নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিতু

ফেইসবুকে আছিঃ https://www.facebook.com/shamimahmedjitu রকমারিতেঃ http://www.rokomari.com/book/77323 কবিতার পেইজঃ https://www.facebook.com/PriyoPromotyo

জিতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেলা ভাঙার আড্ডা

০১ লা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৩১

এটা অবিশ্বাস্য ঠেকেনা যে আজ অমর একুশে বইমেলা ২০১৪ শেষ হতে যাচ্ছে। অবাক লাগে এই একমাস জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেছে। অন্য মানুষেরা, অন্য ঘাস-ফুল-লতা-পাতা'তে ছেয়ে গেছে জীবনটা।



বইমেলায় আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একফোঁটা বৃষ্টি হতে যদি আসবে ৫ তারিখে এমনটাই বলেছিলেন প্রিয় কবি, প্রকাশক Ahmedur Rashid Tutul ভাই, কিন্তু বই চলে এলো ৩ তারিখেই। টুটুল ভাইয়ের ছোট্ট এস।এম।এস। - আপনার বই এসে গেছে। বইয়ের সাথে সাথে আমিও। আমার বইয়ের প্রথম ক্রেতা সাকিন ভাই এবং দ্বিতীয় ক্রেতা তানিন থাকে আমার আশেপাশেই। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে যাই।



৭-৮ তারিখের দিকে সুপারস্টার বন্ধু Simu Naser ও তাঁর গুণবতী স্ত্রী Sabhanaz Rashid Diya আসল মেলায়, এদিকে বই শেষ। সিমু বলল,



"তোর বই কিনতে আসছি। তোর বই কই?"



আমি লাজুক হেসে বললাম, "দোস্ত বই তো শেষ, আবার আনতে গেসে।"



"ফাইজলামি করস? তোর বই শেষ? কয় কপি ছাপসে? ১০ কপি?"



ঘটনা সত্যি, আমার বই তো এত তাড়াতাড়ি শেষ হবার কথা না, কিন্তু হলো। অনেকেই বই না পেয়ে ফিরে গেলেন, বই আসলো ৮টা বেজে ২৭ মিনিটে, মেলা শেষ হবার ৩ মিনিট আগে। সিমু, দিয়া বই কিনলো, আমরা একসাথে ছবি তুললাম। আমার বইয়ের সাথে সাথে আমিও হিট হয়ে গেলাম!



আমার বই বেরিয়েছে শুদ্ধস্বর থেকে। এর খুব কাছে আরও ৩ টি স্টল। আদী প্রকাশনী - যেখান থেকে বেরিয়েছে Rashat Rahman Zicoর কলম ও পিকু এবং আমার, জিকো, জাফর ইকবাল স্যার, আহসান হাবীব, মোহিত কামালসহ আরও কিছু উঠতি লেখকের গল্প সংকলন 'কিংবদন্তী হুমায়ুন।'



আদী প্রকাশনীর একপাশে নওরোজ কিতাবিস্তান, ওখান থেকে বেরিয়েছে তরুণ কবি Rakibul Haider এর কাব্যগ্রন্থ 'যুক্তিসঙ্গত কারণে তুমি আমার' এবং আরেকপাশে অগ্রদূত থেকে বেরিয়েছে আলোচিত কবি Akhtaruzzaman Azad এর 'প্রিয়াঙ্গনে রণাঙ্গনে'সহ তাঁর দূর্দান্ত কিছু পুরনো কবিতার বই।



বইমেলার সূত্র ধরে আমরা ৪ জন খুব কাছের মানুষ হয়ে যাই। আমাদের সাথে বন্ধু হয় জিকো'র বউ Maksuda Aziz. Asif ভাই যোগ দেন, যোগ দেন আরও অনেকে। আমরা আড্ডা দেই, মেলার ফাঁকে ফাঁকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চা খাই, খাই মাসরুম ভাজা এবং অন্যান্য। মাঝে মাঝে টুটুল ভাইয়ের সাথে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি শুদ্ধস্বর এর স্টলের সামনে। সূর্য ঢলে পড়ে পশ্চিমে, টুটুল ভাই সন্ধ্যা গড়ালে মাঝে মাঝে হাত লাগান বই বেচায়, জাফর ইকবাল স্যারের 'এখন তখন মানিক রতন' বেঁচে টুটুল ভাই ততক্ষণে কোটিপতি প্রায়। আমরা দূর থেকে দেখি, ভাল লাগে।



আমাদের প্রিয় বন্ধুরা আসেন, আসেন সুজনেরা, পরিচিত-অপরিচিত আরও অনেকে, কেউ বই কেনে, কেউ কেনেনা, কেউ চা খায়, কেউ মাসরুম ভাজা। কেউ কেউ ওয়ালে গালি দেয়, কেউ ইনবক্সে, কেউ প্রকাশ্যে ভালবাসে!



মেলার শুরুতেই বলেছি এবছর বই বের করবার তেমন কোন পরিকল্পনা আমার ছিলনা। গতবছর শাহবাগ আন্দোলনে প্রতিটি দিন সক্রিয় থেকেছি, তখনই শাহবাগের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়েছি, হয়ত বই বের করবার বীজ বুনেছি তখনই। এরপর জিকোর সাথে কথা বলতে বলতে কথা হয় ওর প্রকাশক প্রিয় Adee Prokashon'র সাজিদ ভাইর সাথে। উনি বই ছাপতে চান, উৎসাহ দেন। তারপর 'কিংবদন্তী হুমায়ুন' বের হয়, অনেকে প্রশংসা করে।



গৌতম'দা, স্বল্পভাষী প্রভাষক মানুষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টর মহাশয় কোন আজিব কারণে আমাকে ব্যপক ভাল পান। উনি বললেন আপনার কবিতার বই আপনি শুদ্ধস্বর থেকে বের করেন, আমি টুটুল ভাইকে অনুরোধ করব। টুটুল ভাইয়ের সাথে কথা হয়, হয়না। উনি বলেন, বই বের করব, আচ্ছা, পান্ডুলিপি দেন, পড়ে দেখি। কয়েকদিন পর গৌতম'দা বললেন,



"চিন্তা কইরেন না, টুটুল ভাই নিজেও কবি।"



আমি আরও শরমিন্দা হয়ে যাই। কি না কি লিখেছি টুটুল ভাই কি ভাববেন!



গৌতম'দার আমার উপর থেকে আস্থা যায়না। উনি বলেন, "চিন্তা কইরেন না।"



পান্ডুলিপি দেবার ২ সপ্তাহ পর একদিন টুটুল ভাই সকালবেলা ফোন দিলেন। অনেক কথা বললেন, তবে মূল কথা হচ্ছে আমার কবিতা ওনাকে স্পর্শ করেছে, ওনার বিশ্বাস পাঠকদেরও লাগবে। আমার কি যে ভাল লাগল বলবার নয়।



তারপর তো সব আপনারা জানেন! বই বের হলো। আপনারা যারা পছন্দ করলেন, তারা কিনলেন। বইটিও দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেল প্রায়। এর মাঝে কবি রাকিব ভাই একদিন বললেন,



"ভাই আমি খেয়াল করছি আপনার কাছে সব সুন্দর সুন্দর পাঠিকারা আসে।"



আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বলি, "না এ আর এমন কি"।



কিন্তু আসলে আমার ভাল লাগে। ভাল লাগে। ভাল লাগে।



পাঠিকা আসে, সুন্দরী, আমার স্পর্শ করতে ইচ্ছে হয়, পাঠিকার মুখ লুকানো থাকে একফোঁটা বৃষ্টির মধ্যে। দুনিয়া কেঁপে ওঠে, উঠুক!



আমি কবিতা লিখি, বই পড়ি। তারপর জীবিকার সন্ধানে মৌলভীবাজার যাই। আমার যাবার দিন অকারণে অহেতুক আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে, আমি কল পাই, এস।এম।এস পাই - বৃষ্টি নামাই।



আমি ফিরি, বই বেচি। ফেইসবুকে আমার বিজ্ঞাপনে কেউ কেউ ত্যক্ত হয়। কিন্তু আমার বই বিক্রি হয় দিব্যি। মানুষ ভালবাসে, বই পড়ে।



ফেব্রুয়ারী মাসে আমার গণজাগরণ হয়। কেউ কেউ আমাকে বলে,



"আহ তোমার এই কবিদের রাজত্বে শাহবাগ টাহবাগ নিয়ে কথা বলার কি দরকার হে বাপু, জানো না কবিরা নরম প্রকৃতির হয়, তারা এসব রাজনীতি পছন্দ করেনা।"



খুব কাছের কেউ কেউ ফোন দিয়ে বলে,



"শাহবাগ যদি তোমার কবিতার বই বের করার অনুপ্রেরণা হয় তবে তোমার বই কিনবোনা, অনেকেই কিনবেনা।"



আমি মুচকি হাসি।

আমি হাসি।

আমি কবিতা লিখি।

বই বের করি।

বই বেচি।

কিন্তু আমার আত্মা অবিকৃত।



শাহবাগকে ভালবাসি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি বলে যদি কেউ আমার বই না কেনে না কিনুক!



আমি তো আত্মা বেচিনি

ভালবাসা বেচিনি

শুধু এক কবিতার বইয়ের সওদাগর হয়েছি মাত্র।



দেখতে দেখতে ফেব্রুয়ারী শেষ, আজ বইমেলার শেষ দিন। কেমন অস্থির লাগে। এই মেলায় কত কি পেলাম! শেষে এসে তো 'চারুলতা'কেও পেলাম।



এই মেলায় আমারও আনিসুল হকের মত একটা প্রেমকাহিনি আছে। এখন এই মেলা ছেড়ে যাই কিভাবে?



শেষবারের মতো কাল মেলায় যাব, চা, মাসরুম, মানুষ, ধুলো, শুদ্ধস্বর, চারুলতা...



আর আমি।

বইমেলা।

বই।

অস্তিত্ব...



শামীম আহমেদ

২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

নিকেতন, ঢাকা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯

বৃষ্টিধারা বলেছেন: "ফাইজলামি করস? তোর বই শেষ? কয় কপি ছাপসে? ১০ কপি?" হি হা হা

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩২

জানা বলেছেন:
ভাল লাগলো মেলা ভাঙার আড্ডা পড়ে।


মায়ের অসুস্থতার কারণে এবার বই মেলায় মন দিতে পারিনি। ক'দিন আগে সামান্য একটু সময় হাতে নিয়ে ব্লগারদের বই সহ আরও কিছু বই সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম স্বপরিবারের। অবশ্যই আপনার বইটিও আছে। তবে এবারের মেলা আমার কেমন যেন খানিকটা প্রানহীন লেগেছে। এটা যেন সেই চিরচেনা প্রাণের বইমেলা নয়, বিচ্ছিন্নতার কষ্ট ছিল কোথায় যেন। জানিনা, আমার প্রত্যক্ষে ভুলও থাকতে পারে।

ব্লগের সর্বপ্রথম বই 'অপরবাস্তব' এর প্রকাশ ঘটে শুদ্ধস্বর থেকেই। পরে আরও অনেক ব্লগারের বইও প্রকাশিত হয়েছে শুদ্ধস্বর থেকেই। টুটুলভাই এবং আমি একে অন্যকে চিনি, শুদ্ধস্বরের বিভিন্ন ইভেন্টে আমন্তি্রত হয়ে আনন্দের সাথে উপস্থিত থেকেছি। কিন্তু কি এক বিচিত্র এবং অজানা কারণে গত বছর গণজাগরণের দিনগুলোতে কোন কোন অসাধু নিউজ পোর্টাল সামহোয়্যার ইন কে নিয়ে চুড়ান্ত অপপ্রচার চালায়। এমন কি আমাকে এবং পরিবারকে নিয়েও। যার কারণে আমাকে প্রেস কন্ফারেন্স ডাকতে হয়েছিল। অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ব্যাপার হলো, আমরা দেখে হতবাক হয়েছিলাম যে শুদ্ধস্বর এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকেও আমাদের সম্পর্কে নানান অপপ্রচার এবং কুৎসিত মনগড়া কথাবার্তা প্রচার করা হচ্ছিল। এখনও জানিনা এর যৌক্তিক কারণ কোথায়!!

যাইহোক, আমি বিশ্বাস করি মানুষ খুব বেশীদিন 'ভূল'এ বাস করতে পারেনা। ভূল ভাঙেই।

সবার মঙ্গল হোক। সার্থক হোক, সুফল বয়ে আনুক সকল কর্ম, সকল চিন্তা।



০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫২

জিতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার মনে হয় শুদ্ধস্বরের পেইজটি হয়ত খুব ভালভাবে মেইনটেইন করা হয়না। আমি টুটুল ভাইয়ের সাথে আলাপ করব। ভাল থাকবেন সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.