নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষণের দর্শন

২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ২:০৫

তখন ক্লাস এইট বা নাইনে পড়ি। যৌবনের কুঁড়ি মাত্র ফুটছে। পত্রিকায় মূল আকর্ষণ খেলার পাতা। কিন্তু পত্রিকার ভেতরের পাতায় ছাপা হওয়া কিছু খবর লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। ছোট ছোট কলামে ছাপা হওয়া সেই খবর গুলো ছিল পাট ক্ষেত এবং ধান ক্ষেতে নারী ধর্ষণের বর্ণনা। সেই বর্ণনা পড়ে মনের মধ্যে দূঃখ বোধ হতনা এক আনা ও। কিন্তু শরীরে উত্তেজনা হত ষোল আনা। সাংবাদিকের কলমে বর্ণিত অংশ টুকু তে কল্পনার রঙ চড়িয়ে মনের চোখে সেই উত্তেজনাকর দৃশ্য ফুটিয়ে তুলবার চেষ্টা করতাম। কিছুটা বড় হবার পর আমি গভীর মনন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম নিজের কৈশোরের মনস্তত্ত্ব। ধর্ষণের মত অমানবিক একটা ঘটনা পত্রিকায় পড়েও আমার মনে কেন কোন দূঃখবোধ হত না? আমি ত মানবতাবোধহীন মানুষ নই। সামান্য দুটা টাকা এবং এক বেলা পান্তা ভাত খাবার জন্য যে বৃদ্ধ লোকটা সকালে আমাদের পানির ড্রাম ভরে দিতে আসে তার ভুখা চেহারা টা দেখলে ত আমার কঠিন মায়া লাগত। তাহলে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে চরম নির্যাতনের শিকার একটা মেয়ের জন্য আমি কোন দূঃখ কেন অনুভব করতাম না? দূঃখ অনুভব না করার যে কারণ টা খুঁজে পেলাম সেটা হল মেয়েটা যে একজন মানুষ সেই বোধ টাই আমার ছিল না। গভীর অবচেতনায় অপরিচিত তরুনী একটা মেয়েকে নিখাদ যৌনবস্তু ছাড়া অন্য কোন কিছু আমি ভাবি নি। যে বস্তু ধ্বংস হলে আমার কোন বৈষয়িক ক্ষতি নেই সেই বস্তুর জন্য আমার দূঃখ হবে কেন?

যুক্তি বলে, কাকে আপনি কি ভাববেন সেটা নির্ভর করে তার সাথে পরিচয়ের প্রথম সূত্রের উপর। ধরেন আপনি শৈশবে কাউকে দেখেছেন খুব দরিদ্র অবস্থায়। বিশ বছর পরে যদি তাকে খুব ধনী এবং প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় ও দেখেন আপনার মনে সব সময় তার দরিদ্র চেহারাটাই ভাসবে। বাস্তবে আপনি নিজেই হয়ত তার করুণা প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন তাকেই আপনি মনে মনে করুণা করছেন! কারন তার বর্তমান ধনী চেহারার সামনে বসে থেকেও মনে মনে তার বিশ বছর আগের গরিব চেহারাটাকেই আপনি সত্য ভাবছেন।(বংশ মর্যাদা নামের অত্যন্ত অযৌক্তিক একটা ধারণা মানুষের এই মানসিক বিভ্রমের হাত ধরেই টিকে আছে।) দূর্ভাগ্যজনক ভাবে এই সমাজে একজন কিশোরের সাথে একজন প্রণয়সম্ভব নারীর পরিচয়ের প্রথম সূত্র তার মনে উদ্ভুত যৌনতাবোধ ছাড়া আর কিছু নয়। হরমোনের প্রভাবে যখন যৌন বাসনা সৃষ্টি হয় তখন কিশোর তার মানসে যে নারী কল্পনা করে সে নারী একটা আদ্যোপান্ত যৌনবস্তু। সে নারীর ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, প্রতিভা নেই, দূঃখ নেই, সুখ নেই, উচ্চাকাংখা নেই,মানবতা নেই। শুধু যৌনতা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। স্বয়নে স্বপনে অনুক্ষণ মাথায় এই যৌণবস্তু বয়ে বেড়ানো কিশোরের কাছে নারীর দুটা অবস্থান কেবল সম্ভব। হয় সে মাতৃ বা ভগ্নি স্থানীয় কেউ। অথবা সে একটা মাল!( পাঠক অশ্লীল ভাষা ক্ষমা করবেন। লেখার উদ্যেশ্য দৃষ্টিভঙ্গি বুঝানো। সুড়সুড়ি দেয়া নয়)। যে অজস্র কিশোর তার চার পাশের নিরান্নব্বুই ভাগ নারীকে ‘মাল’ ভেবে জীবন কে বিকশিত করতে থাকে সে অজস্র কিশোরের কেউ কেউ সময় সূযোগ মত যে মালের উপর হামলে পড়বে এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই।

আমরা যেসব পুরুষেরা অশিক্ষিত সমাজে( অশিক্ষিত মানে নিরক্ষর নয়। শিক্ষা মানে যদি যুক্তিবোধ এবং মনূষ্যত্ববোধের বিকাশ হয় তাহলে আমাদের সমাজের অধিকাংশ ডিগ্রিধারী লোকই অশিক্ষিত)অবিকশিত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠেছি তাদের অধিকাংশের কৈশোরের নারী ভাবনা উপরের বর্ণনার ব্যতিক্রম নয় এবং কোন না কোন ভাবে নিজেকে শিক্ষিত করে নিয়ে যে এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি সে ধর্ষণ করুক আর নাই করুক, সে মানসিক ভাবে একজন রেজিষ্টার্ড ধর্ষক। আমার ধারনা সে মুখে যাই বলুক, পত্রিকায় ধর্ষনের খবর পড়ে মুখ টিপে হাসে এবং মনে মনে ধর্ষকের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে।

তাহলে এর সমাধান কি? যে সমাজের অধিকাংশ পূরুষ মানসিক ভাবে ধর্ষক সে সমাজে ধর্ষণ প্রতিরোধ করার উপায় কি? ধর্ষক কে মৃত্যুদন্ড দিলে বাকীরা ভয় পাবে। কিন্তু ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদের যেমন সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে আটকে রাখা যায়না সেরকম ধর্ষক কেও সাধকের খোলসে আটকে রাখতে পারবেন না। প্রথম সূযোগেই সে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে এবং ধর্ষণ করবে। কাজেই ধর্ষক কে শাস্তি দিলে ধর্ষক কে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হবে ঠিক কিন্তু ধর্ষণ রোধ করা যাবে না। ধর্ষণ রোধ করতে চাইলে হাত দিতে হবে গোড়ায়।

বাবা মা’র মেয়েকে শৈশবেই শিখিয়ে দেবার দরকার নাই তুমি একটা মেয়ে। এটা প্রকৃতি ই তাকে এক সময় বলে দেবে।বাবা মা ছোট বেলা থেকে এই জিনিষ বলে দিলে মেয়েও অবচেতন মনে নিজেকে ‘মেয়ে এবং আলাদা প্রজাতি’ ভাবতে ভাবতে বড় হবে। মানুষ ভাববে না। নিজেকে মানুষ ভাবতে না পারলে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ কখনো ঘটবে না।

বাবা মা’র ছেলেকে শৈশবেই শিখিয়ে দেবার দরকার নাই বাবা তুমি ছেলে। এটা প্রকৃতিই তাকে এক সময় বলে দেবে। বাবা মা ছোট বেলা থেকে এই জিনিষ বলে দিলে ছেলে মনে মনে নিজেকে মেয়েদের থেকে সুপিরিয়র ভাববে এবং ভবিষ্যতে মেয়েদের কে আজীবন ‘মহিলা’, ‘মেয়েমানুষ’ ইত্যাদি হিসেবেই দেখবে। মানুষ হিসেবে দেখবে না।

শৈশবোত্তীর্ণ দের কাছে শিক্ষা এবং ‘বয়োসন্ধিকালীন যৌবনোন্মেষ’ এর মধ্যে কোন ভৌতিক আড়াল না রেখে এর বিজ্ঞান সন্মত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।তাদের কে বোঝাতে হবে সন্তান জন্মদান এবং পালনের প্রয়োজনে নারী এবং পুরুষের মধ্যে শারীরিক ভিন্নতা থাকলেও যোগ্যতার দিক দিয়ে উভয়েই সম পর্যায়ের এবং উভয়ের মধ্যেই সকল মানবিক অনুভুতি বিদ্যমান।অধিকাংশ নারী পুরুষের কেউ ই সাধু সন্ত নয়।বরং উভয়েই সাধারণ দোষে গুনে মানুষ।

কোন সমাজে নারী এবং পুরুষ উভয়েই যদি নিজেকে এবং অপরকে মানুষ ভেবে বড় হয় আমার মনে হয় সেই সমাজে নারী এবং পুরুষের মধ্যে একটা ব্যক্তিত্ত্বপূর্ন, শালীন এবং সহজাত সম্পর্ক তৈরি হওয়া সম্ভব। সে সমাজে নারীর সাথে দেখা হলে সহজ ভাবে কথা বলা যায়। পেছনের বেঞ্চিতে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে তার শরীরের দিকে তাকিয়ে বাসায় এসে মনে মনে তাকে ধর্ষণ করতে হয় না। এবং আমার মনে হয় ভয়াবহ ধর্ষণ মানসিকতাকে দ্রবীভুত করার একমাত্র উপায় হল নারী পূরুষের সহজ সম্পর্ক টাই।

সহজ সম্পর্ক এবং অবাধ মেলামেশা কিন্তু এক জিনিষ নয়। যে সমাজের নারী পুরুষ মানসিক ভাবে অবিকশিত( মেয়েরা ভাবে আমি ত একটা মেয়ে, মানুষ নই। ছেলেরা ভাবে মাতৃস্থানীয় বা ভগ্নিস্থানীয় ছাড়া বাকী সব মেয়েই যৌনবস্তু) সে সমাজে নারী পুরুষ কে অবাধে মিশতে দেয়া আর আগুনে ঘি ঢালা একই জিনিষ।সে সমাজে ধর্ষণ বন্ধ করতে চাইলে উভয়কেই শিকল পরিয়ে রাখতে হবে। কারণ এই মানসিকতা সম্পন্ন সমাজে শৃংখল না থাকলে ছেলেরা মেয়েদের উপর সূযোগ পেলেই হামলে পড়বে এবং মানসিকভাবে পঙ্গু মেয়েরা নিজেদের কে রক্ষা করতে পারবে না। কাজেই সহজ সম্পর্ক কেবল মাত্র সেই সমাজেই সম্ভব যে সমাজে নারী পুরুষ উভয়ই বিকশিত অর্থাৎ উভয়েই নিজেকে এবং অন্যকে মানুষ ভাবে।

কাজেই আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে ধর্ষক কে গালি দেবার আগে নিজের মনের অলিগলিতে একবার অনুসন্ধান চালান। আপনার মনের গভীরে যে ধর্ষক বাস করে তাকে মানসিকতা পরিবর্তনের হোমিওপ্যাথিক ডোজ দিয়ে হত্যা করতে না পারলে যেকোনদিন আপনিও ধর্ষণের দায়ে অথবা অন্য কোনপ্রকার নারী অবমাননার দায়ে জেলে যেতে পারেন।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:২০

আমিনুর রহমান বলেছেন:


পারিবারিক শিক্ষা ছাড়া এই অবস্থা থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়।

চমৎকার পোষ্ট।

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ জেসন ভাই।

২| ২৫ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:০৯

শাহেদ শাহরিয়ার জয় বলেছেন: ভাল বলেছেন,কিন্তু দুঃখের বিষয় হল পরিবারের যারা শিক্ষা দিবেন,তাদের ও তো আজকাল ভিমরুতি ধরেছে!কে কাকে ভদ্রতা শিখাবে,বুঝার জো নাই!

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ শাহেদ শাহরিয়ার জয় ভাই।

৩| ২৫ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:২২

নক্‌শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষনধর্মী লেখা। ভালো লাগলো। তবে আপনার "দূ:খ" বানানটা কিছুটা দু:খ দিয়েছে :)

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ। এখন থেকে আর দুঃখ পাবেন না!

৪| ২৫ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: মূল শুরু হতে হবে পরিবার থেকে...নতুবা সম্ভব নয়

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: একমত।

৫| ২৫ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:০০

রাােসল বলেছেন: Thanks for your writting style and subject. Epecially for your making guilty yourself. Most of us can't do so. We think self is right & all are wrong. Thanks once again.

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৬| ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:১৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ মাহবুব ভাই।

৭| ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:১৮

অন্যসময় ঢাবি বলেছেন: splendid explanation in one word.

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৮| ২৬ শে মে, ২০১৫ ভোর ৬:৩৯

আরাফ সাঈদ প্রত্যয় বলেছেন: কি আর বলবো ভাই, যেদিকে তাকাই সেদিকেই নারীর প্রতি সহিংসতা । জন্মদাতা থেকে শিক্ষক - কারো হাতেই নিরাপদ নয় । অবশ্য যে দেশে নারীকে তেতুল মনে করা হয়, সেই দেশে এর চেয়ে কি আশা আর কি করব ?

২৬ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.