নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প : 'প্রশান্তির শুভ ছায়া '

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২০

রাবেয়ার মন খারাপ। প্রায় মিনিট পাঁচেক হল তার স্বামী শহীদুল তাকে বেশ গালিগালাজ করেছে। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি; কিন্তু গত পরশু দিন থেকে রাবেয়ার শরীরের তাপমাত্রা কোন সময়েই ১০২ ডিগ্রি এর নিচে নামে নি। রাবেয়ার জ্বরের জন্য সে প্রতি দিনই তার স্বামীকে ঔষধ আনতে বলে। শহীদুলের সে দিকে বিশেষ কোন নজর নেই বললেই ...চলে। লালনের মত একধরনের ভাবসাব তার মধ্যে কাজ করে। চুলগুলো এলোমেলো। সংসারের প্রতি খুব একটা দায় আছে বলে মনে হয় না। সমত্মানদের প্রতিও উদাসীন। তবুও জীবনের নিয়মেই যেন জীবন কেটে যাচ্ছে। রাবেয়া খাওয়া-দাওয়ায় তিক্ততা পোষণ করে। শুধু খাওয়া-দাওয়া নয় এখন তার জীবনের প্রতিই যেন তিক্ততা এসে গেছে। আজ আবার সে সকালে কয়েকবার বমি ও করেছে। এমনিতেই সে খাওয়া-দাওয়া কম করে তার উপর কয়েকবার বমি হওয়ায় তার শরীরের অবস্থা অনেকটা নাজেহাল হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশীদের সমালোচনায় শহীদুল জ্বরের প্রথম দিনই তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে বলেছিল। রাবেয়াই শহীদুলের কথাকে বেশ গুরুত্ব দেয় নি। আর দিবেই বা কি করে - আশে-পাশে যে ডাক্তাররা রয়েছে সবাই য়ে পুরুষ ! হারিকেল জ্বালিয়ে ও বোধহয় এই খাদিমনগর এলাকায় মহিলা ডাক্তার পাওয়া মুশকিল ! রাবেয়া মনের দু:খে সকাল বেলা শুয়ে শুয়ে নীরবে কান্নাুকাটি করছে। এমন ক্ষণে বাড়ির পাশ দিয়েই ভাঙ্গারি ফেরিওয়ালা বেল বাজিয়ে জোরে হাঁক ছাড়ছে - এই ভাঙা টিন ... ভাঙা হাড়িপাতিল ...।

রাবেয়ার মন চলে যায় ভাঙ্গারি ফেরিওয়ালার উচ্চ হাঁকের দিকে। তার চোখের নীরব অশ্রু কখন যে থেমে গেছে সে হয়ত নিজেই বলতে পারবে না। বিষন্ন মনে সে অনেক কিছুই ভেবে চলছে। হায়রে ! এই ভাঙ্গারিরা ভাঙ্গা টিন থেকে শুরু করে অনেক ভাঙ্গা জিনিসই নেয়, শুধু ভাঙা মন নেয় না। রাবেয়ার ছেলেমেয়ে সাত জন। সব ছেলেমেয়ে গুলো পিঠাপিঠি। বড় ছেলের বযস ১২বছর। রাবেয়ার সমত্মানেরা যতক্ষণ না খেলা ধুলা করে তার চেয়ে বেশি সময় ঝগড়াঝাটি করে। সারাক্ষণ একজনের কান্না থামে তো অপর জনের শুরু হয়। সমত্মানদের এরূপ কান্ডকারখানাতে সারক্ষণই যেন পরিবারটিতে নরকীয় ছায়া বিরাজ করে। প্রতিবেশী শাহানা রাবেয়াকে পাঁচ বছর মেয়াদী নরপ্ল্যানের কথা বলতেই রাবেয়া শুধায় - ‘কোন ফল নষ্ট করন ঠিক না’।

- তা হইলে পেট কাইটা আহো ।

- নাউজুবিল্লা ! এইডা তুমি কি কও?

- কি কও মানে ..........এতগুলো বাচ্চা-কাচ্চার ক্যাচক্যাচ গ্যাচ গ্যাচ তোমার ভাল লাগে? তার ওপর আরো বাচ্চা নিবার চাইতাছ! এইগুলারে ঠিকমতন মানুষ করতে না পারলে কিমত্মু আল্লার কাছে এই জবাব দিতে অইব!

- জোয়াব দেওয়ার চিমত্মা তোমার না করলেও চলব তাছাড়া পোলাপানই আর কয়জন? আমি পোলাপানের বাগান সাজামো!

আজ শুয়ে শুয়ে এসব অনেক কিছুই সে স্মরণ করছে। হঠাৎ আবারও তার বমি উঠে। মুখ তুলেই সে ওয়াক করে বমি করে। এভাবেই বেশ কয়েকবার পুনঃপুনঃ চলতে থাকে। তার ওয়াক ওয়াক বমির শব্দ চারদিকে এক অস্বসিত্মকর পরিবেশ সৃষ্টি করে তোলে। রাবেয়ার বড় ছেলে মতিন পাশের কক্ষে। জোরে জোরে হিন্দি ক্যাসেট বাজাছে। বেশ জোরে বললেও বোধ হয় ভুল হবে। যাতে তার মায়ের ওয়াক ওয়াক বমির শব্দ তার কানে না যায় সে জন্য সে একটু জোরে টেপ বাজাচ্ছে। হিন্দি ভাষা না বুঝলেও হিন্দি গানের তাল লয়ের প্রতি তার বেশ আসক্তি রয়েছে। অবশ্য মতিনের মত একালেও অনেকই হিন্দি ভাষা বুছে না তবু ইিন্দ গান শুনে। রাবেয়া মতিনকে এই অসুস্থ শরীর নিয়েও কয়েকবার ধমক দিয়েছে। আজ তার শরীরটা বেশি খারাপ, নতুবা উঠে গিয়ে মতিনকে কিছু উত্তম মধ্যম দিত। মতিনেরই বা দোষ কী? ওর বয়স কম, বুঝেই বা কতটুকু? মানুষ সবভাবতই স্পর্ষকাতর; কান্না দেখলে যেমন অনেক সময় কান্না পায় তেমনি বমি দেখলেও বমির উদ্রেক হয়।

রাবেয়া মতিনকে গালি-গালাজ করতে থাকে। উচ্চ শব্দ সে এমনিতেই পছন্দ করে না। তার উপর আজ তার বেশি শরীর খারাপ! গালি চলতেই থাকে। গালির ধরন এমনই অশ্লীল যে সভ্য সমাজের কোন লোক সেখানে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারবে বলে মনে হয় না। ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে মতিন বলতে থাকে - ঔষধও খায় না, মরেও না!

কথাটি শুনতে পেয়ে রাবেয়া আরও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। কিন্তু তার শরীর বেশি দুর্বল বলে এর সমুচিত জবাব দিতে পারলো না। তার আক্ষেপের সীমা রইলো না। রাগে,দুঃখে রাবেয়া শুধু কাতরাতে থাকে। অজগর সাপ ভুল করে সজারু খেলে যে রকম কষ্ট হয় তেমনি কষ্ট হচ্ছিল তার। এমন কুলাঙ্গার ছেলে তার পেটে ছিল...ইত্যাদি ইত্যাদি! বেদনার নীল পাহাড় জমা হয় তার বুকে। ক্রমেই তার শরীর আরও দুর্বল হযে আসে। তার চিমত্মাধারাতেও কেমন যেন সত্মবিরতা দেখা যায়। ‘ছুটি’ গল্পের ফটিকের মত প্রলাপ বকতে থাকে। শরীর বেশি দুর্বল বিধায় তা আর স্পষ্ট হয়ে উঠে না।

এমন সময় আরও বেশি শব্দে ওয়াজের ক্যাসেট ছাড়ে মতিন। মতিন জানে তার মা ওয়াজের ক্যাসেট সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। টেপে চালানো ওয়াজের ক্যাসেটের শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে চারদিকের দেয়ালে। ওয়াজের শব্দে রাবেয়া চোখ খুলে, হাত দিয়ে চোখ কচ্লাতে থাকে। রাবেয়া এখন নীরব। তার চোখে মুখে ক্ষোভের ছায়ার লেশও নেই। ক্রমেই যেন সে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সময় এগিয়ে চলে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.