নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাথর

১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১





১.
সে অনেকদিন আগের কথা। আমি ও মামা রুবজ এ রহমান তখন ক্লাসরুমে। দ্বিতীয় পিরিয়ড। গণিত শিক্ষক অনুপস্থিত। আর এ কারণেই শিক্ষার্থীদের বেশ শোরগোল। মামা বললেন, ভাগিনা—তোমারে আইজ নতুন জিনিস শিখাইতাম। আমি বেশ কৌতূহলী হয়ে মামার দিকে তাকাই। তিনি কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, আয়—চোখটিপা শিখাইতাম! আমি মুচকি হেসে বললাম—কিলান? উল্লেখ্য, তখন পর্যন্তও আমি চোখটিপা শিখিনি। মামা বললেন—অউ যে, অলান। তিনি চোখ টিপে দেখালেন। কোনো হিসেবনিকেশ না করেই আমিও মামার মতো চেষ্টা করতে লাগলাম। প্রথম কয়েকবার চেষ্টা করেও পারিনি। একচোখ টিপতে গিয়ে দুচোখই বন্ধ করে ফেলি। মামা কিন্তু এতে মোটেও হতাশ নন। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে সফল হলাম।

মামা বললেন, সাব্বাস! অউ তো আমার ভাগিনা। আরেকবার দেউছাই দেখি—আমি সুবোধ বালকের মতো চেষ্টা করলাম। কিছু একটা খুঁজার ছলে মামা খুব দ্রুত তার মাথা নিচু করলেন। অমনি আমার চোখটিপা পড়ল পাশের বেঞ্চিতে বসা সুন্দরী মর্জিনার ওপর! ব্যাস! এইটুকুই।

মর্জিনা প্রথমে ভ্যাবাচেকা খেলো পরে বেশ গম্ভীর হলো। আমার ভেতরের অবস্থা তো তখন খুবই শোচনীয়। প্রচণ্ড ভয় পেলে যেমন মানুষ বারবার ঢুক গিলার চেষ্টা করে আমারও অবস্থাও তেমন। এখন কোনোভাবে পালিয়ে যেতে পারলেই বাঁচি! আমি পালানোর পথ খুঁজতে লাগলাম। কোনোরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই আমি ক্লাস থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসি। সেদিন আর পরবর্তী ক্লাস করার সাহস হয়নি।

২.
পরের দিন। ক্লাসে যাওয়ার নামটি পর্যন্ত মুখে আনি না। নিজের কৃতকর্মের জন্য বড়োই অনুশোচনা হতে লাগলো। মামার ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁদে পা না-দিলেও পারতাম! ক্লাসগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। কী যে করি! মনের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম—ক্লাসে যাব। মর্জিনাকে সুযোগবুঝে সব খুলে বলবো। সরি বলবো।

ক্লাসের সম্মুখে ফুলবাগান। এই বাগানের ভেতর দিয়েই ক্লাসে যেতে হয়। ক্লাসের ঘণ্টা পড়ে গেছে সেই কখন! মনে মনে ভাবলাম প্রথম ক্লাস মিস হলেও দ্বিতীয় ক্লাস নিশ্চয় মিস হবে না। নানাবিধ চিন্তাভাবনা করে ফুলবাগানের সম্মুখে এলাম। দেখি—সেই মর্জিনা সুন্দরী! তাকে দেখেই আমার ভেতর ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেল। হাত-পা কাঁপতে লাগলো। গলা শুকাতে লাগলো। আমি আবারও পালানোর পথ খুঁজতে থাকলাম। ডান দিকে তাকাতেই দেখি প্রতিষ্ঠানপ্রধান অফিসের দিকে যাচ্ছেন। বামের দিকে তাকাই। অদূরে কয়েকজন মেয়ে মুখটিপে হাসছে। একমাত্র পশ্চাৎপথই খোলা! আমি ঘুরে দৌড় দিব ঠিক এমনক্ষণে মর্জিনা বললো—এই যে মশাই! আমি লজ্জামাখা ভীরু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। মর্জিনার হাতে একটি পাথর। পাথর দেখে তো আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলো। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ যেমন আর পালানোর পথ খুঁজে না তেমনি আমিও সহসা পালানোর সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম। কম্পিত পায়ে তার দিকে এগিয়ে চললাম।

মর্জিনা দেখতে বেশ সুন্দরী। মিষ্টি মেয়ে। হাসলে তার দু’গালে টোল পড়ে। বয়স প্রায় আঠারো ছুুঁইছুঁই করছে। চোখ দুটো টানাটানা। স্বর্গের আবিরমাখা ঠোঁট। সবকিছু মিলিয়ে—সে হলো উঠন্তি বয়সী টগবগে যুবতী।

আমি অপরাধীর মতো তার দিকে তাকালাম। আমার ভেতরে ভয় ও অনুশোচনা উভয়ই সমানতালে কাজ করতে লাগলো। মর্জিনা পাথরটি তার ডান হাতে নিলো। আমি সরি বলার আগেই সে বললো—এই নিন। এটা আপনার জন্য।
— আমার জন্য?
সে মাথা নেড়ে সায় দিলো।
— কী?
হাতে নিয়েই দেখুন।
পাথরটির বেশিরভাগ অংশই কাগজ দিয়ে মোড়ানো। আমি হাতে নিতেই মেয়েটি মুচকি হাসলো। সবকিছু কেমন যেনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটি। সবই তো ঠিক আছে। মনে মনে ভাবতে থাকি—আজ কারমুখ দেখে যে উঠেছিলাম! আহা!

বেশ কৌতূহল নিয়ে আমি পাথরমোড়ানো কাগজ খুলতে থাকি। যতই খুলছি ততই আমার কম্পন বেড়ে যাচ্ছে। সম্পূর্ণটি খোলার পর যা দেখলাম তা একেবারেই অবিশ্বাস্য! আমার হাত কাঁপতে থাকে। হৃদস্পন্দন সহসা আরও বেড়ে গেল। বিস্ময়ের সমুদ্রে সদ্য স্নান করা যুবক আমি। আমার কী আর বিস্ময়ের শেষ আছে! পাথরে খোদাই করা একটি বাক্য আমাকে আবেগমথিত করে তুললো। লজ্জায় ঈষৎ লাল হয়ে আমি মর্জিনার দিকে তাকাই।

সেকি! মর্জিনা নেই। আশেপাশে কোথাও নেই! কেউ নেই। আমি কিছুটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলি। পাথরটি ঠোঁটের কাছে আনি। আলতো করে চুমু খাই। ফুলবাগানের আড়ালে একটি নারীকণ্ঠ খিলখিল করে হেসে ওঠে। পাখির মতো ডানা মেলে আমিও হাসতে থাকি। একসময় গানের স্বরে বলি-দুষ্টু মামারা ষড়যন্ত্র করলেই 'লাভ পাথর' পাওয়া যায়!

মুনশি আলিম
শিবগঞ্জ, সিলেট
১০.১১.২০১৭

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২১

কালীদাস বলেছেন: উরি, সেরকম লাভ স্টোরি দেখা যায় !:#P

১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৪

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) =p~


ভালোবাসা জানবেন।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: গল্প ? না সত্যি কাহিনি?

১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৪

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: গল্পগুলো তো সত্য অবলম্বনেই হয়।

ভালোবাসা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.