নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পয়সাওয়ালা’র বৌ(রম্য রচনা)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯

দু হাজার আট সালে আমি যখন বিয়ে করি তখন আমি বেশ পয়সাওয়ালা লোক ছিলাম। একটা মাটির ব্যাঙ্কে ভাংতি পয়সা গুলো জমিয়ে জমিয়ে তিয়াত্তর টাকা করেছিলাম! বিয়ের কথাবার্তা যখন জোরেশোরে চলছে তখন বাড়ি থেকে মেঝভাবী ফোন করলেন-

ঝুমু(ডাকনাম) মেয়ের জন্য গয়নার অর্ডার দিতে হবে। বেনারসি শাড়ি, কসমেটিক্স, দামী স্যান্ডেল কিনতে হবে। তোমার কাছে টাকাপয়সা আছে ত?

জ্বী ভাবী। অবশ্যই আছে।

আমরাও কিছু দিব। তোমার কাছে কত টাকা আছে?

আমার কাছে তিয়াত্তর টাকা আছে!

তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি করছ?

ফাজলামি করব কেন? আমার কাছে সত্যি সত্যিই তিয়াত্তর টাকা আছে। বিশ্বাস না হলে একটু দাঁড়ান। আমি মাটির ব্যাঙ্ক ঝাঁকিয়ে শুনাচ্ছি।

মাটির ব্যাঙ্ক ঝাঁকি দেবার আগেই ভাবী লাইন কেটে দিলেন। আমি মোবাইলে আমার হবু বউয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সম্পূর্ন অচেনা একজন মানুষ কে নিতান্ত খেয়ালের বশে কনে দেখতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি-

আপনি কেমন আছেন?

সে বলেছে, ভালো আছি।

কোন ভান নাই। ভণিতা নাই। নেগেটিভ নাই। আবার লোক দেখানো পজিটিভ ও নাই! একদম নরমাল টোনে ভালো আছি বলে একটা হাসি দিছে। আমার মনে হয়েছে, এই ত সে!

কনে দেখে বাড়ি ফেরত যাবার পর কঠিন সব প্রশ্ন।

ওর বাবা কি করে?

জানি না।

ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কি রকম?

জানি না।

মেয়ের হাইট কি রকম?

সাথে ত ফিতা নিয়ে যাই নাই। জানি না।

ওদের কি চিটাগাং এ নিজেদের বাড়ি আছে?

ওদের বাড়ি দিয়ে আমি কি করব?

গায়ের রঙ কি রকম?

কাল। তবে একেবারে কাউয়া না!

তুই ওকে কি দেখে বিয়ে করতে চাচ্ছিস?

সেটাও ত জানি না!

তোর মাথা ঠিক আছে?

কিছুক্ষণ আগেও ঠিক ছিল। এখন একটু একটু ব্যাথা করতেছে!

অনেক কঠিন সেশন ডায়লগের ঠেলায় পার করে ফেলেছি। মোবাইলে হবু বউয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি- হে আন-ক্যারিয়ারিস্ট, অচালাক, খেয়ালী, আবেগী, রসিক যুবক ভালোবাসা এবং তিয়াত্তুর টাকা সম্বল করে এ যুগে কি কোন ভদ্র ঘরের কন্যার সাথে সেটল ম্যারেজ সম্ভব? আমার অসম্ভব বোকা মন সাথে সাথে জবাব দেয়-সম্ভব!

যে কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতাম সেটার মালিক থেকে মাসে মাসে বেতন থেকে পাঁচ হাজার টাকা কাটার শর্তে তিরিশ হাজার টাকা ধার নিলাম। বুয়েটিয়ান এক ফ্রেন্ড থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাইলাম। সে আট হাজার টাকা দিল। তারপর বলল- বিয়ে করবি। চল শালা তোকে আজকে চিকেন শাশ্লিক দিয়ে ইফতার করাব। ধান্মন্ডি লেকে চল! তখন রোজার মাস।

বড় ভাবী ফোন করলেন- ঝুমু, আমরা ত আছি! কাবিনের টাকা কত ধরতে বলব। দশ লাখ টাকা?

আমার কলিজা শুকিয়ে গেল। দশ লাখ টাকা কোথায় পাব? ভাবী ওপার থেকে সম্ভবত আমার ফেইন্ট হয়ে যাওয়া বুঝতে পারতেছিলেন। বললেন, আরে গাধা, কাবিনের টাকা সাথে সাথে দিতে হয় না। বাকী রাখা যায়।

ও, বাকী রাখা যায়? তাইলে দশ কোটি টাকা ধরতে বলেন!

হবু বউয়ের সাথে মোবাইলে কথা হয়। সে জিজ্ঞেস করে,

আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান কি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে হবে? নাকি কিংস অফ চিটাগাং এ? কনে পক্ষের সবাই কে ত শাড়ি দেয়া নিয়ম। তোমরা কি শাড়ি দিবা? সোনার গহনা কি বানাতে দিছে?

আমি কথা ঘুরিয়ে ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট লাভে’র দিকে নিয়ে যাই। মনে কর সমুদ্রের মাঝখানে একটা দ্বীপ। তুমি আর আমি!

কিভাবে কি হয় আমি নিজেও আধা বুঝি। আধা বুঝি না। শুধু আকাশ কাল করে আসা মেঘে অসম্ভব বৃষ্টি নামা একটি বিকেলে একদিন আমি দেখি সাদা একটা কারের পিছনের সীটে আমার মনের মানুষ টি শাড়ি টাড়ি পড়ে আমার পাশে বসে আছে। সে নাকি আমার সাথে কক্সবাজার যাবে। সে নাকি আমার বৌ! আমি ফট করে মোবাইল নিয়ে দুদিন আগে আমার কাছে লেখা তার এসএমএস বের করে তার চোখের সামনে ধরি। তার চোখমুখ লাল হয়ে যায়! আমাকে কনুই দিয়ে গুঁতা মারে। আমি মনে মনে ডিকশানারী তে গুঁতা শব্দের সিনোনিম খুঁজি!

বিয়ের সময় আমার বৌ কে সোনাদানা কিছুই দিতে পারি নাই। চিটাগাং এ এটা সোজা কথা না। আমি ঠিকই বুঝি, বুয়েট সার্টিফিকেট আছে দেখে এসব নিয়ে কেউ বেশি উচ্চবাচ্য করে নাই। যাই হোক ছ বছরের চাকরি র টাকা থেকে কিছু কিছু জমিয়ে আমার বৌ অল্প অল্প সোনা বানিয়েছে আমি জানি।

আজকে জিজ্ঞেস করলাম, কয় ভরি হইছে?

বলল, বাপের বাড়ি থেকে যা পাইছি আর তোমার টাকা থেকে যা বানাইছি সব মিলিয়ে সাড়ে সাত ভরি’র একটু কম!

সাড়ে সাত ভরি’র কম কেন?

সাড়ে সাত ভরি’র বেশি হলে জাকাত দিতে হয়!

সাড়ে সাত ভরির কত বেশি হলে যাকাত দিতে হয়?

সাড়ে সাত দশমিক এক ভরি হলেও জাকাত দিতে হয়।

সাড়ে সাত দশমিক এক??

আমার বাংলায় অনার্স পড়া বৌ অতি সরল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি যে অঙ্কের ভুল ধরেছি সেটা সে কিছুই বুঝতে পারে নাই। বৌয়ের অতি সরল ভালোবাসাপূর্ন চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি মনে মনে বললাম- তোমার অঙ্ক বুঝার কোনই দরকার নাই প্রিয় মানুষ। গত ছয় বছর যা বুঝেছ বাকী জীবন সেটা বুঝলেই চলবে

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: বৌয়ের অতি সরল ভালোবাসাপূর্ন চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি মনে মনে বললাম- তোমার অঙ্ক বুঝার কোনই দরকার নাই প্রিয় মানুষ। গত ছয় বছর যা বুঝেছ বাকী জীবন সেটা বুঝলেই চলবে++

ভালো থাকবেন :)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনিও অনেক ভালো থাকবেন।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২

নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: জীবনের একটি সরল চিত্র এঁকেছেন । সুখ থাকুক ---ভালবাসা থাকুক কানায় কানায়।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:২৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জীবন ও কানায় কানায় পূর্ন থাকুক ভালোবাসায়।

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার! মুগ্ধ হলাম। রোমান্টিসিজম আর কমেডি দুটাই সুন্দর হয়েছে।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:২৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:১১

সুমন কর বলেছেন: হ্যাপি ইন্ডিং। ভালো হয়েছে।

সেশন ডায়লগগুলো মজার।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:২৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন আপনাকে। আমার সব সময় মনে হয়েছে সংলাপ লেখাটা চ্যালেঞ্জের। সংলাপ দূর্বল হলে কাহিনী শেষ!

৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার ভালো লাগলো । ;)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:২৮

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৪

এম এম করিম বলেছেন: কিছু কিছু লেখা আছে পড়লে মন ভাল হয়ে যায়। এটা সে রকম একটি লেখা।

++++

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:২৯

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: কিছু কিছু মন্তব্য পড়লেও মন টা ভাল হয়ে যায়! ভালো থাকবেন।

৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:৫০

তুহিন০০৮ বলেছেন: অনেক সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.