নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসুস্থ সভ্যতার দূষিত শোণিত ধারা জমাট বেঁধে নির্মিত বুলেট

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪

২৩/০৭/২০৩৮।আজ থেকে তেইশ বছর পরের তেইশে জুলাই এর এক সকাল। কক্সবাজার শহরে সকাল থেকে ঝির ঝির বৃষ্টি। মাঝে মাঝে ই ধেয়ে আসা দমকা হাওয়া সে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় নামা পথচারীর ছাতা বারবার উলটে দিচ্ছে।শীতল দমকা হাওয়ায় বৃষ্টিতে ভিজে কন কন করে উঠছে বেড়াতে আসা পর্যটক এবং স্থানীয় অধিবাসীরা। দশ নম্বর মহা বিপদ সংকেত ঘোষনা করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঘুর্ণিঝড় প্লেম্যান সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ উপকূলে আঘাত হানবে। প্লেম্যানের গতিবেগ হবে ঘন্টায় সাড়ে তিনশ মাইল!

বিমান চলাচলের প্রশ্নই আসেনা। এই ভয়াবহ দূর্যোগে অপ্রতুল এবং অপরিকল্পিত যান বাহন ব্যবস্থার কারনে শহরে যেসব হতভাগ্য পর্যটক আটকা পড়েছে তাদের চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। ক্ষনে ক্ষনে তারা নিউজ ফিড দেখছে আর চমকে চমকে উঠছে। স্থানীয় অধিবাসীদের চেহারায় অবশ্য ভয়ের লেশ মাত্র দেখা যাচ্ছেনা। তাদের চেহারায় বরং উত্তেজনার ছাপ! আসন্ন মৃত্যুর সামনে ভীত হবার বদলে এরকম উত্তেজিত হবার কারণ নিয়ে বিবর্তনবিদ গবেষনা করতে পারেন।

পর্যটকদের মধ্যেকার তেইশ বছরের দূরন্ত যৌবনের একজন মানুষ অবশ্য প্রকৃতির এই মৃত্যু আয়োজন দেখে পৈশাচিক উল্লাস বোধ করছে। সে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের তীরে ঝাউ গাছের নীচে। তার জিনসের প্যান্টের পকেটে আস্ত দু প্যাকেট বেনসন সিগারেট এবং হাতে একটা মদের বোতল। সে একটু পর পর বোতলের ছিপি খুলে মদ খাচ্ছে এবং এবং উত্তাল সাগরের দিকে তাকিয়ে ‘প্রতিশোধ, প্রতিশোধ’ বলে চিৎকার করছে!এই দূরন্ত যৌবনের মানুষ দৃঢ় ভাবে প্রত্যাশা করছে- আজকে চুড়ান্ত নিস্পত্তি হবে। অশ্লীল মানবজাতির একটা অংশ অন্তত আজকে নৃশংস মৃত্যুর মুখোমুখি হবে। সমুদ্রের উঁচিয়ে আসা উত্তাল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে মাগুরায় জন্ম নেয়া টগবগে যৌবনের মানুষ টি বিকৃত চিৎকার দিয়ে বলে- আস, পনের ফুট উঁচু জলোচ্ছাস হয়ে আস। ডুবিয়ে মার সব বেজন্মা পাপী কে! মাটির ধুলাকে চিরতরে মিশিয়ে দাও মাটির ধুলায়!!

চিৎকার করতে করতে মানুষ টা একসময় হা হা করে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের অশ্রু-গ্ল্যান্ড ছিড়ে গিয়ে সেখান থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পড়তে থাকে। নিজের চোখ ফেটে নেমে আসা নোনা রক্ত মদের সাথে গিলতে থাকে উন্মত্ত মানুষ টা। তার একান্ত নিজে্র শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়!

কতই বা বয়েস তখন? পাঁচ কি ছয়।হরতালের সময় শহরের দোয়ারপাড় কারিগর পাড়ার রাস্তায় আরো পাঁচ টা বাচ্চার সাথে সেও ক্রিকেট খেলতেছিল।স্কুলে বছর বছর ফেল করা সতের বছরের ঢেঙ্গা আবুল মিঞা ও তাদের সাথে খেলতেছিল। ঢেঙ্গা আবুল মিঞার ফাস্ট বল এসে জোরে তলপেটের কাছে লাগায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় সে!কিন্তু দ্রুত হাসপাতালে নেবে কেমনে? রাস্তায় গাড়ি বের হলেই বোমা, রিকশা বের হলেই পামছার! কাজেই ধীরে সুস্থেই চ্যাংদোলা করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারের চিকিৎসা শেষ হবার শেষ কয়েক মিনিট আগে পর্যন্তও সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। শেষ ক মিনিট আগেই তার জ্ঞান ফিরে এসেছিল। কিন্তু চোখ বন্ধ থাকায় তার পাশে থাকা মা বা ডাক্তার বা সিস্টার কেউ সেটা বুঝতে পারে নাই। সে নিজের কানে শুনছিল মা ডাক্তার কে বলছে- আমার বাছা আমার পেটে থাকা অবস্থায় ই গুলি বিদ্ধ হইছিল ডাক্তার সাব। সাত মাসে বাচ্চা বের কইরা ফেলতে হয়। এতে করে বাচ্চার ওজন অনেক কম হয়। দুধ পাইব কেমনে? আমারে নিয়া যমে মানুষে টানাটানি! আমার বাছাটার ভাইগ্য টা খুব খারাপ ডাক্তার সাব!

শিশুর কানে অজস্র ঝিঁ ঝিঁ পোকা ঝেঁকে ধরেছিল। পোয়াতি অবস্থায় বিড়াল দেখলে পর্যন্ত কিরাম মায়া লাগে। আর তার মারে পোয়াতি অবস্থায় গুল্লি করছিল? সেই গুল্লির কারনেই কি তাহলে তার তলপেটের আঁতিতে মাঝে মাঝে চিলিক দিয়ে ব্যাথা উঠে?

চোখে খোলার পর মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা কথাই শুধু বলেছিল সে - মা কুত্তার পয়দা গুলারে একবার শুধু চিনাই দাও। হগল্টিরে আমি আবার হেগো মায়ের পেটে ঢুকাইয়া গুল্লি কইরা মারুম!

মা টা আবালরকম ভাল মানুষ। তাকে বলেছিল- ছি! ওভাবে বলতে নেই বাবা। দুনিয়াতে কিছু মানুষ নরকের কীট হলেও বেশির ভাগ ই ভাল মানুষ। নরকের কীট গুলো পোয়াতি অবস্থায় আমার তলপেটে গুলি করেছিল। এরপর ভাল মানুষ রাই ত আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। ভাল মানুষরাই আমার আর তোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। ভাল মানুষরা পাশে আছে বলেই ত তরে পালতে পারতেছি বাপজান!

মায়ের কথাগুলো দীর্ঘ প্রায় দশ বছর মনের মধ্যে নাড়াচাড়া করেছে সে। তার মনে হয়েছে মায়ের কথায় কনভিন্সড হবার কিছু নাই। সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ নিকৃষ্টতম পশু নিকৃষ্টতমই রয়ে গেছে। মুখে যতই ভালোবাসা মায়া মমতার গান গাক, পৃথিবীতে মানুষ ভালোবাসা মায়ামমতা বিনিময়ের চেয়ে অনেক বেশি করেছে গুলি,গালি এবং ঘৃণা বিনিময়। স্কুলে পড়ার অভিশাপ(!) ডায়েরির পাতায় সে সতের বছর বয়সে লিখেছিল-

মানুষের আজন্ম সঞ্চিত পাপের ফল হিসাবে মায়ের পেটে থাকতেই শিশু মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়। মানুষের আজন্ম সঞ্চিত পাপের ফল হিসাবে মায়ের পেটে থাকতেই শিশু গুলিবিদ্ধ হয়!’আজন্ম সঞ্চিত পাপ গাইডেড জেনেটিক কোডিং’ মানুষ কে এই পৃথিবীতে বড় পাপী হওয়া ছাড়া আর কোন কিছু হতে উৎসাহিত করেনা।যতবড় খুনি, যতবড় মানবতা বিরোধী, যতবড় শোষক ততবেশি সালাম, ততবেশি তোয়াজ! ‘বড়’ হবার লক্ষ্য একবার নির্ধারণ করলে, চোখ কেবল মাত্র শত্রুর বুকের হাড়ে নিবদ্ধ করে শত্রুর উদ্যেশ্যে অবিরাম গুলি চালাতে হয়। কোন আবাল পোয়াতি যদি গুলাগুলির মাঝখানে এসে গুলি খায় তাতে ভবিষ্যত মহাবীরের কিইবা করার আছে!(না সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় নি।সে ফেসবুক ইউজ ই করেনা। কারন ‘ফ্রেন্ড’ শব্দটাতে তার আপত্তি আছে!)

সন্ধ্যা ছটা তেইশ বাজে। কাল মেঘে অবিশ্রান্ত বজ্রপাতে সমুদ্রের বালি কেঁপে কেঁপে উঠছে! মদের বোতল শেষ হয়ে যাওয়ায় চোখ থেকে চুঁইয়ে পড়া লাল রক্তের ফোঁটা সে মদের বোতলে ভরে নিয়েছে। বিদ্যুত চমকের আলোয় জলপাই সবুজ বোতলের প্রতিসরাঙ্কে সেই রক্ত কে বিভৎস লাগছে। মনে হচ্ছে অসুস্থ মানুষের দূষিত ইউরিনের মত এটা কোন অসুস্থ সভ্যতার দূষিত শোনিত ধারা। এই দুষিত শোনিত ধারা বোতলে ভরে মানবতার ডায়গনষ্টিক সেন্টারে এসে দাঁড়িয়েছে এক দূর্বিনীত মানুষ, যার বয়স তেইশ!আজ থেকে তেইশ বছর আগে মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় এই মানুষ টার বুকে বিদ্ধ হয়েছিল অসুস্থ সভ্যতার দূষিত শোণিত ধারা জমাট বেঁধে নির্মিত বুলেট!

সবকিছু ঠিক ঠাক আছে। প্লেম্যান তার চোখ ঈগল পখির মত বিদ্ধ করে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। মায়ের পেটের শিশুকে গুলিবিদ্ধ করার ক্ষমতা মানুষের থাকলেও প্লেম্যানের ঈগল চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা মানুষের নাই।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:


ওকে

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: মহান প্রকৃতির কাছে লুকিয়ে আছে শত শোধবোধের দাম। মানুষের এ পরিণতি অলঙ্ঘনীয়।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান মাহবুব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.