নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক ফোঁটা স্বাধীনতার আলো

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬

আমার তখন পাঁচ বছর বয়স। আম্মাকে প্রশ্ন করলাম- মা, ‘হচ্ছে যে দিন’ থেকে আজ পর্যন্ত কত দিন হইছে? আম্মা বিস্মিত চোখে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর কলেজের অধ্যাপক মামার বাসায় ছুটে গেলেন। মামা সব শুনে আমার এ প্রশ্ন কে ‘ইন্টেলজেন্ট প্রশ্ন’ বলে সনাক্ত করলেন(!) এবং ধীরে ধীরে বড় হয়ে জানতে পারলাম আমার এই ইন্টেলিজেন্ট প্রশ্নটি এই পৃথিবীর তাবৎ বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের মনের প্রশ্ন- এই মহাবিশ্ব, আজকের দৃশ্যমান এই দিনরাত্রির সূচনা কোথায়?

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনুসন্ধিৎসু মনের উপযুক্ত নয়। কাজেই স্কুলে ইউক্লিডিয় পদ্ধতিতে লসাগু করানোর সময় যখন জিজ্ঞেস করলাম-স্যার লসাগু কি? তখন মূর্খ শিক্ষকের রক্তচক্ষুর লেলিহান আগুন এবং নিষ্ঠুর হাতের নির্মম বেত খেয়ে নিজেকে অবদমিত করতে হল এবং অঙ্ক বাদ দিয়ে নিজের অনুসন্ধিৎসা কে অন্যদিকে নিযুক্ত করতে হল। ঘুড়ি কাটাকাটি খেলায় মাঞ্জাহীন সুতা দিয়ে মাঞ্জা দেয়া সুতা কাটার গুঢ় তত্ত্ব আবিস্কার করে আমি নিজেকে সূখী করে ফেললাম এবং স্কুলে বছর বছর অঙ্কে ফেল করার জন্য কোন দূঃখবোধ আমার রইল না। কিন্তু ক্লাস নাইনে উঠার( তিন সাব্জেক্ট ফেল করলেও এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে উঠা যেত)পর যখন শুনলাম সায়েন্স পড়ার জন্য আলাদা ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় তখন অসম্ভব মন খারাপ হল! কারন মনের মধ্যে কোথাও না কোথাও জীবিত ‘হচ্ছে যে দিন থেকে আজ পর্যন্ত কত দিন হইছে?’ প্রশ্নের জবাব পাবার জন্য যে বিজ্ঞান পড়তে হবে এটা আমি মনের মধ্যে কোথাও না কোথাও জানতাম! কিন্তু সেকশন এ এর আটষট্টি ছেলের মধ্যে সাতষট্টি রোল নম্বর আমি বিজ্ঞানে চান্স পাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম এটা বুঝতে পেরে ভর্তি পরীক্ষার আগের কয়েকদিন বিজ্ঞানের বই গুলা খিঁচে মুখস্ত করলাম এবং মনোনিত ত্রিশ জনের মধ্যে উনতিরিশতম হলাম। সেদিনের সে আনন্দের কোন তুলনা হয়না।

বিজ্ঞান পড়তে গিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত হয়েছি প্রকৃতির নিয়মকানুন গুলো দিয়ে এবং এটা বুঝতে পেরেছি পৃথিবীকে সুন্দর করতে চাইলে সবচেয়ে জরুরী হল প্রকৃতির নিয়মগুলোকে বোঝা কারণ এই নিয়মগুলো অপরিবর্তনীয়। অপরিবর্তনীয় বলেই একবার আবিস্কৃত সার্জারি বিদ্যা দিয়ে বছরের পর বছর অপারেশন চলে। একবার আবিস্কৃত নৌ বিদ্যা দিয়ে যুগের পর যুগ জাহাজ চলে( আবিস্কার এবং ইম্প্রোভাইজেশন দূইটা ভিন্ন জিনিষ)। জীবজগতে প্রকৃতির নিয়ম কিভাবে কাজ করে তার ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই।
স্বাভাবিক অবস্থায় বাইরে বায়ুর চাপ এবং আমাদের দেহের ভেতর বায়ুর চাপ সমান সমান। স্বয়ংক্রিয় নার্ভাস সিস্টেম দু সেকেন্ড পর পর আমাদের বক্ষ কে প্রসারিত করে। এতে করে দেহের ভেতরের আয়তন বাড়ে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আয়তন বাড়লে বায়ু চাপ কমে। তখন বাইরের বায়ুচাপ তুলনায় বেশি হবার কারনে বাইরে থেকে বায়ু অর্থাৎ অক্সিজেন দেহের ভেতর প্রবেশ করে। সেই অক্সিজেন রক্ত বাহিত হয়ে কোষের ভেতর রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খাবার কে ভেঙ্গে দেয় এবং খাবার আলু পটল ডিম আমিষ নিরামিষ যাই হোক পরিশেষে অক্সিজেন তৈরীর কাঁচামাল(!) কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। উদ্ভিদের পাতা স্টোমাটা বা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে আমাদের এবং অন্যান্য প্রানীর প্রশ্বেষিত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহন করে এবং অসমোসিস বা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মূলের মাধ্যমে মাটি থেকে পানি গ্রহন করে। কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানি সুর্যালোকের সহায়তায় শর্করা এবং অক্সিজেনে পরিনত হয়। সেই অক্সিজেন আবার আমরা পাই!
প্রকৃতির এই সুন্দর নিয়মগুলোর আবিস্কারের ফল হিসেবেই আমরা পেয়েছি আধুনিক কৃষিবিদ্যা, আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা, আধুনিক প্রকৌশল এবং প্রযুক্তিবিদ্যা। প্রকৃতির নিয়মগুলোকে নিজেদের ছোট্ট ঘরে বন্ধী করে চল্লিশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বসে আমরা দক্ষিণ মেরুর ঠান্ডা বরফ দিয়ে বুক শীতল করি, অমাবস্যা রাতে চাঁদের আলোয় বসে প্রেম করি, আমার মত অখ্যাত লোক নিজের লেখায় ফেসবুকের মাধ্যমে পৃথিবীর আরেক প্রান্তের অপরিচিত পাঠকের সুচিন্তিত মতামত সংগ্রহ করি। এই নিয়মগুলোর আবিস্কার ই যূগে যূগে মানুষের মধ্যে বার্তা দেয়- আমরা সবাই মানুষ। আমাদের হৃদয়ে ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসার বন্ধনে এক হওয়াই মানুষের জীবনের একমাত্র মহোৎসব। ভালোবাসতে জানলে ভালোবেসেই রাজ্য জয় করা যায়। ঘৃণা এবং সহিংসতার মাধ্যমে নিজেকে অন্যের উপর জয়ী করে সূখী হবার ধারণা পুরোনো, এটা প্রত্যাখ্যান করার সময় এসেছে-এই বার্তা আমাদের আধুনিক শিক্ষা দীক্ষাই দিয়ে থাকে।

আমি যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাবি তখন বুঝতে পারি সেই সময় যারা আধুনিক মনের মানুষ ছিল তারাই মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন অনুভব করেছে। তারাই বুঝেছে জাতিকে ভবিষ্যত সুন্দর পৃথিবীর সমন্বিত সুন্দর মনের সাথে জুড়ে দেবার জন্য স্বাধীনতার কোন বিকল্প নাই। কারণ পরাধীন প্রভুভক্ত মন সুন্দর নেবার উপযুক্ত নয়। ভালোবাসা, প্রগতি এসব সেই মনে বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে পারেনা। সেই মনের বৈশিষ্ট্য হল হীনমন্যতা।বিনোদন হল পরচর্চা এবং অন্যের উপর দোষ চাপানো এবং মোক্ষধাম হল সব রকমের বঞ্চনা এবং শোষণ কে নিয়তি হিসেবে মেনে নেয়া।

জাতি হিসেবে আমাদের যতটুকু উন্নতি হয়েছে সেটা একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ফল এবং জাতি হিসেবে আমরা যতটুকু ঘৃণ্য হয়েছি সেটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকান্ড কে স্বজ্ঞানে বা অজ্ঞানে প্রশ্রয় দেবার ফল। ব্যাপার টা যেন কিছুটা এরকম- সমস্ত পৃথিবীর যেটুক স্বাধীন সুন্দর সেটা যেন একটা ছায়াপথ। একাত্তরে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা নির্মান করি একটা মহাকাশযান যেটার গতিপথ স্বাধীনতার চেতনা দিয়ে নির্ধারিত। স্বাধীনতার চেতনার উপর যখুনি আঘাত আসে তখুনি মহাকাশযান তার গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয় এবং অন্ধকার কৃষ্ণগহবরের দিকে মুখ করে! স্বাধীনতার চেতনা এবং স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার লব্ধি বল আমাদের সব সময় আলোকিত ছায়াপথ এবং অন্ধকার কৃষ্ণগহবরের মাঝামাঝি রাখে। ব্রেনে কখনো সুগার কোট ,কখনো সাইনাইড কোট দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা আমাদের কে কখনো আমাদের প্রকৃত অবস্থান বুঝতে দেয়না।

স্বাধীনতার অর্জনের নেপথ্যে যে মানুষেরা ছিল তারা সবাই আমার দৃষ্টিতে সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং সমান শ্রদ্ধেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ জীবন বাজী রেখে মুক্তি যুদ্ধ করা একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাও আমার কাছে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারন দুজনেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজ নিজ মেধা প্রজ্ঞা এবং হৃদয় অনুযায়ী জাতির মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। দু’জনের বুকেই দেশের জন্য ভালোবাসা ছিল সমান। বর্তমানের এই নরপিশাচ অধিকৃত দেশে( সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ড গুলো একবার চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলুন) যে একফোঁটা স্বাধীনতার আলোটুকু বুকের মধ্যে ফুটে আছে বলে এখনো বেঁচে আছি সেটাতে এই দুজনের অবদান ই সমান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:২০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.