নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবেক রায় এর কূলখানি

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮

গলির মুখে আসতেই দেখা হয়ে গেল বিবেক রায় এর সাথে! বিবেক রায় অসুস্থ, খক খক করে কাশছে। চোখের উজ্জ্বল মণি দূটো যখন নাড়াল আমার মনে হল যেন চোখের মণি দূটো নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে তার। আমি হাতের ইশারায় ব্যস্ততা বুঝিয়ে এড়াতে চাইলাম। কিন্তু সে একেবারে সামনে এসে পথরোধ করে দাঁড়াল!

- রিমি কে বাসর রাতে কি বলেছিলি মনে আছে?

বিবেকের কথা শুনে মেজাজ টা গরম হয়ে গেল। আরে!‘প্রিয়া, আমার এই দেহমন সারাজীবন শুধু তোমার ই থাকবে’ এসব কথাইত মানুষ বৌ কে বাসর রাতে বলে। বৌ কে কি কেউ বাসর রাতে নিউটনের তৃতীয় সূত্র শেখায় নাকি! আমি বিবেক কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো সিএনজির দিকে এগোলাম। আমি ঝঙ্কার এর কাছে যাব। অফিসের ক্লান্তি মোছার জন্য আমার একটু শরীরে ঝঙ্কার তোলা প্রয়োজন! ঝঙ্কার! পরজন্মেও যেন তোমাকে কলিগ হিসাবে পাই!!

সিএনজি তে যেতে যেতে দূহাত দিয়ে সিএনজির গ্রীল ধরে আমি চোখ বন্ধ করি। তারপর কল্পনায় ঝঙ্কার কে দেখি।‘ঝঙ্কার, ঝঙ্কার! তোমাকে বাস্তবে দেখে একরকম সূখ, কল্পনায় দেখে আরেকরকম সূখ! কল্পনায় ছুঁয়ে একরকম সূখ, বাস্তবে ছুঁয়ে আরেকরকম সূখ!!’

বিবেক শালার পুত যাই বলুক রিমি কে ত আমি সুখেই রেখেছি। প্রতিমাসে বেতনের পুরা টাকা সুড় সুড় করে রিমির হাতে তুলে দিই। আজকে এই যে ঝঙ্কার কে ডিনার খাওয়ানোর টাকা নিলাম তাও রিমির হাত থেকেই নিয়েছি। অবশ্য একটু মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে! বলেছি- ‘আমার এক পুওর স্কুল ফ্রেন্ডের মা গুরুতর অসুস্থ। বন্ধু করুণ মুখে পাঁচ হাজার টাকা চাইল!’ শুনে রিমির চোখে পানি চলে আসল। রিমির নার্ভ খুব দূর্বল। আমাদের বাসর রাতে খাটের নীচে একটা বিড়াল খুব মিউ মিউ করছিল। বিড়াল টাকে আমি লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরেছিলাম দেখেও রিমি কান্না করে দিয়েছিল।

সিএনজি রডোডেন্ড্রন কুঞ্জের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখানেই ফ্ল্যাট নম্বর ৫বি তে ঝঙ্কার একা থাকে। যে বদমাশ টা ঝঙ্কার কে তালাক দিয়েছে তার বিরুদ্ধে মামলা করে ঝঙ্কার এই ফ্ল্যাট টা আদায় করে নিয়েছে! বদমাশ টাকে আমি অবশ্য কখনো দেখিনি। কিন্তু ঝঙ্কার এর সুরের সাথে সুর মিলিয়ে আমিও তাকে বদমাশ বলি! সুরের সাথে সুর না মিলিয়ে শরীরের সাথে শরীর মেলানো পর্যন্ত ত যাওয়া যায়না!

ঝঙ্কার নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে।চাকরিতে তার একটু উন্নতি প্রয়োজন। আমি তার উন্নতির সিঁড়ি।প্রথম বারের মত উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঝঙ্কার যেদিন আমার কপালে চুমু খেল সেদিন আচমকা শালা বিবেকের পুত(!) পেছন দিক থেকে এসে আমার কোমর জাপ্টে ধরেছিল। আমার দুই হাত তখন ঝঙ্কারের কোমরে। আমার দূপায়ের জুতার উপরে ঝঙ্কারের হাই হীল। বিবেক শালার পুত কে যে লাথি মেরে ঝেড়ে ফেলব তার ও উপায় নাই! শালার পুতে ঐ অবস্থায় ডায়লগ দেয়- সৌধ! তোর শরীরে এখনো রিমির গায়ের গন্ধ লেগে আছে। কালরাতে তুই রিমিকে আদর করেছিস!!

ঝঙ্কারের ফ্ল্যাটের কলিং বেলের আওয়াজ টা পর্যন্ত সেক্সি। আল্লাহ দুনিয়াতে এত সেক্স কেন!! ঝঙ্কার দরজা খুলে দিয়েছে। নাহ, এরকম ড্রেস পরতে নেই ঝঙ্কার!! আমি নিজেকে একটু পাপী ভাবতে চাই! হাজার হোক বিবেক আমার নেংটা কালের বন্ধু। তার পাছায় জোড়া পায়ে লাথি দিলেও মনের একেবারে ভেতরে তাকে একটু হলেও গুরুত্ত্ব দেয়া উচিত! এভাবে নিজেকে মেলে দিলে সেও ত ‘প্রকৃতির বিশেষ আইনে’ আমাকে ক্ষমা করে দেবে!!

আজকে সকাল বেলায় রিমি আমার চুলে কলপ লাগিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেছিল- শুক্রবারে আবার অফিসে কিসের মিটিং? আজকে না আমাদের ম্যারেজ ডে! তুমি আর আমি রাতে বাইরে ডিনার খাবার কথা!!

আমি রিমির গালে চুমু খেয়ে বলেছিলাম- অফিসে এমপ্লয়ীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে একটা মিটিং। আমি বস! আমি না গেলে ক্যাম্নে কি!!

রিমিকে বলা এই কথাটাও মিথ্যা। ঝঙ্কার দেখা যাচ্ছে কাজে কর্মে যথেষ্টই দক্ষ!তাকে আমার শেখাবার কিছু নেই। বরং আমার নিজের ই তার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে!!

আমি বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে ঝঙ্কার কে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠার সূযোগ দিচ্ছি। হঠাৎ ভেন্টিলেটরে চোখ পড়ল।কুত্তার বাচ্চা বিবেক!! ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমার রাগী হিস হিস শব্দের আড়ালে ঝঙ্কারের শীৎকারের শব্দ মিলিয়ে গেল- কুত্তার বাচ্চা তুই এখানেও এসেছিস!! তুই কি প্রাইভেসি(!)ও বুঝিস না!!

- দোস্ত, রিমি কে তুই সেদিন কি বলেছিলি মনে করে দেখ!!, বিবেক করুণ স্বরে বলল।

আমি রাগে ফেটে পড়লাম-কুত্তার বাচ্চা বৌ কে আদর করার সময় ‘ ভালোবাসা মানে কমিটমেন্ট বলেই ভালোবাসায় দেহ মন দূটোই পবিত্র রাখতে হয়। ভালোবাসা দেহমনে ভাগ করলে সেটার পবিত্রতা আর থাকেনা’ এসব বলাই ত উচ্চ শিক্ষিত সমাজের নিয়ম!!

ঝঙ্কারের দেয়া ট্র্যাঙ্কুইলাইজার কুঁত করে পানি দিয়ে গিলে রাগে কাঁপতে কাঁপতে আমি ট্রাউজার টা পরে নেই। বিবেক শালা কে আজকে খুনই করে ফেলব। এমনিতেই শালার পুত আধামরা হয়ে আছে। ঝঙ্কারের থেকে উপহার পাওয়া নতুন বুট জুতার মুখটাও যথেষ্ট সুঁচালো। এটা দিয়ে তলপেটে কষে লাথি মারলেই শালা পটল তুলবে। সাহস থাকলে রাতের অন্ধকারে গলির মুখে আয়!!




মরা চাঁদের আলোয় সূনসান নির্জন গলির মূখে অসুস্থ মৃতপ্রায় বিবেক রায় দাঁড়িয়ে আছে। শেষ একটা চেষ্টা সে করবেই। বন্ধু সৌধের মত সম্ভাবনাময় একটা মানুষ কে সে কিছুতেই ধ্বংস হতে দেবেনা। কিছুতেই না! সৌধ যখন স্কুলে ফার্স্ট বয় ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল তার সাথে বিবেকের কি দারুণ সম্পর্ক ছিল! সে আর রিমি যখন রমনা পার্কে পাশাপাশি হাত ধরে বসে থাকত বিবেক ও তাদের পাশে থাকত। কই? সৌধের কোন আচরনে বিবেকের ত নিজেকে কোনদিন কাবাব মে হাড্ডি বলে মনে হয়নি! হলে ফেরার আগে রিমিকে আলতো জড়িয়ে ধরে সৌধ যখন তার কপালে চুমু খেত তখন বিবেকের কি ভাল লাগত! সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করত- আজীবন সে বন্ধু সৌধ’র ভালোবাসা কে পবিত্রতার ছায়া দিয়ে রাখবে। সেই প্রতিজ্ঞা কখনো ভুলেনি বিবেক!

সৌধ টলতে টলতে গলির মুখে এসে পৌঁছায়।তার বুট জুতার ডগাটা মলিন চাঁদের আলোতেও ছুরির মত চকচক করে উঠে। এক কালের বন্ধু বিবেক রায় এর সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ ফাটানো ঠা ঠা ঠা ঠা শব্দ করে হেসে উঠে সৌধ!

- বিবেক রায়!! দূর্নীতি, অসততা, ভন্ডামির শক্ত লোহার রড সিমেন্ট এর সাপোর্ট নিয়ে যে সৌধ আজ দাঁড়িয়ে আছে তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তোর বেঁচে থাকার কোন প্রয়োজন নাই। তার বর্তমান পাশবিক আনন্দ উৎসবের জৈবিক জীবনে তুই একটা অনাহুত মানবিক উৎপাত!!

লাথিটা মারার সময় ‘ঝঙ্কারের সাথে ভবিষ্যত নিরুপদ্রব সঙ্গম কল্পনা’র বাড়তি একটা ভোল্টেজ় সৌধের কোমরে ভর করে। এক লাথিতেই বিবেক মরে যায়।

বিবেকের লাশ মাড়িয়ে নিজের বাসার দিকে হাঁটতে থাকে সৌধ। তার মন এখন প্রশান্ত। সে এখন প্রশান্ত হৃদয়ে রিমির সাথে প্রতারনা করতে পারে। প্রশান্ত হৃদয়ে প্রতারণা করতে পারে ঝঙ্কারের সাথেও!! বাসার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সৌধের মনে হয়- বিবেক রায় এর একটা কূলখানির আয়োজন করলে কেমন হয়??





মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার| খিস্তিগুলোও দারুন মানিয়ে গেছে গল্পের সাথে| বিবেকরায়ের কুলখানি যদি সত্যি সত্যি করা হত, তবে ডেকোরেটরেরা হয়ত সামলাতে পারতোনা চাপ|
খুব ভাল লেগেছে গল্প

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: বিবেকরায়ের কুলখানি যদি সত্যি সত্যি করা হত, তবে ডেকোরেটরেরা হয়ত সামলাতে পারতোনা চাপ- অসধারণ কমপ্লিমেন্ট!

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬

সুমন কর বলেছেন: ভিন্ন ধরনের উপস্থাপন। ভালো লাগল।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই।

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬

মামুন রশিদ বলেছেন: বিবেকের সাথে যুজ্যমান দারুণ দ্বন্দ্বময় একটা গল্প পড়লাম ।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।

৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৪

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমি বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে ঝঙ্কার কে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠার সূযোগ দিচ্ছি।

‘ঝঙ্কারের সাথে ভবিষ্যত নিরুপদ্রব সঙ্গম কল্পনা’র বাড়তি একটা ভোল্টেজ় সৌধের কোমরে ভর করে।


অসাধারণ ! অসাধারণ !

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ গিয়াস লিটন ভাই।

৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সৌধ ধ্বসে পড়ে না, বিবেক রায়ের কূলখানি করতে হয়|
গল্পটা আরেকবার পড়লাম| সেই ভাললাগা আবারো কাজ করল

৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: গল্পটা নির্বাচিত'তে যায়নি দেখে অবাক হচ্ছি|
গল্প এখন নির্বাচিত পাতায় যায়না?

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪১

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: নির্বাচিত তে যাবার চেয়ে অনেক বড় প্রাপ্তি হল এই যে আপনি বললেন- গল্প টা নির্বাচিত তে যায় নি দেখে অবাক হচ্ছি।

৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩

আব্দুল্যাহ বলেছেন: "সুরের সাথে সুর না মিলিয়ে শরীরের সাথে শরীর মেলানো পর্যন্ত ত যাওয়া যায়না"....
আসলেই কিছু তিক্ত বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন, ধন্যবাদ

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ আব্দুল্যাহ ভাই।

৯| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লেগেছে।

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান মাহবুব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.