নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ স্বপ্ন বুনন ও শুদ্ধি অভিযানের সূতিকাগার-মুনশি আলিম

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০





নূরুজ্জামান মনি’র ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ একটি সমকালীন ছড়াগ্রন্থ। ২০১৮ সালে ‘প্রতিভা প্রকাশ’ থেকে বের হয় এই ছড়াগ্রন্থটি। তিন ফর্মার এই ছড়াগ্রন্থে মোট ৪৮টি ছড়া রয়েছে। প্রতিটি ছড়াই যেনো বিস্ফোরণের মতো! কী অপূর্ব শব্দচয়ন! ছড়াকারদের প্রধান চমক থাকে শব্দবিন্যাসে, দ্বিতীয়ত বিষয়বস্তুতে। নির্ভিক সত্যপ্রকাশে সাংবাদিকদের মতো ছড়াকারদেরও সাহসী হতে হয়। ছড়ায় রয়েছে অমিয় তেজ; চুম্বকের মতোই এর আকর্ষণ। আদর্শ ছড়ার শরীরজুড়ে থাকে সত্যউন্মোচনের দ্ব্যর্থহীন প্রয়াস, রম্যরস, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, শুদ্ধতার সুপিুণ নির্দেশনা। আর এসব বিষয়গুলো দর্পণের মতো উঠে এসেছে নূরুজ্জামান মনি’র ছড়ায়।

কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় সমকালীন বাস্তবতা এমনভাবে ফুটে উঠত যেনো পাঠক পড়ামাত্র সে ছবি জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠত। ছড়াকার নূরুজ্জামান মনিও সমকালকে কেন্দ্র করেই তাঁর ছড়াগুলোকে সাজিয়েছেন। সুকুমার রায় তাঁর ছড়ায় সমকালীন বাস্তবতার পাশাপাশি রাখতেন নিজস্ব ছাপ। এমন কিছু প্রাণীর নাম তিনি তাঁর ছড়ায় ব্যবহার করেছেন বাস্তবে এখনো তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রমিনেন্ট ছড়াকাররা নাকি এমনই হয়! নূরুজ্জামান মনি’র বিশেষত্ব এই যে, তিনি সত্যপ্রকাশে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। তিনি শব্দজাদুকর। শব্দ নিয়ে খেলাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

লিখতে ভাঙে পাঁচটি কলম
আবার জ্ঞানীর ভান করে
ইচ্ছে করে ঐ ব্যাটাকে
বের করে দিই কান ধরে।

বিষয়-বৈচিত্র্যেও তাঁর লেখায় রয়েছে নিজস্বতা। তিনি এক অদম্য স্বপ্নচারী। তাঁর স্বপ্ন ছড়িয়ে দেন ছড়ার ভেতর-বাহিরে। ছড়ায় ছড়ায় তিনি যেমন ঘুমপাড়াতে জানেন, তেমনই জানেন ঘুম থেকে জাগাতে। ছড়ার ক্যানভাসে শিশুকিশোরদের স্বপ্ন জাগাতে তিনি বেশ সিদ্ধহস্ত। নূরুজ্জামান মনি রাজনীতি, সমকাল ও সমাজসচেতন ছড়াকর্মী। তাঁর লেখায় সমাজ নিরীক্ষাও লক্ষণীয়। তিনি সমাজকে দেখেন পর্যবেক্ষকের মতো, আর উপলব্ধি করেন আবেগপ্রবণ ভাবুকের মতো। রাষ্ট্রদেহে জমে থাকা ত্রুটি-বিচ্যুতি বের করতে তাঁর প্রচেষ্টা চলমান। ছড়ার চাবুক মেরে অসঙ্গতিগুলো দূর করতে তিনি সদা ব্যস্ত। তাঁর ছড়ার ভাষায়-

বাঁদর নাচের দেশটাতে ভাই আমরা সবাই বাঁদর,
মিনিস্টারের লাথি গুতো আমরা ভাবি আদর।

ছড়াকার নূরুজ্জামান মনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চান ক্ষীয়মান সমাজের দুর্বৃত্তায়ন, ঘুনধরা সমাজের অন্ধকার অধ্যায়। জাত লেখকরা কোনো দলের পোষ্য নয়। দলকানা হলে সত্য চোখে পড়ে না, সামাজিক বিচ্যুতি চোখে পড়ে না। এদিক থেকে বিবেচনা করলে নূরুজ্জামান মনি ব্যতিক্রম। তিনি নিজেকে নীতি আর আদর্শের মন্ত্রে উজ্জীবিত রাখতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন । সত্যপ্রকাশে তিনি নির্ভীক। তাঁর ছড়ার ভাষায়-

চেকনাই গদ-গদ চেহারাটা রোশনাই
সরকারি কোষাগার লুটে নিতে দোষ নাই;
হাসিখুশি লেপা মুখ লুটপাটে দক্ষ
সারকথা হলো ওরা লুটেরার পক্ষ।

আজকাল সত্যপ্রকাশের ধারকবাহক বলে খ্যাত পত্রিকাগুলোর অবস্থাও বড়ো নাজুক। স্বার্থের কারণে অনেক মানহীন লেখাও তারা নিত্য ছাপছে। মিথ্যে সংবাদ পরিবেশন করছে। এসব বিচ্যুতিগুলো নূরুজ্জামান মনি’র চোখ এড়ায় না। তিনি তাঁর ছড়ায় এসব বিষয় তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে।

পত্রিকা তো সবাই বলে
এই সমাজের আয়না
রাজ্য এবং রাজন্যরা
মানতে যে তা চায় না।

তোষামোদ আর লেজুরবৃত্তি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মানুষ নিত্য এসব গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। নূরুজ্জামান মনির ছড়া এসব ভণ্ডদের, পথভ্রষ্টদের মুখোশ খুলে দিতে চায়। ছড়ার আলোয় সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়। দানবীয় অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাঁর ছড়াগুলো বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক বিচ্যুতিগুলো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে সংশোধনের ইঙ্গিত করে।

সংখ্যায় লঘু বলে জন্মেও মাটিতে
তোমরা তো পারিবে না নিরাপদে হাঁটিতে,
সংখ্যায় গুরুদের পাও হবে চাটিতে।

নূরুজ্জামান মনি একজন প্রতিভাবান ছড়াকার। তাঁর ছড়া শুধু ঘুমপাড়ানির জন্য নয়; হতাশার অতলে ডুবে যাওয়া একটি জাতিকেও প্রেরণা জোগাতে পারে। হতাশাগ্রস্থ জাতিকে আশান্বিত করতে পারে, আঁধারে নিমজ্জিত জাতিকে আলোকবর্তিকার মশাল জ্বালিয়ে পথ নির্দেশ করে। তাঁর ছড়ায় যেমন রয়েছে রঙ্গরস, তেমনই রয়েছে বিদ্রæপ, সাহসী উচ্চারণ-

ডিজিটাল বাংলার সুপুরুষ ভাইটি
দেকভাল করছেন রাজ্যের আইটি
মন্ত্রীর তর্জন গর্জনই সার যে
মিল খুঁজে পাই নাতো কথা আর কার্যে।

ছড়াকাররা ছড়াকে কখনো হাতিয়ারের মতো ব্যবহার করেন আবার কখনোবা ঢালের মতোও ব্যবহার করেন, আবার কখনো ব্যবহার করেন নিছক বিনোদনের জন্য। ছড়া হতে পারে দ্রোহী, হতে পারে আশা জাগানিয়ার মন্ত্র। আঁধারে পর্দা ছিঁড়ে ডেকে আনতে পারে নিটোল ভোর। এই বিশ্বাস তাঁর ছড়ার পঙক্তিতে পঙক্তিতে ছড়িয়ে দিতে চান। ছন্দ ও অন্ত্যমিলের ক্ষেত্রে তিনি বেশ দক্ষ কারিগর। তাঁর বেশিরভাগ ছড়াতেই রয়েছে বাস্তবতার সুঘ্রাণ।

নূরুজ্জামান মনি’র ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ গ্রন্থে কিছু ছড়া রয়েছে-যা কেবল শিশুকিশোরদের উপযোগী, কিছু আছে বড়োদের উপযোগী। শিশুতোষ হলেও কিছু কিছু ছড়া আছে যা সকল বয়সের জন্য প্রযোজ্য। ছড়ার সন্নিবেশ নির্দিষ্ট বয়েসের পাঠকের উপযোগী করলে বইটির গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যেত। শব্দ বুনন, শব্দে নতুনত্ব আনয়ন, প্রাঞ্জলতা, ছন্দের বহুমাত্রিক ব্যবহার, ভাব-ভাষার নতুনত্ব, আদর্শিক চেতনা, সমকালীন বাস্তবতাসহ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে নূরুজ্জামান মনি’র ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ ছড়াগ্রন্থ অবশ্যই মহাকালের ছড়াসাহিত্যের জন্য মাইলফলকস্বরূপ।





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১

টুটুল বলেছেন: সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের মতো ছড়াকারদের সাহসী হতে হয়, খুব খাঁটি কথা বলেছেন।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: মনি ভাই আপনার জন্য শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.