নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভুমিকম্পের গরুর শিং থিওরি

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:০৭


যতদূর মনে পড়ে তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। নানাভাই(নানী) কে জিজ্ঞেস করলাম- নানাভাই, ভুমিকম্প কেন হয়? নানাভাই যে সময়ের মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারের মহিলা সেই সময়ের একজনের কাছে টেক্টোনিক প্লেটের জ্ঞান থাকার কোন কারন নাই। কাজেই ভুমিকম্পের কারন হিসাবে নানাভাই যেটা জানতেন সেটাই আমাকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বললেন।পৃথিবীটা দাঁড়িয়ে আছে গরুর একটা শিং এর উপরে। এক শিং এর উপর পৃথিবীকে ধরে রাখতে রাখতে বেচারা গরুর শিং ব্যাথা হয়ে যায়। তখন গরু পৃথিবীকে এর শিং থেকে আরেক শিং এর উপরে পার করে!গরুর এই শিং বদলের সময় পৃথিবীর নড়ে উঠাটাই হল ভুমিকম্প।

নানাভাই এর মুখে ‘ভুমিকম্পের গরুর শিং থিওরি’ শুনে আমার একটু খটকা লাগল। এক শিং থেকে আরেক শিং এ পার করার কারনে যদি ভুমিকম্প হয় তাহলে ভুমিকম্প ত সারা পৃথিবীতে একসাথে হবার কথা। কিন্তু সেরকম ত শুনিনা। খালি শুনি- জাপানে ভুমিকম্প হইছে। আমি বুঝতে পারলাম ভুমিকম্পের গরুর শিং থিওরি ঠিক না। নানাভাইয়ের কাছে নিশ্চয় কেউ মিথ্যে গল্প ফেঁদেছে আর আমার সরল নানাভাই সেটাই বিশ্বাস করে বসে আছে। আমার ‘সরল নানাভাই’ এর এতে কোন দোষ নাই!

মানুষের মস্তিষ্কে যখন কোন প্রশ্ন আসে তখন সেটার গ্রহণযোগ্য উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত মস্তিষ্ক সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে থাকে। এই প্রক্রিয়া অবশ্য ততক্ষন চালু থাকে যতক্ষন মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে।অসুস্থ মস্তিষ্ক প্রথমত প্রশ্নের জবাব খোঁজা বন্ধ করে। সেটার প্রতিক্রিয়ার এ্কসময় মস্তিষ্কে প্রশ্ন উৎপাদন হওয়াই বন্ধ হয়ে যায়। আমার ভুমিকম্প বিষয়ক প্রশ্নের জবাব পাবার প্রথম উপায় হতে পারত স্কুলের ভুগোল বই। কিন্তু পরীক্ষা পাশের জন্য ‘ পৃথিবী কমলালেবুর মত গোল এবং দুই মেরুতে ইষৎ চাপা’, ‘ ক্যাঙ্গারুর বাচ্চার থলে’, ‘ সুপ্ত আগ্নেয় গিরি, জীবন্ত আগ্নেয় গিরি’, ‘প্রেইরির সমতল ভুমি’ মুখস্ত করা যথেষ্ট ছিল। কাজেই ভুগোল বই পড়ে ভুমিকম্পের কারন জানা দূরে থাকুক, ভুগোল বই থেকে যে এর কারণ অনুসন্ধান করা যেতে পারে সেকথাও নাবালক বা কিঞ্চিত সাবালক(!) বয়সে মাথায় আসেনি। ভুমিকম্পের কারন সম্পর্কে পরে ‘আউট বই’ পড়ে এবং নিজের আকল খাটিয়ে যা জেনেছি তা মোটামূটি নিম্নরুপঃ

কমলালেবুর মত গোল পৃথিবীর কেন্দ্রে আছে চাঁদের প্রায় সত্তুর ভাগের সমান অগ্নি ধাতু(লোহা নিকেল এইসব ভারী ধাতু)র বল এবং এটাকে কোর বলে।কোরের তাপমাত্রা সূর্যের উপরিভাগের তাপমাত্রার কাছাকাছি। ‘তপ্ত আগুনে বল’ এর উপরের অংশ টা সুজি বা হালুয়ার মত। এই হালুয়ার নাম মেন্টল। আগুনের বল থেকে আসা তাপের কারনে মেন্টল হালুয়া সব সময় কেটলিতে ফুটতে থাকা চায়ের মত অস্থির হয়ে থাকে এবং বের হয়ে আসার ফাঁক খোজে! মেন্টল হালুয়ার উপরে থাকে ডিমের শক্ত খোলসের মত শক্ত ক্রাস্ট। এবং এই শক্ত ক্রাস্টের আবরণ টা ডিমের খোলসের মত নিরবচ্ছিন্ন কিছু নয়! শক্ত ক্রাস্টের আবরণ টা অনেক গুলো টুকরার সমস্টি যে টুকরা গুলোকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। এই টেকটোনিক প্লেট গুলো একটা আরে্টার সাথে জিগ’স পাজলের মত জোড়া লেগে পৃথিবী নামক কঠিন কমলালেবুর কংকাল গঠন করেছে। প্লেটগুলো যে লাইন বরাবর একটা আরেক্ টার সাথে জোড়া লাগে সেই লাইন কে বলে ‘ফল্ট লাইন’ আর দুনিয়া জুড়ে ভুমিকম্প যা হয় তা এই ফল্ট লাইন এবং তার আশে পাশেই। কথা হল, ফল্ট লাইন এবং তার আশে পাশে কেন ভুমিকম্প ঘটে? পৃথিবীর আহ্নিক এবং বার্ষিক গতির কথা আমরা জানি। পৃথিবী একই সাথে নিজের অক্ষে ঘুরছে আবার নির্দিষ্ট কক্ষে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। এই দ্বৈত গতির প্রভাবে টেকটোনিক প্লেটগুলোতেও গতি সঞ্চারিত হয় এবং এতে করে ফল্ট লাইনে আটকানো প্লেটের মাথাগুলোতে স্থিতি শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। এই স্থিতি শক্তি কে রিটেইন করে রাখে ফল্ট লাইন। ফল্ট লাইন কত টুকু স্থিতি শক্তি রিটেইন করে রাখতে পারবে সেটার সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম করলেই স্থিতি শক্তি রিলিজড হয়ে গতি শক্তিতে রুপান্তরিত হবে এবং তুলনামূলক দূর্বল ফল্ট লাইনে ফাটল ধরবে। ধরুন একটা পাতলা বাঁশের কঞ্চি। একটা মাটির ঢিবি করে বাঁশের কঞ্চির এক মাথা মাটির ঢিবির মধ্যে ডুবিয়ে দিন। এখন কঞ্চিটাকে আরেক মাথায় ধরে আস্তে আস্তে বাঁকাতে থাকুন।প্রথমে কঞ্চিটা স্থিতি শক্তি সঞ্চয় করবে। এক পর্যায়ে বালির ঢিবির মধ্যে ফাটল ধরাবে!

এখন ফল্ট লাইনে ফাটল ধরলে সেটা ফাটল বিন্দু বা ফোকাস থেকে তরঙ্গ আকারে (সিসমিক ওয়েভ) সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই তরঙ্গের ধাক্কা পৃথিবীর একেবারে উপর তল পর্যন্ত এসে পৌছাতে পারে। আমরা টের পাব কি পাবনা সেটা নির্ভর করে ফল্ট লাইনের গভীরতা, কতটুক এনার্জি রিলিজ হল, তাতে কতটুকু ফাটল ধরল তার উপর। ভুমিকম্প মাপার স্কেল রিখটার স্কেলে চার এর নিচে হলে আমরা ভুমিকম্প টের ই পাই না। সাত এর উপরে হলে সেটা ভয়াবহ। সাতের উপরের ভয়াবহ ভুমিক্ম্প আমাদের প্রতিবেশি নেপাল কে তছনচ করে দিয়েছে। খুব সাধারণ একজন সমব্যথী মানুষ হিসেবে তাদের জন্য আমার গভীর সমবেদনা।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী বাংলাদেশ এ বড় ধরনের ভুমিকম্প হওয়া খুবই সম্ভব এবং বড় ভুমিকম্প এই অঞ্চলে আগেও হয়েছে। ভুমিকম্পের ফল হিসাবে এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন ও ঘটেছে। কারন ভুমি্কম্প মানে আসলে টেকটোনিক প্লেট গুলোর রি-সেটলমেন্ট এবং বড় ভুমিকম্প উত্তর এই রি সেটলমেন্ট ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন হিসাবে ধরা পড়ে। কথা হচ্ছে এখন যদি বাংলাদেশে বড় ভুমিকম্প হয় তাহলে কি হবে? ‘বিল্ডিং কোড না মেনে বানানো বিল্ডিং বস্তি’ যে কি ভয়াবহ ডেথ ট্রাপ সেটা বোঝা যাবে যখন এই বিল্ডিং বস্তি সাত রিখটার স্কেলের ‘ভুমিকম্প টেস্টে’র মুখোমুখি হবে। ঢাকা শহরের একটা মডেল তৈরি করুন তারপর বিল্ডিং গুলো ভেঙ্গে একটা আরেকটার উপর ফেলে দিন। তাহলেই বড় ভুমিকম্প হলে ঢাকা যে একটা পরিত্যক্ত প্রেত নগরীতে পরিনত হবে এই বিষয়ে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন। তো আমাদের কি কিছু করার নাই? নাকি আমরা অপেক্ষা করে বসে থাকব-ঢাকা পরিত্যক্ত নগরী হবার পর দীর্ঘ কাল কেটে যাবে। তারপর কোন মোঘলেস্ট বাদশা এসে আবিস্কার করবে এক পরিত্যক্ত নগরীর ধ্বংসাবশেষ। পরিত্যক্ত নগরীর উপর নতুন নগর পত্তনের ঘোষনা সেই মোঘলেস্ট সম্রাট দেবে। সম্রাটের পকেটে থাকা এক নৃ-তাত্ত্বিক আবিস্কার করবে বহু আগে মাটির সাথে মিশে যাওয়া আমাদের জীবাশ্ব। সেই জীবাশ্ব হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে নৃ তাত্ত্বিক দূঃখিত হাসি হেসে বলবে- এরা ‘স্ট্রিং থিওরি’ পড়লেও এদের বুদ্ধি বৃত্তি ছিল ‘গরুর শিং থিওরি’ লেভেলে। তাই সামান্য একটা ভুমিকম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করে এরা টিকতে পারেনি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৯

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০

গোধুলী রঙ বলেছেন: চমৎকার করে সরলীকরন করেছেন, ঘটনার ভিত্তিতে জ্ঞ্যানলাভ করার ইচ্ছে থেকেই পোস্টটা খুজে পেলাম। অনেক ধন্যবাদ।

০২ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ গোধুলী রঙ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.