নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী সমাচার (সমকালীন গল্প)

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৩


ছবি : প্রতীকী
সংগ্রহ : ইন্টারনেট
পর্ব : ১

তুমি কি আজকাল আমাকে এড়িয়ে চলছ?-মোটেই না; সাময়িক ব্যস্ত মাত্র! ফ্রি হলেই ফোন দিব। কথাটি বলেই আমি চৈতির কল কেটে দিই। তখন গবেষণার প্রতি ছিল বেশ ঝোঁক। রাত-দিন গবেষণার ফাইলপত্র নিয়েই পড়ে থাকতাম। বিষয় সিলেট বিভাগের মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী। তথ্য সংগ্রহের জন্য গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াতাম। উপকরণ সংগ্রহ করতে করতে কখনো কখনো প্রায় মধ্যরাত হয়ে যেত; কখনো বা বাসায় ফেরার কথাও ভুলে যেতাম। ভুলে যেতাম সবচেয়ে কাছের বন্ধু চৈতির কথা!
কী এক ভয়ানক নেশার মধ্যেই যে আমি ডুবে থাকতাম তা বলে আর শেষ করা যাবে না। একবার গোয়াইনঘাট উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী সংগ্রহের জন্য সাবেক জেলা কমান্ডার, উপজেলা সাংগঠনিক কমান্ডার ও সাবেক যাচাই-বাছাই জেলা কমান্ডারের মাধ্যমে পূর্ব জাফলংয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানাই।

মুক্তিযোদ্ধারা দলবেঁধে জড়ো হতে থাকে জাফলং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম প্রথম বেশ সাড়া পেতাম। কিন্তু তৃতীয় দিনের মাথায় এসে বুঝতে পারলাম আড়ালে-আবডালে কেউ আমার বিষয়ে প্রপাগণ্ডা ছড়াচ্ছে। তার মাত্রা এতই বেশি যে ড্রেনের দুর্গন্ধকেও যেনো হার মানাবে!

মনে মনে আমি একটু ভেঙ্গে পড়তে লাগলাম। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ভালো কাজে বাধা-বিঘ্ন আসবেই। থেমে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া! আমি কাজ চালাতে লাগলাম। বিরোধীরা গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসে কমান্ডারের কাছে আমার সম্পর্কে নানা আপত্তিকর কথা বলে তার কান ভারী করে তোলে। পরিস্থতি ক্রমশই ঘোলাটে হতে থাকে। পূর্ব জাফলংয়ের তিন জন কমান্ডারদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কাজের গতিকে প্রায় গুছিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পারলাম না। উপজেলা কমান্ডারকে দিয়ে হুমকি দেওয়া হলো-আর যদি কোন মুক্তিযোদ্ধার জীবনী লিপিবদ্ধ করি তবে তিনি মামলা করবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।

কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। এরই মধ্যে বেশ জোরেশোরেই শুনতে পেলাম আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী লেখার জন্য মামলা! মনের ভেতর কেমন কেমন করতে লাগলো। মামলার কথা শুনে কাছের বন্ধুদের আচরণেও কেমন যেনো পরিবর্তন দেখা দিল। বেশ ঘটা করে না ডাকলে এখন তারা আর খোঁজ-খবর নেয় না বললেই চলে। পরিবারের লোকজনের মধ্যেও কেমন যেনো তাচ্ছিল্যের ভাব লক্ষ করলাম। আমার মনে পড়তে লাগলো সেই প্রবাদটি-বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে!

নিজের টাকা-পয়সা, সময় ব্যয় করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থেই একটি মহৎ কাজ করতে গেলাম আর তার পরিণতি কিনা মামলা! ভাবতেও কেমন যেনো গা শিরশির করে। পরিবার, বন্ধুবর্গ, শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা সুশীলবোদ্ধারা অনেকেই তখন আমার কাজের মধ্যে ত্রুটি খুঁজার জন্য মারিয়া হয়ে উঠলেন। আগে যারা পরামর্শ কিংবা উৎসাহ দিয়েছেন এখন তারাই উল্টো কথা বলছেন। হায়রে! অবস্থার খারাপ হলে নাকি চামচিকাটিও সুযোগ খোঁজে! এরই মধ্যে একদিন থানা থেকে ফোনও এলো।

-হ্যালো,
-জি বলেন,
-আপনি কি আলিম বলছেন?
-জি,
-আমি ওসি তদন্ত... গোয়াইনঘাট থেকে বলছি।
-জি বলেন,
-সম্ভব হলে কাল-পরশু একটু দেখা করবেন।
-জি আচ্ছা।

মোবাইল রাখার পরই আমার মাথায় নানা দুশ্চিন্তা উঁকি দিতে লাগলো। আমার তখন শতভাগ বিশ্বাস হলো যে-আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিজের ভেতর ক্রমশ খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছি। কেউ কেউ তখনো ভয় দেখিয়ে বলছে- সরকারবাদী মামলা! গ্রেফতার হলে জামিন পাওয়া খুবই মুশকিল হবে। আর যে চাকরি করেন সেটা চলে যাওয়ার সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দেওয়া যায় না! গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। পুলিশের সাথে দেখা করার দরকার নেই ... ইত্যাদি।

পালিয়ে থাকতে মনে সায় দিলো না। পালানোর সুযোগ পেয়ে জগদবিখ্যাত সক্রেটিসও তো পলায়ন করেননি! তবে আমি কেন করবো? এত ঘোর বিপদের মধ্যেও মনের কোথায় যেনো একটুকরো শক্তি পাচ্ছি। বারবার মন বলছে- আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। সাহস নিয়েই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করা উচিৎ। আমি মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে চেষ্টা করলাম। বিভিন্ন থানায় আমার সিনিয়র কয়েকজন সুহৃদ এসআইদের মাধ্যমে। তারা জানালো-কোনো থানাতেই আমার নামে কোনো মামলা নেই। যারা মামলার কথা বলেছে তারা কেবল তা প্রপাগণ্ডা হিসেবে চালিয়েছে।

বিষয়টি আরও পরিষ্কারের জন্য আমার এক সাংবাদিক বন্ধুর মাধ্যমে তদন্ত ওসিকে ফোন করালাম। ওসির কাছে আমার থানায় যাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে সে উল্টো প্রশ্ন করলো-সে কী করে? বন্ধু বললো- প্রফেসর! উল্লেখ্য, গ্রামের অধিকাংশ লোক এখনও কলেজ শিক্ষকদের ঢালাওভাবে প্রফেসর বলে সম্বোধন করে।

ওসি বললেন-ওহ্! ভুলবশত ওনার নাম্বারে ফোন চলে গেছে। ওই একই গ্রামে আলিম নামে আমাদের একজন সোর্স রয়েছে। প্রায়ই তার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকি। আমার বন্ধুটি তখন হাসতে বললেন-ও ও ও ... তাহলে এই ব্যাপার! বলেই সেও আবার অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো।

বেশ নির্ভার লাগলো। রাহুরগ্রাস থেকে মুক্ত আলোয় লুটোপুটো খেয়ে বন্ধুর হাসির সাথে আমিও শরীক হলাম! সময়ের বুকে কতক ভেজা প্রশ্ন তখনও গুঙরে কেঁদেই চলছে।

২১.০৭.২০১৬
পূর্ব শিবগঞ্জ, সিলেট

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.