নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প :: ইনসাফ

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:২২



হাসপাতালে যাইবার নিমিত্তে সিএনজির পশ্চাৎ আসনে উঠিয়া বসিলাম। পশ্চাৎ আসনে আমরা অপরিচিত দু’জন। কালক্ষেপণে সুযোগবুঝিয়া উভয়েই ইন্টারনেটে মগ্ন রহিলাম। সিএনজিতে তিনজনের আসন বরাদ্ধ থাকিলেও বাংলাদেশে বিশেষ করিয়া সিলেট অঞ্চলে পাঁচ জনের কম হইলে উহারা ছাড়িতে চাহে না। নিরুপায় হইয়া পরবর্তী প্যাসেনজারের অপেক্ষা করিতে থাকিলাম। আহা! কঠিন কর্তব্যকর্মের প্রাক্কালে প্রহর যেনো আর ফুরাইতে চাহে না।

মিনিট চারেক পরে আনুমানিক প্রায় একশত বিশ কেজি ওজনের এক বোরকা পরা রমণী আসিয়া পশ্চাৎ আসনের খালি জায়গাটি দখল করিয়া ফেলিল। রমণী বসিবার প্রাক্কালে সিএনজিটি একবার প্রকম্পিত হইয়া উঠিলো। আমার ডাইনের ভদ্রলোক মধ্যমপ্রকৃতির মোটা আর বামের জনের তো কথাই নাই! আমি যেনো মাইনকার চিপায় পড়িলাম! মহিলাকে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা দিতে আমাদের দুজনকেই বেশ বেগ পাইতে হইলো। আহা! পশ্চাতের পুরো আসনটি রমণীর একার নিমিত্তে হইলেই বোধকরি ভালো হইতো!

সে যাইহোক। রমণীর সহিত একটি বড়ো ব্যাগ ছিল। তিনি সুবিধামতো বসিয়া ব্যাগটিকেও আমার এবং মহিলার মধ্যিখানে রাখিবার নিরন্তর চেষ্টা করিতে লাগিলেন। রমণীর ন্যায় ব্যাগটিও নানাবিধ দ্রব্যাদিতে ফুলিয়া উঠিয়াছে। আমি কিছু বলিতে গিয়াও সংকোচে বলিতে পারিলাম না। বিপদে পড়িলে নাকি মানুষ বিষ খাইয়াও বিষ হজম করিয়া থাকে! এমনিতেই রমণীর জায়গা দিতে আমাদিগকে অনেক বেগ পাইতে হইয়াছে তদুপরি মহিলার গর্ভবতী ব্যাগের জায়গা দিতে আমাদের দুজনের অবস্থা আরও শোচনীয় হইয়া উঠিল! ড্রাইবার লুকিং গ্লাসে একটিবার দেখিয়া কেবল ম্লান হাসিলেন! হয়ত এইরূপ ঘটনা প্রায়শ তাহারা দেখিয়া থাকেন।

ব্যাগটির ভিতর কী একটা শক্তগোছের মতো জিনিস রহিয়াছে। আমার উরুতে লাগিবামাত্রই আমি ঈষৎ উহ! শব্দ করিলাম। সরিয়া বসিবার চেষ্টা করিলাম। তাহাও আর সম্ভব হইলো। কেননা, পশ্চাতে কিংবা ডান পাশে আর তিলার্ধ স্থান শূন্য রহে নাই। সহসা সিএনজি ড্রাইভার হার্ডব্রেক করিল। নিজেকে সামলাইতে গিয়া আমার বাম হাতের কনুই ব্যাগের ওপর একটু লাগিবামাত্র মহিলা ক্রোধে উদবিগ্ন হইয়া উঠিল। আহা! মহাভারত যেনো অশুদ্ধ হইয়া উঠিল। মানুষের ধৈর্যেরও সীমা থাকে। সে সীমানা অতিক্রম করিলে মানুষ আর স্বাভাবিক থাকিতে পারে না! আমিও পারিলাম না।

নিজের চোখমুখ ভয়ানক রকম শক্ত করিয়া বলিতে লাগিলাম—আমি আত খানো রাখতাম? আসমানো রাখতাম নি? অত শুচিবায়ু লইয়া পাবলিক গাড়িত আইলায় খ্যানে? সিএনজি রিজার্ভ নিলানা খ্যানে? আর না অইলে রিকশাত এখলা গেলা না খ্যানে? ইনসাফ বিচার নাই খ্যানে? আফনার লাগি আমরা দুইজন কিলান ঠাসাঠাসি খরি বইছি—তারফরো আফনার অয় না? অত বিবেক ছাড়া খ্যানে?
আমি আরও কিছু বলিতে চাহিলাম। কিন্তু আমার ডান পাশে বসা ভদ্রলোক আমাকে থামাইয়া বলিলেন—বাদ দেউক্কা ভাই, অউ তো আর আইচচি! সিএনজির বহিরের পানে তাকাইয়া শেষ বাক্যটিও তিনি বলিলেন—মাইনশে আইজখাইল ইনসাফবিচার ঘরো রাখিয়া আইন, লগে রাখোইন না!

টীকা :
এখলা—একা
আইলায়—এলেন
খানো—কোথায়
লইয়া—নিয়ে
তারফরো—তারপরও
আত—হাত
ঘরো—ঘরে
আইন—আসেন
খ্যানে—কেন
খরি —করে
কিলান—কেমন




মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৪২

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: দারুন।


*****

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ভালোবাসা অহর্নিশ।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: এই আধুনিক যুগে সাধু ভাষা পড়তে ভালোই লাগে।
খুব সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছি।

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) B-)


ধন্যবাদ ও ভালোবাসা।

৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন:
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা

ভালো থাকুন।

৪| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪

জগতারন বলেছেন:
অনেক দিন পরে সাধু ভাষায় গল্প পড়িয়া খুব ভালো লাগিল।

মনে পরে আমরা সাধুভাষায় মাধ্যমিক, (ম্যাট্রিক), উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করিয়াছি।
তার পরে বিদেশে আসিয়া পড়াশুনা করিয়াছি ইংরেজিতে।

আর এখন চারিদিকে শুধু চলতি ভাষা !
কেন ?

সাধুভাষা হইলো বাঙ্গালিদের অন্তরের অন্তঃস্থলের ভাষা !
সেই ভাষা এখন নিরব কেন ?

লেখকের প্রতি সুভেচ্ছা জ্ঞাপন করিতেছি।

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪১

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা রইল।

৫| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২৩

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: সাধু-চলিত পাশে রাখি, সিলেটি ভাষা পড়েই খুব মজা পেয়েছি। আর কল্পনায় আর অবস্থা দেখিতে পাইয়া =p~

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :D :) =p~

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.