নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুনর্জন্ম

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:৫৮



রূপার বিয়েতে না গেলেই যে নয়। চাইনিজ সেন্টার বলে কথা। এসব সেন্টারগুলো খুবই বাণিজ্যিক! টাইম টু টাইম ইন অ্যান্ড আউট! সময় বরাদ্ধ বলে কথা! বলতে গেলে একরকম তড়িঘড়ি করেই বের হলাম। রূপার জন্য কয়েটি বই কিনেছি। উপহার হিসেবে বইকেই আমি সর্বাগ্রে রাখি।

লিফট অপেন সুইচ বাটনে চাপ দিয়ে বেতরে প্রবেশ করি। দরজা লক করার মুহূর্তে এক সুন্দরী তরুণী এসে সামনে দাঁড়ায়। আমি দরজার পাশে স্টে বাটন চেপে তাকে জিজ্ঞেস করি নিচে যাবেন? মেয়েটি বিদ্যুৎগতিতে কিছু একটা ভেবে নিল। তারপর মাথা নেড়ে বলল—জি। মাথা নাড়লে আর মুখ দিয়ে জি বলার প্রয়োজ পড়ে না। তবু অতিমাত্রায় বোঝানোর জন্য এটি অনেকটাই চুম্বকীয় কৌশল! আমি চোখেমুখে তাকে ভেতরে আসতে ইশারা করলাম।

ইশারা ভাষার কিন্তু মজাই আলাদা। এর ব্যবহার কিন্তু এখনো বিলুপ্ত হয়নি। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীমাত্রেই আমার কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবে। কেননা, তারাও বন্ধুত্বের বা প্রেমের সূচনালগ্নে ইশারা ভাষায়ই ব্যবহার করে। যাহোক, বঙ্কিমচন্দ্র ‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধে বলেছেন, “অল্প কথায় কাজ হইলে বেশি কথার প্রয়োজন কি?” আমি নির্দ্বিধায় তাঁর কথাকে সমর্থন করি। আমারও মনে হয়, ইশারায় যদি কাজ উদ্ধার হয়, তবে কথা বলারই বা প্রয়োজন কী!

মেয়েটি আমার ইশারা বুঝতে পেরে ম্লান হাসল। স্বপের যেমন ব্যাখ্যা থাকে তেমনই ব্যাখ্যা থাকে হাসির। মেয়েটিকে আগে কখনো আমাদের এই টাওয়ারে দেখেছি বলে মনে হয়নি। বারো তলা বিল্ডিং। আমি সপ্তম তলায় লিফটে আছি। মেয়েটি লিফটের ভেতর প্রবেশ করা মাত্রই আমি ক্লোজড বাটনে প্রেস করলাম। মেয়েটি এপাশে সরে দাঁড়াল। হয়ত কিছুটা ভয়ে, কিছুটা সংকোচে।

লিফট চালু হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিকট শব্দ হলো। কোনো কিছু ছিঁড়ে গেল কিনা! এই মুহূর্তে লিফট কোন ফ্লোরে আছে তাও ঠিক বলতে পারছি না। বিদ্যুৎ চলে গেছে। লিফট আটকে গেছে। কোনো বাটনই কাজ করছে না। হায়রে বিপদ! না উপরে যেতে পারছি, না নিচে। না খুলতে পারছি, না বের হতে পারছি। লিফটে কোনো ফ্যানও নেই। একে তো বিদ্যুৎ নেই তদুপরি লাইটও নেই। সম্ভবত সেন্সর প্রবলেমের কারণেই এমনটি হয়েছে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

আমি বললাম—লিফট আটকে গেছে। কোনো বাটনই কাজ করছে না। মনে হলো অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছি; শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। আমার কথা শেষ হতেই মেয়েটি চিৎকার করে ওঠল। আমি বললাম—এভাবে চিৎকার করলে কোনো ফল হবে বলে মনে হয় না। বরং হিতে বিপরীত হবে। তারচেয়ে বরং আপনার বাসার কাউকে কল দিন। লিফটে আটকে পড়ার কথা বলুন।

আবছা আলোতেও মেয়েটির ভয়ার্তমুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে কল দেয়। “আপনার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নেই...” এখন উপায়? মেয়েটি অস্থির হয়ে ওঠে। তার শরীর মৃদু কাঁপতে থাকে। ফ্লোর কম্পনের কারণে আমি তা উপলব্ধি করতে পারি। সে মিনতি করে আমাকে বলে—আপনি কল দিন। প্লিজ, প্লিজ…। আমি পকেটে হাত দিতেই আমার সমস্ত শরীর শিহরিত হয়ে ওঠলো। তড়িঘড়ি করে বের হওয়ার কারণে মোবাইলটা পকেটে ভরা হয়নি।

আমার কিছু কমন সমস্যার মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান। আরেকটি ভয়াবহ সমস্যা আছে। মাঝেমধ্যে খুব কাছের মানুষদের নামও আমি মনে করতে পারি না। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে কী রোগ বলে কে জানে! এতক্ষণে আমার ভেতরেও অস্থিরতা বাড়তে শুরু করেছে। আমি ঘামতে শুরু করেছি। শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। মেয়েটি আমার কাছে আসে। বিনীত স্বরে বলে-“প্লিজ কিছু একটা করুন। আমার ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে”।

চতুর্দিকে স্টিলের দেওয়াল। কিলঘুসি মেরে যে কিছু একটা করব তারও কোনো উপায় নেই। দশ মিনিটের মতো হতে চলল। আমরা দুজনেই জোরে জোরে দরজা টোকা দিচ্ছি। চিৎকার করছি। কিন্তু মনে হলো চিৎকারের ধ্বনিগুলো আমাদের চতুর্দিকেই ঘূর্ণিবায়ুর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে! আর সে শব্দদূষণে আমরা নিজেরাই বারংবার আহত হচ্ছি!

হায়রে! এমন মৃত্যু কে চায়! মেয়েটি ক্লান্ত হয়ে অক্সিজেন স্বল্পতায় অনেকটাই মুষড়ে পড়ে। আমার সঞ্জীবনী শক্তি ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। হাইপার টেনশন জ্যামেতিক হারে বাড়তে শুরু করেছে।

দেখতে দেখতেই মেয়েটি মাথা ঘুরে পড়ে গেল। আমি মেয়েটিকে আলদো করে ধরে মাথায় হাত বুলাতে থাকি। এই মুহূর্তে একটু পানি ছিটা দিলে মন্দ হতো না। কিন্তু পানি কোথা পাই? ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে আমিও বসে পড়ি। মেয়েটির মাথা আমার কোলের ওপর। আমি তার মাথায় আলতো করে হাত বুলাই। কাধ ধরে হালকা ঝাঁকুনি দিই। নাহ! কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না!

এই বাসায় সাত বছর হয়ে গেলে। এমন জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন কখনোই হইনি। আমার মনে পড়তে লাগলো পার্কের দৃশ্যগুলো। মনে পড়তে লাগলো সম্প্রতি কাটানো সেরা মুহূর্তগুলো। মনে পড়ছে প্রিয়জনদের। মানুষ নাকি মৃত্যুর পূর্বে সেরা স্মৃতিগুলোরই স্সৃতিচারণ করে!
বেঁচে থাকতে খুব ইচ্ছে করছে। রবি ঠাকুরও বলেছিলেন—মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে…। মেয়েটির মোবাইলের টর্চ জ্বালাই। ভ্যানিটি ব্যাগ খুঁজতে থাকি। মেয়েরা নাকি মিনিট কার্ড জমিয়ে রাখে। সমস্ত ভ্যানিটি ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকি। নাহ! কোথাও কার্ডের কোনো লেশও নেই। এখন উপায়?

একটি পানির বোতল পেয়েছি। হাফ লিটার! ক্ষুধার্ত বাঘের মতো গোগ্রাসে অর্ধেক পান করে নিলাম। হঠাৎই মনে হলো-পানি ছিটাতে যদি কাজ হয়! হাতে নিয়ে চোখেমুখে দিলাম। নাহ! কাজ হচ্ছে না। মেয়েটির হাতের তালু ঘষতে লাগলাম। চরমবিপদক্ষণে শিশুর উপস্থিতিতেও নাকি দ্বিগুণ সাহস সঞ্চিত হয়!

হাতপা এতো ঠান্ডা কেন? হঠাৎ মনে হলো মোবাইলে তো লোন নেওয়া যায়। মনে হতেই ঝড়ের গতিতে মেয়েটির মোবাইল হাতে নিলাম। তার মোবাইলে দুটি সিম। কিন্তু কোনো সিমেই টাকা নেই। লোনের জন্য অ্যাপ্লাই করলাম। মোবাইল কোম্পানির উত্তর দেখে মেজাজ আরও বিগড়ে গেল। বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি। কোনোক্রমে কেয়ারটেকারের নাম্বার মনে করে ‘পে ফর মি’ কল দেওয়ার চেষ্টা করলাম। নাহ! যাচ্ছে না।

হঠাৎ মেয়েটির সেন্স ফিরে আসে। সে চিৎকার করে ওঠে—প্লিজ আমাকে বাঁচান, প্লিজ…। প্লিজ বলতে বলতে সে আমাকে জোরে ধাক্কা দেয়। নিজেকে সামলাতে পারিনি। আমার মাথাটি লিফটের স্টিল বডিতে এমনভাবে লাগে যে, আমি আর চোখে কিছু দেখতে পারছিলাম না। ক্রমশ চোখ ঝাঁপসা হতে থাকে। এরপর আর কিছু মনে নেই।

যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি, আমি মেডিকেলের কেবিনে! চোখ খুলতেই দেখি ফুলের তোড়া হাতে একটি মেয়ে এগিয়ে আসছে। তার চোখেমুখে স্বর্গীয় দিপ্তী। অনুভূতির আঙিনা জুড়ে যেন নবজীবন লাভের উচ্ছ্বলতা উপচে পড়ছে। স্বর্গের আবিরমাখা ঠোঁট। তার চোখজুড়ে খেলা করছে পৃথিবীর সব সাজানো সুন্দর। আমি মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকাই। লিফটে উঠার আগ মুহূর্ত থেকে ক্রমে সব ঘটনাই আমার মনে পড়তে লাগল। শেষ দৃশ্যটি মনে হতেই আমার সমস্ত শরীরে একবার কাটা দিয়ে ওঠে! আমি চোখ নামাই।

“আমাকে মাফ করবেন প্লিজ। আমার কারণেই মাথায় আঘাত পেয়ে আপনি এখানে…। বাকি কথাটি সে আর সম্পন্ন করতে পারল না। তার ঠোঁট কাঁপছে। ভয়ানক অনুশোচনায় সে দলিতমথিত হচ্ছে। সে বলতে থাকে-আমি জ্ঞান হারানোর মিনিটের মধ্যেই কেয়ারটেকার দরজা খুলেছে। তারপর—

আমি চোখের ইশারায় তাকে কাছে ডাকি। মেয়েটি বেডের একপাশে ফুল রেখে আমার পাশে বসে। আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যাই। ব্যথায় মাথা টনটন করছে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আমার হাতের ওপর তার হাত রাখে। মুহূর্তেই আমার সমস্ত শরীরে বিদ্যুতের ঢেউ খেলে গেলে। আমার বারবার রবিঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে হতে লাগলো—“আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম”।


গল্প শিরোনাম: পুনর্জন্ম
মুনশি আলিম
১৭.১১.২০২২
উপশহর, সিলেট

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: বাঃ অচেনা রুপবতী মেয়েদের নিয়ে ভালই সপ্ন দেখা শুরু করেছেন :)

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৪৮

SAKHAWAT HOSSAIN বলেছেন: https://www.bdmarriage.com/register/account

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১০

বাংলার এয়ানা বলেছেন:


স্বপ্ন দেখতে নেই কোন মানা, দেখে যান আর আমাদের জন্যে লিখুন।

৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫২

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: আহাহা! কী সুন্দর ভালোবাসার গল্প!

৫| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩১

সুহাসিন১২ বলেছেন: আসলেই অসাধারন একটি গল্প। আমার জীবনের কিছুটা এমনি ভাবে সুখ দুঃখ নিয়েই কেটেছে আমার জীবনের কিছু মুহূর্ত এই সাইটে আছে চাইলে দেখে আস্তে পারেন।https://biyemedia.com/

৬| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩১

সুহাসিন১২ বলেছেন: আসলেই অসাধারন একটি গল্প। আমার জীবনের কিছুটা এমনি ভাবে সুখ দুঃখ নিয়েই কেটেছে আমার জীবনের কিছু মুহূর্ত এই সাইটে আছে চাইলে দেখে আস্তে পারেন।https://biyemedia.com/

৭| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৪

সুহাসিন১২ বলেছেন: আসলেই অসাধারন একটি গল্প। আমার জীবনের কিছুটা এমনি ভাবে সুখ দুঃখ নিয়েই কেটেছে আমার জীবনের কিছু মুহূর্ত এই সাইটে আছে চাইলে দেখে আস্তে পারেন।https://biyemedia.com/

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.