ক্লাসে কিছুই পড়াবে না। এদের সাথে দেশ নিয়ে আলোচনা করবে। এদের বোঝাবে- প্রত্যেক মানুষের তার নিজের দেশকে অনুভব উচিত। নিজের সংস্কৃতি কে অনুভব করা উচিত। জগতে নিজের মত থাকাটাই সবচেয়ে সুন্দর। সবচেয়ে আরামের। যে মানুষ নিজের মত থাকে তাকে দুনিয়ার সবাই সন্মান করে।



শেষ ক্লাস শেষ করার আগে শেষ ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে কে নিয়ে গান ধরল সোহেল-



‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ

ওমা তোমার চরন দুটি বক্ষে আমার ধরি।

আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি’



গান গাইতে গাইতে সোহেলের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে লাগল।



আজ সোহেলের জন্মদিন। এই দিন টা আসলে সোহেলের শুধু দেশের কথাই মনে পড়ে। পৃথিবীর এই ভু খন্ড টাতে সে জন্মেছিল। তাকে সুখ দুখ আদর ভালোবাসা, হাসি কান্না সব এই দেশের মানুষ ই দিয়েছে। এই দেশটাই সোহেলের পরিচয়। তাই জন্মদিন আসলে দেশের জন্য একটু কাঁদাকাটি করে সোহেল নিজের জন্মদিন উদযাপন করে। সোহেল যে এভাবে তার জন্মদিন পালন করে এটা অবশ্য কেউ বুঝতে পারে না। কারন আজ যে সোহেলের জন্মদিন এটা সোহেল কাউকে বলে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আমি শেষ ক্লাসের ছাত্র ভ্রাতা +++++++

ভালো থাকবেন :)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: খুব বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য! ধন্যবাদ।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩

নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: শেষের দিকটায় এসে সোহেলকে নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম হল। এখানেই লেখার স্বার্থকতা। আমি আপনার লেখাটিকে স্বার্থক বলছি।

দেশপ্রেম লালিত থাকুক আমাদের সবার মনে। ভাল থাকবেন। শুভকামনা।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নাসরিন চৌধুরী আপনাকে। আমি লিখতে গিয়ে আমার সহজাত অনুভুতিকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিই। আমার মনে হয় একটু সচেতন থাকলে আমরা চারপাশ থেকে অনেক নিঃশব্দ বার্তা পাই। সেই বার্তাগুলোই দেবার চেষ্টা করি আমার লেখায়। ভাল থাকবেন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.