নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বইমেলায় প্রতিদিন যাই। কিছুক্ষণ 'শুদ্ধস্বর' এর সামনে থাকি, কিছুক্ষণ অন্য প্রকাশনীর সামনে অন্য বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দেই। কিছুক্ষণ চা পান করি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পিছনের অন্ধকার গলি-ঘুপচি'র চায়ের দোকানগুলোয়।
একটা দোকান আছে, যেটা স্বামী-স্ত্রী চালান এবং তাদের একমাত্র মেয়ে বয়স হবে ২ বছরের মতন, সে! মেয়েটা দোকানের ওপরে বসে থাকে, তাঁর আশেপাশে বিস্কিটের বয়াম, ফুটন্ত চায়ের পানি-ভরা কেটলি, কলার কাঁদি, এটা-সেটা। মেয়েটা বসেই থাকে, বড় আদর লাগে। ভয়ও লাগে, কখন গরম পানি ছিটকে পড়ে ওর গায়ে, কখন সিগেরেট ফুঁকতে থাকা তারুণ্যের আগুনে সে ঝলসে যায়।
আমি মেয়েটার মা'কে বলি, "আপা একটা ছবি তুলি"
"তোলেন, কত মাইনসে যে হের ছবি তুললো।"
"আপনার ছবি কেউ তুলে নাই?"
দোকানের মালকিন মানে 'মা' এবার হাসে।
বাবা এগিয়ে আসে। তার হাসি আরো চওড়া।
"আমার মায়ার ফটু তুলসে পাচঁশরও বেশি। প্রতিদিন বেবাকতে তোলে।"
আমি মেয়েটার দিকে তাকাই, মেয়েটাও হাসে, সে ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত।
আমি মেয়েটার ছবি তুলি। দোকানের এ পাশে ও পাশে বেঞ্চের সারি। তরুণ কবি, সাহিত্যিকরা বসে আড্ডা দেয়, কে কার বিক্রি কেমন সেটা বলে, যারা ফ্রি বই চায় তাদের অশ্লীষ গালি দেয়, সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। দূরে অন্ধকার, গাছ, মাটি; কাছে মেয়েটি, তার মা, বাবা, জ্বলন্ত উনুন আর কিছু তরুণ কবি, সাহিত্যিক, তাদের বলা কথা, না বলা ক্ষোভ আর অনিশ্চিত ভবিষ্যত।
চায়ের দাম শোধ করে আমি উঠে দাঁড়াই, মেলার দিকে যাই - কেউ একজন এসেছে, আমাকে খুঁজছে। আমার প্যান্টের কোণ ঝুলে স্যান্ডেলের গা বেয়ে ধুলো ওড়ে, ধুলো ওড়ে জামায়, শরীরে, মনে...
ফুটন্ত উনুনের কাছে মেয়েটাকে রেখে আমি মেলার দিকে হেঁটে যাই। আমার বড্ড মায়া লাগে...
শামীম আহমেদ,
ফেব্রুয়ারী ১২, ২০১৪
©somewhere in net ltd.