নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়ের উপহার ( সমকালীন গল্প)

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০৭




মেজর ক্লাস শেষ করেই নীলা বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। বাসার খুব কাছেই কলেজ। মিনিট পাঁচেকের পথ। বাসা বলতে মেস আর কি! রত্না মঞ্জিল। নীলা সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনায়ও বেশ ভালো। গোলাপের মতো তার কথাতেও যেনো সর্বদা সুবাস ছড়ায়। স্বর্গের আবিরমাখা ঠোঁট জুড়ে বনেদী হাসি লেগেই থাকে। আজ তার সাথে কান্তাও ছিলো। বাসায় প্রবেশকালে এক ভদ্রলোক পেছন থেকে ডাক দিলো-এই যে আফারা!
নীলা-বলুন, কী দরকার?
-আপনারা এই বাসাতেই থাকেন?
-হ্যাঁ; কিন্তু কেন বলুন তো?
-নীলার নামে একটি চিঠি আছে একটু কষ্ট করে দিয়ে দিবেন।
পোশাকে-আশাকে লোকটাকে মোটেও পিয়ন মনে হলো না। তবে তার হাতের চিঠির বাণ্ডিল দেখে অবশ্য কারও বুঝতে বাকী রইল না যে সে পিয়ন! নীলা হাত বাড়িয়ে চিঠি নিলো।
পিয়ন-দিবেন তো?
-হ্যাঁ, দিমু।

পিয়ন চলে যেতেই ওদের মধ্যে হাসির ধূম পড়ে গেলো। মৃদু খোঁচা মেরে কান্তা বললো-কি খবর সই? ডুবে ডুবে জল খাও? নীলার তখনও ঘোর কাটেনি। কেই বা তাকে চিঠি লিখতে পারে! স্মৃতি হাতরিয়ে এমন সুহৃদ কাউকে সে খুঁজে পেলো না। ঘনিষ্ঠ বান্দবী কান্তা। আজ কান্তার চেয়ে তার নিজের কৌতূহলও কম নয়। চিঠির খামে পত্র-প্রেরকের কোনো নাম ঠিকানা নেই। আর এ কারণে কৌতূহলের মাত্রা আরও বেড়ে গেলো। এ সময় তার বান্ধবীরা তাকে ঘিরে ফেললো। পত্রে কী আছে তা দেখার জন্য। এই ভিড় করার মানে এই নয় যে, তারা কোনদিন চিঠি-পত্র দেখেনি! বরং কৌত‚হল এই জন্য যে নাম ঠিকানাহীন কে তাকে এইপত্র দিতে পারে। নিষিদ্ধ বা গোপন জিনিসের প্রতি বাঙালির আকর্ষণ যে চিরায়ত, এ আর নতুন কী!
নীলাও মজার ছলে স্মৃতি থেকে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলো-

"একটা উড়ো চিঠির প্রেম
খোলা কাব্যে নিশ্বাস চেপে নির্ঘুম রাত
নীলকুড়ে জমা বাক্য আস্তাকুরে
একটা উত্তেজনা অনুভূতিতে চিবিয়ে খায়
বিদ্যুৎ বিভ্রাট মোমবাতির আলো খেয়ে বাঁচে অন্ধকার।
কবিতায় স্নান করে দীর্ঘশ্বাস-
বেলকুনির কার্নিশে শিশিরের ফোঁটায় জমে থাকে সহস্র উত্তর
স্নায়ুতন্ত্রে বাস করে নির্বাক প্রশ্ন গুলি-কে তুমি? ”

সময় বাড়ার সাথে সাথে বান্ধবীরাও একেক রকম টিপ্পনি কাটতে লাগলো। বীথি নামের তার এক বান্ধবী তো বলেই ফেললো-শেষ পর্যন্ত নিজের প্রেমটাকে লুকাতে পারলি না? ধরাই খেলি? কান্তা বললো-তোর নাগরটা যেনো কী করে? খানিকটা লজ্জিত স্বরে বললো-তোরা কি থামবি? বিথি বললো-থামতেই তো চাই-তা নাগারের নামটা বলে দিলেই তো হয়; আমার তো আর ভাগ বসাবো না! কি বলিস কান্তা? সমর্থনের জন্য কান্তাকে জুড়ে দেয়। কান্তা ও নিভৃৃতে সায় দেয়। ভরা নদীর জোয়ারের মতো কৌতুহলের মাত্রাও যেনো ওদের চোখে মুখে উপচে পড়ছে!

নীলা যেই চিঠির খামটি খুলেছে ওমনিই দু’টি তেলাপোকা খামের ভেতর থেকে নড়ে চড়ে ওঠলো। কান্তা দেখার জন্য খাম ধরে টান দিতেই তেলাপোকা দুটি রাস্তায় পড়ে গেলো। তেলাপোকা দেখে সবাই সবাই লজ্জারাঙা হাসিতে ফেটে পড়লো। কান্তার পেছনেই ছিলো তিশা। মজা করার ছলে সেও বললো-আহা! সবার আশার মাঝেই গুড়ে বালি! তোকে যে এভাবে কেউ ঠক দিবে তা তো কখনো ভাবিনি? নীলা ঈষৎ লজ্জা পেয়ে খামের দিকে তাকালো। খামের ভেতর একটুকরো সাদা কাগজ। সেখানে বর্ণিল কালিতে লেখা-দুঃখ নিও না; পরে আরও ভালো কিছু পাঠাবো। কান্তা লেখাটি পড়ামাত্র আবারও হাসির ধূম পড়ে গেলো। সে হাসি যেনো আর থামতেই চায় না। হঠাৎ দোতলা থেকে মিনু ডাকলো বাহিরে বেশ হাসা-হাসি করো না। লোকে মন্দ বলবে। ভেতরে চলে এসো।


দু’দিন পর। আবারও একটি চিঠি এলো। সাথে একটি গিফট সামগ্রীও। গিফট বক্সের কভার দেখে মনে হলো খুব দামি কিছু হতে পারে। আবারও সবাই তাকে ঘিরে ধরলো। বিথি বললো-এবার মনে হয় তোর ভাগ্য খুলে গেলো! ফলাফল জানার জন্য একেএকে মেসের সকলেই উপস্থিত হলো। নীলা ইচ্ছে করেই একটু দেরি করছে। এবার সে চিন্তা করলো-সে নিজে বাক্স খুলবে না; কারণ ভাগ্য সব সময় তার সহায় হয় না! কান্তার কাছে হস্তান্তর করলো। কান্তাও বুদ্ধি করে সব মেয়েদের বক্সের চারদিকে বসিয়ে দিলো। যেনো মজমা হচ্ছে! নেত্রীর মতো বেশ ভঙ্গি নিয়ে বললো-সবাই আমরা একসাথে প্যাকেটটি ছিঁড়বো।

বিথীও গলা ফাটিয়ে একটি ঘোষণা দিয়ে দিলো-খাওয়ার কিছু থাকলে কিন্তু তুই আর ভাগ পাবি না! অলঙ্কার হলে অবশ্য আমরা ভাগ বসাব না, কেবল একটি পার্টি দিলেই চলবে। নীলা হাসতে হাসতে বললো-বেশ, তাই হবে। সকলেই করতালির মাধ্যমে একত্রে বাক্সের কভার খুলে ফেললো। বাক্সটির ভেতরে আরেকটি বাক্স! সেটিও খোলা হলো। তার ভেতরে আরেকটি বাক্স! যতই বাক্স বের হচ্ছে ততই কৌতূহলের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে তৃতীয় বাক্সটি খোলার পর দেখা গেলো রেপিং কাগজ দিয়ে কী যেনো মোড়ানো!

মোড়ানো জিনিস খোলার জন্য নীলার ডাক পড়লো। মৃদু হেসে নীলা বললো-আমার ইয়ে আজ যে উপহার পাঠিয়েছে তা সকলের জন্য উৎসর্গ করলাম! সবাই-একটা করতালি হোক! চারদিকে করতালির বন্যা বয়ে গেলো। নীলার বুকের ভেতর অজ্ঞাত কিছু আশায় টিবটিব করছে। শরীরে মৃদু মৃদু কম্পনও অনুবূত হলো। সবার চোখ ও মুখের দিকে আরেকবার তাকালো। শেষে কী বলে যেনো নিজের বুকে নিজেই একটি ফু দিলো। তারপর রেপিং কাগজটি খুলে ফেললো।

ওমা! একি! যেই মোড়ানো অংশটি খোলা শেষ অমনিই তার হাত থেকে একটি গাঢ় ব্যাঙ লাফ দিয়ে নিচে নেমে গেলো!



মুনশি আলিম
সিলেট


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২৬

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: হয়তো কোন বন্ধু ফাজলামি করে পাঠিয়েছে।

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২৯

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) =p~



হয়ত তাই হবে ! ;)

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৯

উম্মে সায়মা বলেছেন: আহারে সব আশায় গুড়েবালি =p~

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০০

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: =p~ :P



হুম। সব আশায় গুড়েবালি।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৮

ওমেরা বলেছেন: এটা আবার কোন ধরনের ফাইজলামী !!হিহিহি

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২৮

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) :-P =p~

ফাজলামোই বটে! ;)


ধন্যবাদ প্রিয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.