নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে এস শার্লক

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৩


১৯৬৭ সালের ২৭ শে জানুয়ারি। চাঁদে যাবার প্রস্তুতি হিসাবে মাটি থেকে ৬৭ মিটার উঁচুতে কমান্ড মডিউলে বসে বসে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন তিন হবু মহাকাশচারী। ভার্জিল গুস গ্রিসম, এডওয়ার্ড এইচ হোয়াইট ও রজার বি শ্যাফি। তাদের মনে দু’দিন পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাওয়া বরের মতই আনন্দ। আহা দু’দিন পরেই চাঁদে যাবে, যেন দু’দিন পরেই বাসর রাত। কিন্তু হঠাৎ কমান্ড মডিউলের ভেতর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন!উদ্ধারকারী দল পৌঁছুবার আগেই তিন নভোযাত্রী সহ পুড়ে ছাই হয়ে গেল কমান্ড মডিউল।

এই ঘটনার পর নাসার তদন্ত দল কোন নভোচারী ছাড়াই পুরা ঘটনাটা পুনরায় সাজিয়ে তোলে এবং দূর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে। দুর্ঘটনা ঘটার আগে প্রশিক্ষণের সময় মহাকাশ যানের ভেতর নিম্নচাপে খাঁটি অক্সিজেন ভরে রাখত। দূর্ঘটনা ঘটার পর প্রশিক্ষণের সময় মহাকাশ যানের ভেতর নিম্নচাপে খাঁটি অক্সিজেনের পরিবর্তে স্বাভাবিক চাপে বাতাস ভরে রাখা শুরু করল।

তদন্তের মাধ্যমে ভুল সংশোধন করার ফলেই মানুষ পরবর্তীতে চাঁদে যেতে সক্ষম হয় এবং সভ্যতার অভিযাত্রায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মানুষ অতিক্রম করে।

দূর্ঘটনার পর সঠিক তদন্ত না করে নাসা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যদি নিম্নোক্ত মানসিকতার চর্চা করত তাহলে চাঁদে যাওয়া অধ্যায়ের সম্ভবত ওখানেই পরিসমাপ্তি ঘটতঃ

১ ) চাঁদে যাবার চিন্তা করে মানুষ সীমা লঙ্ঘন করেছে। কাজেই গজব নাজিল হয়েছে।
২) চাঁদ ত জ্বীন দের রাজ্য। চাঁদে যেতে যাতে কেউ সাহস না পায় সেজন্য জ্বীনের বাদশা এসে আগুন লাগিয়ে দিয়ে গেছে। জ্বীনের বাদশা কে আর চেতানোর দরকার নাই।
৩) মহাকাশযানে আগুন ধরাটা বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র। ইরানের ষড়যন্ত্র। রাশিয়ার ষড়যন্ত্র!
৪) বাই যা হবার তাত হয়া গেছে বাই! তদন্ত করলে কি গ্রিসম বাই, হোয়াইট বাই, শাফি বাই ফেরৎ আইব?
৫)মহাকাশ যানে উঠার আগে নভোচারীদের কেউ নিশ্চয় বৌ এর সাথে ঝগড়া করেছিল। কেউ নিশ্চয় গাঁজা খাইছিল।কেউ নিশ্চয় মহাকাশযানের ভেতরে ম্যাচের কাঠি দিয়া সিগারেট ধরাইতে নিছিল!
৬) চাঁদে যাওয়াটা একটা অর্থের অপচয়। দূর্ঘটনাটা মানুষের জন্য একটা শিক্ষা! এটা যারা উপলব্ধি করতে পারবে না তারাই এর তদন্ত করে আরো বেশি অর্থের অপচয় করা কে সমর্থন করবে!

আমরা সবাই চাঁদে যাবনা অথবা মহাকাশ যানেও বসবাস করব না। কিন্তু বিশাল একটা শহুরে জনগোষ্ঠী আমরা বাস করছি ফ্ল্যাট, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস নামক কতগুলো ছোট ছোট কুটুরিতে যেখানে বিজ্ঞানের নানান রকম প্রয়োগ। এসি আছে, ফ্রিজ আছে, টিভি আছে, আইপিএস আছে,গ্যাসের চুলা আছে, সেপটিক ট্যাঙ্ক আছে, ইলেক্ট্রিক হিটার আছে, ইলেক্ট্রিক আইরন আছে, ওয়াশিং মেশিন আছে আরো বহু কিছু আছে। এই সবগুলো জিনিষ ই বিজ্ঞানের আবিস্কার এবং প্রকৃতির নিয়ম আর বস্তুর ধর্ম কে কাজে লাগিয়েই এই জিনিষগুলো তৈরি করা হয়েছে। নিয়মের ব্যবহারিক প্রয়োগে যদি কোন ভুল হয় তাহলে এই নিরীহদর্শন যন্ত্রগুলো থেকেই মারাত্নক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং ঘটে। কিন্তু আমরা কখনোই পরিস্কার ভাবে জানতে পারিনা কেন দূর্ঘটনা ঘটল। কারন, এগুলোর বিজ্ঞান সন্মত কোন তদন্ত হয়না।

ক’দিন আগেই চট্টগ্রামে নিজের শোবার ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন চিকিৎসক। বেশ কিছুদিন আগে পাইপের ভেতর পড়ে মৃত্যু হল শিশুর। আরো বেশ কিছুদিন আগে সেপটিক ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণে এক পরিবারে বাবা মেয়ে মারা গিয়েছিলেন।এরকম অজস্র উদাহরণ।

কোন ঘটনাটার তদন্ত হয়েছে বা হবে??

আপনার পরিচিত কাউকে যেকোন একটা দূর্ঘটনার কারন জিজ্ঞেস করেন। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে করতে ব্যাখ্যা দিয়ে দেবে- এটা এই কারনে হইছে, ঐটা ঐ কারনে হইছে, সেইটা সেই কারনে হইছে। ‘আমি সবজান্তা’ প্রমাণ করা চাই ই চাই। ইদানিং আবার ফ্যাশন হয়েছে- সবজান্তা স্টাইলে বক্তৃতা দেবার পর কপট বিনয় দেখিয়ে বলা- আমারও(!) অবশ্য ভুল হতে পারে!! কি বলেন??’

এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে তদন্ত সংস্কৃতি আমরা কখনো তৈরি করতে পারবনা এবং তদন্ত সংস্কৃতি তৈরি করতে না পারলে এই খবর গুলো পত্রিকায় ছাপিয়ে কোন লাভ নেই। কারন দূর্ঘটনার খবরের পাশাপাশি যদি তদন্ত করে দূর্ঘটনার সঠিক কারন উদ্ঘাটন করে সেটা মানুষ কে জানানো হত তাহলেই মানুষ সত্যিকার অর্থে সতর্ক হত এবং ঠিক জায়গায় সাবধানতা অবলম্বন করত। দূর্ঘটনার খবর এবং এর পরবর্তী গুজব সতর্ক করার পরিবর্তে মানুষ কে অযথা আতঙ্কিত করে এবং মানুষ ভুল জায়গায় সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়ে আরেকটা দূর্ঘটনা ঘটায়! দূর্ঘটনার কারন হিসেবে কল্পনা করা অনেক গুজব হয়ত দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় রীতিমত মীথে পরিনত হয় এবং একটা আস্ত জাতির সর্বনাশ ঘটিয়ে দেয়।

সভ্যতার মত জীবন টাও একটা অভিযাত্রা। জীবনের এই অভিযাত্রাকে অগ্রযাত্রায় রূপ দিতে চাইলে জীবনে চলার পথে ঘটা দূর্ঘটনা গুলোর বিজ্ঞানসন্মত তদন্ত হওয়া দরকার। না হলে জীবনের অভিযাত্রাও সেভাবে থমকে যাবে যেভাবে চাঁদে অভিযাত্রা থমকে যেতে পারত!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: মাকসুদ ঠিকই গাইসিলো,

"গঠিত হয়েছে উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি
সৌজন্যমূলক সান্ত্বনার সমিতি"

২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আমাদের কমিটি গুলো উচ্চপদস্থ বলেই সব ঘটনার কারন আকাশে খোঁজে। মাটিতে তাকায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.