নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সদালাপির পাতা

সদালাপি

সদালাপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাযী শুরাইহ-এর ন্যায়বিচার

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

সংকলনে: আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব । ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবনে গাফফার



কাযী শুরাইহ বিন হারেছ আল-কিন্দী ইসলামের ইতিহাসে ন্যায়পরায়ণতা, বুদ্ধিমত্তা ও অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী এক অনন্যসাধারণ বিচারপতি ছিলেন। তিনি একাধারে ওমর, ওছমান, আলী এবং মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর শাসনামলে বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ৬০ বছর যাবৎ বিচারকার্য পরিচালনার পর ৭৮ হিজরী সনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার নিরপেক্ষ বিচারের দীপ্তিমান ইতিহাস সর্বকালেই মানবজাতিকে প্রেরণা জুগিয়ে থাকে। নিম্নে তার দু’টি ঘটনা বিবৃত হ’ল-



[১] ইসলামের ২য় খলীফা ওমর (রাঃ) একদা এক ব্যক্তির নিকট থেকে ভালভাবে দেখেশুনে একটি ঘোড়া ক্রয় করলেন। অতঃপর ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে স্বীয় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হ’লেন। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে লাগল।

ওমর (রাঃ) কালবিলম্ব না করে সরাসরি বিক্রেতার নিকটে ফিরে এলেন এবং তাকে বললেন, তুমি তোমার ঘোড়া ফিরিয়ে নাও, এটা ত্রুটিযুক্ত।

বিক্রেতা বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি ঘোড়াটি ফেরত নিব না, কেননা আপনি তা সুস্থ ও সবল অবস্থাতেই আমার নিকট থেকে ক্রয় করেছেন।

ওমর (রাঃ) বললেন, ঠিক আছে, তাহ’লে তোমার মাঝে ও আমার মাঝে একজন বিচারক নির্ধারণ করা হোক।

বিক্রেতা বললেন, ঠিক আছে, কাযী শুরাইহ আমাদের মাঝে ফায়ছালা করবেন।

ঘটনার বর্ণনাকারী শা‘বী বলেন, তারা উভয়েই শুরাইহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হ’লেন এবং তার নিকটে পৌঁছে তাকে প্রকৃত ঘটনা বিবৃত করলেন। কাযী শুরাইহ ঘোড়ার মালিকের অভিযোগ শ্রবণ করে ওমর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কি ঘোড়াটিকে সবল ও সুস্থ অবস্থায় কিনেছিলেন? ওমর (রাঃ) বললেন, জি হ্যাঁ। বুদ্ধিমত্তা ও ন্যায়পরায়ণতার মূর্ত প্রতীক কাযী শুরাইহ ঘোষণা করলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি যা ক্রয় করেছেন তা গ্রহণ করে সন্তুষ্ট হৌন অথবা যে অবস্থায় ঘোড়াটিকে গ্রহণ করেছিলেন সে অবস্থায় ফেরত প্রদান করুন। হতচকিত খলীফা মুগ্ধ দৃষ্টিতে কাযী শুরাইহের দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ! এটাই তো ন্যায়বিচার। হে বিচারপতি! আপনি কুফায় গমন করুন। আমি আপনাকে কুফার প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দান করলাম। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াহ ৯/২৫)





[২] ৪র্থ খলীফা আলী (রাঃ) একদিন বাজারে গিয়ে দেখেন, জনৈক খৃষ্টান লোক একটা লোহার বর্ম বিক্রি করছে। আলী (রাঃ) তৎক্ষণাৎ বর্মটি চিনে ফেললেন এবং বললেন, এ বর্ম তো আমার। চল, আদালতে তোমার ও আমার মধ্যে ফায়ছালা হবে। সেসময় ঐ আদালতের বিচারক ছিলেন কাযী শুরাইহ। তিনি যখন আমীরুল মুমিনীনকে আসতে দেখলেন, তখন তাঁর বসার স্থান থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং আলী (রাঃ)-কে নিজ স্থানে বসিয়ে তিনি তাঁর পাশে বসলেন।

আলী (রাঃ) বিচারপতি শুরাইহকে বললেন, এই ব্যক্তির সাথে আমার বিরোধ মিটিয়ে দিন। শুরাইহ বললেন, আমীরুল মুমিনীন! আপনার বক্তব্য কি? আলী বললেন, এই বর্মটি আমার। অনেক দিন হ’ল এটি হারিয়ে গেছে। আমি তা বিক্রয় করিনি, দানও করিনি।

শুরাইহ বললেন, ওহে খৃষ্টান! আমীরুল মুমিনীন যা বলছেন, সে ব্যাপারে তুমি কী বলতে চাও? সে বলল, আমি আমীরুল মুমিনীনকে মিথ্যাবাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করছি না, তবে বর্মটি আমারই। শুরাইহ বললেন, বর্মটিতো এই ব্যক্তির দখলে রয়েছে। কোন প্রমাণ ছাড়া তার কাছ থেকে সেটা নেয়া যাবে বলে আমি মনে করি না। আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে কি?

আলী (রাঃ) হেসে ফেললেন এবং বললেন, শুরাইহ ঠিকই বলেছেন। আমার নিকট তো কোন প্রমাণ নেই। নিরুপায় শুরাইহ খৃষ্টানের পক্ষেই রায় দিলেন এবং সে বর্মটি গ্রহণ করে রওয়ানা হ’ল। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে সে আবার ফিরে এল এবং বলল, আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে, এটাই নবীদের বিধান ও শিক্ষা। আমীরুল মুমিনীন নিজের দাবী বিচারকের সামনে পেশ করেছেন, আর বিচারক তার বিপক্ষে রায় দিচ্ছেন। আল্লাহ্‌র কসম, হে আমীরুল মুমিনীন! এটা আপনারই বর্ম। আমি এটা আপনার কাছে বিক্রয় করেছিলাম। পরে তা আপনার মেটে রঙের উটটির উপর থেকে ছিটকে পড়ে গেলে আমি ওটা তুলে নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল।

আলী (রাঃ) বললেন, তুমি যখন মুসলমান হয়ে গেলে, তখন এ বর্ম এখন থেকে তোমার। অতঃপর আলী (রাঃ) তাকে ভাল দেখে একটা ঘোড়াও উপহার দিলেন এবং তাতে চড়িয়ে তাকে বিদায় দিলেন।

ইমাম শা‘বী বলেন, আমি পরবর্তীকালে এই নওমুসলমানকে নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খারেজীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে দেখেছি। অপর বর্ণনায় শা‘বী বলেন, আলী (রাঃ) এছাড়া তার জন্য দু’হাযার দিরহাম ভাতাও নির্ধারণ করে দেন। অবশেষে এই ব্যক্তি ছিফফীনের যুদ্ধে আলী (রাঃ)-এর পক্ষে লড়াই করে শহীদ হন। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা ১০/১৩৬ হা/২০২৫২, ১০/১৩৬; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৮/৫)




শিক্ষা:

[1] ন্যায়বিচার মানবতাকে সমুন্নত করে।

[2] আল্লাহর আইনের সামনে রাজা-প্রজা সকলে সমান।

[3] ক্ষমাশীল আচরণ দিয়ে মানব হৃদয় জয় করা যায়।

[4] বিচারপতিকে বিচক্ষণ, মহৎ ও সৎসাহসী হ’তে হয়।

[5] ইসলামী খেলাফতে মুসলিম-অমুসলিম সকলের নাগরিক অধিকার সমান

সুত্রঃ Click This Link

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:

এই বিচারককে বাংলা শিখায়ে আমাদের আদালতে চাকুরী দেয়ার সুপারিশ করছি।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০

সদালাপি বলেছেন: আপনার মাথা ঠিক আছে?

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

আমার মাথা ঠিক আছে; ঘোড়া, গরু, ছাগলের বিচার বাংলাদেশের গ্রামের বেকুবেরাও ঠিক মত করে আসছে যুগে যুগে।

১৯৭১ সালের আলবদর ও রাজাকার জেনারেলদের বিচারে দেন শুরাইয়াকে, তখন বুঝতে পারবেন, মিয়া; মাণ্দাতার আমলের কিসব কাহিনী চালায়ে দিচ্ছেন; এখনকার বিচারকদের জুতার ফিতা লাগানোও অনেক কঠিন।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০

সদালাপি বলেছেন: যে সহজে চিন্তা করতে পারে সে সহজেই সমাধান করতে পারে ।

এখানে একজন গুণী বাক্তির গুণ বর্ণনা করা হয়েছে । গুণী বাক্তি সব সময় সম্মানিত, কালের ফ্রেমে বন্দী করা মানে নিজের মনের কপটতা প্রকাশ করা ।

বুদ্ধিমান মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় , আর গাধা catagory র মানুষের কাছে সেই শিক্ষণীয় ইতিহাস হয়ে ওঠে ""মান্ধাতার আমলের কিসব কাহিনী"" ।

৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:




মনে হয়, আপনি গুণী মানুষ, আথবা গুহা মানুষ।

৬| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:০৪

সদালাপি বলেছেন: এখানে একজন গুণী বাক্তির গুণ বর্ণনা করা হয়েছে । গুণী বাক্তি সব সময় সম্মানিত, কালের ফ্রেমে বন্দী করা মানে নিজের মনের কপটতা প্রকাশ করা ।

বুদ্ধিমান মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় , আর গাধা catagory র মানুষের কাছে সেই শিক্ষণীয় ইতিহাস হয়ে ওঠে ""মান্ধাতার আমলের কিসব কাহিনী"" ।

আর যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় তারা গাধা catagory এর মানুষের কাছে "গুহা মানুষ " বলে প্রতীয়মান হয় ।একেই বলে বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা !!

৭| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯

তাল পাখা বলেছেন: এখানে বিচারকের বিচক্ষণতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সৎ সাহসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।

চাঁদগাজী বলেছেন:

আমার মাথা ঠিক আছে; ঘোড়া, গরু, ছাগলের বিচার বাংলাদেশের গ্রামের বেকুবেরাও ঠিক মত করে আসছে যুগে যুগে।

১৯৭১ সালের আলবদর ও রাজাকার জেনারেলদের বিচারে দেন শুরাইয়াকে, তখন বুঝতে পারবেন, মিয়া; মাণ্দাতার আমলের কিসব কাহিনী চালায়ে দিচ্ছেন; এখনকার বিচারকদের জুতার ফিতা লাগানোও অনেক কঠিন।

ভাই চাঁদ গাজী,
একটা বর্মের ঘটনা,একটা ঘোড়ার ঘটনা শুনতে হয়ত সামান্য হতে পারে। কিন্তু তখনকার জন্য বিশাল।
অতীত ছাড়া বর্তমান অচল।মূল ছাড়া যেমন গাছ ভাবা যায়না। বর্তমানে আমাদের রকেটে চড়ে চাঁদে যাওয়ার পিছনে হাজার বছর আগের চাকা তৈরীর জ্ঞানকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.