নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রদ্ধাঞ্জলি :: জফির সেতু : আলোর ফেরিওয়ালা

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৮


শ্রদ্ধাঞ্জলি
জফির সেতু : আলোর ফেরিওয়ালা
মুনশি আলিম


‘জফির সেতু’ সমগ্র সিলেট তথা বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে এক আলোচিত নাম। তিনি একাধারে, কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, গবেষক এবং সফল শিক্ষক। এককথায় বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তবে বাংলা কাব্যসাহিত্য কবি জফির সেতুর কাছে বিশেষভাবে ঋণী। তাঁর পরিচয় অনেকটা এভাবে বলা যায়—তিনি কবি, প্রধানত কবি, গৌণত কবি, মুখ্যত কবি। তবে প্রথাগত থেকে তিনি একটু ভিন্ন ধারার। তা যেমন পোশাক পরিচ্ছদে তেমনই কবিতার নান্দনিক কাব্যভাবনা ও আধুনিকতার ভাব-প্রকরণে।

কবি মানেই আমাদের বদ্ধমূল ধারণায় অগোছালো, অপরিচ্ছন্ন আর গরিবি চেহারার কেউ! কিন্তু এই ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে বেশ কিছুদিন আগেই। বলা যায়—ষাটের দশকে কবি শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আশির দশকে হুমায়ূন আজাদ, রণাঙ্গনের কবি রফিক আজাদ, তসলিমা নাসরিন, জফির সেতু, আলফ্রেড খোকন, টোকন ঠাকুর প্রমুখরা চিরায়ত কবিসংজ্ঞার ধারণা ভেঙে দিলেন । পোশাকে নয়, বরং কবিতা দিয়েই কবিকে চিনতে হয়, জানতে হয়। তাঁরা দেখিয়ে দিলেন ঝকঝকে, স্মার্ট পোশাক পরিচ্ছদ পরেও যে কবিতা হয়। সুদর্শন এই কবিরা নতুন প্রজন্মের কবিদের পথ দেখালেন। ভেঙে দিলেন ভাবনার ঝরাগ্রস্ত পুরনো বৃত্ত। শুরু হলো নতুন পথ পরিক্রমা।

বলা হয়ে থাকে—কবি জফির সেতুর উত্থান নব্বই দশকে। কিন্তু আমার কেন যেনো মনে হয় তাঁর লেখাগুলো কেবল নব্বইয়ের ফ্রেমে আবদ্ধ নয়। বৈষ্ণব কবিতার মতো তার কবিতাগুলোর আবেদন চিরায়ত। নদীর মতোই তা বহমান। অবশ্য প্রকৃত কবি কোনো দশকে সীমাবদ্ধ নন, তিনি চিরকালের। তাকে সময়ের ফ্রেমে ফেলে ভাগ করা যায় না। কবিতায় নিজস্ব ভাষাভঙ্গি, স্বর দাঁড় করাতে না পারলে কোনো কবি তাঁর চেনা সময়কে অতিক্রম করতে পারেন না। জফির সেতু কবিতায় তাঁর স্বতন্ত্র ভাষাভঙ্গি প্রতিষ্ঠায় সফল। প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজস্ব স্বর। আর এখানেই তাঁর কৃতিত্ব।

শিক্ষকতা কারো জন্য কেবল পেশা, আবার কারো জন্য পেশা ও নেশা। কেউবা আবার এটাকে কেবল পেশা বা নেশা হিসেবে নয়, বরং মিশন হিসেবে গ্রহণ করে। যাঁরা মিশন হিসেবে গ্রহণ করে তাঁদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত উপকৃত হয় শিক্ষার্থী, সহকর্মী, সমাজ, রাষ্ট্র তথা বিশ্বাবাসী। সাহিত্যেও আমরা এমনটি দেখতে পাই। জীবনানন্দ দাশের ভাষায়—সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। তেমনই শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সকলেই আদর্শ শিক্ষক হতে পারে না। সকলেই শিক্ষার্থীর ভেতরের সত্ত্বাকে জাগিয়ে তুলতে পারে না, তাদের কৌতূহল উদ্রেক করতে পারে না। আর যাঁরা এসব অতিক্রম করতে পারে, তারা নিঃসন্দেহে মহান, কালের আয়নায় তাঁরা অনুসরণীয় তো বটেই। শিক্ষার্থীদের হৃদয় জয় করা এমনই একজন শিক্ষক হলেন জফির সেতু।

শিক্ষকরা হলেন প্রদীপের মতো। পৃথিবীর সকল প্রদীপগুলো হয়ত বর্ণ ও আকারে কিছুটা আলাদা কিন্তু আলো একই। জফির সেতু স্যার একজন মানবিকবোধসম্পন্ন যুক্তিবাদী মানুষ। আরও সহজ করে যদি বলি তাহলে বলতেই হয়—তিনি যতটা মহৎ ঠিক ততটাই যুক্তিবাদী। ফুলের মতো শিক্ষার্থীদের ফুটাতে যেখানে আলোর প্রয়োজন সেখানে তিনি ঠিকই আলো ব্যবহার করেন। তিনি জানেন, ফুল ফুটতে তাপ নয়, আলোরই প্রয়োজন। তিনি যেমন বড়ো মনের মানুষ, ঠিক তেমন বড়ো মানের শিক্ষকও। তিনি এমন একজন আদর্শ শিক্ষক—যে শিক্ষককে আদর্শ হিসেবে প্রত্যাশা করে পৃথিবীর সকল অভিজাত সমাজ, সভ্য সমাজ, মননশীল সমাজ, যুক্তিবাদী সমাজ, আধুনিক সমাজ। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর জীবনে কখনো অবতীর্ণ হন অভিভাবক রূপে, পথনির্দেশক হিসেবে, বন্ধু রূপে, নৈতিকতার ধারক রূপে… প্রভৃতি। একজন আদর্শ শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা স্মরণ করে জীবনের বাঁকে বাঁকে।

শৈশবে বেড়ে ওঠা খাল বিল আর হাওরের কাদা-মাটির গন্ধ, অবারিত প্রকৃতি আর নিসর্গের শিয়রে মায়ের মমতাময়ী কোলে তিনি এখনো জেগে থাকেন শিশুর মতো সংবেদনশীল এক হৃদয় নিয়ে। দেশ, মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে বলেই ইতিহাসের নতুন পৃষ্ঠায় লিখে যান কীর্তিমান, আলো ও আশাজাগানিয়া পূর্বপুরুষ আর তাদের স্বপ্ন ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামী সময়ের কথা। নিজেও হাঁটেন সে পথ ধরে। নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের কালের অগ্রসর একজন মানুষ।

কবি জফির সেতু একজন সফল শিক্ষক এবং গবেষক। এ পরিচয়ের বাইরে সতত জাগ্রত থাকে চিরকালের সৃষ্টিশীল কবিতাচ্ছন্ন এক হৃদয় তাঁর। প্রতিটি কবিতায় জফির সেতু এমনই একটা নিজস্ব বয়ান তৈরি করেছেন যা একই সঙ্গে পাঠকেরও বয়ান হয়ে উঠেছে। আর এইসব বয়ান ধরেই নির্মিত হয়, বিনির্মাণ চলে জফির সেতুর কবিতার প্রান্তর। এজন্য আরাধ্য কাব্যতীর্থে তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ।

কবি জফির সেতুর এযাবৎ ১৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বহুবর্ণ রক্তবীজ (২০০৪), সহস্র ভোল্টের বাঘ (২০০৬), স্যানাটোরিয়াম (২০০৮), তাঁবুর নিচে দূতাবাস (২০১১), সিন্ধু দ্রাবিড়ের ঘোটকী (২০১২), জাতক ও দণ্ডকারণ্য (২০১৩), সুতো দিয়ে বানানো সূর্যেরা (২০১৪), Turtle Has No Wings (2014), ময়ূর উজানে ভাসো (২০১৪), ডুমুরের গোপন ইশারা (২০১৪), প্রস্তরলিখিত (২০১৫) ইয়েস, ইউ ব্লাডি বাস্টার্ডস (২০১৫), এখন মৃগয়া (২০১৬), আবারও শবর (২০১৬) ইত্যাদি।

শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে তিনি একজন মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন, বিজ্ঞানমনস্ক, স্বাধীনচেতা মানুষ। তিনি সম্পাদনা করেন গোষ্ঠীপত্রিকা ‘কথাপরম্পরা’ ও লিটলম্যাগ ‘সুরমস’। শিক্ষকতা ও গবেষণার বাইরে স্ত্রী শাহেদা শিমুলকে নিয়ে কবি জফির সেতুর আনন্দভুবন। নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষা ও সাহিত্য তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র। এছাড়াও তিনি লোকসাহিত্য সংগ্রাহক, সংকলক ও সম্পাদক। নিষ্ফলা সময়ে তিনি যেন স্বপ্নবান কৃষকের মতো নিরন্তর ফসল বুনে চলেন এই ঊষরভূমিতে। জফির সেতুর জন্ম ২১শে ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে, সিলেটে।
আজ জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা ও নিঃশর্ত ভালোবাসার কথা জানাই। জয়তু স্বপ্নাতুর কবি, আলোকিত স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



টোকন ঠাকুরও কবি? আমি তো ভেবেছিলাম জালিয়াত, সিনেমার জন্য সরকারী টাকা নিয়ে উহা খেয়ে বসে আছে।

আপনি কবিতা পড়েন তো?

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৯

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: টোকন ঠাকুরের বইগুলো ...

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১১

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন:





৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: উনাকে আজই প্রথম চিনলাম। জানলাম। আগে কোনো দিন তার নাম বা কোনো লেখা পড়া হয়নি।
ঠোকন ঠাকুর যে কবি সেটাও আজই জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.