নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রনিক লাইকাইটিস

২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২৫

১৭ নম্বর রোগী টাকে অনেক্ষণ ধরে খেয়াল করতেছে বক্কর। পাগলের ডাক্তারের কাছে আবাল তার ছিঁড়া লোকজন আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এরে দেখে মনে হচ্ছে এর মাথায় তার ই নাই।তেইশ চব্বিশ বছর বয়েসী হ্যাংলা পাতলা ছেলেটার মাথায় কোঁকড়া চুল। চোখে ডবল লেন্সের চশমা। ওয়েটিং রুমের চেয়ারে বসে হাতের মোবাইলের দিকে তাকায় আছে ত আছেই। কতক্ষন পর পর মোবাইলের সাথে হাসে আবার মোবাইলের সাথে কাঁদে! দেখে মনে হয় মোবাইলের সাথে এর পীরিত চলতেছে। ‘মোবাইলের সাথে পীরিত’ ই কি এর পাগলামি? কিন্তু এর সাথে কেউ আসে নাই। নিজের পাগলামি যে নিজেই বুঝতে পারে তার পাগলের ডাক্তারের কাছে আসার ই বা কি দরকার?

১৬ নম্বর বিদায় হতেই বক্কর ডাকল- সতর আসেন সতর। আঠার উনিশ প্রস্তত থাকেন। বিশ একুশ চাইলে বাইরে গিয়ে বিড়ি সিগারেট খেয়ে আসতে পারেন।

সতের নম্বর ডাকতেই বিশিষ্ট ফেসবুক ব্লগার ‘মেঘাচ্ছন্ন কুয়াশা(সংক্ষেপে মেকু)’ প্লাস্টিকের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। তার হাত পা অল্প অল্প কাঁপছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরী মোড়ে সাইকিয়াট্রিষ্ট ডা খান খান কুতুবী(ফটিক)’র ঠিকানা সে তার ফেসবুক ফ্রেন্ড ‘ভাসমান কলম্বাস( সংক্ষেপে ভাক)’ এর থেকে পেয়েছে। ভাক প্রথমে বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট অনিল পাংখা’র কথা বলেছিল। কিন্তু অনিল পাংখা বসেন কলকাতায়। মেকুর পাসপোর্ট নাই দেখে সেকেন্ড প্রেফারেন্স খান খান কুতুবীর কথা বলেছে। ভাক পুরান পাগল। অনেক পাগলের ডাক্তারের সাথে তার চেনাজানা।

ডা খান খান কুতুবী(ফটিক)’র নামের ইতিহাস জানার জন্য উনার পিতৃ এবং মাতৃ বংশের ইতিহাস জানা আবশ্যক।আজ থেকে একশ বছর আগে মাওলানা আফসার উদ্দিন খান শুধু ছেলে পয়দা করবার জন্য শাদিকৃত তাঁর চতুর্থ স্ত্রীর সন্তান এডভোকেট জালাল উদ্দিন খান কুতুবীর শাদি দেবার জন্য খান এবং আশরাফ বংশের মেয়ে খুঁজতে লাগলেন।যথা সময়ে দশ টাকা এক আনা তিন পয়সা দেন মোহরে বিশিষ্ট কাজী, কাজী আব্দুল মুহিত খান ফটিকী(বাড়ি ফটিকছড়ি) র মেয়ে লজ্জতুন্নেছা খান ফটিকী( দাখিল পাশ)র সাথে জালাল উদ্দিন খান কুতুবীর শাদী হল।

লজ্জতুন্নেছা খান ফটিকী এবং জালাল উদ্দিন খান কুতুবীর অষ্টম সন্তান ফটিক ছোট বেলা থেকেই বেয়াদব। আকীকা করে তার নাম আব্দুল কুদ্দুস খান কুতুবী রাখা হল।কিন্তু সে একটু বড় হয়ে দুপাতা বিজ্ঞান পড়েই ফট ফট করে বলল- আমার নামে আমার মাতৃবংশ কই? মাতার এক্স ক্রোমোজোম আর বাবার ওয়াই ক্রোমোজোম হায়ার করে আমি হয়েছি! হোয়াই নো এক্স ক্রোমোজোম ইন মাই নেম? মা পেটে ধরছিল দেখে মায়ের নামের পদবী থেকে দুই অক্ষর নিলাম। আর বাবা পিটায় না দেখে বাবার পদবী থেকে এক অক্ষর নিলাম। আজকে থেকে আমার নাম ফটিক। মেট্রিক পরিক্ষা দেবার সময় রেজিষ্ট্রেশন করলেন খান খান কুতুবী নামে। মা বাবা দুজনের নামেই যেহেতু খান আছে! এভাবেই উদ্ভব হল ডা খান খান কুতুবী(ফটিক) নামের।

ডা ফটিক তার সামনে বসা যুবকের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। যুবকের চেহারায় গভীর হতাশার ছাপ। নিজের অজান্তেই ডা ফটিকের বুক কেঁপে উঠল। মেন্টাল ডিস্ট্রাকশন এর যে পর্যায়ে গেলে মানুষ আত্নহত্যা করে তার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এই যুবক! একে শতরকম কাউন্সেলিং করেও কোন লাভ নাই। ডিস্ট্রাকশনের এই পর্যায়ে মানুষের মনের নদীতে একটা নেগেটিভ নৌকা চলতে থাকে। সেই মনে যে সাজেশন দেয়া হয় সেটাই নেগেটিভ নৌকায় উঠে নেগেটিভ দিকে চলতে থাকে। ডা ফটিক মেকুর দিকে তাকিয়ে রোবট গলায় জিজ্ঞেস করলেন-

- এই আমি অতি নগন্য ফটিকচাঁদ(!) তোমার মত অসীম সম্ভাবনাময় যুবকের কি উপকারে আসতে পারি দয়া করে বলবে?

ডা ফটিকের অতিবিনয় এর কথা মেকু আগে থেকেই জানে। শয়তান রা বলে- অতিবিনয়ের কারনেই নাকি ডা ফটিকের আজকে এত পসার!মেকু কোন বিনয়ের ধার না ধেরে অতি সংক্ষেপে তার বক্তব্য উপস্থাপন করল-

দুবছর হল আমি ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেছি। প্রত্যেক মানুষ আলাদা হলেও প্রত্যেক জাতির একটা গ্রস মেন্টালিটি থাকে। সেই গ্রস মেন্টালিটি যদি আধুনিক না হয় তাহলে সেই জাতির ঘড়ি উলটা দিকে চলতে থাকে অর্থাৎ তাদের জাতীয় ঘড়িতে বারটা থেকে এগারটা, এগারটা থেকে দশ টা এভাবে বাজতে থাকে! আমার সব সময় মনে হয়েছে জাতি হিসেবে আমাদের গ্রস মেন্টালিটি অনাধুনিক। পরচর্চা, সব কিছুর জন্য অন্যকে দায়ী করা, যুক্তির ধার না ধারা, প্রচন্ড ইগোতে ভোগা, মনে মনে নিজেকে বিশাল কিছু ভেবে বাইরে অতিবিনয় দেখানো, এসব হল আমাদের মেন্টালিটির অন্যতম বৈশিষ্ট। আমি এসব নিয়ে ব্যঙ্গাত্নক লিখা শুরু করি।

ডা ফটিক জিজ্ঞেস করলেন- আমি কি তোমার কোন লেখা পড়তে পারি?

সাথে সাথে স্মার্ট ফোন বের করে খানিক্ষণ টিপাটিপি করে মেকু তার একটা লেখা ডা ফটিকের সামনে ধরল। ডা ফটিক প্রায় এক নিশ্বাসে লেখাটা পড়ে শেষ করলেন। কি ঝরঝরে মেদহীন ধারালো গদ্য!প্রতি লাইনে রসিকতা করে নিজেকে রসিক প্রমানের বা লোক হাসানোর চেষ্টা নাই। প্রতিটা লাইনের শেষে আশ্চর্য্যবোধক নাই। বরং, গদ্যের শেষ লাইনে চরম একটা রসিকতা করে চুপচাপ একটা দাঁড়ি দিয়ে বসে আছে! ডা ফটিক শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে যুবকের দিকে তাকালেন।

যুবক বলতে লাগল- শুরুর দিকে আমি পাঠকের বেশ এপ্রিসিয়েশন পেতাম। প্রতিটা লেখায় চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ টা কমেন্ট। শ দেড়শ লাইক!

ডা ফটিক বললেন- যেটা দেখালা সেটা ত তোমার শুরুর দিকের লেখা তাইনা?

যুবক মাথা নীচু করে বলল- জ্বী।

ডা ফটিক বলল- তোমার এখন কার একটা লেখা দেখাও।আর দুই সময়ের মাঝামাঝি একটা লেখা দেখাও।

যুবক স্মার্ট ফোন টিপে প্রথমে মাঝামাঝি সময়ের তারপর এই সময়ের একটা লেখা ডা ফটিক কে পড়তে দিল। দুটা লেখা পর পর পড়ার পর ডা ফটিক যা বোঝার বুঝলেন। তিনি নিজেও ফেসবুক ব্যবহার করেন। কাজেই তিনি বুঝতে পারলেন এই বুদ্ধিদীপ্ত যুবক ও ‘ ক্রনিক লাইকাইটিস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সে প্রথমে তার যুক্তিবোধ, রসবোধ দিয়ে লেখা শুরু করলেও এক সময় মনের অজান্তেই লাইক গুনা শুরু করেছে। যে লেখক রা বেশি বেশি লাইক পায় তারা কেন বেশি লাইক পায়, পাঠক কি খায় এসব তার মনের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে এবং তার লেখা থেকে স্বকীয়তা চলে গেছে। ফল হিসেবে সে আম এবং ছালা দুটাই হারিয়েছে। শুন্য মনের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে হতাশা। হতাশ মনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল আত্নহত্যা। এটা মনস্তত্ত্ব বিজ্ঞান স্বীকার করে।

ডা ফটিক বললেন- দেখ এ যুগের সাইকিয়াট্রিস্ট দের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এই ক্রনিক লাইকাইটিস রোগ সারানো। ফেসবুকে মৃত মায়ের কবরের ছবি পোস্ট করে মানুষ সেখানেও লাইক আশা করে। আমি এত বড় ডাক্তার নই যে এই রোগ সারাতে পারব। তবে আমি তোমাকে এখুনি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি। তোমার ফ্রেন্ড হয়ে আমি তোমার প্রথম লেখায় লাইক দিতে চাই। পরের দুটা লেখায় আমি লাইক দেব না। তুমি আত্নহত্যা করলেও না!

ডা ফটিকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করতে করতে গভীর হতাশার সাথে মেকু জিজ্ঞেস করল- ডা সাহেব, এই রোগ কি কেউ সারাতে পারেন না? ডা অনিল পাংখা??

ডা ফটিক হাসতে হাসতে বললেন- হ্যাঁ। তুমি ডঃ পাংখার কাছে যেতে পার। উনি আমার চেয়ে বড় ডাক্তার।

কিন্তু আমার কাছে ত পাসপোর্ট নাই। ইন্ডিয়া কেমনে যাব?

আরে ধুর!ইন্ডিয়া যেতে হবে কেন? পাংখাদা আর আমি লেগরোস্ট ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পিএইচডি করেছি। তোমাকে এখুনি পাংখাদার সাথে স্কাইপে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি!

স্কাইপ অন করতে করতে ডা ফটিক শ্রদ্ধা এবং আবেগ মেশানো দৃষ্টিতে মেকুর দিকে তাকিয়ে বললেন- তোমার প্রথম লেখাটা আমি একটা মনোরোগ বিষয়ক জার্নালে ছাপাতে চাই। যদি তুমি অনুমতি দাও!
কলকাতা মার্কেজ স্ট্রিটে নিজের চেম্বারে বসে বাংলাদেশী বন্ধু ফটিকের স্কাইপ কল পেলেন ডঃ অনিল পাংখা। স্কাইপ অন করতেই তিনি অদ্ভুদ সুন্দর একটা দৃশ্য দেখতে পেলেন-

ডঃ ফটিক এবং তার পেশেন্টরূপী বাইশ তেইশ বছর বয়েসী এক যুবক পরস্পরের দিকে গভীর আবেগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই যোগাযোগ হল পৃথিবীর আদিমতম এবং শ্রেষ্ঠতম যোগাযোগ। মানুষের মধ্যে এই যোগাযোগ স্থাপিত হলে মানুষ এমনিতেই সুস্থ হয়ে যায়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ক্রনিক লাইকাইটিস’রোগে আমিও তো ভুগছি।। শুধু চাই একজন সমব্যাথী।।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৫২

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: এই রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে দেখেই এই গল্পের অবতারনা।

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

ডি মুন বলেছেন: গল্পটা ভালো লাগল। খুব সুন্দরভাবে একটা কমন সমস্যার কথা তুলে এনেছেন এবং শেষের দিকে তার সমাধানও বাতলে দিয়েছেন।

আসলে, আমাদের জীবনে ফেসবুকের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার জরুরী। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ফেসবুকই ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে তুচ্ছা লাইক, কমেন্ট নিয়ে অনেকে মনোকষ্টে ভোগেন।

সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের স্বার্থে অনলাইনাসক্তি থেকে সকলে মুক্তি পাবেন; এবং পরিবার, বন্ধু সকলের সাথে মিলেমিশে অর্থবহ জীবন যাপন করবেন - এমনটাই প্রত্যাশা।

++++
শুভকামনা রইলো।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ মুন ভাই। সব আসক্তি ই খারাপ। আসক্তি আসক্ত কে নিয়ন্ত্রন করে। ফলে প্রয়োজন হলেও সে আর নিরাসক্ত হতে পারে না।

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। হিউমারাস। শেষের মেসেজটা চমৎকার।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.