নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

থিংস ফল অ্যাপার্ট- ভালোলাগার মতো এক উপন্যাস

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:১১






চিনুয়া আচেবে ১৯৩০ সালে নাইজেরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস থিংস্ ফল অ্যাপার্ট প্রকাশিত হবার পর থেকেই তিনি সারা দুনিয়ায় আফ্রিকার একজন প্রধান উত্তর-উপনিবেশিক লেখক হিসাবে পরিচিত হতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে এই উপন্যাসের বিক্রির পরিমাণও এক কোটি কপি ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় একশোটি ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। ইউরো-মার্কিন বলয়ের বাইরে আর কোনো লেখকের এতটা প্রকাশনার সৌভাগ্য হয়নি। ম্যান বুকার পুরস্কারপ্রাপ্তি তাঁর এই সাফল্যে আরেকটি তিলক এঁকে দিয়েছিল, কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি তিনি। এই লজ্জা নোবেল পুরস্কারেরই। তাঁর মতো লেখক যে কোনো মানদণ্ডে এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নোবেল না পেলেও নোবেল পাওয়ার খ্যাতিকেও জীবদ্দশায় অতিক্রম করে গেছেন তিনি। এই খ্যাতি জুটেছে মাত্র একটি উপন্যাস—থিংস ফল অ্যাপার্ট'র মাধ্যমে।

উচ্চতর বিদ্যালয় থেকে শুর করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তাঁর থিংস ফল অ্যাপার্ট (১৯৫৪) শীর্ষক উপন্যাসটি নানান দেশের নানান বিভাগে যেভাবে পড়ানো হয়, তা এককথায় অকল্পনীয়। শুধু ইংরেজি বিভাগে নয়, ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান, লোকসাহিত্য, রাজনীতিবিজ্ঞান, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যয়ন ও আফ্রিকা অধ্যয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগে এটি পড়ানো হয়।

উপন্যাসটির প্রধান কৃতিত্ব এতে আফ্রিকার সমাজবাস্তবতা, বিশেষ করে ইবো সমাজের বাস্তবতা মূর্ত হয়ে উঠেছে। এর গল্পবলার বা ন্যারেটিভের ধরনটি খুবই সরল, তবে তীব্রভাবে নান্দনিক; ভাষাভঙ্গির দিক থেকেও উপন্যাসটি অভিনব, অনন্য। উত্তর-উপনিবেশবাদী উপন্যাসের নানা বৈশিষ্ট্যে চিনুয়ার এই প্রথম উপন্যাসটি উজ্জ্বল। আচেবের প্রথম উপন্যাস এর কাহিনির পটভূমি পূর্ব নাইজেরিয়ার ইবো গ্রাম উমুয়োফিয়া। ইবো জনগোষ্ঠী আর এদের মধ্যে প্রথম বসতি স্থাপন করা শ্বেতাঙ্গদের ঘিরেই আবর্তিত এর কাহিনি। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওকোনকোর জীবনবৃত্তকে কেন্দ্র করে ইবোদের জীবনযাপনের পূর্ণাঙ্গ রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন আচেবে। শেষের দিকে পাওয়া যায় মিশনারি ও ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইবো সমাজের রূপ কী দাঁড়িয়েছিল, তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা।

পুরো উপন্যাসেই আচেবে ব্যবহার করেছেন ইবো ভাষার অসংখ্য শব্দ, বুলি, প্রবাদ, পৌরাণিক অনুষঙ্গ ইত্যাদি। ইংরেজি ভাষার ছন্দোস্পন্দের মধ্যে এসব শব্দকে তিনি চমৎকারভাবে মিশিয়ে দিয়ে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যে, সেই ব্যবহারে যেমন আছে স্বাভাকিতা, তেমনি আছে অসাধারণ নান্দনিক মাত্রা। ইবো লোকসংস্কৃতিতে গল্প বলার যে রীতি আছে, লোককাহিনির সেই রীতিকেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন আচেবে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটা আপত্তি উঠতে পারে, নিজের মাতৃভাষা অর্থাৎ ইবোতে না লিখে ইংরেজিতে কেন উপন্যাস লিখলেন আচেবে? আচেবেই জানিয়েছেন, তার লক্ষ ছিল বেশিসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছুনো। কিন্তু তার মধ্যে অন্য কোনো অভিসন্ধি কী কাজ করেনি? বিশেষ করে উপনিবেশের ভাষায় ঔপনিবেশিকদেরই শিক্ষা দেওয়া যে দেখ—আমরাও পারি। শুধু পারি না, সৃষ্টি করতে পারি উপন্যাসের নতুন ঘরানা। তাই বলা যায়, বিশ্বসাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলোর মধ্যে থিংস ফল অ্যাপার্ট নিঃসন্দেহে জননন্দিত, কালজয়ী তো বটেই।

মুনশি আলিম
সিলেট

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


পড়ে দেখবো।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৩

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: আপনি এমন সময় পোস্টটি করলেন যখন আমি ঠিক এই উপন্যাসটিই বাসায় পড়ছি।২২ অধ্যায় পর্যন্ত অলরেডি শেষ হয়েছে! বাকিটাও হয়তো শীঘ্রই শেষ করতে পারবো!:)

উপন্যাসটির বেশ কিছু জিনিস আমার মনে ধরেছে। বিশেষত ইবো সমাজের পুরুষদের উপাধি নেয়ার ব্যাপারটা, ইগউগউর বিচার , নিউ ইয়াম ফেস্টিভাল, ব্রাইড প্রাইস নির্ধারন, মশা ও কান এবং কচ্ছপ ও পাখির গল্প ইত্যাদি ইত্যাদি! আর একটা জিনিসও ভালো লেগেছে সেটি হলো উপন্যাসের ওপেনিং-এ ইয়েটস এর সেকেন্ড কামিং কবিতার প্রথম চার লাইন-

Turning and Turning in the widening gyre
The falcon cannot hear the falconer;
Things fall apart; the centre cannot hold
Mere anarchy is loosed upon the world.

তবে সব থেকে বেশি ভালোলেগেছে ওকোনকো চরিত্রটা! ওকোনকোর শক্তিমত্তা, পরিশ্রমী মনোভাব ও নিজের উপর আস্থা আমার এতো ভালো লেগেছে যে পারলে আমি নিজেই আমার সমাজের একজন ওকোনকো হয়ে যেতাম!

সমস্ত উপন্যাস জুড়েই আচেবে বাস্তবতার চিত্রকে নক্ষত্রের মতো দীপ্যমান করে তুলেছেন সেটি ইবোদের কুসংস্কারই হোক আর কলোনিয়াল খ্রিস্টানদের ভন্ডামিই হোক!

এবার আপনার রিভিউ সম্পর্কে বলছি। ইবোরা নাকি কোন কিছুতে যখন হ্যা বলে তখন নাকি তাদের পারসোনাল গড “চাই” ও হ্যা বলে। আপনি রিভিউতে পাঠকদের গল্পটি পড়ার জন্য হ্যা বলেছেন । রিভিউ পড়ে পাঠকরা আপনার সাথে হ্যা বলবেন কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে! :)


শুভকামনা!:)





১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৯

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্য।



এবার আপনার রিভিউ সম্পর্কে বলছি। ইবোরা নাকি কোন কিছুতে যখন হ্যা বলে তখন নাকি তাদের পারসোনাল গড “চাই” ও হ্যা বলে। আপনি রিভিউতে পাঠকদের গল্পটি পড়ার জন্য হ্যা বলেছেন । রিভিউ পড়ে পাঠকরা আপনার সাথে হ্যা বলবেন কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে! ___ :) =p~ আমিও শেষ দেখার অপেক্ষায় আছি। ;)

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৪

আখেনাটেন বলেছেন: পড়ব পড়ব করে এখনো পড়া হয়ে উঠে নি। আপনার এই রিভিউয়ের পর মনে হচ্ছে শীঘ্রই শুরু করতে হবে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) :D

সেই ভালো।

৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:০৪

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: চিনোয়া আচেবের দেশেই আমি থাকি।
ইংলিশ এবং বাংলায় অনুবাদ করা দুইটাই আছে আমার কাছে। পড়বো পড়বো করে পড়া হচ্ছেনা।
ভাবতেছি আগে বাংলাটা দিয়েই শুরু করবো।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৩

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ধন্যবাদ ও শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.