নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাকরিটা থাকবে ত?

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ঘণ্টা খানেক আগে ব্যাঙ্কের সাথে মিটিং করে আসলাম। ভিনদেশি সাপ্লায়ার আসতেছে। আগামীকাল এবং পরশুদিন তাদের সাথে ব্যস্ততম সময় কাটবে। আর শনিবার থেকে ত ‘সোর্ড অভ টিপু সুলতান’ শুরু! অফিস আনুষ্ঠানিক ভাবেই খুলে যাচ্ছে।

দুই ঈদের ছুটি ছাড়া ‘হাত পা খানিকটা হলেও খেলানো যায়’ এরকম ছুটি প্রাইভেট চাকরিতে পাওয়া যায় না। কাজেই ঈদের ছুটির জন্য সারা বছর তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকা এবং প্রতিবারই সেই ছুটি ভাল করে কোলাকুলি করার আগেই শেষ হয়ে যায়! আমরা অতি বিষণ্ণ মন নিয়ে আবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি। জুতার ফিতায় অনিচ্ছার গিট্টা মারতে মারতে ভাবি- জীবনটা আবারো শেষ!

চাকরি করতে আমাদের ভাল লাগেনা কেন? চাকরি করলে বিশ্রাম করা যায় না তাই? আচ্ছা ছুটি নিলে কি বিশ্রাম করা যায়? গেল ছুটির কথাই চিন্তা করি। বাড়ি যাওয়া, আসা, গরু কেনা, কসাই খোঁজা, মাংস বণ্টন করা, সামাজিকতা রক্ষা করার পরে কতটুকু বিশ্রাম আমরা পেয়েছি? সোজাসাপ্টা জবাব হচ্ছে বিশ্রাম পাইনি। ছুটির দিনগুলোতে করা কাজের পরিমাণ এবং সমপরিমাণ দিনে অফিসে করা কাজের পরিমাণ তুলনা করলে আমার মনে হয় না ছুটিতে করা কাজের পরিমাণ কিছু কম হবে। তাহলে চাকরি কি দোষ করল?

চাকরিতে আছে মানসিক চাপ! হ্যাঁ, আছে। কিন্তু সেই চাপের উৎস কোথায়?

আমরা সিংহ ভাগ চাকুরীজীবি’র কাছে সবচেয়ে ভয়ের জায়গা হচ্ছে বসের প্রশ্নের জবাব দেয়া। বসের একেকটা প্রশ্ন একেকটা ইলেকট্রিক শকের মত। প্রশ্ন কমন(!) পড়লে ত পার পেয়ে গেলাম। যদি না পড়ে? বস কখন কি জিজ্ঞেস করে বসে তার ত ঠিক নাই! চাকরি থাকবে ত!

কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, একেবারে গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করলে এই তথ্য বেরিয়ে আসে যে চাকরির মানসিক চাপের সিংহভাগ আসে ‘চাকরি চলে যাবে’ এই অনিশ্চয়তাবোধ থেকে। যে অফিসে যত বেশি কাজের চাপ সে অফিসে ততবেশি মানসিক চাপ সেটা কিন্তু সত্য নয়। সত্য হচ্ছে, যে অফিসে চাকরি যতবেশি অনিশ্চিত সে অফিসে ততবেশি মানসিক চাপ। দল থেকে যেকোন সময় বাদ পড়ে যেতে পারে এরকম খেলোয়াড় যেরকম মানসিক ক্লেশে থাকে সেই অফিসের চাকুরিজীবি রাও সেরকম মানসিক ক্লেশে থাকে।

কিন্তু চাকুরী চলে যাবার অনিশ্চয়তাবোধের সাথে বাস্তবতার সম্পর্ক কতটুকু সেটা নিশ্চয় খতিয়ে দেখা উচিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী থেকে বেছে বেছে তিন হাজার কর্পোরেট অফিস নির্বাচন করা যাক। তাদের গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান নেয়া যাক।প্রথমে দায়িত্বে চূড়ান্ত অবহেলা করা ছাড়াও চাকুরি গেছে এরকম চাকরিজীবি’র সংখ্যা কত বের করা যাক। তারপরে দূর্ঘটনা বা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এরকম চাকরিজীবি’র সংখ্যা কত বের করা যাক। যদি চাকুরি হারানোর সংখ্যা মৃতের সংখ্যার চেয়ে অধিক না হয় তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা টা আসলে মনস্তাত্ত্বিক। কারন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু’ হতেই পারে, এই অনিশ্চয়তা মেনেই জীবন এবং খেয়াল করে দেখুন, এই অনিশ্চয়তাবোধ কিন্তু আমাদের মনে চাপ তৈরি করতে পারে না। যেহেতু এই অনিশ্চয়তা থেকে জীবন কে বের করা সম্ভব না সেহেতু এই চাপ প্রকৃতি আমাদের কে অনুভব করতে দেয় না। ঠিক যেরকম প্রকৃতি আমাদের কে অনুভব করতে দেয় না মাথার উপরকার কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ বায়ুমণ্ডলের চাপ। প্রতিদিন সকাল বেলা কেউ যদি অসম্ভব ভয়ার্ত গলায় আমাদের উদ্যেশ্যে বলত- ‘সাবধান! তোর মাথার উপর চেপে বসে আছে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ভারী বায়ু মণ্ডল’ তাহলে আমরা বায়ু মণ্ডলের চাপ ও ঠিকই অনুভব করতাম এবং পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে পালিয়ে যাবার উপায় খুঁজতাম!

আমরা যদি চাকরি চলে যাবার নূন্যতম অনিশ্চয়তা টুকু কে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়ে মুখে এবং মনে হাসি রেখে কাজ করি তাহলে আমার মনে হয় চাকরি জীবন টা আর অতটা দুঃসহ থাকে না। মনে রাখতে হবে সীমাবদ্ধতা শুধু আমার একার নয়, সবার ই আছে এবং নিজের বোকামির জন্য লজ্জিত হবার কিছু নেই। মানুষ বোকামি করে প্রথমত অনভিজ্ঞতার কারণে। দ্বিতীয়ত বুদ্ধিমত্তার কারণে! বুদ্ধির অপরিণত প্রয়োগের ফলাফল সাধারণত এমন আসে- মনে হয় লোকটা বিরাট বোকা। কাজেই অফিসে খুব ‘বাজে’ একটা দিন পার করার পর নিজেকে ছোট ভাবার অথবা নিজে ছাড়া বাকী সবাই কে বেঠিক ভেবে মনেমনে গালাগালি করার কিছু নাই। বরং ভাবা যেতে পারে, অযুত সহস্র কোটি ক্যালরি তাপশক্তির ব্যয়ভার বহন করে প্রকৃতি আজকের যে অমূল্য দিন টা আর সবার সাথে আমাকেও উপহার দিল সেই দিন টা থেকে আমি কি শিখলাম?

একটা কঠিন বাস্তবতা যেটা একদিনে পরিবর্তন হবে না সেটা হচ্ছে ‘যেকোন সার্ভিস প্রক্রিয়া’য় অংশগ্রহণকারীরা সুস্পষ্ট ভাবে মালিক এবং কর্মচারী এই দুই ভাগে বিভক্ত এবং দুপক্ষই দুপক্ষের প্রতি নেতিবাচক ধারনা পোষণ করে সেটার চর্চা করেন। সাধারণের ধারনা হল শক্তিশালী পক্ষ অর্থাৎ মালিক পক্ষকেই আগে ইতিবাচক হতে হবে। তারা ইতিবাচক না হলে দূর্বলপক্ষ অর্থাৎ কর্মচারীপক্ষের ইতিবাচক হয়ে কোন লাভ নেই। ধারনা ভুল। ইতিবাচক মানসিকতা নিজেই একটা শক্তি এবং সেটা তুলনামূলক শক্তিশালী পক্ষের নেতিবাচক মানসিকতার উপরে জয়ী হতে পারে বলেই পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। সেটা যদি না হত, প্রতিকূল অবস্থা থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে একটাও থাকত না। কাজেই কর্মচারী পক্ষ যদি নিজেদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার স্ফুরণ ঘটাতে পারে তাহলে সেটার প্রভাব মালিক পক্ষের আচরণেও পড়বে এবং একটা পর্যায়ে গিয়ে মালিক পক্ষ ও তাদের মানসিকতা পরিবর্তনে বাধ্য হবে।

যদি কোন এক পক্ষ থেকে শুরু হয়ে এটা ‘দ্বি-পাক্ষিক ইতিবাচক মনোভাবের চর্চা’য় সত্যি সত্যি রূপ নেয় তাহলে মানুষের জীবন টা আরো অনেক বেশি সহনীয় হবে এবং সম্পদের অসম বণ্টনে পৃথিবী টা নষ্ট হবার বদলে পৃথিবীর বুকে বস্তুগত এবং মানবিক সম্পদের সুষম সুন্দর বণ্টনের সম্ভাবনাও দেখা দেবে।



(সামুতে বিচিত্রকারনে আমি আমার পোস্টের নীচে আসা কমেন্ট গুলো দেখতে পাচ্ছি না ইদানীং! খুব মানসিক যন্ত্রণায় আছি)



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৫০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আমি তো আপনার পোষ্টের মন্তব্য দেখতে পাচ্ছি ! কি সমস্যা কে জানে ! মেইল পেয়েছেন ?

শুভকামনা আপনার জন্য ভ্রাতা :)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: হ্যা, ভ্রাতা মেইল পেয়েছি। অফিসের কম্পিউটারে ত ঠিকই দেখতে পাচ্ছি। আমার ল্যাপ্টপের মাথায় শর্ট সার্কিট হইছে মনে হচ্ছে। মেইলের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯

দ্য েস্লভ বলেছেন: দারুন লিখেছেন

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া।

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষন । পরামর্শগুলো খুবই জরুরী । :)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া।

৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০১

সুমন কর বলেছেন: চাকুরীজীবিদের নিয়ে দারুণ বিশ্লেষণ করেছেন। লেখাটি ভাল লাগল।

২য় ভাল লাগা।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:০১

তুহিন০০৮ বলেছেন: আমি যখন ইন্টারভিউ দিতে যাই তখন , মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে যদি চাকরিটা না হয় আর হলে কি করব । প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চাইতে এই চিন্তা গুলুতেই আমি বেশি ব্যাস্ত থাকি । ফলে যা হওয়ার তাই হয়। এই চক্র থেকে কিভাবে বের হব জানি না।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৫

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: যেই চাকরি টা আসলেই হবে সেটা কূল হলে বাকি চাকরি গুলোর ইন্টারভিও হচ্ছে জলে সাঁতার দেয়া। কূলে উঠার জন্য সাঁতার ত দিতেই হবে- এই মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যান। যূগ যুগ ধরে মানুষ মানসিক শক্তি প্রকারান্তরে স পরিস্তিতি তে মানসিক ভাবে ইতিবাচক থেকেই জীবনে জয়ী হয়েছে। আপনিও হবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.