নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুলাঙ্গার মিটার

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬

আমার ছোট পুতুর বয়স আর দুইদিন পর সাত মাস হবে। ওর চিন্তা ভাবনা আমি কিছুটা বুঝতে পারি। ওর চিন্তা হল- বাবা র বসা বা শোয়ার দরকার কি? সারাক্ষণ আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটলেই ত হয়। আমি ছোট পুতুকে বুকের সাথে চেপে ধরে অজস্র চুমু খেতে খেতে মনে মনে বলি- হে ছোট পুতু তোমাকে পালা বড় কষ্ট। কিন্তু তুমি আছ বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। ছোট পুতু আমার মনের কথা বুঝতে পারে, তাত তাত তাত থা আ আ... বলে বুঝিয়ে দেয়- বাবা তোমার কথা ঠিক আছে!

বড় পুতু ততক্ষণে রাগ করে ফেলেছে। বাবা শুধু ‘ছোটইয়া’ কে আদর করে,আমাকে করেনা! একসাথে বড় টাকেও কোলে নিতে হয়। বড় টা তখন হাসি মুখে বলে-বাবা বাবা মটর সাইকেলে চড়ব বাবা!

আমি তখন হাঁটু ভাঁজ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি। আমার পেটের উপর আমার দুই পুতু বসে। আমার দুই হাত হয়ে যায় মটর সাইকেলের হ্যান্ডেল। মুখ দিয়ে শব্দ করি- ব্রো, ব্রো ও ও ও ও ও ম ম ম... দুই পুতুর আনন্দিত মুখ দেখে মনে হয় তারা সত্যি সত্যি মটর সাইকেল উড়িয়ে কোথাও যাচ্ছে! সেই মুহুর্তে ক্ষণিকের জন্য আমি হিংসা, ঈর্ষা, লোভ, ইগো হীন একটা মহাপুরুষে পরিণত হই। কারন সেই মুহুর্তে আমি পরিপূর্ন সুখী মানুষ। আমার আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই।

দুঃখী অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক কখনো পরিপূর্ন ভাবে কাজ করে না। কারণ মস্তিষ্কের বড় অংশ সেই দুঃখ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। পৃথিবীর সব সেরা আবিষ্কার সুখী মস্তিষ্কের আবিষ্কার। এটা জানি বলেই আমার জীবনের পরিপূর্ন সুখী মুহুর্ত গুলোতে আমি আমার মন কে কিছু না কিছু প্রশ্ন করি। যেমন সেদিন প্রশ্ন করলাম- আচ্ছা আমার পুতু দের যে আমি এত ভালোবাসি, আমি কি করলে বুড়া কালে যখন আমার পুতুরা আমার উপর নির্ভরশীল থাকবে না তখন আমাকে সম পরিমাণ ভালবাসবে?

সুখী মস্তিষ্ক আমার প্রশ্নের জবাবে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করল- আগে বল, তোমার বৃদ্ধ বাবা মা কি তোমার চেয়ে গরিব?

আমি যা বুঝার বুঝতে পারলাম!

নিজের বৃদ্ধ বাবা মা কে নিজের চেয়ে গরিব রেখে বাচ্চা কাচ্চা কে যতই আদর করি না কেন, তাদের পেছনে যত টাকাই ঢালি না কেন, তাদের কে যতই উচ্চ শিক্ষা দিই না কেন, যতই আদব কায়দা শিখাই না কেন, আমার জন্য ফলাফল শূন্য। তারাও বড় হয়ে তাদের ছেলেমেয়েকেই ভালবাসবে। আমাকে ভালবাসবে না।

এই জিনিষ টা মাথায় আসার পর মনে মনে নিজের জন্য একটা ‘কুলাঙ্গার মিটার’ কল্পনা করে নিলাম। প্রতিদিন রাতে শুয়ে ঘুমানোর আগে বন্ধ চোখের সামনে কাল্পনিক কুলাঙ্গার মিটার টা ধরব। কুলাঙ্গার মিটারে র ডায়াসে ঠিক মাঝখান টায় শূন্য। ডান পাশে প্লাস। বাম পাশে মাইনাস।

মনের চোখে কুলাঙ্গার মিটারের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করব- আমার মা( বাবা মারা গেছে) কি আমার চেয়ে গরিব?

প্রশ্নের জবাবে কুলাঙ্গার মিটারের কাঁটা নড়বে।

ঘুমাতে যাবার আগে প্রতিদিন নিজের ‘কুলাঙ্গার লেভেল’ টা দেখে নেব।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

হাসান মাহবুব বলেছেন: স্নেহ নিম্নগামী।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: স্নেহ নিম্নগামী দেখেই বিবেকের একটা পেড্রোলো স্নেহ পাম্প সবসময় সাথে রাখা উচিত! যাতে স্নেহ উপরের দিকেও পাঠানো যায়।

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৭

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: পেছনে ফিরে না তাকালে সামনে সঠিক পথে আগানো যায় না ।

ভালো থাকবেন ভ্রাতা :)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনিও ভাল থাকবেন ভ্রাতা!

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:১৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: :|| :| ভাবনা চমৎকার । :)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৩

এম এম করিম বলেছেন: মাথায় ঢুকে গেল।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: লেখার উদ্যেশ্য এটাই ছিল! ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৮

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: আমারও আব্বু মারা গেছেন। আম্মুর কাস্টডীতে আছি :) আমার জ্বর হল যখন প্রচন্ড, আম্মু তখন ঠিকমত রাত জেগেছেন, ওষুধ খাওয়া নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করেছেন, বিছানার গোড়ায় চা, নাশতা, খাবার দাবার এনে দিয়েছেন। আমার জ্বরের সাতদিন ঘুরতেই আমি সুস্থ হলাম এবং আম্মু জ্বরে পড়লেন। এবারের রোগীটি আগেরটার মত নয়। খাবার-দাবারনাশতা সব নিজেই খেয়ে নিচ্ছেন, ওষুধও নিজেই খেয়ে নিজচ্ছন। এবারের রোগটির পেছনে বাসার বাকী দুই সদস্যের কোনরকম সময় খরচ করতে হচ্ছেনা;তিনিও কাউকে কোন ফরমায়েশ দিচ্ছেন না।

আসলে এভাবে তাঁদের তৈরী করা হয়..........
নিজের সাফাই গাইতে কথাটা এভাবে বলা যায়- “আমার আম্মু পৃথিবীর সব আম্মুর চেয়ে ধনী।”





পোস্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ :)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: খুব টাচি লেখা... অনেক আগে ফেবুতে একটা ভিডিও দেখেছিলাম। সেখানে এক বৃদ্ধ বাবা পত্রিকা পাঠরত তার ছেলেকে একটা চড়ুইজাতীয় পাখি দেখিয়ে বার কয়েক জিজ্ঞাসা করলেন ঐটা কি? । তৃতীয়বার প্রশ্ন করতেই ছেলে রেগে গেল। বাবা তখন ঘর থেকে ডায়েরি এনে পড়ে শোনালেন,"আজ আমার সাত বছরের ছেলে একটা পাখি দেখে ষোলবার আমায় জিজ্ঞাসা করলো 'বাবা এটা কি?', আমি প্রতিবারই তাকে হাসিমুখে উত্তর দিলাম "

শুভকামনা রইল, ভালো থাকুন সবসময়।

৭| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৫২

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: হাসান মাহবুব বলেছেন: স্নেহ নিম্নগামী।




শ্রদ্ধাটা কি উর্দ্ধগামী নয়?




আমি আশা করি আমার ছেলে বড় হয়ে আমাকে দেখবে কিন্তু আমি পন্ডিত আমার বাবা মা কে দেখার প্রয়োজন মনে করি না।

৮| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৮

ডি মুন বলেছেন: দুঃখী অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক কখনো পরিপূর্ন ভাবে কাজ করে না। কারণ মস্তিষ্কের বড় অংশ সেই দুঃখ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। পৃথিবীর সব সেরা আবিষ্কার সুখী মস্তিষ্কের আবিষ্কার। -------- বাহ, চমৎকার বলেছেন।

টাচি লেখা। +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.