নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যাও কিঞ্চিৎ বলিব (গল্প বলার সময়)
ঈদের আগের দিন। স্থান সুন্দরবন হোটেলের সামনের রাস্তা। ফুটপাতের ওপর পাশাপাশি তিনটি ঘড়ির দোকান। এর একটির মালিক সোলায়মান মিয়া। দুপুর থেকেই বিক্রি মোটামুটি বেশ ভাল। বিক্রি ভাল দেখে ঘড়ির দামও কম রাখছে সোলায়মান। অন্য সময় যে ঘড়ির দাম ৩০০ এর নীচে বলে না, সেগুলো আজ বিক্রি করছে ২৫০ টাকায়। তার কেনা পড়ে ঘড়ি প্রতি ১২০-১৫০ টাকা। বাকি পুরোটাই লাভ। অল্পবয়স্ক কলেজ-ভার্সিটির ছেলেগুলোই তার প্রধান কাস্টমার। মেয়েদের ঘড়িও ভাল বিক্রি হচ্ছে। ছেলেগুলো বাড়িতে ছোটবোনের জন্যে বা হয়ত প্রেমিকার জন্যে ঘড়ি কিনছে।
এক ছেলে অনেকক্ষণ ধরে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে ঘড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। ভিড় একটু কমে গেলে সোলায়মান বলে,'ভাই, ঘড়ি কোনটা নিবেন?' ছেলেটা ইতস্তত করে একটি ঘড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো। গোলাকৃতির একটি ঘড়ি। সোলায়মান এগিয়ে দিল ঘড়িটি,'নেন ভাই, দেখেন।'
'কত দাম?'
একদাম ৩০০, সোলায়মান জবাব দেয়।
২০০ টাকায় দেয়া যায় ?
না ভাই, এইগুলা দেখেন, ২৫০ টাকা করে। ভাল ঘড়ি। এক বছরেও কিছু হইবো না।
না এইগুলা না, আমার ওইটাই লাগবে। দেবেন ভাই ২০০ টাকায় ?
ভাই, ঘড়ি বিক্রি করতেই বসছি। ওই ঘড়িটা আমার কেনাই আছে ২৮০ টাকা। ২০ টাকা লাভ না করলে খাবো কী বলেন?
ছেলেটা কিছু বললো না। ঘড়িটা হাত থেকে নামিয়ে রাখলো আস্তে। দোকান থেকে একটু পেছনে গেল। সোলায়মানও অন্য কাস্টমারদের ঘড়ি দেখানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এক কাস্টমার নিয়ে বসে থাকলে হবে ?
ভিড় একটু কমে গেলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, ভাই নিলেন না ?
ছেলেটা কাছে এসে আস্তে বলল,'আমার কাছে এই ২০০ টাকা ছাড়া আর কোন টাকা নাই'
সোলায়মান কিছু বলল না।
সোলায়মান বুঝতে পারছে, ছেলেটার ঘড়িটা খুব দরকার। এই ঘড়ির জন্যেই শেষের চাকরির পরীক্ষাটা সময়মত শেষ করতে পারেনি সে। যখনই এনালিটিকাল পার্ট শেষ করে ম্যাথ পার্টটুকু ধরবে, তখনই শুনলো এক্সামিনার বলছে, আর ৫ মিনিট বাকী! ৩০ টা অংক সে সবগুলোই পারবে, কিন্তু ৫ মিনিটে কীভাবে পারবে ? দুঃখে, রাগে তার চোখে পানি চলে এসেছিলো। সে আর অংকগুলো করেইনি। কী লাভ করে ? কয়টাই বা করতে পারবে ৫ মিনিটে।
তাই ২০০টাকা পকেটে নিয়ে সে সুন্দরবন হোটেলের সামনে এসেছে। সে জানে এখানে ফুটপাতে কমদামে ঘড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু কম আর কই? ২০০টাকায় তো হচ্ছে না।
সোলায়মান সব বুঝতে পারছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলেটাকে ডাকলো সে।
নেন আপনার ঘড়ি।
ছেলেটা বললো, ২০০ টাকার বেশি নাই আমার কাছে সত্যি।
সোলায়মান বললো, ২০০ টাকাই দেন। কী আর করা। মাঝে মাঝে লস দিয়া বেচন লাগে।
ছেলেটা হাসিমুখে পকেট থেকে দুইটা ১০০ টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিল। সোলায়মান বলল,'হাতে দিয়া দেখেন বেল্ট বড়-ছোট হয় কিনা, ঠিক করে দেব'। ছেলেটা ঘড়ি হাতে দিলো।
ছেলেটা দেখলো সে অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের ঘড়িতে সময় দেখলো। সকাল ৯টা ৫০। ছেলেটার আজ এই অফিসে পরীক্ষা। কিন্তু ছেলেটার মাথায় ঘুরছে, সে এখানে কী আগেও একবার এসেছিলো? সব চেনা মনে হচ্ছে কেন ? হাতে সময় নেই, পরীক্ষা শুরু ১০ টায়। ছেলে তারাতারি করে অফিসে ঢুকলো।
১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪৮
আধখানা চাঁদ বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সময় কিনতে পেরেছে। আরেকবার পড়েন।
২| ২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:২০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ফিনিশিংটা জোস্!
২২ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০
আধখানা চাঁদ বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা হামা ভাই। আর সুন্দর মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
লখালেখি অনেক কঠিন। আরও কঠিন মনে হয় নিয়মিত না লিখলে ! তাও মাঝে মাঝে অদম্য ইচ্ছায় কীবোর্ড চাপতে বসি। আপনাদের ভালবাসা বোনাস।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৬
হাইপারসনিক বলেছেন: ঘড়িটা খুবই দরকারি ছিল বটে কিন্তু সময়টা আর কিনতে পারল না...