নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্ঞানীদের সূক্ষ বুদ্ধি!!

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭

তিন দিন ঈদের ছুটি পাইয়াছি। একশ তিরিশ টাকা পকেটে লইয়া কাঁচা বাজারে সদাই করিতে যাওয়া যেরূপ বিব্রতকর, তিন দিন ছুটি লইয়া বাড়ি যাওয়া ও একইরূপ বিব্রতকর। কাজেই নিকটস্থ শ্বশুরবাড়িতেই আস্তানা গাঁড়িলাম। আন্ডা-বাচ্চা এবং বৌসহ শ্যালক আসিয়াছে। আমার আন্ডা-বাচ্চা গন স্বীয় মাতুল বংশীয় আন্ডাবাচ্চাগনের সহিত এবং গিন্নী তাহার ভ্রাতৃজায়ার সহিত কলকলাইতেছে। শ্যালক এবং শ্বশুর মহাশয় তাহাদের কি এক পারিবারিক বিষয় লইয়া গুরুগম্ভীর আলাপ করিতেছে। আমি চিংড়ি ভঙ্গিতে বিছানায় শুইয়া একখানি বহি পড়িতেছি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন আড্ডায় আড্ডার স্বভাব বুঝিয়া দুএকখানা রসিক মন্তব্য ছুঁড়িয়া দিয়া সামাজিকতা রক্ষা করিতেছি।

এর মাঝেও গিন্নি চা দিয়া গেল। চা খাইয়া চায়ের কাপ যত্রতত্র ফেলিয়া রাখিয়া কোথায় রাখিয়াছি সেটা ভুলিয়া যাওয়া আমার পুরানো বদ অভ্যাস। এজন্য গিন্নীর বকা খাওয়া টা গা সওয়া হইয়া গিয়াছে। আজিকে ছুটির দিন। তাহা ছাড়া শ্বশুরবাড়িতে একমাত্র জামাই বলিয়া আমার আহ্লাদের মাত্রাও কিঞ্চিত বেশি। কাজেই গিন্নি আসিয়া যখন হাঁকিল- ‘চায়ের কাপ কোথায়?’ তখন খ্যাঁক করিয়া বলিয়া দিলাম- চায়ের সহিত চায়ের কাপ শুদ্ধ খাইয়া ফেলিয়াছি!

আমার কথা বিন্দুমাত্র আমলে না নিয়া গিন্নি গজ গজ করিতে করিতে খাটের নিচে, আলমারীর কোনায়, টেবিলের তলায়, ফ্রিজের পিছনে, বাচ্চাদের পটির ভেতর চায়ের কাপ খোঁজ করিতে লাগিল। কোথাও না পাইয়া আবার গলা এবং চোখ চড়াইয়া জিজ্ঞেস করিল- চায়ের কাপ কোথায়??

আমি নির্লিপ্ত স্বরে জবাব দিলাম-খাইয়া ফেলিয়াছি। আগে চা খাইয়াছি। তারপর কচকচ করিয়া কামড় দিয়া চায়ের কাপ খাইয়াছি।

গিন্নী রীতিমত মারমুখী হইল, আমার মাথায় ছিট আগের চেয়ে বাড়িয়াছে বলিয়া ঘোষনা দিল এবং নিজেই ডাক্তারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হইয়া প্রত্যহ তিন বেলা কুরবানী’র গরুর খাঁটি গোবর খালিপেটে খাবার জন্য প্রেসক্রিপশন লিখিয়া দিল।
.........

আরো তেত্রিশ বছর গত হইল। আমিও গত হইলাম। গত হইবার পর কেহ কেহ ভাবিল- আহা বেচারা মরিয়া গিয়াছে। একটু না কাঁদিলেই নয়! যাহাদের আরেকটু সময় ছিল তাহারা ভাবিল- আহা বেচারার একটু গুন-কীত্তন করা উচিৎ, ফেসবুকে কতই না বালছাল লিখিত! গুনকীত্তন সভায় একজন ঘোষনা করিল- উনি নাকি একবার চায়ের কাপ খাইয়া ফেলিয়াছিলেন!!

প্রথমে সবাই গাঁজাখুরি বলিয়া উড়াইয়া দিল। কিন্তু এরপরে আমার পক্ষের লোক(!) রা একে একে কঠিন সব যুক্তি উপস্থাপন করিল-
যুক্তি ১ ঃ- আজ থেকে তেত্রিশ বছর আগে মানুষের দাঁত লোহার মত শক্ত ছিল। চায়ের কাপ অনেকেই খাইত!

যুক্তি ২ ঃ- পুরা কাপ খাইয়াছিলেন এমন কথা ত নিশ্চয় কেহ বলেন নাই। কাপের অংশবিশেষ হয়ত খাইয়াছিলেন। হয়ত কাপের পেইন্ট টুকু একটুখানি চাটিয়াছিলেন! আমরা যে বলি গরু খাইয়াছি তার মানে কি আস্ত গরু খাইয়া ফেলিয়াছি? কু-যুক্তি দিয়া কোন কিছুকে মিথ্যা করিতে চাহিলেই উহা মিথ্যা হইয়া যায় না। উনাদের এতবড় সুনামী বংশ, সেই বংশের একজন চায়ের কাপ কচকচ করিয়া খাইয়া ফেলিয়াছে- এটা কোন বাহাসযোগ্য বিষয় ই নহে!

যুক্তি -৩ ঃ- চায়ের কাপ টা এরপর অনেক খোঁজাখুজি করিয়াও কোথাও পাওয়া গিয়াছিল না এবং উনার মত ভদ্রলোক কখনো আপন স্ত্রীর সহিত মিথ্যা কথা বলিবেন না। কাজেই নিশ্চিত প্রমানিত- উনি চায়ের কাপ খাইয়াছিলেন!

যাহারা বুদ্ধিমান তাহারা এসব কঠিন(!) যুক্তির সামনে মাথা নত করিল। তাহারা যে বুদ্ধিমান সেটা প্রমান করিবার জন্য তাহারা ‘আমার ছেলেমেয়ে এবং নাতি নাতনিরা দিনে কে কটা চায়ের কাপ খায়’ তালিকা করিয়া ফেস বুকে শেয়ার দিল!

যেসব বেকুব রা এতসব কঠিন যুক্তি শুনিয়াও ‘চায়ের কাপ কি কেহ খাইতে পারে?’ বলিয়া বাহাস করিল এবং ‘আমার ছেলেমেয়ে নাতি নাতনিরা আসলেই চায়ের কাপ খায় কিনা তাহা অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রহিয়াছে’ বলিয়া মত দিল তাহাদের স্থুল-বুদ্ধি দেখিয়া ‘জ্ঞানী’ রা আশ্চর্য্য এবং বিস্মিত হইল!!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: খাঁটি গোবরের প্রেসক্রিপশনটা বেশ উপকারি বলিয়া মনে হইতেছে । :) খুব মজা পাইলাম গল্প খানা পড়িয়া ।

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২১

সিপন মিয়া বলেছেন: কি রচিলেন গুরুজী? অসাধারণ।

৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ট্রাই করে দেখতে পারেন

৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: সেলাম গুরুজী।

৫| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫

থিওরি বলেছেন: ঈদ মোবারক!
গল্পটি ভনলোই লাগিল।

৬| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: আপনার গিন্নী আপনার মাথার ছিট দেখিয়া নিজেই ডাক্তারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হইয়া যখন প্রত্যহ তিন বেলা কুরবানী’র গরুর খাঁটি গোবর খালিপেটে খাবার জন্য প্রেসক্রিপশন লিখিয়া দিলেন তৎক্ষণাত আপনি সেই খাঁটি গোবর সামান্য জলে মিলিয়ে পনেরো দিন সেবন করিয়া আরোগ্য পেয়েছিলেন বলিয়া আমরা ধারনা করিয়াছি। -------------মজা পেলাম। :D

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪৩

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.