নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কলির জবানবন্দি (সমকালীন গল্প)

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২৩




বছরখানেক হলো কলি সিলেট শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছে। সহকারী শিক্ষক। দেখতে ভারি সুন্দর। মার্জিত এবং বিনয়ী। স্কুলে প্রথমদিকে স্যালোয়ার-কামিজ পরেই আসতো। কিন্তু মাস দুয়েক আগে হঠাৎ সে বোরকা পরা শুরু করেছে। ধর্মীয়কারণ ভেবে সহকর্মীরা আর প্রশ্ন তোলেননি।

স্কুলে আসার পর কলি প্রায়ই হাঁপানি রোগীদের মতো হাঁপাতো। অজানা ভয়ের ছাপ তার চোখমুখ জুড়ে লেপ্টে থাকতো। আর কেউ না বুঝলেও প্রধান শিক্ষিকা বিষয়টি কিছুটা অনুমান করলেন। একদিন নিভৃতে গিয়ে জিজ্ঞেসও করলেন। মায়ের মতোই অভয় পেয়ে কলি সব খুলে বললো। প্রধান শিক্ষিকা প্রথমে কলির বাবা ও পরে তার ভাইয়ের সাথে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলেন।

পরের দিন। কলি স্কুলের সরু গলির রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। পাশের মোড় থেকে সহসা এক ছেলে কলির সামনে এসে দাঁড়ায়। মোবাইল নম্বর চায়। কলি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ছেলেটি নাছোর বান্দা! কৌশলে নানা হুমকি দেয়। সুযোগবুঝে বাঘের হিংস্রতা নিয়ে কাছে আসে। কলি ভয়ে কাঁপতে থাকে। তার সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে। গলির মোড়ে সেদিন সহসা অন্য মানুষজন এসে পড়ায় ছেলেটি তেমন সুবিধা করতে পারেনি। দাঁতে দাঁত কাটতে কাটতে বিদায় নেয়।

সেদিন প্রচণ্ড ভয়ে ক্লাসে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারলো না কলি। অপরাহ্নে সহসাই তার শরীরে জ্বর এলো। এক সহকর্মীকে সাথে দিয়ে প্রধান শিক্ষকা তাকে বাসায় পৌঁছে দিলেন। লজ্জা-শরম ভেঙ্গে কলিও বড়ো ভাইকে সব খুলে বললো। বড়ো ভাই পুলিশের দ্বারস্থ হলেন। পুলিশের মাধ্যমে সেই ছেলেকে শাসনও করে দেওয়া হলো। আগুনে ঘি দিলে যেমন বহ্নিশিখা দ্বিগুণ হয় তেমনি পুলিশের হুমকির কারণে ছেলেটিও আরো ব্যাপরোয়া হয়ে উঠলো। ছেলেটি আগের থেকে আরও ভয়ংকর আর কৌশলী হয়ে উঠলো।

পরের দিন। সকালবেলা। কলিকে বেশ আত্মবিশ্বাসী আর সাহসী বলে মনে হলো। কলি এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বোরকার কালার পরিবর্ত করেছে। মনে করেছে আজ তাকে চিনতে পারবে না! আহা! শকুনেরা দূর থেকেও যে শিকার দেখতে পায়! মোড়ের কাছে যেতেই সেই ছেলেটি হঠাৎ কলির সামনে এসে দাঁড়ালো। কথা বলতে বলতে তাঁর খুব কাছাকাছি চলে আসে। অকস্মাৎ হাত ধরে। কলি ছাড়াতে চাইলেও সে শক্ত করে ধরে রাখে। ছেলেটির মুখ এগিয়ে আসে। কলির ঠোঁটের কাছে আসতেই কে যেনো ছেলেটিকে পিছন থেকে ধরে ফেললো।

ছেলেটি বেশ ড্যামকেয়ারভাব নিয়ে পিছনে তাকায়। দেখে-এসআই মহিউদ্দিন! পালানোর কোনো উপায়ই ছিলো না। তার চতুর্দিকেই পুলিশ! খুব দ্রুত তাকে বেধে ফেললো পুলিশ সদস্যরা। কলির ভাই ও পুলিশ সদস্যরা রাস্তার মধ্যেই ছেলেটিকে উত্তম-মধ্যম দেওয়া শুরু করলো। আশেপাশে অনেকেই তখন এগিয়ে এলো গণপিটুনিতে শরীক হওয়ার জন্য! গণপিটুনিতে অংশ নেওয়ার সময় বেশিরভাগ বাঙালিই কারণ জানতে চায় না। পিটুনি দেওয়ার পর কারণ জানে! এতদিন এলাকার যেসব মুরুব্বিরা শত বলে-কয়েও ছেলেটিকে বাগে আনতে পারেননি তারাও আজ ছেলেটির গায়ে দুএকটা চড়-থাপ্পর মারতে দ্বিধাবোধ করলো না।

এসআই মহিউদ্দিন দ্রুত মোবাইল কোর্ট বসানোর ব্যবস্থা করেন। মহামান্য কোর্ট বখাটে ছেলেটিকে জেলহাজতে প্রেরণ করে এবং কলিকে সান্ত্বনা দেয়। কলি চোখ মুছতে মুছতে বলে-বখাটেদের কারণে আমার মতো অনেক কলিই রাস্তাঘাটে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। অনেক কলিই প্রতিনিয়ত এরকম ভিকটিমের শিকার হচ্ছে। লজ্জা কিংবা ভয়ে অনেকেই মুখ খুলছে না। মুখ খুললেই বিপদে পড়ছে। অনেকেই আবার প্রতিকার করতে না পেরে সম্ভ্রম হারাচ্ছে কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সম্ভ্রম বাঁচানোর তাগিদে বোরকা পরেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না! স্বাধীন বাংলাদেশে আসলেই নারীরা কতটুকু স্বাধীন? ... বিশ্বের কোথাও কি নারীর নিরাপদ চলাফেলার অবাধ স্বাধীনতা আছে?

মুনশি আলিম
সিলেট
14.03.2017


মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


সমস্যা আছে; তবে কিছু মেয়েকে পরিবার দুর্বলভাবে গড়ে তুলছে, এরা অবস্হা বুঝে, খাপ খাওয়াতে পারছে না; এদের সমস্যা থাকবে।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৯

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: সহমত।

তবে এ থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুরক্ষা করতে হবে। আমরা বিশেষ করে পুরুষরা চাইলেই এসব অপ্রীতিকর ও কুৎসিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে পারি। সুস্থ রাখতে পারি সমাজ ও সভ্যতাকে।

শুভকামনা সতত।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭

অগ্নি সারথি বলেছেন: গণপিটুনিতে অংশ নেওয়ার সময় বেশিরভাগ বাঙালিই কারণ জানতে চায় না- :P :P :P

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) :D =p~


ভালোবাসা জানবেন।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৫৮

সঞ্জয় নিপু বলেছেন: তবে আর যাই বলেন, আগের তুলনায় এখন এই সমস্যা গুলো অনেক কমেছে, মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে সাথে সাথে মেয়েরা ও অনেক স্মার্ট হয়েছে, যা দেখছি শুনছি হয়তো বা ২-১ টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
তবে হচ্ছে গ্রামে গঞ্জে অথবা মফস্বলে ।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর বিষয়ে লেখার জন্য।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: গল্পটি বাস্তবতা অবলম্বনে। শহরের প্রায় একেবারে প্রাণকেন্দ্রের ঘটনা।



নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মূল নামগুলোর পরিবর্তন করা হয়েছে। ভালোবাসা অফুরান।

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২১

ধ্রুবক আলো বলেছেন: ধর্মীয় ও নৈতিকতার শিক্ষার অভাবে এরকম অপকান্ড গুলো বেশি হচ্ছে। সোচ্চার সবার নিজ নিজ ঘরে থেকে হতে হবে। আর প্রতিবেশী দেশের প্রচারিত সিরিয়াল দেখা বন্ধ করতে হবে।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৫১

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: পারিবারিক শিক্ষাকেই এ ক্ষেত্রে আমি এগিয়ে রাখতে চাই। তাছাড়া আমরা পুরুষরা আরও একটু মার্জিত হলেই এসব অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে সমাজ রক্ষা পাবে।

অনেক অনেক ভালোবাসা।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৬

মোহাম্মদ সোহেল আহমেদ বলেছেন: সম্ভ্রম বাঁচানোর তাগিদে বোরকা পরেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না! স্বাধীন বাংলাদেশে আসলেই নারীরা কতটুকু স্বাধীন? ... বিশ্বের কোথাও কি নারীর নিরাপদ চলাফেলার অবাধ স্বাধীনতা আছে?
এই শব্দগুলো আমাকে ব্যাথিত করেছ,আশা করি নারীরা নিজেকে নারী না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাববেন এবং প্রতিবাদ প্রথম দিন থেকে করবেন। তাহলে ঐ বখানে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায় না।

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০১

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি; তবে এর সাথে এও বলতে চাই- আমাদের পুরুষদেরও আরও মার্জিত হতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলেই কিন্তু এসব অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে।

ভালোবাসা অফুরান।

৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৮

মাঝিবাড়ি বলেছেন: মানুষ বদলাতে হবে, সমাজ বদলে যাবে, প্রশাসন যদি দলীয় মোহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, পরিস্থিতির উন্নতি হবে বৈকি!

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০৩

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ঠিক তাই। মানুষকেই বদলাতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি পুরুষদেরকেও আরও মার্জিত, রুচিশীল ও নৈতিকবোধসম্পন্ন হতে হবে।

ভালোবাসা সতত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.